১৫ সেপ, ২০১০

ক্ষমা করো হে বৃদ্ধাশ্রমের বাবা-মা

আমার বাসায় 'ডিশের লাইন' নাই। বিটিভি দেখাও হয় না। ঈদ উপলক্ষ্যে 'ইত্যাদি' দেখতে বসেছিলাম ঈদের আনন্দ নেবার অংশ হিসেবে। একদম শেষ এসে 'সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠে গানটা হচ্ছিলো -- বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে। লিরিক অসামান্য, আর সেই ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ওল্ড হোমের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা...

গানের একটা অংশে দেখাচ্ছিলো এক বাবা তার জমানো সমস্ত টাকা দিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠালেন-- সেই ছেলেও আর খোঁজ নিলো না তার। শেষ বয়েসে তার ঠিকানা হলো বৃদ্ধাশ্রম। এই জায়গাটায় এসে চোখের অশ্রু আর রুধতে পারলাম না।

অদ্ভূত মনুষ্যত্ববোধ আমাদের! দিন দিন এই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বেড়ে চলেছে এই দেশে। দুঃখজনক আর কষ্টকর। নচিকেতার বৃদ্ধাশ্রম গানটি মনে হয় সবাইকেই স্পর্শ করে যায়।

যেই মা প্রতিদিন অনেক অনেকবার করে গায়ে পেশাব-পায়খানা করা সন্তানকে পরিষ্কার করেছেন, পরিপূর্ণ অসহায় অবস্থায় থাকা সন্তানকে শত সমস্যাতেও ছাদ হয়ে বড় করেছেন-- কীভাবে বড় হয়ে তাকে 'বুড়া আঙ্গুল' দেখিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব!!

ক্রমাগত স্বার্থপরতায় আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি আমরা। তাই যখন বড় হয়ে যায় সন্তান-- তখন বৃদ্ধ বয়েসে আবারো শিশুসুলভ অসহায়ত্ব চলে আসা বাবা-মা কে ওল্ডহোমে পাঠিয়ে দিচ্ছি... পশ্চিমাদের ভালো গুণ না-- তাদের এই নোংরা গুণকে আয়ত্ব করছে নতুন প্রজন্ম...

জানিনা এই 'ইভোলিউশনের' শেষ কোথায়...

কখনো কখনো ভাবনারা ঠিক প্রকাশ হয় না। অনুভূতির তীব্রতায়। আমার বুক জুড়ে এখন তিতকুটে অনুভূতি... অথচ লেখায় আসছে না কোন প্রকাশ...

ঘৃণা করি আমাদের এই "পরিবর্তন", এই "প্রোগ্রেসিভ" সমাজকে।

২ সেপ, ২০১০

সুগন্ধে মৌ মৌ চারিধার

লেখার আগেই শিরোনাম দিয়ে বসলাম। সচরাচর এই কাজটা আমি করিনা, তবু আজকে করলাম। হয়ে গেলো। আসলে আমি আপাতত কোন ফুল বাগিচায় বসে নেই। আহারে, ফুল বাগিচা শব্দটা লিখতেই একটা গানের কথা মনে পড়ে গেলো-- "যত ফুল ফুটে, ফুল বাগিচায়... তারা সবাই তো নয় গোলাপ ফুল"...

যাক গে, সুগন্ধে মৌ মৌ চারিধার--- এই কথাগুলো মনে হয় কোন একটা বিজ্ঞাপনে শুনেছিলাম। আমি আসলে কোন পারফিউমের দোকানেও নাই। তাহলে সুগন্ধ কীসের?? এই প্রশ্ন আসাটাই অতীব স্বাভাবিক। একটু পরে বলি?

আমিও রোদ্দুর কী হতে চেয়েছিলাম অমলকান্তির মতন !

আমার অনেক কিছু ইচ্ছে করে। লিখতে বড্ড ইচ্ছে করে... ইচ্ছে করে লিখে লিখে পাতা ভরিয়ে দিবো। ইচ্ছে করে কখনো কল্পনাগুলোকে সত্য করে ডানা ছড়িয়ে দিতে দিবো।

ইচ্ছে করে অমলকান্তির মতন রোদ্দুর হতে... অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারেনি। অথচ ওর বন্ধুরা সবাই পেরেছিল, কেউ ডাক্তার কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা শিক্ষক।

সবাই পারলো। শুধু অমলকান্তিই পারেনি। সে তো রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো। সবকিছু ছেড়ে রোদ্দুর কেন? আমার বড্ড তারা হতে ইচ্ছে করে যেমনি করে, ওভাবেই? জানিনা। হয়ত অমনটাই কিছু হবে। আমিও চেয়েছিলাম তারা হয়ে রাতের আকাশটায় জেগে থাকতে, মানুষ হয়ে এই ভারসদৃশ জীবনটা বয়ে বেড়াতে চাইনি।

বন্ধুরা সবাই অনেক কিছু হয়ে গেলো। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যরিস্টার... আর আমি আগের স্বপ্নচারীই থেকে গেলাম... শুধু স্বপ্ন দেখে বেলা কেটে যায়... অপসৃয়মান সূর্যালোকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে বুঝি দু'একটা নিঃশ্বাস ফেলি বৈকি! দিন শেষে সন্ধ্যা নামে... আমি দিগন্তে চেয়ে থাকি...

রোদ্দুরও হতে পারলাম না। পারলাম না রাতের আকাশের তারা হতে... একদম একজন মানুষই রয়ে গেলাম... হয়ত আমাকে নিয়ে আমার কোন বন্ধু একসময় কবিতা লিখবে, "স্বপ্নচারী রোদ্দুর হতে চেয়েছিলো, চেয়েছিলো আকাশের তারা হতে"......

[২ সেপ্টেম্বর, ২০১০]