৩১ ডিসে, ২০১২

অসহায় একাকীত্ব, পরম প্রিয়জন ও একটি খরুচে বিয়ে


{ ১ }
মাঝে মাঝে যখন নিজেদের অসহায়ত্ব টের পাই, আপন ক্ষুদ্রতাকে অনুধাবন করি এই সমাজের উদ্ধত মানুষদের, পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহের মাঝে। যদি অনেকসময় নিজের একাকীত্ব অনুভব করি, আশেপাশের মানুষগুলো নিজ নিজ জীবনধারনের কাজে ব্যস্ত থাকলে যদি একা হয়ে যাই খুব বেশি, তখন বুঝতে হবে, এই অনুভূতিগুলো আসলে একটা সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা চারপাশ থেকে সবাইকে সরিয়ে এই সময়টিতে আমাদেরকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইছেন, তাকে গভীর করে স্মরণ করতে বলছেন। মৃত্যু তো সবার একা একাই হবে, তার পরের অনন্তকালের যাত্রাতেও একাই থাকব। আমাদের পৃথিবীর বন্ধন, সম্পর্ক সবই তো বিভ্রম। সেই কঠিন সময়ের যাত্রার প্রকৃত অনুভূতিটা এখন অনুভব করে প্রস্তুতি নিতে পারাটাই বেশি কল্যাণকর না?

২৯ ডিসে, ২০১২

গানের আসর, ঘুম ও মৃত্যু


{ ক }

আব্বু-আম্মু রোজা রেখেছিলেন আজ, বয়সের কারণে শারীরিকভাবেও তারা পুরো সুস্থ নন। কিন্তু বাড়ির ছাদের ভয়ঙ্কর শব্দের এই ব্যান্ড শো-তে যেই শব্দ দূষণ তাতে আমারই ঘুম দূরে থাক, মাথা ধরে গেছে। মানুষের ন্যুনতম কোন কমন সেন্স থাকলেও এইরকম অত্যাচার করা সম্ভব হত না।

আল্লাহ এই মানুষরূপী ইতরগুলোকে হিদায়াহ দিন। আধাঘন্টা ধরে বসে বসে প্রার্থনা করছিলাম যে থামবে হয়ত। ছাদভর্তি তরুণ-তরুণীদের উদ্দাম চিৎকারও শুনতে পাচ্ছি। এক নারীকন্ঠ আজকের এই আয়োজনে খুব হ্যাপি হয়েছে বলছে, সবাইকে এরপরের গানে নাচতে আহবান করছে -- হুম, ইতোমধ্যে নারীকন্ঠের হিন্দি গান শুরু হয়েছে।

জীবনসঙ্গিনীকে ইহসান করা

সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহর দ্বীনটা এত সুন্দর, এত বেশি দারুণ। সত্যিই, পারিবারিক থেকে ব্যক্তিগত সমস্ত সম্পর্কগুলোতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, ইহসান করা, পারস্পরিক ব্যবহার-আচরণ, ক্ষমাশীলতা, উদারতা, ভালোবাসার ব্যাপারগুলোতে আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার স্ত্রী উম্মুল মু'মিনীনদের জীবনীতে যে নিদর্শন ও উদাহরণ রেখে গেছেন, তা সমগ্র মানব ইতিহাসে নেই। আমি রোমান, পার্শিয়ান, ভারতীয়, ইংরেজ সভ্যতাগুলোর অল্পবিস্তর যা ইতিহাস পড়েছি, তাতে পারস্পরিক সম্পর্কে ইহসান জিনিসটার জায়গাও দেখিনি।

২৮ ডিসে, ২০১২

এত সুর আর এত গানে উদাসীর একাকীত্ব



আজ সারাদিন অন্য কিছু চিন্তা ভর করে ছিলো মাথায়। দিনশেষে বাসায় ফিরলাম খানিকক্ষণ আগে, পাশের বিল্ডিং নানা রঙের আলোয় আলোকসজ্জিত, গান চলছে শাফিনের "কখনো কি তোমার মনে পড়েনা", হিন্দি সিনেমার "থারাসা দিলমে দে জাগাদু" -- বিয়ে বাড়ি, বিয়ের আসর। দু'জন মানব-মানবী জীবনের বাকিটা পথ একসাথে পাড়ি দেবার আয়োজন। অনেক অর্থব্যয়, জাঁকজমক, গানের আয়োজন -- বন্ধু-আত্মীয়দের দাওয়াত, খানাদানা, নতুন পোশাকে সবাই আয়োজিত... হয়ত রাতে ডিজে হবে, এখনকার বিয়েতে এমনই হয়। কেউ হয়ত নতুন এই দম্পতির জন্য প্রাণভরে দোয়া করেনা, অনেক 'উইশ' করে। দুআ করার শান্ত সময় কোথায় এই কোলাহলে, উত্তাল উচ্ছ্বাসে? 

মন খারাপ বুঝি? কেন বলুন তো?

সত্যি বলছি, নিজের ব্যাপারটা নিশ্চিত জানি, অন্যদের ব্যাপারেও দেখেছি -- আমরা মূলত তুলনামূলক দুঃখে ভুগি। ব্যাখ্যা করছি। ইসলামের নির্দেশনা জানার ব্যাপারটা বাদই দিলাম, ধরেই নিচ্ছি, যার কথা বলছি তার ঈমান দুর্বল। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন --

২৬ ডিসে, ২০১২

কষ্টের সাথে কীভাবে স্বস্তি থাকে?


 ♥ "নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে"
-- [সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬]

এই আয়াতটা অনেক জায়গাতে উল্লেখ হতে দেখেছি, অর্থ ঠিক বুঝতাম না। আজকে কষ্টে অনন্যোপায় হয়ে সূরা ইনশিরাহ এর উপরে ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনা শুনতে বসলাম শুধু এই আয়াত দুইটার অর্থ জানবো বলে। মাত্র দু'টি আয়াতের অনন্য সৌন্দর্যে আমার অন্তরাত্মা প্রশান্ত হয়ে গেছে যার শাব্দিক ও অলংকারিক সৌন্দর্যের কথা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না। আমি আমার শেখা কয়েকটি চিন্তা ও অনুভূতির কথা বলতে চাই --

প্রথমে উল্লেখ আছে "ফা ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"। পরের আয়াতে আছে "ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"।

এই ফা আগে আসার ব্যাপারটার আলোচনাটা দারুণ!

একই আয়াত দু'বার পুনরাবৃত্তি করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া বার্তাটার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। এই আয়াত দু'টো সমস্ত উম্মাহর জন্যও প্রযোজ্য।

সবচাইতে সুন্দর জিনিস লেগেছে আমার কাছে, শেষের 'ইয়ুসরান" বা দুই যবর এর ব্যাপারটাতে। এই দুই যবর জিনিসটা শব্দটার সার্বজনীন ব্যাপ্তিকে বুঝায়। এখানে 'আল উসর' যেমন সব ধরণের কষ্ট/পরীক্ষা, তেমনি 'ইউসরন' দিয়েও কেবল চলমান কষ্ট/পরীক্ষার স্বস্তিকে বুঝায় না, বরং তা সার্বজনীন স্বস্তি/প্রশস্ততা।

হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একবার আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা) রোমানদের সাথে যুদ্ধে মুসলিমরা কেমন দুঃখ-কষ্ট ও ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলো তা লিখেছিলেন চিঠিতে, উত্তরে উমার (রা)-এর লেখা কথাগুলোর একটা ছিলো, ঈমানদাররা সবসময়েই কোন না কোন পরীক্ষা, বিপদাপদ, কষ্টের সম্মুখীন হয় যখন তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে কেবলমাত্র আল্লাহই পারেন তাদের এই কঠিন সময়কে সহজ করে দিতে।

এই আলোচনাটিতে আমার মনটাকে দ্রবীভূত করে দিয়েছে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটা কথা যেখানে তিনি বলেছেন, ঈমানদাররা তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে, দিতে দিতে এমন একটা অবস্থায় চলে যায়, যখন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়। তখন তার অন্তরে অনুভব করে ঈমানের গভীর আর পূর্ণাঙ্গ স্বাদ, আল্লাহর কাছে সে ফিরে পায় আশা, তার বিশ্বাস, নির্ভরতা।

ঈমানদারদের আত্মার এই পরিতৃপ্তির এই অসাধারণ মাত্রাটা আর কে বুঝবে তিনি ছাড়া যিনি এমন অবস্থায় পড়েছেন আর আল্লাহর উপরেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ আমাদের জন্য দ্বীনের পথে চলা সহজ করে দিন।

স্মরণ করতে পারি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার একটি হৃদয়গ্রাহী উদ্ধৃতিকে --

 “ঈমানদারদের জীবন ক্রমাগত বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করানো হয় তাদের ঈমানকে বিশুদ্ধ এবং তাদের পাপকে মোচন করানোর জন্য। কারণ, ঈমানদারগণ তাদের জীবনের প্রতিটি কাজ করেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; আর তাই জীবনে সহ্য করা এই দুঃখ-কষ্টগুলোর জন্য তাদের পুরষ্কার দেয়া আল্লাহর জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়।”
– ইমাম ইবনে তাইমিয়া
[মাজমু'আল ফাতাওয়া : ভলিউম ১৮/ ২৯১-৩০৫]


রেফারেন্সঃ

২৬ ডিসেম্বর, ২০১২

২১ ডিসে, ২০১২

মানসিকভাবে ডাউন টাইম চললে কী করা যেতে পারে?

মানসিক আপ আর ডাউনের মাঝে মনে হয় সবারই বসবাস। আজকে একটা ধাক্কা পেরিয়ে এসে আবিষ্কার করলাম, জীবনের সবকিছুই আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। জীবনের ঘটনাগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর আচরণ যখনই বদলে যায়, তখনই ঘটনা আরো জটিল হয়ে যায়। তাই, নিজেদের অন্তরের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এই বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা উল্লেখ করব।

২০ ডিসে, ২০১২

অন্তহীন ধৈর্যযাত্রা

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমার খুব অদ্ভুত আর গভীর একটা উপলব্ধি হচ্ছিলো। বারবার ফিরে ফিরে আমার মনে হচ্ছিলো, জীবনে একবার যখনই নিয়াত করেছি সবকিছু বুঝে -- আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হবো না। তখন থেকেই আসলে আমার ধৈর্যের সীমাহীন পথে পা রাখা শুরু হয়েছে। আল্লাহর বান্দা হবার জন্য অনন্ত ধৈর্যধারণ আসলে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেমন এই ব্যাপারটা? হযরত নূহ আলাইহিস সালাম নাকি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন উনার কওমকে, বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪০ জোড়া ঈমানদার নারী-পুরুষ। হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে সবাই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল রোগাক্রান্ত অবস্থায়, একদিকে রোগ, অন্যদিকে আশেপাশে কেউ না থাকা। অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার -- উনি ধৈর্যহারা হননি।

১৯ ডিসে, ২০১২

একটু শান্তির খোঁজে


অনেক চিন্তাভাবনার পরে অবশেষে মানসিকভাবে পার করা প্রতিটি কঠিন সময়ের পরে, অশান্তির বিশাল শেকলবদ্ধ সময়ের পরে আমি ঘুরে ফিরে অন্তরের সকল অশান্তির মূলে একটা জিনিসকেই খুঁজে পাই -- সেখানে জটিলতা নেই, অনেক কাহিনীর হুড়োহুড়ি কাহিনী নেই। স্রেফ একটাই ব্যাপার, যা দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করে, চোখের দেখাকে বদলে দেয় দেয়, প্রাণের শান্তি হারিয়ে দেয়।

আর সেই জিনিসটা হলো, আল্লাহর সাথে সম্পর্কে ভাটা পড়া। নামাজে খুশু না থাকলে সেই মানুষ দুনিয়াবী অনেক কিছু আঁকড়ে ধরে সেগুলোকেই সবকিছু মনে করবে। অথচ, আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী জানেন, আমাদের শূণ্য অন্তরকে অনেক আনন্দে আর প্রাপ্তির জোয়ারে পূর্ণ করে দিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার একটা ইচ্ছাই যথেষ্ট।


কঠিন সময়? অনেক যন্ত্রণা বুকে? অনেক বিপদ? তাহলে একমাত্র বড় *চিকিৎসা* হচ্ছে নামায। আর সেই ধৈর্যধারণ করে যাইতে হলে বিনয়ী হতে হবে। যে কষ্ট পেতে পেতে বিরক্ত হয়ে হারিয়ে যাবে না আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা হতে। সে আবার বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে চাইবে মুক্তি। নয়ত আধ্যাত্মিক শূণ্যতায় ভুগতে হতে পারে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেনঃ

  "হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন" [১]
  "ধৈর্য্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।" [২]

এই নামাজে কখন কী বলছি, তার অর্থ কী, সেগুলো কীভাবে এলো আমাদের কাছে -- এই দারুণ সব তথ্যগুলো ও অর্থগুলো উস্তাদ নুমান আলী খানের ওয়েবসাইটে অ-নে-ক সুন্দর করে উল্লেখ করা আছে। আজকে অনেকদিন পর আবার চোখ বুলাতে গিয়ে সবার সাথে শেয়ার করতে প্রয়োজন মনে করলাম। এগুলো জেনে বুঝে নামায পড়লে নামাযের মাত্রা অন্যরকম সুন্দর হয়। এই সাইটটি অনেক সুন্দর!

[Meaningful Prayer] :: অর্থপূর্ণ নামায : বাইয়্যিনাহ ইনস্টিটিউট

সেই সাথে আমাদের যাদের আরবি উচ্চারণ শুদ্ধ নয়, তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়ে থাকেন, ভুল লাজ-শরম-জড়তা ভেঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন পড়া শেখার জন্য এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। শুদ্ধ করে কুরআন পড়া/শোনার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতন নয়! একজন ইমাম বলছিলেন, "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" পড়লে তো শয়তান পালিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের তো উচ্চারণই শুদ্ধ হয়না...

আমাদের ফরজ নামাযগুলো আদায় করতে দেখে যদি কেউ অবাক হয় বা আমাদের ধর্মভীরু মনে করে, বুঝতে হবে আমরা আসলে এখনো নামাযকে স্থাপন করতে পারিনি সমাজে। তাই কিঞ্চিত লজ্জিত হওয়া উচিত মনে হয়! সদলবলে নামায পড়তে হবে, নামায নিয়ে খুবই সিরিয়াস হতে হবে। নামায জান্নাতের চাবি, শান্তির বাগান হলো জান্নাত, সেখানে যেতে হলে এই চাবি লাগবেই। এই নামায হচ্ছে নামায কুফর ও ঈমানের পার্থক্যকারী। ঈমানের প্রথম পরিচয় নামায আদায়ের মাঝেই নিহিত, যার নামায নেই, তাকে কুফরকারীদের সাথে আলাদা করা যায়না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যে মুসলমানিত্বের মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট, এটা অচেতন মুসলিমদের বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন বেশি বেশি নামায আদায়ের মাধ্যমে, যেন এতটুকু পালন করেই কেউ আত্মতুষ্ট না হয়, আবার কেউ করলে অন্যরা তাকে সো-কলড *ধার্মিক* মনে না করে। দ্বীনদার হওয়া তো আরো অজস্র জিনিসের সমন্বয়।

হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটা দু'আ করেছিলেনঃ

"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।" [৩] 

উচ্চারণঃ রব্বি জা'আলনি মুক্কিমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি রব্বানা ওয়া তাক্কাব্বাল দু'আ। রব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়া লিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্কুমুল হিসাব।

কঠিন সময়গুলোর মাঝেও মাঝে মাঝে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় আকাশের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতিতে বুকের উপরে হাত দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখটা বন্ধ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে স্মরণ করতে খুব ভালো লাগে এই বলে --

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ। মহাসুন্দর, মহাপবিত্র, মহামহিম। একদিন সবচাইতে সুন্দর তোমার সাথে দেখা হবেই ইনশাআল্লাহ। জানি সেদিনের সুসংবাদ পাবার আগে আমার বুকের এই শূণ্যতা কখনো পূর্ণ হবেনা। তুমি আমার পথ দেখিয়ে নিয়ে যেয়ো আল্লাহ, তুমি তো জান আমি কত দুর্বল, কত ক্ষুদ্র, কত অকৃতজ্ঞ। তুমি তো দয়াময়, প্রেমময়, ক্ষমাশীল... ♥ ♥




  নির্ঘন্ট 

ইস্তিখারা কেমন করে করতে হয়?

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য হলো, ইস্তিখারা করা। শাইখ আব্দুল নাসিরের আলোচনাতে শুনেছিলাম ইস্তিখারার প্রয়োজনীয়তা ও মর্যাদা। আমি যা বুঝেছিলাম, আমাদের জীবনে আমাদেরকে অজস্র বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আর সেইসব সিদ্ধান্ত যেন আল্লাহর পথেই হয়, সেই সাহায্য চাওয়ার একটি উপায় এই ইস্তিখারা।

যেহেতু আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যই আল্লাহর দাসত্ব করা, তার সর্বময় ক্ষমতাকে প্রতিটি নিঃশ্বাসে আন্তরিকতার সাথে মেনে নেয়া -- ছোট ছোট কাজেও দু'আ করা আমাদের ইবাদাতের একটা বড় রূপ। এটা খুবই কল্যাণকর। তাছাড়া, ইস্তিখারা করা হয় বিয়ে, নতুন চাকুরির সিদ্ধান্তের সময়সহ আরো অজস্র সিদ্ধান্তের সময়। ইস্তিখারার দু'আ খুবই সুন্দর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে এত সুন্দর করে প্রার্থনা করতে পারাও একটা আনন্দের বিষয়। স্কলাররা ছোট ছোট সিদ্ধান্তকেও আল্লাহর সাহায্যপূর্ণ করে কল্যাণময় করে নিতে দু'আ করতে উৎসাহিত করেন। দু'আ পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, এত সুন্দর দু'আ সব কাজের আগেই পড়ে ফেলা উচিত, বুঝে বুঝে, অন্তরের গভীর থেকে।

শাইখ বিলাল ফিলিপস ইস্তিখারার ব্যাপারে বলেছেন,

"ইস্তিখারা নামায হচ্ছে যখন কেউ মনে মনে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় তখন দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বলে, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ যেন তার এই সিদ্ধান্ত এই জীবন ও পরকালের জন্য শুভ হলে কাজটা সহজ করে দেন এবং শুভ না হলে কাজটা কঠিন করে দেন। এই পদ্ধতি অতীব সহজ সরল ও বোধগম্য। আপনি কি করতে হবে বুঝতে না পারলে ইস্তিখারা নামায পড়বেন, ব্যাপারটি তা নয়। এ অবস্থায় এ নামায নয়। আমাদের প্রথমে অবস্থা বুঝে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্তে পৌছঁতে হবে, এরপর আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে এই সিদ্ধান্ত কি আমার জন্য ঠিক? যদি ঠিক হয় তবে আমার জন্য তা সহজ করো আর ভুল হলে কঠিন করো। এটাই হচ্ছে ইস্তিখারা নামাযের সঠিক পদ্ধতি।"

ইস্তিখারার দু'আ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছেনঃ

♥‌'হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।'♥

[বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০]

♣ আরেকটু বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন : https://learningdeen.wordpress.com/2012/07/22/istikhara/

১৮ ডিসে, ২০১২

আলাপন : নিজেদের ছাঁচে ইসলামকে বানানো

এই পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ আল্লাহ উপরে বিশ্বাস করে বা তাদের পরিচিতি মুসলিম। অর্থাৎ পৃথিবীর মাটিতে এই মূহুর্তে পা রাখা প্রতি চারজন মানুষের একজন মানুষ মুসলিম। অথচ মুসলিমদের কোন জনবসতিতেই শান্তি নেই, তাবত পৃথিবীর কথা বাদই দিলাম। মুখে বিশ্বাসের আমরা আসলে প্রাণে নিতে পারিনি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ', সজ্ঞানে এবং অজ্ঞানে দাসত্ব করি কালচারের, সেলিব্রেটিদের, শাসকদের, ব্যাংক ব্যালেন্সের, সুনামের, অভিশপ্ত শয়তানের।

আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক থাকি না, ভাবি না। ইসলামের দ্বারা অনুপ্রাণিত হই না সচরাচর। আর তাই, ইসলামের ছাঁচে নিজেদেরকে না গড়ে আমরা নিজেদের ছাঁচে ইসলামকে গড়তে চাই। যেটুকু ভালো লাগে নিয়ে মানসিক তৃপ্তি পাই, যেটুকু মিলেনা তাকে "বেশি বেশি" বলে ভাবি। অন্তরের লক্ষ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়, মহান আল্লাহর কাছে তার প্রিয় বান্দা হয়ে ফিরে যাবার প্রেরণা হয় -- তাহলে আমরা আল্লাহর দ্বীনকে কাটাকুটি করতাম না, আবার কঠিনও করতাম না। আমাদের প্রিয় নেতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে গিয়েছেন মধ্যম পথের অনুসরণ। সেটা সম্ভবত কাটাকুটি না, ঢিলামি না, ফাঁকিবাজিও না।

দ্বীনদারীর পরিচয় মুখেও প্রয়োজন হয়, পোশাক-পরিচ্ছদেও প্রকাশের দরকার হয়, কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্তরের জন্য -- সেটা কেউ দেখতে পায় না। অন্তরের ব্যাধিগুলোও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। আমরা অন্যদের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে ভুল প্রমাণ না করে নিজেদের দিকেই যেন ফিরিয়ে নিই --এতে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে কেবলমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য জীবনধারণের যোগ্যতা দান করুন।

১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

পকেটে গুপ্তধন !!


গত কিছুদিন যাবত কিছু গুপ্তধন আমার পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি ভেবেই অবাক লাগছিলো। এই ব্যাপারটা কেউ টের পাচ্ছিলো না, আমি নিজেই পাইনি প্রথমে। পরে যখন কিছুটা সময় গেলো, ব্যাপারগুলো নেড়েচেড়ে উপলব্ধি করলাম -- এই সম্পদের খোঁজ পেলে বাঘা বাঘা ডাকুরাও হয়ত দৌড়ে আসত আমার পেছনে পেছনে। আফসোস! কেউই টের পায়না সচরাচর!

১৭ ডিসে, ২০১২

হানিমুন ভাবনা


'হানিমুন' শব্দটা প্রথম শুনেছিলাম মনে হয় ক্লাস টু-থ্রিতে পড়তে, পাশের বাসার ভাইয়াটার মুখে। সেই প্রাইমারিতে পড়ার সময়ে অনেক গল্পের বইতে 'মধুচন্দ্রিমা' শব্দটি দেখেও টের পেতাম না ব্যাপারখানা কী। সময়ের সাথে সাথে একসময় বড় হলাম, জানলাম, বিয়ের পরে সবাই হানিমুনে যায়, ব্যাপক আনন্দের বিষয় সেইটা! ছোট থেকে বড় হবার সময়টায় নিজ পরিবারের গল্পগুলো শুনে নিশ্চিত হয়েছিলাম, আমার বাবা-মায়ের চৌদ্দ গুষ্টিতে কেউ কখনো হানিমুনে যায়নি; আত্মীয়-পরিজনের কেউ কোনদিন এই শব্দটা আলাপও করেনি। এমনকি ভাইবোনদের বিয়েতেও এই শব্দ শুনিনি কোনদিন, কখনো।

কিন্তু হানিমুনের আলাপ খুবই জীবন্ত থাকত বন্ধুমহলে, কলেজের ক্লাসে, হল লাইফে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় এর-ওর হানিমুন কেমন হবে, কোথায় হবে -- তা নিয়ে আলাপ জমিয়ে মুখ টিপে টিপে সবাই হাসাহাসি করত মনে আছে। সেই সময়ে এসব আলাপে ঢোকার আগ্রহ না থাকায় দেখেই যেতাম কেবল। খুব অস্বস্তি লাগত আর তাই ভাবতাম --'আমি ব্যাকডেটেড আনস্মার্ট হয়ত'।

১৬ ডিসে, ২০১২

বিজয়ের দিনে এ আবার কেমন আনন্দ?

আজ ১৬ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। বিজয়ের সেই আনন্দে আজ আমাদের অনেক আয়োজন ছিলো, চলছে। আনন্দে মেতেছে আমাদের পাশের বিল্ডিং এর ছাদের প্রকান্ড সাউন্ডবক্সগুলো, হিন্দি গানে (!) আর লিংকিন পার্কের অল্টারনেটিভ রক গান দিয়ে। বিজয়ই বটে!! আজ আনন্দে মেতেছিলো রাজপথ, হুডতোলা রিকশার আরোহীরা, চিপায়-চাপায় কপোত-কপোতি, দুপুরে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া পাশাপাশি বসা উদ্দাম উত্তাপে আরক্ত তরুণ-তরুণীরা। বাসায় ফিরে বুকে অদ্ভুত একটা কষ্ট নিয়ে শুয়ে ছিলাম, মা কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলেন কী হয়েছে। অজানা খারাপ লাগাকে বুঝতে না পেরে আধাঘন্টা স্রেফ শুয়েই ছিলাম। একটু আগে বুঝলাম কেন এই খারাপলাগা...

আজ সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফিরছিলাম, দেখলাম "বিজয়ে পার্বণে" নামের অনুষ্ঠান চলছে ঢাবিতে, সেখানে জ্যামে পড়ে বসেছিলাম। রাস্তায় রিকসায় বসে চারপাশের এমন কিছু অভিজ্ঞতায় আক্রান্ত চোখ অশ্রুভেজা হবার ঘটনা আমার আগে হয়েছে বলে মনে পড়েনা। এই কষ্টটা অন্যরকম। তরুণদের এই উদ্দাম আনন্দকে আমি একই রূপে আগে দেখেছি বিভিন্ন *দিবসের* উপলক্ষে। তবে এরকম আতঙ্কজাগানিয়া নির্লজ্জতা আগে দেখিনি। রিকসাআরোহীরা পশুর মতন অদ্ভুত নির্লজ্জ শব্দ করে জ্যামে পড়া চারপাশের মানুষদের *চমকে* দেয় -- তা দেখিনি আগে।

১৩ ডিসে, ২০১২

আলাপনঃ ইসলামে ব্রাহ্মন সমাজের মতন কিছু আছে নাকি?

ইসলামে কোন ব্রাহ্মন সম্প্রদায় নাই, থারকার সম্ভাবনাও নাই। কিছু কারণে যে/যারা নিজেকে এলিট সোসাইটির মনে করেন, সেই মানুষদের দ্বীন বুঝার ব্যাপারে ঘাটতি থাকার কথা। চলতে ফিরতে এরকম অজস্র ব্রাহ্মন মানসিকতাসম্পন্ন জ্ঞাতিগুষ্টির কাছে বিচিত্র উপায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হইতে হচ্ছে। সবর ধারণ কতটা জটিল, তা টের পাচ্ছি। একজন মানুষ কেন হঠাৎ এত বেশি কঠোর আচরণ করতে শুরু করে চারপাশের মানুষদের সাথে, তা আমার মাথায় আসে না। একজন মানুষ, যিনি ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মানতে চেষ্টা করে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন, তার কি চিন্তা করা উচিত না যে তার পেছনের জীবনের এমনকি এখনকার জীবনের অজস্র পাপ আল্লাহ ঢেকে রেখেছেন বলেই তিনি নিজেকে (যতটুকু ভাবছেন) সৎ মুসলিম হিসেবে মনে করছেন? আল্লাহ তার একটা কাজ প্রকাশ করে দিলেই কি লজ্জায় তিনি মাটির নিচে ঢুকে যেতে চাইবেন না? 

তাহলে কেন অকারণে অযথাই ছোট ছোট বিষয়ে অন্যদেরকে আঘাত করার চেষ্টা, যখন সমগ্র পৃথিবীর আনাচে কানাচে মানুষ কেবলমাত্র সঠিক জ্ঞানের অভাবে, আশাবাদের অভাবে, ভালোবাসার অভাবে, ভালোবাসা পাওয়ার সম্ভাবনার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দ্বীনের পথ থেকে -- তখনো নির্লজ্জের ম তন আজেবাজে ইস্যু নিয়ে হাউকাউ? আল্লাহর দ্বীন কি অ্যান্টার্কটিকা থেকে গ্রীনল্যান্ডের সবার জন্যই না? ক'টা লাইন পড়ে কেন এত দম্ভ হয় মানুষের? যাদের নিজেকে এত ভালো মুসলিম মনে হয়, তাদের উচিত নয় কি প্রথমত অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন জেনে জীবনকে তার দেখানো পথেই চালানো? সেই সাথে সাহাবাদের জীবন পড়া, ইমামদের জীবন জানা? তাহলে উপলব্ধি হবে নিজেদের জ্ঞান ও কাজে কী গভীর দৈন্য ও ক্ষুদ্রতা... মানুষকে বিচার করার দ্বায়িত্ব আমার না, আমাদের না। এই একই বার্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের প্রিয় নবী (সা)-এর মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যেন আমরা শিখতে পারি।

আমাদের কাজ হলো সত্য ও সুন্দরকে স্থাপন করে যাওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা।  আমরা কেউ জানিনা, যাকে আমি খারাপ ভাবছি, সেই লোকটা ভুল বুঝতে পেরে হয়ত তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার পর মূহুর্তেই আল্লাহর প্রিয়তম কাজের মাধ্যমে প্রিয়ভাজন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন। ভাই আমার, দয়া করে বিচারকের আসনে না বসে দু'হাত বাড়িয়ে মানুষকে ভালোবাসা দিই। অন্তত এইভাবে দুনিয়াকে আরো কিছুটা সুন্দর রেখে যেতে পারব, অন্তত আরো একটা মানুষকে দিনরাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মতন করে রেখে যেতে পারব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের অন্তঃকরণকে পরিশুদ্ধ করার তাওফিক দিন, আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

৫ ডিসে, ২০১২

একটি বন্ধু এবং একটি বইয়ের কথা

আমাদের একটা বন্ধুসার্কেল ছিলো, বহুমাত্রিক। আমাদেরই ফ্রেন্ড সার্কেলে এক বন্ধুর আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট পাওয়া রিসার্চ আছে, পিএইচডি প্রায় শেষ করে ফেললো। দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে গুণে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেদের হিসেব করতে হবে। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভার এতজনের কাউকেই আমার তেমন একটা হিংসে হত না সেই স্কুলজীবন থেকেই। আজকেও হয়না। অবশ্য এখন জানি, কেবলমাত্র দ্বীনের জ্ঞানে এগিয়ে থাকা এবং দানশীলতায় এগিয়ে থাকা মানুষদের ছাড়া কাউকে হিংসা করার নিষেধ। তাই এখন দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে এগিয়ে থাকা মানুষদের প্রতি এমন হিংসাকে প্রশ্রয় দেবার প্রশ্নই উঠেনা।

কেমন হবে চিরবিদায়ের বেলা?


এই পৃথিবীর সবকিছুর শেষ আছে। আমাদের এই জীবনের শেষ আছে, দুঃখের দিনগুলোরও শেষ আছে। সুখের দিনগুলোও একটানা থাকেনা, তারও শেষ থাকে। এই পৃথিবীটার সবকিছুই এমন। অত্যাচারেরও শেষ আছে, শেষ আছে দাম্ভিকের দম্ভের, মিথ্যাবাদীর মিথ্যার। একদিন শক্তিশালীও হবে দুর্বল। রাস্তার মোড়ের জওয়ান রগচটা ছেলেটাও বৃদ্ধ বয়েসে লাঠি নিয়ে হাঁটবে। তাই যেকোন ক্ষমতার, শক্তির এই ভুলে ডুবে থাকার অর্থ নেই কোন, এ এক পরিপূর্ণ বিভ্রমমাত্র...

চলে যাব, এর চাইতে বড় সত্য আর নেই। পৃথিবীতে আসার পর থেকেই মৃত্যুই আমাদের সবচাইতে অবশ্যম্ভাবী সত্য। আর সবকিছুই হতেও পারে, নাও পারে.. সহস্র কোটি বছরের এই পৃথিবীতে আমার মতন মানুষ এসেছেও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। অনেক দূর থেকে যদি দুনিয়াতে আসা এইসব মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয়া অবস্থায় দেখার কথা কল্পনা করি, তাহলে বুঝব, সেই মানুষগুলো উপস্থিতি আমাদের চোখে কীটপতঙ্গের ঝাঁকের একেকটা পোকা, বা পিঁপড়ার বাহিনীর একটা পিঁপড়ার মতন।

২ ডিসে, ২০১২

যে ভালো অনুভূতি পাওয়ার জন্য আল্লাহর ইবাদাত করে, সে তার অনুভূতির দাসত্ব করে, আল্লাহর নয়

কলেজ-ভার্সিটির সহপাঠিদের আলাপের মাঝে সুযোগ পেলেই *সুখ* জিনিসটা আসলে ভালো স্যালারি, ধবল-ফ্যাশনেবল গার্লফ্রেন্ড, গাড়ি-ফ্ল্যাটের মধ্যে নাই এমন টপিকে আলাপ ঠেলে দিতাম সূক্ষ্ম কৌশলে, সবসময়েই। প্রায় সময়েই কিছু বন্ধু একটা কথা বলত, যাদের *স্বার্থপরতা* কথার মাঝেই ফুটে উঠতো -- "আমি আল্লাহর কাছে চেয়ে দেখসি, যখন চাই, তখনই পাই কিন্তু সবসময় নামাজ পড়া হয়ে উঠেনা"। অথবা, "নামাজ পড়লে আমার অনেক ভালো লাগে। মন খারাপ লাগলে আমি নামাজে যাই, মনে ভালো হয়ে যায়"। বলাই বাহুল্য, যাদের মন ভালো হয়ে যেত, তারা আর পরবর্তীতে পুনরায় মন খারাপ না হলে, ঠেকায় না পড়লে, বিপদে না পড়লে নামাজে যেত না।

এইরকম কিছু বিষয় নিয়ে আমি পাজলড ছিলাম। মনে হত, যে কারণেই হোক, একজন মানুষ তো আল্লাহকে স্মরণ করছে, হয়ত আরো হিদায়াহ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে ... নিজের অবস্থা যেমন তেমন ছিলো, আমিও পুরাই ভুলে ডুবে ছিলাম, এর মাঝেও ওদের এই আচরণটা সুন্দর মনে হত না। আর ওদের দেখার পরেই নিজে বিপদে পড়লে, নিজের অস্থিরতার মাঝে ভালো লাগার অনুভূতি পেতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে আমার খুব সঙ্কোচ লাগত। মনে হত, এইসময়ে আমার আর ওদের কাজ একই হয়ে গেলেও আমাদের চিন্তার তো অনেক ফারাক! বিচিত্র ছোট ছোট ক্ষুদ্রতার প্যাঁচে পড়ে নাজেহাল অবস্থা! উত্তরও জানা ছিলো না!

আলহামদুলিল্লাহ, একটা দারুণ জিনিস শিখলাম ক'দিন আগে ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনা শুনতে গিয়ে। আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, অনেকে তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বলেছেন, আমি অনেক বছর ধরে নামাজ পড়ি, কিন্তু আমি আসলে খুব ভালো ফিল করিনা, শান্তি পাইনা, ইবাদাতে মজা পাইনা। নওমুসলিমরা তো অল্প ক'দিন ইসলামে ফিরে এসেই দেখি অনেক শান্তি পায়, কেন?

এই প্রসঙ্গে তিনি দারুণ একটা কথা জানিয়েছিলেন। ইমাম ইবনু আতা আল্লাহ আল ইসকান্দারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি ভালো অনুভূতি পাওয়ার জন্য আল্লাহর ইবাদাত করে, সে একজন বোকা। সে আসলে তার অনুভূতির দাসত্ব করে, আল্লাহর নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইবাদাত করতে হবে কেবলমাত্র একটা কারণেই, তা হলো, তিনি আল্লাহ। আর এই কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে হবে।

অন্যরকম একটা মাত্রা আছে এই উপলব্ধিটার মাঝে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন হলেন মহান, তিনি এক, অদ্বিতীয়, সুন্দরতম, মহাপরাক্রমশালী। সমস্ত চিন্তা, কল্পনার শ্রেষ্ঠত্ব যেই আল্লাহর, তিনি আমাদের কোন কিছুতেই দায়বদ্ধ নন, আমরা সম্পূর্ণরূপে তার, আমরা ক্ষুদ্রের চাইতেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। আর আমাদের সাথে আল্লাহর কোন দেয়া নেয়ার সম্পর্ক হতে পারেনা। মহান আল্লাহ মহামহিম, বিশ্বজগতের প্রতিপালক, তিনি আমাদের মালিক আর আমরা তাঁর দাস -- এটাই আমাদের দাসত্বের কারণ। আমরা দাস হতে পেরে গর্বিত, আনন্দিত। আর স্বতঃস্ফূর্ত এই দাসত্বই আমরা করতে চাই, এতেই আমাদের আনন্দ। চিন্তাগুলো বারবার ঝালিয়ে নিলে আমাদের অন্তরের ব্যধিগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিতে সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে তার অনুগত ও সন্তুষ্টি অর্জনকারী বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন।

*প্রাসঙ্গিক ভিডিও লেকচার লিঙ্ক - I Tried But It Didn't Work - ইমাম সুহাইব ওয়েব :: http://www.youtube.com/watch?v=an30sWAUr74

[১২/১২/১২]

১ ডিসে, ২০১২

দিনের রুটিন করবো কীভাবে?

ক'দিন আগে রাতে বাসায় ফেরার সময় মনে হচ্ছিল, ছোট থাকতে অনেক বইতে পড়েছিলাম,, এই জমিনের মাটিতে এমন মানুষ ছিলো যারা একজন মুসলিমের সাথে দেখা করতে অনেক মাইল পাড়ি দিয়ে গিয়েছেন। এখনো এমন মানুষ অনেক আছেন। আর আমি তো মাত্র কয়েক কিলো পেরিয়ে দেখা করতে যাই মাঝে মাঝে... এটা অনেক বড় একটা সুযোগ ও রাহমাত আলহামদুলিল্লাহ।

একটা উপলব্ধি কাল থেকে আরো গাঢ় হলো -- একদিন ইমাম সুহাইবের আলোচনায় বলছিলেন, স্কলাররা হলেন চাঁদের মতন, তারা সূর্যস্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্ঞানের আলোকে প্রতিফলিত করেন, আর যারা তাদের কাছ থেকে শোনেন এবং শিখেন, তারাও ভাগ্যবান যে সেই আলোয় আলোকিত হয় -- তারা একেকটা তারার মতন। জ্ঞানের পৃথিবীতে ছোট্ট তারা হতে পারাও কতই না দারুণ ব্যাপার!

পথে-ঘাটে বেহায়াপনার মুখোমুখি হলে কী করা যাবে?



মাঝে মাঝে আফসোসের ঢেউতে বুক উথাল পাথাল হয়ে যায়। হাইস্কুল লাইফ থেকে ভার্সিটি লাইফটা আসলে আত্মিক উন্নতির একটা চরম সময়। অথচ এই সময়টাতে কত অজ্ঞানতা আর অস্থিরতায় পার করেছি! অথচ এত সুন্দর কিছু দিক নির্দেশনা আছে, যা জীবন, আত্মা আর মনকে শান্ত ও তৃপ্ত করে। হতভাগা আমি সেগুলো সঠিক সময়ে জানতেই পারিনি। কথাগুলো মনে হয়েছিল ক'দিন আগে যখন সন্ধ্যার দিকে ঢাবি এলাকায় গিয়েছিলাম, তখন পথে প্রান্তরে দুঃখজনক, অগ্রহণীয় কিছু দৃশ্য দেখেছিলাম বলে। চারিদিকে ছেলেমেয়েদের উদ্দাম আনন্দের নামে বেহায়াপনাগুলোর সদম্ভ উপস্থিতি দেখে ভয় লেগে গিয়েছিল।

মনে পড়লো আব্দুল নাসির জাংদার 'Fighting Temptation' আলোচনাটির কথা, যেখানে তিনি সূরা ইউসুফের ২৩ নাম্বার আয়াত নিয়ে আলাপ করছিলেন। মিশরের যে ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনেছিলেন, তিনি উচ্চ পদমর্যাদার আর অভিজাত লোক ছিলেন। তার স্ত্রী [বাইবেলে যে যালিখা নামে উল্লেখিত] একদিন ইউসুফ (আ)-কে একা পেয়ে তার মনের খারাপ ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে চেয়েছিলো। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ

♥"যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, "চলে এসো"। ♥ [সূরা ইউসুফ ২৩]

৩০ নভে, ২০১২

আলাপন : ডুবন্ত মানুষগুলোকে টেনে তোলা

 অনেক সময় আমরা যারা জীবনের আলটিমেইট অর্থ ও লক্ষ্য বুঝতে পেরেছি আল্লাহর অশেষ রাহমাতে, তারা অনেক ভুল করে ভোগান্তিতে থাকা মানুষদের দেখে দুঃখ পাই, পাওয়ারই কথা। মানুষ অকারণেই সহজ জীবনকে জটিল করে, ভুল করে -- ভুগতেও থাকে। তাদের সেই আলাপ হয়ত আমরা অন্য কারো সাথে এসে করি, দুঃখ প্রকাশ করি সমবেদনা হিসেবেই।

ভেবে কি দেখি, লাভ কি এতে? আমি যখন ভালো আছি, তখন এই ভালো থাকা আরেক মানুষের উপকারে না আসলে তাতে কোন লাভ নেই, আমার এই ভোগ, এই শান্তির বিছানায় আয়েশের সময় কোনই কাজে আসবে না অনন্তকালের জীবনে। তাই, কাউকে পানিতে ডুবে যেতে দেখলে তাকে টেনে তোলা উচিত দাঁড়িয়ে না থেকে। ভুল করতে থাকা মানুষটাকে তাই অক্লান্ত হয়ে টেনে তুলতে হবে, বুঝাতে হবে। আজই, এক্ষুনি, যেকোন ছোট উপায়ে তা শুরু করা হোক না কেন।

আসলে, আমরা দিক নির্দেশনা পেয়েছি, তাতে আমাদের কোন ক্রেডিট ছিলনা। সবই আল্লাহর অকল্পনীয় দয়ার প্রতিফলন, আর আমাদের ছোট ছোট চেষ্টাতেও হয়ত কারো জীবনে বড় পরিবর্তন এসে পড়তে পারে। ইতিহাসে এমন অজস্র অজস্র উদাহরণ আছে, যখন একজনের দাওয়াতে যিনি বদলে গেলেন, তিনি একটা জাতিগোষ্ঠীর জন্য বিশাল রাহমাতের কারণ হয়ে গেছেন। আল্লাহই সবকিছুর মালিক, তিনিই মহাপরিকল্পনাকারী।

একটা হাদিস পড়তে গিয়ে এই চিন্তাগুলো জেগে উঠলো, আমাদের প্রিয়তম আর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির শিখিয়ে যাওয়া কথাগুলো এমন ছিলো --

ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমার কাঁধ ধরে বললেন:

♥ “দুনিয়াতে এভাবে কাটাও যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথিক।” ♥ [বুখারী]

ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) বলতেন,

♥ “তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হয়ে সকাল বেলার অপেক্ষা (আশা) করো না এবং সকালে উপনীত হয়ে সন্ধ্যা বেলার অপেক্ষা করো না। সুস্বাস্থ্যের দিনগুলোতে রোগব্যাধির (দিনগুলোর) জন্য প্রস্তুতি নাও এবং জীবদ্দশায় মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।” ♥ [বুখারী]


# রিয়াদুস সলিহীন : ৫৭৫

২৭ নভে, ২০১২

জীবনসঙ্গীর খোঁজে অস্থির আমাদের তারুণ্য

 
কিছুদিন আগে ছেলেবেলার ঘনিষ্টতম বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম তার কর্মস্থলে। তার ভার্সিটি লাইফের রুমমেটও সেখানেই কাজ করে। ধরি তার রুমমেটটির নাম আকাশ। দীর্ঘ কয়েক বছরের পরিচিতির জন্য সেই আকাশও বেশ চেনাজানা হয়ে গেছে। আমার বন্ধুটি মাসখানেক আগে বিয়ে করেছে, আকাশও অনেক বছর যাবত প্রেম করছে ক্লাসমেটের সাথে। বিভিন্ন রকম আলাপ আলোচনাতে এটা-ওটা বলতে বলতে হঠাৎ সেদিন ওরা দুই বন্ধু সাংসারিক টাইপ ব্যক্তিগত কিছু আলাপ করছিল আমার সামনে।

বেশ কিছুক্ষণ পরে আমাকে একা থাকতে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে নিরবতা ভঙ্গ করতেই হয়ত, আকাশ বললো,
-- তুমি বিয়ে করবা না? প্রেম তো কর না তাইনা?
আমি পরিশ্রমলব্ধ মুচকি হাসিখানি দিলাম।

দরকারি আর অদরকারি জ্ঞান

ক'দিন ধরে মাথায় কতক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। এই যেমন আমার কিছু বন্ধু আছে আমার যারা দেশে খুব দারুণ ক্যারিয়ার করে ফেলা বা বিদেশে মাস্টার্স-পিএইচডি করতে যাওয়া -- তাদের সাথে একবেলা বসলেই নিজের অর্জন নিয়ে চিন্তায় পড়ে যেতে হয়। কয়েকদিন আগে এমনটাই হয়েছিল। মনে হচ্ছিল, হয়ত আমি পিছিয়ে, কয়েকবছর টানা লেগে থাকলে আমিও ঐরকম অর্জন করতে পারব। টাকা হবেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু...

১৯ নভে, ২০১২

ডায়েরির পাতা : ফিলিস্তিন ১

গত দু'দিন ধরে মাঝ রাতেই ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে। প্রচন্ড কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুমালে এমনই হয়। এত তীব্র কষ্ট জীবনে আর একবার লেগেছিল। টুইটারে ফিলিস্তিনের অনেকজনের কাছ থেকে জানতে পারছিলাম ক্রমাগত আপডেট। ঘন্টাখানেক আগে গাজায় ইসরাইলি বিমান ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণ করেছে। আমার চোখের সামনে এক ফিলিস্তিনি বোন বললো, অমুক বাসায় ছোট্ট বাচ্চাটা মারা গেছে (সম্ভত আসলান -২ বছর) আর ওর বোনটা হাসপাতালে গেল, সম্ভবত পা হারিয়েছে। সহ্য করতে পারিনা আমি। অশ্রু আমার দু'দিন ধরে ঝরঝরিয়ে ঝরে যাচ্ছে। এমন করে কখনো দেখিনি আগে, বুঝিনি আগে।

ব্যাপারটা এমন না যে গাজা উপত্যকা অনেক বড়। প্রস্থে কয়েক কিলো আর দৈর্ঘ্যে এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে যেতে এক ঘন্টাও লাগে না। ইসরাইলি নেভি ঘিরে আছে গাজা, পৃথিবীর ৪র্থ শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী (নেটে পড়লাম) কেন তাদেরকে এভাবে আটকে মেরে ফেলছে? ইসরাইল কোন রাস্ট্র ছিলনা। ফিলিস্তিন বিশাল দেশ ছিল। বৃটিশ সরকার হাজার হাজার ইহুদিদের এখানে বসতি দিয়েছিলো গত শতকের প্রথমে, ফিলিস্তিনিদের সাথে থাকতে। ওরা সবখান থেকে অর্থ নিয়ে ক্রমেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক চালে ফিলিস্তিনিদেরকে কোণঠাসা করে গাজা আর পশ্চিম তীরের শহর রামাল্লাতে জায়গা নিতে বাধ্য করেছে। যখন ইচ্ছা হয় বিমান হামলা করে শহীদ করে দেয় আমাদের ভাইদের বোনদের। এমন কোন পরিবার নেই ফিলিস্তিনে, যাদের কেউ ওদের হামলায় শহীদ হয়নি। অতটুকু শহরে গিজিগিজি করে ক'জন মানুষ থাকে? মৃত্যু তাদের কাছে এতই সাধারণ ব্যাপার যে বাংলাদেশে আরাম করে ঘুমাতে যাওয়া আমরা কল্পনাই করতে পারব না। কেন ওদের এভাবে মারছে? এখানেই রহস্য। একটা জাতি তোমাকে থাকার জায়গা দিল, যখন হলোকাস্টে তোমাদের পুড়িয়ে মেরে দিলো নাৎসি বাহিনী -- তোমরা কৃতজ্ঞ না হয়ে একের পর এক জায়গা নিয়ে তাদেরকেই কেন হত্যা করছ? এখানেই ইহুদিবাদের স্বরূপ। আত্মরক্ষার্থে একটা মর্টার গেলেও নাকি নেতানিয়াহু সেনাবাহিনী চালনা করবে। এই ইসরাইলকে বার্ষিক বিলিয়ন ডলার দেয় আমেরিকা। সমস্ত আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রচার করেছে -- "ইসরাইল হামাস সহিংসতা" অথচ গত দু'দিনে কমপক্ষে ২৫ জন মারা গেছে ইসরাইলের বিমান আক্রমণে, চারপাশ থেকে ঘিরে ধরে মেরে ফেলছে মানুষগুলোকে। তাদের ধ্বজাধারী মিডিয়া গণহত্যাকে বলছে "সংঘর্ষ। সে নাহয় দূরের কথা।

দেশে বসে আমি কি করতে পারি? ... জানিনা আসলে। আমি জেনেছি, নবী করীম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলিম একে অপরের ভাই। এই উম্মাহ দেহের মতন। আমি এতটুকু জানি, আমার ভাইয়া যদি আজ আহত হয়ে হাসপাতালে যেতেন, নিহত হয়ে যেতেন -- আমি গান শুনতে মত্ত থাকতাম না, ব্যাট-বল পিটিয়ে ভ্রমের মধ্যে ডুবে থাকতাম না। কায়মনোবাক্যে দু'আ করতাম। চোখের পানিরা ঝরে যেত। একদিন আমাকেও অমন অবস্থায় পড়তে হতে পারে -- তখন আমার পাশে কেউ না দাঁড়ালেও যদি দূরে থেকে কেউ দু'আও করে, আমি হয়ত তাতেই সাহায্য পাব।

এত দূরের ওরা কেমন করে আমার ভাইবোন? ...আখিরাতে আপন রক্তের ভাই যদি জাহান্নামী হয়, তবে কেউ তাকে ভাই বলে ডেকে লাভ পাবনা। তাদের সাথেই থাকব, যারা একসাথে থাকবেন, তারা সবাই আল্লাহর বান্দা হিসেবে দুনিয়ায় ছিলেন, তাদের ভালোবাসা আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত, তাদের চাওয়া, চিন্তা, কথা আর কাজের ছাঁচ একই -- ঠিক যেন একই পরিবারের মতন। আমি আমার সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহকে আপন ভাইবোন বলেই মনে করি, অনুভব করি। মুসলিম হিসেবে এ আমার দায়িত্ব। আর এই অনুভূতি স্বতস্ফূর্ত। এতগুলো কথা লিখলাম কেবল একটা উপলব্ধিকে ছড়িয়ে দিতে -- যদি আখিরাতে আসলেই আল্লাহর সান্নিধ্য চাই, তাহলে আমরা যেন অনেক দোয়া করি আমাদের ভাইদের জন্য। কাজ করি মানুষের জন্য, মানুষের শান্তির জন্য... নিশ্চয়ই রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন। নিশ্চয়ই সত্যপথের মানুষ আর মিথ্যার দাসত্বকারীরা এক না।

১৮ নভেম্বর ২০১২
সকাল ৮ টা ৪৫ মি

ডায়েরির পাতা : ফিলিস্তিন ২

 আমার গলা বন্ধ হয়ে আসছে কান্নার গমকে... অনবরত অশ্রু ঝরে মাথা ঝিম-ঝিম করছে। এখনি জানলাম কিছুক্ষণ আগে গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় একই পরিবারের ১০ জন শহীদ হয়ে গেছে। ৩জন শিশু, ৪জন নারী। ইহুদিবাদ প্রতিষ্ঠায় অন্ধ অভিশপ্ত বনী ইসরাইলের বংশধররা স্বভাবসুলভ উন্মাদ হয়ে গেছে। গত দু'দিনে গাজায় শহীদ হয়েছে ৬০ জনের বেশি। আল্লাহ তাদের মৃত্যুকে কবুল করে নিন। এই বোনেরা তাদের সন্তানদের নিয়ে জান্নাতুল ফিরদাউসের ঝর্ণার ধারে যেন চিরকাল ধরে আনন্দ করতে পারেন -- আল্লাহ আমার মতন অসহায় বান্দাদের দোয়াগুলো কবুল করুন!!

আজ সারাদিন কাজের ফাঁকে ফাঁকে যতবার অনলাইনে এসেছি, কান্না থামাতে পারিনি, শুধু মনে হচ্ছিলো মৃত্যুর আগে তারা কতই না অসহায় অনুভব করছিল। অল্প কিছু মানুষের জন্য প্রায় ৭০০+ বার বিমান ছুটে গেছে গাজা উপত্যকার উপর দিয়ে বোমা ফেলতে ফেলতে। এই সেই বনী ইসরাইলের পথভ্রষ্ট বংশধরেরা, মুসা আলাহিস সালাম এর মতন অজস্র নবী রাসূলকে তারা বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছিল, তাদের অন্ধ অহংকার আর কপট ঔদ্ধত্য তাদের আল্লাহ রব্বুল আলামীনের কাছ থেকেই অভিশপ্ত করেছে। আমাদেরকে আল্লাহ করেছেন সম্মানিত, তাঁর দ্বীনের দায়িত্ব দিয়ে। একদিন ওদের বইয়ে ওদের পরাভূত করা হবেই ইনশাআল্লাহ, হয়ত সেদিন তেল আবিবের রাস্তাতে ওদের অপবিত্র রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। আমাদের প্রথম কিবলা মাসজিদুল আকসা একদিন ওদের করায়ত্ব থেকে মুক্ত হবেই, ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের এই রক্ত আমাদেরকে সেই সুন্দর সময়ের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।

ইহুদিরা এমনই। শত বছরের বেশি ওদের নীল নকশা। ওরা জ্ঞান বিজ্ঞানে সবসময়েই এগিয়ে থেকেছে, আল্লাহ তাদের অনেক রহম করেছিলেন সবসময়েই। সেটা ব্যবহার করে ওরা যেখানেই সুযোগ পায়, প্রতিষ্ঠান খুলে বসে। তাই বিবিসি, সিএনএন হোক, স্টারবাকস, ম্যাকডোনাল্ডস হোক, ফানটা, স্প্রাইট হোক, যা ছাড়া এই সময়ের মানুষ প্রায় অচল বলে মনে করে -- তাই ওদের করায়ত্ব প্রতিষ্ঠান। অজস্র প্রতিষ্ঠান থেকে উঠে আসে টাকা - তা দিয়ে কেনা বোমায় শহীদ হয় ফিলিস্তিনিরা। ওরা খবরকে ঘুরিয়ে দেয়, পৃথিবীর ইকোনমি কব্জা করে কেবল থাকার জায়গা পেতে, উড়ে এসে জুড়ে বসে। কোনদিন এই প্রচেষ্টা সফল হবেনা ইনশাআল্লাহ।

আজকে নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা করছিলাম, যতটা সম্ভব সময়ের সদ্ব্যবহার করবো জীবনে। মানুষের উপকারে আসে -- এমন প্রতিষ্ঠান আমরা কেন তৈরি করতে পারব না? সেই প্রতিষ্ঠানের লাভের টাকায় হবে অন্য আরো দশটা মুসলিম-অমুসলিম মানুষের সাহায্য, দূর করা হবে তাদের কষ্ট। আমাদের একটা প্রজন্মই সব ঘুরিয়ে দিতে পারি। ইহুদিদের মতন শিকড় কাটা পশুগুলো যদি মাত্র একশ বছরে পৃথিবীকে ভ্রান্তির মাঝে ফেলে চুবিয়ে দিতে পারে -- আমরা সেই নোংরা শক্তির বিপরীতের আরো শতগুণ বেশি শক্তিশালী ও উপকারী হতে পারব।

আমাদের জীবনের গন্তব্য তো পরিষ্কার। আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্তই কল্যাণময়। কষ্টে থাকলেও তা আমাদের জান্নাতের পথে এগিয়ে নিয়ে যায়, যখন সুখে থাকি, তখন প্রতিটি কৃতজ্ঞতার নিঃশ্বাস আমাদেরকে আমাদের চিরজীবনের সফলতার দিকেই নিয়ে যায়। সেই দিন তো তেমনও দূরে নয়, যেদিন আমরা বিশ্বাসীরা সবাই আল্লাহর সান্নিধ্যে থাকব, আমাদের কাছে দুনিয়াটা মনে হবে হয়ত দিনের একটা বেলা ছিলাম। আমাদের হারানোর কিছু নেই। সব প্রাপ্তির এই জীবনটা কেবলই অন্যের জন্য বিলিয়ে দেয়া, শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টায় -- মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের স্বপ্নে... আল্লাহ আমাদেরকে কবুল করুন।

১৮ নভেম্বর ২০১২
রাত ১০-৫৮ মি

১৫ নভে, ২০১২

আলাপন : ভাইয়ের জন্য প্রার্থনার বেলা

♥ একটা অপার আত্মিক ও মানসিক সৌন্দর্যের আর সৌহার্দ্যের দ্বীন আমাদের ইসলাম। প্রাত্যহিক জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা মাঝে মাঝেই আবেগাপ্লুত করে চোখ ভিজিয়ে দেয়। এর একটা হলো, মানুষের জন্য দু'আ করা। ♥

আমি জীবনে অসাধারণ ক'জন মানুষকে দেখেছি, যারা যখন কোন ইতিহাস শুনেন, সেখানে ত্যাগী মানুষদের গল্প শোনেন যারা আল্লাহকে ভালোবেসে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তখনই দু'আ করেন -- "তাদেরকে যেন আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন"। শুধু তা-ই না, অজস্র মুসলিম ভাইদেরকে দেখেছি, যারা হয়ত আমার মুখে একজন ভালো মানুষের কথা শুনলেন যিনি আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন -- এমন কথা শুনেই উনারা আন্তরিকভাবে একটা দু'আ করে ফেলেন "আল্লাহ তার ইবাদাহ আর প্রচেষ্টা কবুল করুন ও তাকে রহম করুন।" 

যখন এমন হয় যে, কারো আলাপ এলো, যিনি এখন বেশ কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন -- তার কথা শোনামাত্রই এই মুসলিম ভাইরা দু'আ করে ফেলেন যেন আল্লাহ তার পরীক্ষাকে সহজ করে দেন। এই দু'আ মুখের কিছু শব্দ শুধু? শাইখ আব্দুল নাসির আলোচনায় বলছিলেন, দু'আ নিজেই হলো একটা ইবাদাত। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর বিশালত্ব, তার মহান শক্তির কাছে সাহায্য চেয়ে আমরা তাকে রব হিসেবে, আমাদের মালিক হিসেবে মেনে নিই। আল্লাহ আমাদের দু'আ করাকে খুব পছন্দ করেন।

১৩ নভে, ২০১২

ইমাম গাজ্জালীর বই বিদায়াতুল হিদায়াহ-এর উপরে অডিও লেকচার

'হুজ্জাতুল ইসলাম' নামে পরিচিত ইমাম গাজ্জালী (রহিমাহুল্লাহ) আমার কাছে খুব আকর্ষণীয় মানুষ ছিলেন স্কুল জীবন থেকে যখন স্কুলের ইসলাম শিক্ষা স্যার বিভিন্ন আলোচনায় মুগ্ধ হয়ে উনার ব্যাপারে বলেছিলেন। এই আগ্রহটা চাপা পড়ে গিয়েছিল 'কিমিয়ায়ে সা'আদাত' বইটা পড়তে গিয়ে। একদিন বইটা থেকে খাওয়ার আদব অনুচ্ছেদটা পড়ার পর ওই সময়েই খুব চিন্তিত হয়ে গিয়েছিলাম নিজেকে নিয়ে। খাওয়ার মতন একটা কাজে কত যে সূক্ষ্ম বিষয় মিশে আছে তা বুঝে এবং নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে দমে গিয়েছিলাম!

এরপর আধযুগের বেশি সময় পেরিয়ে যাবার পর ক'দিন আগে আবার ইমাম গাজ্জালীকে পড়তে চেয়েছি একটা বিশেষ বিষয়ে জানতে গিয়ে। আমি ইসলামের অপ্রাতিষ্ঠানিক ছাত্র হিসেবে সম্ভাব্য অনেক জায়গাতে একটা বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে শেষ জায়গা হিসেবে ইমাম গাজ্জালির বই খুঁজলাম। আলহামদুলিল্লাহ এইবার কিমিয়ায়ে সা'আদাত বইটার একটা নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ আবারো অনেক কিছু শেখালো। অনেক গভীর আর আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম।

অনেক উৎসাহী হয়ে ইমাম গাজ্জালির বই কিনতে গেলাম কাঁটাবনে। কিন্তু এহইয়াউ উলুম আদ-দ্বীন বইটা হাতে নিয়ে দেখলাম অনেক বিশাল ভলিউম, আর তার অনুবাদ পড়ে আগ্রহ হারিয়েই গেলো। যদিও পাঠকদের অনেকের কাছে অনুবাদটা মাওলানা মুহিউদ্দিন খানের অনুবাদটি পছন্দের যা ৫টি খন্ডে সমাপ্ত হয়েছে। সেই বই পড়ার সময়, সাহস আর আগ্রহ কোনটাই আর না থাকায় বিরসমুখে বাসায় ফিরলাম খালিহাতে। লম্বা পথের যাওয়া আর আসার একই রকম হলে মনটা বদলে গেলো... কিছু পজিটিভ, কিছু নেগেটিভ।

৮ নভে, ২০১২

রাসূলের (সা) সীরাত জানতে গিয়ে মুগ্ধতার স্পর্শ

মন কাঁদে রে ভাই, মন কাঁদে...আজকে সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে ফ্রি হবার পর মোবাইলে খুঁজে পেতে দেখলাম সব অডিও কয়েকবার করে শোনা হয়ে গেছে। বাকি ছিলো একটা অডিও, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাতের উপরে আলোচনা, আগে একবার শুনতে শুরু করে আর আগানো হয়নি। ইমাম আনওয়ার আল আওলাকী (রাহিমাহুল্লাহ) -এর আলোচনা। তন্ময় হয়ে শুনলাম আজ -- এত সুন্দর, পরিষ্কার, অকপট, সাবলীল আলোচনা, এত গভীর আলোচনা আমি কখনো শুনেছি কিনা মনে করতে পারলাম না। হয়ত আমার কল্পনাতেও ছিলনা। 

৬ নভে, ২০১২

আলাপন : এই পৃথিবীর সবকিছুর শেষ আছে

 এই পৃথিবীর সবকিছুর শেষ আছে।

আমাদের এই জীবনের শেষ আছে, দুঃখের দিনগুলোরও শেষ আছে। সুখের দিনগুলোও একটানা থাকেনা, তারও শেষ থাকে। এই পৃথিবীটার সবকিছুই এমন। অত্যাচারেরও শেষ আছে, শেষ আছে দাম্ভিকের দম্ভের, মিথ্যাবাদীর মিথ্যার। একদিন শক্তিশালীও হবে দুর্বল। রাস্তার মোড়ের জওয়ান রগচটা ছেলেটাও বৃদ্ধ বয়েসে লাঠি নিয়ে হাঁটবে। তাই যেকোন ক্ষমতার, শক্তির এই ভুলে ডুবে থাকার অর্থ নেই কোন, এ এক পরিপূর্ণ বিভ্রমমাত্র...

কেবল আল্লাহর বান্দা যারা, তারা জানে, এই জীবন ক্ষণিকের জন্য, সবই খেলনামাত্র। আখিরাতের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। তাই তারা বিপদে সবর করে, আনন্দেও মাত্রাছাড়া হয়না, বরং আরো কৃতজ্ঞ হয় আর বুঝে তার এই ভালো সময় অনেক দায়িত্ব নিয়ে হাজির হয়েছে তার জন্য।

আল্লাহ বলেছেন ধৈর্য্য আর সালাতের সাহায্যে সাহায্য প্রার্থনা করতে। আল্লাহ বলেছেন ধৈর্যধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ। নিশ্চয়ই সত্য আর মিথ্যা এক নয়। নিশ্চয়ই জাহান্নামের নিকৃষ্ট বাসিন্দা আর জান্নাতের সম্মানিত অতিথিগণ এক নয়।

নিশ্চয়ই এই পৃথিবীর সবকিছুই নশ্বর, আখিরাতের জীবন অনন্তকালের।

*********
০৬ নভেম্বর, ২০১২ ঈসায়ী

চোখের সামনে অজস্র অন্যায়, বল কী উপায়?


চোখের সামনে ক্রমাগত অজস্র অন্যায়, মিথ্যা, কাম, ক্রোধ আর হিংসার জয় ও সদম্ভ আধিপত্য দেখে মন খারাপ হয়ে যায় প্রতিদিন। ভাবছিলাম, আমি জানি, এই কোটি কোটি মানুষের মাঝে আমি খুব ক্ষুদ্র একটা স্বত্ত্বা। আমি কি পারব এই দুনিয়ায় সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে? আমি কি পারব এই অন্ধকারের মাঝে আলোকে স্থাপিত করতে? হয়ত আমি জ্বলে ওঠার আগেই নিঃশেষ হয়ে যাব, পারব কি সত্যিই কিছু করতে? পরক্ষণেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা মনে হলো। তার মন-প্রাণ কতই না সুন্দর ছিল, তিনি ছিলেন এই সৃষ্টিজগতের রাহমাতস্বরূপ, যিনি আরবের মানুষদের কাছে আল-আমিন হিসেবে পরিচিত ছিলেন নবুওয়াতের পূর্ব পর্যন্ত; অথচ শুধুমাত্র আল্লাহর দ্বীনের কথা বলার কারণেই তাকে কতরকম অপবাদ দেয়া হয়েছিল, শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা তাকে সইতে হয়েছিল অবিরত, একদম নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকেও। তবু তিনি নিঃশঙ্কোচে, নির্দ্বিধায় মানুষের উপকার করতেন, ভালোবাসতেন তাদের অন্তরের পরিবর্তনের আশা করে। কিয়ামাত পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বজাহানের মানুষের মুক্তির পথের দিশার জন্য তিনি চিন্তা করতেন, সে সুবিশাল দায়িত্বও তার কাঁধেই ছিল। তিনি সেই চাপে পিষ্ট হয়ে হারিয়ে যাননি, আমাদের মতই মানবজীবন ধারণ করেছেন -- শুধু কাজগুলো করেছিলেন সুনিপুণ করে। আমরা তো সেই মহান মানুষটারই অনুসারী, তাঁর আদর্শ, চরিত্র আর কর্মের অনুসারী।
...........................
এটুকু লিখতেই এইমাত্র আমার একজন কলিগের স্ট্রোকের খবর পেলাম। বয়স তার পঁয়ত্রিশের মতন হবে। কর্মচঞ্চল, হাসিখুশি লোকটা গতকাল রাত থেকে সিসিইউতে ভর্তি। সবাই খবরটাতে খুব অবাক হচ্ছে। আমার মনে হলো, আমাদের জীবনটা আসলে খুবই ছোট, আর আমাদের জীবনের শেষটাও অবধারিত, যার সময়টা কেবল আমাদের জীবনের মালিক, আল্লাহ জানেন। তাই, কোন বিশাল কিছু করে ফেলাতেই না, বরং আমাদের কাজটুকু মূলত নিজ নিজ সামর্থ্যের সম্পূর্ণটা উজাড় করে দেয়া। মনের মধ্যে যেন অজুহাত নিয়ে ঘুরে না বেড়াই, সন্দেহ আর নোংরামি না থাকে, ক্রোধ আর হিংসা, মিথ্যার প্রতি ভালোবাসা, খারাপ লোকের প্রতি শ্রদ্ধা বা ভালোবাসা না থাকে। সৎ ও সুন্দরকে যেন সবসময় সমর্থন করি, ছড়িয়ে দিই, আর অন্যায়কে যেন সবসময় প্রতিহত করি সর্বোত্তম সম্ভাব্য উপায়ে।

আর এই প্রসঙ্গে হাদিসটি মনে পড়ে যায়--

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ♥♥ “আল্লাহ তাআলা তোমাদের চেহারা ও দেহের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না; বরং তোমাদের অন্তর ও কর্মের প্রতি লক্ষ্য আরোপ করেন।” ♥♥ [মুসলিম]

# রেফারেন্স: রিয়াদুস সলিহীন -৭

৫ নভে, ২০১২

অনন্যার অরণ্যপ্রেম [ভালোবাসার অণুগল্প]


অনন্যা হঠাৎ এতটা বদলে যাবে আশা করিনি। ও সবসময়েই আমাকে পছন্দ করত, আর সেইটা বাড়াবাড়ি টাইপের পছন্দ ছিল। সেই পছন্দের সাথে মুগ্ধতা ছিল বলে মনে হত আমার। অনন্যাকে নিয়ে আমার অধিকার অনুভব করার ব্যাপার ছিল সেই স্কুলে পড়ার সময় থেকেই। আমার স্কুল ছুটি হত আগে, সে বাসায় ফেরার সময় আমি মাঝে মাঝে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে যেতাম। সিঁড়িতে দিয়ে উঠার সময় আমার দিকে হাসি দিতো অনন্যা। ও হাসলে গালে টোল পড়ত, আমার সেইটা খুব পছন্দের ছিল।

ক্লাস ফোরে উঠতেই আমাদের বাসা বদলে গেল। ওরা তখনো আগের বাসায় থাকে। অনেকদূর হেঁটে ওদের বাসায় যেতে হত। আমি যেতাম মাঝে মাঝেই। খালাম্মা আগের মতন আদর করত না টের পেতাম। আগে বাসায় গেলেই খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে স্কুলের প্রশ্ন করতেন, আম্মা আর ভাইয়া আপুদের কথা জিজ্ঞেস করতেন, পরে কেমন না দেখার ভান করতেন যেন। বুঝতে পারতাম তাল কেটে গেছে।

৩ নভে, ২০১২

অন্যের ভালো দেখে বুকে জ্বলন লাগে যখন



বলতে দ্বিধা নেই, গতকাল থেকে যে একটা পরশ্রীকাতরতার সাথে যুদ্ধ করছিলাম, তা আমি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। হিংসা নিয়ে ছোটবেলা থেকেই নিজের উপরে আমার অনেক হোমওয়ার্ক করা ছিল, মোটামুটি জেগে ওঠামাত্র ধরতে পারতাম, কিন্তু এই পরশ্রীকাতরতা ব্যাপারটা তেমন একটা টের পাইনি কখনো। ক'দিন আগে একজনের জীবনের সুন্দর অর্জন জানার পর থেকে তার জীবনের প্রাপ্তির সাথে নিজের প্রাপ্তিকে তুলনা করতে বসে গিয়েছিলাম অযথাই -- ফলস্বরুপ অশান্তি আর অস্থিরতায় ছিলাম সূক্ষ্মরকম।

এই হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার ব্যাপারে মনে হয় মানুষের নফস স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করে। তাদেরকে চিনে-বুঝে তবেই শুধরে নিতে হয় নিজেকে। নইলে তা খুবই মারাত্মক ঈমান ধ্বংসকারী অস্ত্র। হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা নিয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসের আলোকে ইমাম সুহাইবের আলোচনাতে সেদিন কিছু কথা শুনছিলাম। তা থেকে কিছু চিন্তা শিখেছিলাম --

আলাপন : অজ্ঞতা নিয়ে অজ্ঞতা

আজকে সপ্তাহের বরকতময় দিনটি -- জুমুয়া'র দিন। নামাযের পর ইমাম সাহেবের আবেগঘন মুনাজাতের পর থম মেরে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম। আমার কাছে বারবার মনে হচ্ছিলো, আমরা যারা নামকাওয়াস্তে মুসলিম, আমরা আসলে জানিই না আমাদের রব যিনি, তার পরিচয়টা কেমন। আমি অফিসের অচেনা বসের কাছে যাবার আগে অন্যদের প্রশ্ন করে জেনে নিই -- উনি কেমন মানুষ, রাগ করেন কিনা, কতটা অপরাধ হলে মাফ করে দেন, কী করলে খবর করে দেন... ফলে তার পছন্দ অনুযায়ী চলতে সুবিধা হয়।

আমার পড়াশোনা আজীবন নন-ইসলামিক, বিজ্ঞান, অতঃপর প্রকৌশল বিষয়ক ছিলো। জীবনে ইলেকট্রনকে ক্যাথোড থেকে অ্যানোডে পাঠাতে, আর তাতে কতখানি বিদ্যুত উৎপাদন হবে, তা জানতে যতটা সময় দিয়েছিলাম -- আমার আল্লাহকে জানতে তার তিল পরিমাণ সময়ও দিইনি। একদিন খোঁজ পেয়ে রেজি করে অনলাইন ইসলামিক ইউনিভার্সিটি (IOU) তে ফাউন্ডেশন অফ ইসলামিক স্টাডিজ (ফ্রি) কোর্সটা আমি করেছিলাম প্রায় একবছর ধরে। অল্প কয়টা অডিও আমি মাসের পর মাস শুনতাম বাসে বসে থেকে অফিসে যাবার পথে ও ফিরার পথে।

আলাপন : কিছু দুঃসহ অভিজ্ঞতা

আলহামদুলিল্লাহ! আজকে একটা অন্যরকম জিনিস খুঁজে পেলাম। জীবনের অনেক তিক্ত, দুর্বিসহ, অনাকাকঙ্খিত ও যন্ত্রণাদায়ক মূহুর্ত ছিলো, যেগুলো নিয়ে অনেক বিব্রত ছিলাম অনেক অনেক বছর।

আজ কিছু পড়াশোনা করতে গিয়ে উপলব্ধির ক্ষেত্রে সরাসরি উদাহরণ হিসেবে কাজ করেছে সেই অভিজ্ঞতাগুলো। অনেকগুলো বিন্দু মিলিয়ে একটা রেখা টেনে ফেলার মতন... সহজেই বুঝে ফেলে অনেক ধাপ পেরিয়ে গেছি চিন্তায় আর উপলব্ধিতে। সুবহানাল্লাহ ... অন্যরকম ভালো লাগলো।

আজকে সন্ধ্যার পর কয়েকবার মহিমান্বিত কুরআনের একটা আয়াত মনে হচ্ছিল। একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার সময় না চাইতেও হয়ত কিছু সময়ের মুখোমুখি হলাম, আল্লাহ আসলে হয়ত আমাদের সেই সময়গুলোকে ট্রেনিং পিরিয়ড হিসেবে দান করলেন, যা আসলে কল্যাণকর।

মনে পড়ে সেই আয়াতখানি...

♥ "... আর আল্লাহ্ পরিকল্পনাকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম। ♥

[সূরা আল-ইমরান : ৫৪]

এত কষ্ট, এত অভিযোগ, ধৈর্যধারণ করবো কীভাবে?



কিছুদিন আগে জুমুআর দিন মসজিদে ইমাম আলোচনাতে সবরুন জামিল এর উদাহরণ হিসেবে হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম এর কথা বলছিলেন। যখন তার ছেলেরা ইউসুফ আলাইহিস সালামকে বিক্রি করে এসে উনাকে মিথ্যা মৃত্যুর সংবাদ দিয়েছিল, তখন তিনি সাথে সাথেই বলেছিলেন, "ফা সবরুন জামিল, ওয়াল্লাহু মুস্তা'আন..."

ইমাম সাহেব বলছিলেন, উত্তম সবর সেটাই, যখন যেকোন কষ্টের জন্য আল্লাহর কাছে কোন অভিযোগ ছাড়াই অনতিবিলম্বে নিজেকে সোপর্দ করে ধৈর্যধারণ করা হয়। আর এমন ধৈর্যশীলদের সাথেই আল্লাহ আছেন। ধৈর্যধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ।

৩১ অক্টো, ২০১২

অনন্য গ্রন্থ রিয়াদুস সলিহীন পড়াশোনা


রিয়াদুস সলিহীন গ্রন্থটি ইমাম নববী (রহিমাহুল্লাহ) এর সংকলন। এই মানুষটা মাত্র ৪৫ বছর বেঁচে ছিলেন, ভাবলে শ্রদ্ধায় বুক আর্দ্র হয়ে আসে। তার এই মহতী গ্রন্থটি সমগ্র বিশ্বের স্কলারদের কাছেই সমাদৃত।

আমি ডক্টর বিলাল ফিলিপস, ইমাম সুহাইব ওয়েবকে দেখেছি এই বইটি থেকে শিখতে উৎসাহিত করেছেন। এই গ্রন্থে ইমাম নববী বিষয়বভিত্তিক কুরআনের আয়াত এবং হাদিস একসাথে করেছেন। এই বিষয়গুলো এতই সুন্দর করে সাজানো যে হাদিস এবং কুরআনের বিশাল জগতে কোথা থেকে কী পড়বো এই টেনশনে পড়তে হয়না। বরং আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সুন্দর একটা নির্দেশনা দিবে এই গ্রন্থ। কেবল হাতে নেয়াই আসল কাজ।

২৬ অক্টো, ২০১২

ক্রিকেট ম্যাচ, চিয়ার গার্ল আর আমাদের ডিসেনসিটাইজড হওয়া

জীবনের একটা সময় কাটিয়েছিলাম, যখন কোন ক্রিকেট খেলা মিস দিতাম না। পড়াশোনার বাইরে বিনোদন বলতে তখন কেবলই ছিল গল্পের বই পড়া আর ক্রিকেট দেখা। তাই মন দিয়ে দেখা গত শতাব্দীর শেষ দশকের অজস্র ক্রিকেটিয় খবর অবললীলায় বলতে পারতাম।

খেলার মাঠে চিয়ার গার্লদের উদ্বোধন ও তাদের নিয়মিত উপস্থিতির পর থেকে কখনো ক্রিকেট খেলা দেখতে টেলিভিশনের সামনে বসতে সাহস করতে পারিনি। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাই মিলেই একটা সময় খেলা দেখা হত। অথচ চিয়ার গার্লদের ওই পোশাকে নর্তন কুর্দন এবং তাদের প্রতি ক্যামেরার আকর্ষণের কথা যা স্মৃতিতে আছে, সেটাই আতঙ্ক জাগায় মনে।

২৪ অক্টো, ২০১২

আমরা পথে ঘাটে ভালোবাসা বিলি করে বেড়াই, ঘরে আমাদের দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে


আমরা কমিউনিকেশনের যুগে বসবাস করছি, যেখানে ভালোবাসা নামক পণ্যের প্রবল প্রচার আর প্রসারে ব্যতিব্যস্ত আমাদের জীবন। টেলিভিশন কমার্শিয়াল, সিরিয়াল, মুভি আর বিলবোর্ডের মাধ্যমে ডুবে থাকি ভালোবাসায়। আমাদের চারিদিকে ভালোবাসা -- ট্যালকম পাউডার বেচতেও ভালোবাসা, লোশন বেচতেও কোমলতার ভালোবাসা, ভালোবাসার টানে টেনে হিঁচড়ে পাশে মানুষ-অমানুষ সবাইকে নিয়ে চলে আসে মোবাইল অপারেটররা। আমাদের ভালোবাসারা বিক্রি হয় প্রতিটি পণ্যে।

এই ভালোবাসাবাসির দুনিয়ায় আমরা ঘরের বাইরে গেলে পরিচিত পরিমন্ডলে বেশ আমাদের অনেকেই বন্ধুদের সাথে, ক্লাসমেট ও কলিগদের সাথে, এমনকি হয়ত যেকোন অপরিচিত মানুষের সাথে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলি, হয়ত প্রয়োজনেই। ইচ্ছে না হলেও অন্ততঃ চেষ্টা করি ভালোভাবে কথা বলতে যেন তাদের মনে খারাপ না লাগে। অথচ নিকটাত্মীয় ভাইবোন, বাবা-মায়ের সাথে কোন ধরণের সৌন্দর্য ছাড়া চাঁছাছোলা কুৎসিত শব্দ দিয়ে কথা বলি...

২১ অক্টো, ২০১২

কতিপয় হলকায়ে জিকির আর আমাদের এফএম প্রজন্মের ভালোবাসার গল্প


আমার বাসার নীচতলায় পুরো স্পেসটাই ফাঁকা থাকে, বাড়ির মালিক একটি দরবার শরীফের পীরের মুরিদ। আজকে তাদের পাক্ষিক জিকির দিবস। ঘরভর্তি জনাত্রিশেক লোকের 'লা ইলাহা এল্লাল্লাহ' (ইল্লাল্লাহ হওয়া উচিত) চিৎকারে এলাকা প্রকম্পিত হবার অবস্থা। আল্লাহর একত্ববাদকে কেবলমাত্র চিৎকারের মাধ্যমে জনসাধারণের মনে বসিয়ে দেয়ার ভাবনায় এই আয়োজন কিনা তা কে জানে!! বিগত ঘন্টাখানেক ধরেই এই সশব্দ জিকির চলছে। চলবে অন্তত রাত দশটা অবধি... গমগম শব্দে তৈরি হয়েছে এক ভয়াল পরিবেশ, বুকে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। তাদের এই সশব্দ স্মরণশালায় নেই কোন সৌন্দর্য, মাধুর্য, শুনে আত্মায় কোন প্রশান্তি আসে না...

১৮ অক্টো, ২০১২

প্রশান্ত হৃদয়

আজ অদ্ভুত একটা অনুধাবন হলো, একদম নতুন, একদম অন্যরকম!! আজকে কৃতজ্ঞ চিত্ত আর প্রশান্ত হৃদয়ের একটা স্বরুপ জানলাম...

ইমাম সুহাইব ওয়েবের একটা আলোচনা শুনছিলাম আজ। একটা বিষয়ে যা বুঝেছি তা অনেকটা এমন --

দুনিয়ার জমিনে, জীবন ধারণে আমরা অনেক স্যাক্রিফাইস করি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য। হয়ত সবাই কোন উপলক্ষে গান শুনছে যখন, ছেলেমেয়ে এলোমেলো আনন্দ নাচানাচি করছে, তখনো আমরা এইসব বিষয়কে এড়িয়ে চলছি আল্লাহর দ্বীনকে পালন করার জন্য। কারণ আমরা জানি এইসব আচরণের বহুমাত্রিক ক্ষতি আমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে জীবনকে ফিতনাময়, অশান্তিময় করে ফেলে। সামনে পিছনে অজস্র অবৈধ টাকা-পয়সার স্রোত, অথচ আমাদের জীবনে অনেক অভাব থাকলেও আমরা হয়ত কষ্টই করে যাচ্ছি...

১৪ অক্টো, ২০১২

আলোকিত মানুষদের জানা হয়নি এতকাল

ইমাম ইবনে তাইমিয়া, ইমাম শাফিঈ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম আয যাহাবী, ইমাম আর রাজী, ইমাম আস-সুয়ুতি , হাসান আল বাসরি .... (রহিমাহুল্লাহ)

জীবনের দীর্ঘ একটা সময় এই মানুষগুলাকে চিনতামই না প্রায়। নাম শুনলেও ধারণাই ছিলনা উনারা কারা, কখন এসেছিলেন এই দুনিয়ায়, কবে চলে গেছেন আল্লাহর কাছে। কি দিয়ে গেছেন তারা আমাদেরকে। কল্পনাই ছিলনা তারা কতটা অসাধারণ, কত গভীর আর উঁচুমাপের জ্ঞান রাখতেন !!

অথচ বিগত শতাব্দীর প্রায় সমস্ত বিখ্যাত লেখকদের আমি চিনি। অজস্র উপন্যাস আর অনুবাদ পড়েছি দেশ-বিদেশী লেখকদের। এমন একটা সময় ছিল জীবনের, আমি ইংরেজি সাহিত্যের বিগত কয়েক শতকের লেখকদের নাম, তাদের বিখ্যাত সবগুলো বই চিনতাম, কিছু কিছুর কাহিনীও জানতাম।

যেই জ্ঞান আমাকে আমার আসল পথের আলো হয়ে পথ দেখাবে, সেই আলোকবাহী মানুষগুলোকে আমি চিনিনি, তাদের অসাধারণ মোহমুগ্ধময়, অন্তরালোকিত করার সেই সাহিত্য, সেই দর্শন আমার অজানাই রয়ে গেছে। মাঝে মাঝে এখানে ওখানে কিছু উদ্ধৃতি পাই, কিন্তু জানিনা কবে তাদের লিখে যাওয়া বইগুলো পড়তে পারব। 

কত পড়া বাকী, কত যে শেখা বাকি, কত যে কাজ বাকী... 

জানতেই যদি না চাইলাম, জানতেই যদি না পারলাম, করতেই যদি না পারলাম কাজ, বদলে দিতে না চাইলাম, না পারলাম -- নিজেকে আর আমাদের সমাজকে, মানুষদেরকে... 
তবে, মুক্তি মিলবে কী করে? :(

১৩ অক্টো, ২০১২

আমার পছন্দের ওয়েবসাইট তালিকা

একটা সময় ইসলামের সাথে জীবনবোধকে কীভাবে সংযোগ করতে হবে, এমন কথাবার্তা খুঁজেই পেতাম না অনলাইনে বাংলা ভাষায়। দু'একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই আর আপু অনলাইনে লিখতেন নিজেদের মতন করে, তাদের দেখে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। তবু, যারা ইসলামের নামে কুৎসা রটায়, তাদের প্রচেষ্টা আর ভলিউমের তুলনায় সেটা হয়ত হাজারগুণ ক্ষুদ্র ছিল। আমাদের হয়ত বুদ্ধিবৃত্তিক কিছু করার চাইতে আবেগ খাটানোর প্রক্রিয়াটা মাত্রাতিরিক্ত রকমের বেশি, তাই ঘুরে ফিরে সবখানে লোকজনকে দুষেই দিন যায়।

অনেকদিন আগে থেকে ঘাঁটতে ঘাঁটতে অনলাইনে আমি কিছু সুন্দর ওয়েবসাইটের খোঁজ পেয়েছিলাম একসময়। সেগুলোতে নিয়মিত গিয়ে ঘুরে ফিরে এলে মন ভালো হয়ে যেত। এমন কিছু ইংরেজি সাইটে এখনো ঢুঁ দেই মাঝে মাঝে, কতগুলোতে নিয়মিত যাই, চিন্তার খোরাক পাই, নতুন মাত্রা পাই।

একটা তালিকা উল্লেখ করছি, আমি বিশ্বাস করি, ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ!

 বাংলা ভাষায় কিছু বিশেষ সাইট
@@ এছাড়াও যে লেখাটি দেখতে পারেন:: বাংলা ভাষায় দারুণ কিছু ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেইজ

১১ অক্টো, ২০১২

যখন অস্থির লাগে প্রাণ


জীবনের উদ্দেশ্য কী আর সেই উদ্দেশ্যে নিজের জীবনকে কীভবে ধারণ করতে হবে, এটা বুঝে আমরা অনেকেই পুরোনো ভুল জীবনযাপন ধরনকে বদলে ফেলি। তখন বেশ কঠিন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

আপনি যেদিন থেকে জীবনকে যখন *কেবলমাত্র* আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ধারণ করতে চাইবেন, যেদিন পুরোনো অর্থহীন কাজকর্ম আর পরিচিতমহলের, বন্ধুমহলের তুচ্ছ সব কথাবার্তা, গীবত, পরশ্রীকাতর আলাপ, হট জোক্স টাইপের আলাপ থেকে ধীরে ধীরে সরিয়ে আনতে চাইবেন -- তখনই আপনার বন্ধুশূণ্যতা হবে, নিজেকে হয়ত নিজভূমে পরবাসী মনে হবে, কখনো কখনো নিজেকে ভুল ভুল মনে হতেও পারে...

১০ অক্টো, ২০১২

একজন মেঘমানুষ আর কিছু হাসিমুখ কথা

আমার কাছে মনে হয় কিছু মানুষ হলো একরাশ মেঘের মতন। তাদের কথাগুলো স্নিগ্ধ, কোমল, তাদের চিন্তাগুলো মায়ামাখা, আন্তরিক আর হৃদ্যতাপূর্ণ... তাদের সাথে কথা বললে মনে হয় যেন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে মুখের উপরে...

আল্লাহ এমন বাঙময়, প্রিয়ভাষী/প্রিয়ভাষিণী মানুষদের সংখ্যা বাড়িয়ে দিন আমাদের মাঝে। তারা যেন তাদের স্নিগ্ধতা আর হৃদয়ের কোমলতা আর সৌন্দর্যে আমাদের মতন হতভাগাদের মনের, চিন্তার কষ্টকে সারিয়ে দেন আচানক রহমত হয়ে এসে... আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর রাহমাত যেন এমন মানুষদের উসিলায় আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিন আরো আরো বেশি...

আজ দিনভর বৃষ্টি হচ্ছে। সেটা খুব সুখানুভূতির উদ্রেক করছিল না কিছু কারণে। কিন্তু অমন মেঘময় মানুষদের সাথে কথা বলে মনের ক্ষতগুলো একদম দূর হয়ে গেলো... সুবহানাল্লাহ। মন সিক্ত হয়ে আছে... ভালো লাগায়, ভালোবাসায়...

যেসব মানুষের সাথে কথা বলে আল্লাহর স্মরণে অন্তর বিগলিত হয়, আল্লাহর প্রতি বেশি কৃতজ্ঞতা জাগে, তারাই আসলে আল্লাহর আলোয় আলোকিত অন্তর ধারণ করেন...

৮ অক্টো, ২০১২

ঘরে ফেরার আয়োজন

প্রতিদিন কত কিছুই তো ঘটছে জীবনে, ঘটবেও। উত্থান আর পতন প্রতিদিন, প্রতিবেলা। অজস্রবার, অজস্রভাবে... অনেক যন্ত্রণা আর কষ্ট। এরই মাঝে কিছু সুন্দর মূহুর্তও আছে, থাকবে। থাকবে --

অজস্র ভুল,
ভুলের সংশোধন,
অনুতাপ,
আঘাত,
ভালোবাসার বসন্ত,
অভাবের উত্তাপ,
অসুস্থতা,

৭ অক্টো, ২০১২

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার নামে গুগল সার্চ

ইমাম ইবনে তাইমিয়ার নামে গুগল সার্চ দিয়ে একটা আস্তাকুঁড় ব্লগে চলে গিয়েছিলাম। আরেকটা ওয়েবসাইটে গিয়েছিলাম। আফসোস!! চোখে পানি আসতে বাকি ছিল। নরাধমগুলো এমনভাবে ভাষা ব্যবহার করেছে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা | Imam Ibn Taimiyyah (রাহিমাহুল্লাহ)-কে নিয়ে, যেন তাদের বাসার পাশের বস্তির রিকশাওয়ালাকে নিয়ে গীবত করতে বসেছে। অদ্ভুত আর আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি। ইসলামের নামে ওয়েবসাইট খুলে রেখে, ব্লগ খুলে রেখে এসব দিয়ে আখিরাতের ভয়াবহতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কি? আর আমরা যারা নিজেদের মুসলিম মনে করি, মুক্তি চাই আল্লাহর কাচে, আমাদের কর্মতৎপরতা কোথায়? আমরা আসলে কী করি? কয়টা প্রোডাক্টিভ কাজ করি একটা দিনে? কয়টা জিনিস শিখি? শেখাই? কাজে লাগাই জ্ঞান?

 আশ্চর্য লাগে, মানুষের বিশ্বাসে, চেতনায়, আচরনে, দৈনন্দিন জীবনধারণে ইসলামী অনুপ্রেরণা থাকে না, থাকেনা মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ -- অথচ মূর্খতায় ডুবে থাকা ঘৃণা উদগীরণে সদা তৎপর থাকে আমাদেরই সমাজের মানুষগুলো। একটা সময় এদের দেখে হতাশ হতাম -- এখন সম্পূর্ণ অনুপ্রেরণা পাই, এরা আমাকে আরো বেশি দৃঢ়চেতা করে দেয়। নিজের ভিতরের পশুটাকে ভালো করে চিনতে শেখায়। তার বিরুদ্ধে নিজেকে প্রস্তুত হতে অনুপ্রাণিত করে, সচেতন করে।

যেই মানুষগুলো জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর পথে -- জ্ঞানে, সৎকাজের প্রতিষ্ঠায়, অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদে যারা কাঁপিয়ে দিয়েছেন ন্যায়হীন নীতিহীন শাসকদের অন্তরাত্মা; এমন মানুষদের নিয়ে প্রবল তুচ্ছ জ্ঞানসম্পন্ন পাপাসক্ত মানুষগুলো গন্ডমূর্খ না হলে কীভাবে কুৎসা রটায়? যিনি আখিরাতে মুক্তি চাইবেন, তিনি অবশ্যই নিজের প্রতিটি কাজের প্রতি খেয়াল রাখবেন -- এটাই সত্য। আল্লাহ্‌ যেন আমাদের সরল সঠিক পথে রাখেন, যেন আমরা তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আমাদেরকে তিনি পথভ্রষ্ট অভিশপ্তদের দল থেকে যেন মুক্ত রাখেন। আমিন।


২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

৫ অক্টো, ২০১২

ফেসবুকে নির্লজ্জতার প্রসার ও কিছু চিন্তা


আধুনিক তরুণ প্রজন্মের বিশাল একটা অংশ এখন ফেসবুক ব্যবহার করে। প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে এই সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে সবারই ব্যাপক পদসঞ্চালন। টুইটার ও ফেসবুকের মাধ্যমে ক্ষণিকের মাঝেই জেনে যাওয়া যায় সারা পৃথিবীর অনেক খবর। আন্তর্জাতিক সাংবাদিকগণ তাদের ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন খুবই নিয়মিভাবে। তেমনি সমস্ত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও এখানে সংযুক্ত হয়েছে সহজেই মানুষের কাছে পৌছাতে, তাদের কাছে নিজেদের সেবা ও পণ্য সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া, ভোক্তাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নেয়া এবং সেই অনুযায়ী ব্যবসার উৎপাদন বৃদ্ধি করার নজীর রয়েছে পর্যন্ত। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী এবং খেলোয়ার ও অন্যান্য সেলিব্রিটিরাও তাদের ভক্তদের অনেক কাছে চলে যেতে ব্যবহার করে ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সোশাল নেটওয়ার্ক।

৩ অক্টো, ২০১২

কী চাই? কেমন করে চাই?

কোন বাঁধা গৎ বলতে না, বরং স্রেফ একটা বই পড়তে গিয়ে একটা উপলব্ধির কথাগুলো বলতে ইচ্ছা করছে। বহুদিন ধরে দেখে আসা অনেকগুলো বিষয়ে নিজের একটা অনুধাবন হলো।

এই সমাজে বেশিরভাগ মানুষের কাছেই ইসলামটা একটা ধর্মীয় আচার, যেই ফ্রেমের বাইরে একসময় আমিও ভাবতে পারতাম না। "আমার জীবনের এই কাজটি কি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বা তার নির্দেশিত পথে? " -- এই প্রশ্নটা যিনি তার প্রতিটি কাজেই করেন, করতে আগ্রহ রাখেন আন্তরিকভাবে -- মূলত তিনিই ইসলামকে দ্বীন হিসেবে বুকে জড়িয়ে ধরতে চান। তিনিই আসলে, আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে তার দাসত্বে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান।

২ অক্টো, ২০১২

[গ্রন্থচারণ] কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা : খুররম মুরাদ




ওস্তাদ খুররম মুরাদের লেখা 'Way To Quran' বইটার বাংলা অনুবাদ আমি সেদিন দোকানে পেয়ে চোখ বন্ধ করে খামচে ধরে কিনে ফেলেছি! বইটার নাম 'কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা'। এরকম রত্ন টাইপের জিনিসের দাম এত কম! বইটা হাতে নিয়ে বুক কেমন টলমল করে উঠেছিল। যেদিন ইংরেজিতে বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম, অল্প ক'পৃষ্ঠা পড়ে বারবার মনে হচ্ছিল, আমি যদি অনুবাদ করে সবাইকে পড়তে দিতাম, সবার কতইনা উপকার হত!! এই বইটা উনি কুরআন পড়ার ব্যাপারে যারা শিক্ষানবীস, কোথায় কেমন করে পড়লে বেশি উপকৃত হওয়া যেতে পারে, তাদের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। অনেকটা আমার মতন ছেলেপিলেদের জন্য। বাংলা অনুবাদটাও বেশ সুন্দর লাগলো পড়ে। কুরআন ছাড়া জীবনে কোন কিছুই ঠিকমতন করতে পারবনা আমরা, পারিনা, হয়না। এত সুন্দর এই মহান গ্রন্থটিকে কত অবহেলাতেই না আমরা ফেলে রাখি।

ইনশাআল্লাহ এই বইটি আমাদের উপকারে আসবে সবারই। দারুণ এই বইটার লিঙ্কঃ


ওস্তাদ খুররম মুরাদ কুরআন নিয়ে আমাদের জন্যই হয়ত বলেছিলেন সুন্দর একটা কথা:

"কেউ যদি কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও অন্তরে সংস্পর্শ না লাগে, হৃদয় আলোড়িত না হয়, জীবন অপরিবর্তিত থেকে যায়, খালি হাতে ফিরেন, যেভাবে এসেছিলেন ঠিক সেভাবেই প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে তার চেয়ে মর্মান্তিক দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে?" 

আল্লাহ যেন আমাদের দুর্ভাগাদের দলে না ফেলেন। আল্লাহ যেন তার এই গ্রন্থটিকে বুকে রেখে তার উপর আমল করে তার সন্তুষ্টি অর্জনপূর্বক দুনিয়া থেকে আমাদের নিয়ে যান তার কাছে। নিঃসন্দেহে আমরা সবাই আল্লাহরই এবং আমাদেরকে তার কাছেই ফিরে যেতে হবে...

* * * *
বইটি সম্পর্কে কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য
বইয়ের নাম: কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা
লেখক: খুররম মুরাদ
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য: ৬৫ টাকা
প্রকাশক: বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার।

৩০ সেপ, ২০১২

স্বপ্নচারীর স্মৃতিচারণ


আজকে হঠাৎ ব্লগে ঢুকে পরিসংখ্যান দেখে খানিক চমকে উঠে ভালোলাগায় মন ভরে গেল। এরই মাঝে কখন যে ৭২ হাজার বার পড়া হয়ে গেছে আমার লেখাগুলো -- টেরও পাইনি আমি! অথচ, যেদিন ব্লগে একাউন্ট খুলেছিলাম, সেদিন একটা দুঃসাহস ছিল নিজের মাঝে -- জানতাম না কী লিখব, তবে তখন চারিদিকে অজস্র খারাপ কথা, রাজনৈতিক ক্যাচাল, আস্তিক-নাস্তিক ক্যাচালের বেড়াজালে ব্লগ পড়তে বিধ্বস্ত লাগত নিজেকে। মনে হত, যদি একটা সুস্থ জায়গা পেতাম, তাহলে এই জীবনে যে অনেক সুন্দর কিছু কথা আছে, সেগুলো নিয়ে অন্তত একাই লিখে যাব, কেউ পড়ুক বা না পড়ুক।

২৮ সেপ, ২০১২

বিয়েপাগলা ছেলেদের কথা


ঘটনা ১

আজকাল যার সাথেই দেখা হয়, সবার আগে প্রশ্ন করে, "ভাই, বিয়ে কবে করবেন" বা "কিরে, বিয়ে কবে তোর?" !!

এইতো সেদিন ভার্সিটির এক ছোট ভাইয়ের সাথে দেখা হলো, সালাম আর কুশলাদি বিনিময়ের পর সবার আগে প্রশ্ন,

-- "ভাই কি বিয়ে করেই ফেলেছেন?"
-- "না রে ভাই"।
-- "তাহলে কি শীঘ্রই দাওয়াত পাচ্ছি?"

২৬ সেপ, ২০১২

মনখারাপ যেভাবে হারিয়ে যায়

প্রায় সময়েই খুব মন খারাপ আমাকে আঁকড়ে ধরতে নেয়...
যখন আমারই চারপাশের কাছের মানুষদের মাঝে প্রায় সবাইকেই দেখি জাগতিক আর্থিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক দিক থেকে এবং আত্মিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকেও উন্নতি করেই চলেছে ক্রমশ, অথচ আমি যেন ঠিক আগের জায়গাটাতেই আঁটকে আছি -- উন্নতির নামগন্ধও নেই। এত চেষ্টা করি তবু যেন বারবার পা পিছলে পড়ি সবধরনের প্রচেষ্টাতেই!

তখন খেয়াল হয়, আরো শত-সহস্রজন মানুষের চাইতে বেশি নিয়ামাত আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন, যা পেয়েছি, তার হিসেবটুকুই কি দিতে পারবো? এটুকুও না থাকতে পারতো, এই শারীরিক অসুস্থতাটুকুই তো তাঁর ইচ্ছাতে শতগুণ বেড়ে যেতেই পারে, তখন হয়ত স্বাভাবিক চলাচলের যোগ্যতা দূরে থাক, কীবোর্ড চাপার মতন শক্তিও থাকবে না। এই জগতের হাজার হাজার নিয়ামাত আমি পেয়েছি একদমই বিনামূল্য, বিনা পরিশ্রমে... তবু কতই না অপ্রাপ্তি আমার!

২৪ সেপ, ২০১২

ফেবুলাপঃ যারা ফেসবুকে তর্কে জুড়ে শায়খ হয়ে গালাগালি করি, তাদের জন্য স্মরণিকা

একজন ফেসবুক শায়খকে বলছি, হ্যাঁ, আপনি যত বেশি স্কলারদেরকে ধুইতে পারবেন, যত তাদের গায়ে কালি লাগাইতে পারবেন, ততই বেশি নেকি হবে আপনার। ঈমানকে জিন্দা করতে হইলে প্রতিটা অপছন্দ হওয়া স্কলারের নামে একশ লাইন করে লিখতে হবে। নইলে কিন্তু আপনার জান্নাত হবেনা। প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অকলঙ্ক চরিত্রতে কুৎসা রটনার চেষ্টায় এক জঘন্য নীচ মানুষরূপী পশু ছবি বানিয়েছে। এই বিষয়ে বিভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়া হতে পারত।

কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে যেন আসল কাজ হলো ফেসবুকে জিহাদ করা আর বাস্তব পৃথিবীতে যারা প্রতিবাদ করেছে -- ফেসবুকে আয়েশ করে বসে তাদেরকে ভুল প্রমাণিত করা। আর শুধু এই করেই হবেনা, অবশ্যই এক হালি করে স্কলারদের ধুইতে হবে। নিজে বাস্তব জীবনে একটা কুকুর বিড়ালকে ধরে রুটি খাওয়াতে না পারলেও স্কলার যারা কুরআন আর হাদিসের শিক্ষা দেন/দিয়েছেন সহস্র মানুষকে, যারা জীবনে অজস্র ত্যাগ স্বীকার করেছেন -- তাদের নামে কুৎসা ও নিন্দা করে নিজে বড় হইতে হবে।

ফেবুলাপঃ ফেসবুকের হিরোরা

ফেসবুকের হিরোরা প্রকৃতপক্ষে ডিলিউশানে থাকে। লাইক আর কমেন্টের জোয়ারে ভেসে গিয়ে নিজের বিকৃত নীচ চিন্তাকে সর্বজনবিদিত মহান অভিমত হিসেবে চিন্তা করার কিছু নেই। এটা নিছক একটা বিভ্রমমাত্র।

দু'ছত্র লিখতে শিখে বছরের পর বছর ধরে শ্রম দেয়া, মন দিয়ে কাজ করা জ্ঞানী-গুণী, কর্মী ও নেতাদের কাজকে, ভালোবাসা আর পরিশ্রমকে তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিয়ে আত্মতুষ্টি লাভ করা যেতে পারে, ফলশ্রুতিতে নিজেকে কেউকেটা মনে করাও যেতে পারে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই হিরোগণ বাস্তব পৃথিবীতে একটা টিকটিকি ধরে মারার যোগ্যতা রাখেনা, রাখেনা একজন সাধারণ মানুষের জীবনে কিঞ্চিত পরিবর্তনও আনয়ন করতে।

ভার্চুয়াল জগত আর বাস্তব জগতের এই ব্যবধান উপলব্ধি করার বিষয়। এই সমাজের রীতিনীতি, রাস্ট্রীয় রাজনীতি, এই সময়ের জ্ঞান-তথ্য-মিডিয়া-সাহিত্য-সংস্কৃতিগুলো শত-শত বছর ধরে কোটি কোটি মানুষের ভিতরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে সৃষ্টি হয়েছে। কীবোর্ডে ঝড় তুলে সবকিছুকে *নালিফাই* করে নাকচ করে দিলেই তা বদলে যাবে না -- এই পুনর্গঠনের জন্য শ্রম দিতে হবে, কাজ করতে হবে, মানুষের পাশে গিয়ে কাজ করতে হবে।

মুখভরা গালগল্পে জীবন বদলায় না, কেবল আত্মতুষ্ট হওয়া যায়। সম্মানিতদের অসম্মানের চেষ্টায় মহৎ হওয়া যায়না, নিজেকেই শুধু ছোট করা হয়।

১৬ সেপ, ২০১২

মীমাংসা ও আনুগত্য : সেরা মানুষের জীবনের আলোকে

এটা সেই অসাধারণ আয়াতগুলো। এই আয়াতগুলোর আলোচনা শুনেছিলাম উস্তাদ নুমান আলী খানের কাছে যা আমার সবচাইতে প্রিয় আলোচনাগুলোর একটা, ২০ মিনিটের মাত্র।

"নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদিগকে নির্দেশ দেন যে, তোমরা যেন প্রাপ্য আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌছে দাও। আর যখন তোমরা মানুষের কোন বিচার-মীমাংসা করতে আরম্ভ কর, তখন মীমাংসা কর ন্যায় ভিত্তিক। আল্লাহ তোমাদিগকে সদুপদেশ দান করেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ শ্রবণকারী, দর্শনকারী।

হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম।" [সূরা নিসা ৫৮-৫৯]

অতীত স্মৃতি এবং খোঁটা দেয়া

অতীত স্মৃতি
অতীতের স্মৃতি সবাইকে ভোগায়। অতীতের ভুল অন্তরকে বিদ্ধ করে, অতীতের কষ্ট ক্রমাগত বেদনার উদগীরণ করে। বিশেষ করে যেই মানুষ আল্লাহকে ভালোবেসে, ইসলামের অনুপম সৌন্দর্যকে অনুধাবন করে দ্বীনকে ধারণ করতে চায় -- তাকে সেই অতীতের পাপ দংশন করতে থাকে, সেইটা বাঁধন-হারা কষ্টে রূপান্তরিত হয় যখন আরেকজন মুসলিম/মুসলিমাহ সেই ভুল নিয়ে কটাক্ষ করে।

১৫ সেপ, ২০১২

ফেবুলাপঃ ভালোবাসা আর উন্মত্ততা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা, যিনি এই বিশ্বজগতের অধিপতি, তিনি জানেন সমস্ত মানুষের অন্তর। আমি একজন ক্ষুদ্র মানুষ। দুইটা চোখ আর একটা মাথা ছাড়া এই মূহুর্তে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা নেই, তাও কেবল আল্লাহ তা দান করেছেন বলেই আছে। প্রিয় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কটাক্ষ করে একটা মুভি বানানোর দুঃসাহস দেখানোর পরে পর তার যেই দিশেহারা বহির্প্রকাশ মুসলিমদের কাছ থেকে -- তা হয়ত ইহুদী-খ্রিষ্টানদের যারা এই ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদ দিয়েছে, তাদের জানা ছিলো পুরোপুরি। লিবিয়ার পথে রণতরী রওনা হয়েছে পড়েছি পত্রিকায়। যে বা যারা আগুন জ্বালিয়ে হত্যাকান্ড চালিয়েছে, তারাই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দরবারে ভালো জবাব দিতে পারবে -- তবে এতটুকু বুঝি, যারা মারা গেছে, তারা যদি নবীজীর (সা) নামে কুৎসা রটনার কাছে জড়িত থেকে না থাকে -- তাদের বিচার আল্লাহই জানেন, হত্যাকারীদের বিচার সহজ হবার কথা না। যেই প্রবল শক্তিশালী উন্মত্ত আগুণ জ্বলতে দেখলাম, তার কতটা বাস্তব, কতটা শো-অফ, সেটাও আল্লাহই ভালো জানেন।

৫ সেপ, ২০১২

আমার আঁধার, আমার ঘুম


আমার প্রতিটি যোগ্যতা -- প্রতিটি চিন্তার ক্ষমতা, সুস্থ সুন্দর হাসি দেয়া, কারো সাথে কথা বলা, সুন্দর পায়ে হেঁটে যাওয়া, কলম ধরে লিখতে পারা, কথা দেখে বুঝতে পারা, নিরোগ দেহে ঘুমাতে যাওয়া, প্রিয়জনদের সাথে অভিমান করতে চাওয়ার মনটাও, কষ্ট পাবার বোধটাও --- সব, স-অ-ব আমার আল্লাহ আমাকে দান করেছেন, এই নাদান, দুর্বল, মাটির তৈরি তুচ্ছ দেহটা সেই *আমার রূহ* ধারণ করেছি।

এই এত শত-সহস্র-নিযুত উপহারগুলোতে আমার কোনই অবদান নেই। তবু আমি দম্ভ করি, তবু আমি অহংকার করি, তবু আমি নিজেকে অনেক অনেক যোগ্য ভাবি... আমি এতই উজবুক আর বোকা। ওরে বেকুব, কখনো চারিদিকে তাকিয়ে দেখেছিস ওই পথচলার সময়? কত হাজার মানুষের কাছে তোর যা আছে তার অর্ধেকটাও নাই -- তার আর তোর মাঝে কোনই পার্থক্য নাই। ভেবেছিস এটা তোর জন্য একটা সুযোগমাত্র? এই উপহারগুলোর পার্থক্য কেবলই একই পরীক্ষার অন্য সেটের প্রশ্নমাত্র।

২ সেপ, ২০১২

দাওয়াতের নামে বিদ্বেষ ছড়ানো

ক'দিন আগে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হলো একই দিনে। সেদিন সন্ধ্যায় অফিসের বসের গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম, উনি কথার প্রসঙ্গে বললেন, একটা হাদিসে তিনি পড়েছিলেন, একজন মানুষকে আল্লাহর কাছে যে কয়টা বিষয়ের হিসাব দিতে হবে তার কয়েকটা হলো, কীভাবে অর্থ উপার্জন করেছে, উপার্জিত অর্থ কীভাবে ব্যয় করেছে, যৌবন কীভাবে অতিক্রম করেছে...

এটুকু শুনে ড্রাইভার বলে উঠলো, "যদি হিসাব দিতে না পারি?"।
উনি বললেন, "তাহলে তো যা হবার সেটাই হবে, আল্লাহ ভালো জানেন"।
ড্রাইভার বললো, "এত কিছু না, নামায কালাম করতে হইবো, এইডা ঠিক। অন্যসব কথাই একেকটা মৌলভী একেক কথা কয়"।
- সবাই একই কথা বলে, আলাদা ভাষায় বলে।
- নাহ। আমাগের কাকরাইল মসজিদে যাই, সেইখানে তো নামাযের পরে মোনাজাত ধরেনা, সব মসজিদগুলানে হাত তুইলা দোয়া করনই লাগবো। কোথায় আছে যে মোনাজাত হাত তুইলা করতে হইবো।
- দোয়া তো হাত তুলেই করে। নামাজের পরে ভালো সময়
- ওই তো। একেক মৌলভীরা একেক কথা কয়। কেউ কয় এইটা ছিলনা, কেউ এইটা ছাড়া করবো না।

একজন ড্রাইভারের কাছে *মৌলভীদের* কথাকে দ্ব্যর্থক, ভিন্ন মনে হয়েছে কারণ একটা মোনাজাতের হাত তোলা নিয়ে *মৌলভীদের* ভিন্ন ভিন্ন বিচিত্র অবস্থান নিয়ে সে সন্দেহগ্রস্ত। এমনকি সেদিন আমাকে আরো একটা ফোন কল পেতে হয়েছে যেখানে এই ভিন্ন ব্যাখ্যা ও আরেকজনকে ভুল বলার কারণে সেই আমজনতা কনফিউজড হয়ে গিয়েছিলো।

জুজুর ভয়

এই জীবনে দুই যুগ পার হবার পর আমি চির আকাঙ্খিত জিনিসটা পেয়েছিলাম। আমার এই জীবনে তা এমন একটা দিকের নির্দেশনা যা বেঁচে থাকার, জীবনকে অর্থপূর্ণ আর কর্মময় করার অনুপ্রেরণা দেয়। মুসলিম পরিবারে মৌলিক ইবাদাতের ব্যাপারে খুব সিরিয়াসভাবে বড় হওয়া সত্বেও কিশোর বয়সে এই দেশের হতভাগা আরো লক্ষ লক্ষ ছেলেমেয়েদের মতন লক্ষ্যহীন এক জীবনে পা দিয়ে ফেলেছিলাম আমি। কেন? কারণ, জীবনে অজস্র উত্তরহীন প্রশ্ন ছিলো, আল্লাহর বান্দা হিসেবে জীবন চালানোর অনুপ্রেরণাই ছিলোনা, দিক নির্দেশনা ছিলোনা সেই কঠিন সময়ে গড়ে ওঠার ব্যাপারে। কত ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতার মাঝে এই জীবনটাকে নিয়ে বেঁচে সরে এসেছি আল্লাহর অশেষ রহমতে, সেটা আমি জানি। অনেক বৈচিত্র্যময় মতাদর্শ দেখেছি, কোনটাই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ তারা সবই আমার কাছে ঠুনকো লেগেছিলো সবসময়।

৩১ আগ, ২০১২

অভিমানী মন

যদি কখনো আপনার ক্লাসমেট, চেনাজানা বা বন্ধুমহলে এমন কেউ থাকে, যে অল্প কথায় মন খারাপ করে ফেলে, অভিমান করে -- সে যদি ক্ষতিকর না হয়ে থাকে, তাহলে সম্ভব হলে তার প্রতি বিরক্ত হবেন না।

হয়ত সে কোনদিন ভালো ব্যবহার পায়নি তার গড়ে ওঠার সময়টাতে, হয়ত সে সুন্দর ব্যবহার কি তা-ই জানেনা, হয়ত সে ভালোবাসা পেতে শিখেনি আপনজনদের কাছ থেকে। হয়ত সে আজীবন কেবল তার সমালোচনা শুনেই বড় হয়েছে।

 হয়ত তার প্রতি আপনার ভালো ব্যবহারটুকু তার জীবন বদলে দিতে পারে। কে জানে, হয়ত আপনার এই ভালো ব্যবহারটুকু আপনার অনন্তকালের জীবনটাও বদলে দিতে পারে...

২৮ আগ, ২০১২

বিয়ে করতে কি কোন প্রস্তুতির দরকার হয়?

আমাদের সমাজে ছেলেমেয়েরা কেন বিয়ে করে? 
অনেক তরুণ-তরুণীরা হয়ত বিয়ে করতে চায় কারণ তাদের বন্ধুবান্ধবরা বিয়ে করে ফেলছে, কারও আবার বাবা-মা চাপ সৃষ্টি করছে বিয়ে করার জন্য, কেউ ঘরের পারিবারিক জীবনের সমস্যা থেকে মুক্তির জন্যও বিয়ে করতে চায়। কেউ কেউ অন্যের শারীরিক সৌন্দর্য দেখে বা অর্থ-সম্পদের কারণে বিয়ে করতে আগ্রহী হয়। কেউ কেউ খুঁজে একজন সঙ্গী, কেউ পারিবারিকভাবে শক্ত একটা অবলম্বন পেতেও বিয়ে করতে চায় যেটা একটা বিয়ের মাধ্যমে সম্ভব। আবার মুসলিম হিসেবে রাসূলের সুন্নাহ পালনের মাধ্যমে ইবাদাত হিসেবেও বিয়ে করতে চান।

আরেকটা মানুষের সাথে আজীবন থাকার অভিপ্রায়ে যখন যাত্রা শুরু হয় দু'জন ছেলে এবং মেয়ের, তখন তাদের অনেক রকমের প্রস্তুতির দরকার পড়ে। দু'টো পরিবারকে তারা জুড়িয়ে দেয়, এখানে আরেকটা পরিবারের সাথে *নিজেদেরকে* মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার থাকে। অনেক ধরণের চারিত্রিক গুণ প্রয়োজন, যেগুলো ছাড়া দিব্যি সমস্যাবিহীন *সিঙ্গেল* লাইফ কাটানো গেলেও বিবাহিত তা অবধারিত প্রয়োজন। তাই এগুলোর অবর্তমানে যদি সম্পর্কে চাপ বা টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়, অন্য কাউকে দায় দেয়ার নেই, ভোগান্তি তো হবেই।

বর্তমান সময়ে টেলিভিশন মিডিয়া, কমার্শিয়ালের মাঝে ডুবে থেকে অনেক ছেলেমেয়েরাই বিয়েকে মডার্ন ডেটিং টাইপের কিছু ভেবে বসেন। কেবল অবিমিশ্র সুখ, উদ্দাম আনন্দ। অথচ, বিয়ের পর দেখা যায় টুথব্রাশ এখানে কেন, টাওয়েল ওখানে কেন টাইপের ছোট ছোট জিনিসেও অমিল পাওয়া যায় একজন আরেকজনের। বিয়ের প্রথম দিকে ভালোবাসা উপচে পড়ার কারণে এইসব অগ্রাহ্য করলেও কিছুদিন পর আরেকজনের এইসব ছোটখাটো অমিলগুলোও অসহ্যবোধ হতে থাকে। 

১৭ আগ, ২০১২

বিয়ের অপর নাম প্রশান্তি, উচ্ছ্বাস আর দয়া

কিশোর বয়স থেকে বিয়ের ব্যাপারে আমার একটা প্রশ্ন ছিলো মনে, সেই  প্রশ্নটা যাদের করেছিলাম, তাদের উত্তর কিছু খুবই নিম্নমানের। তাই আদতে আমার কৌতুহল নিবৃত্ত হয়নি। প্রশ্নটি ছিলো, দু'জন মোটামুটি অপরিচিত মানুষ কীভাবে সারাটা জীবন একসাথে কাটিয়ে দিতে পারে? মোটামুটি অপরিচিত বললাম এই কারণে যে, বিয়ের আগে থেকে আসলে তেমন একটা জানাজানি একদমই সম্ভব না। একসাথে থাকতে গেলে তখন টের পাওয়া যায় যে অনেকে অনেক ছোট-ছোট বিষয়েই বিরক্ত হয়। আর তার উপরে যখন একটা বয়স পরে অনেকের শরীরে রোগবালাই  ভর করে, তখন তো অপরজন অপার ভালোবাসায় আর যত্নে তার দেখাশোনা করেন -- এমনটাই বা কী করে সম্ভব?

অবশেষে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেলাম। তাও পেয়েছি পবিত্র কুরআনুল কারীমের আয়াত থেকে। নুমান আলী খানের আলোচনা থেকে শেখা সেই আয়াতটির ব্যাখ্যা এখানে উল্লেখ করছি --


আল্লাহ বলছেনঃ

"আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে"।  [সূরা আর-রুমঃ ২১]

      
এই আয়াতটিতে আল্লাহ্‌ স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের অতুলনীয়, সংক্ষিপ্ত এবং সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়ে এই সম্পর্ককে তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা'আলা) একটি নিদর্শন (আয়াত) বলে উল্লেখ করেছেন। আসুন এই পবিত্র সম্পর্ক সম্বন্ধে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা কি বলেছেন সেটা জানি। সম্পর্কটির বিভিন্ন পর্যায় তিনি তিনটি শব্দের দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন।

৮ আগ, ২০১২

আলোর স্পর্শ


ইদানিং কিছু যখন পড়তে গিয়ে মনে হয় বিশাল আবিষ্কার করে ফেলেছি, তখন ডানে বামে তাকিয়ে দেখি আমার চেয়ে কমবয়েসি অনেক মানুষ সেসব অনেক বছর আগেই পড়ে শেষ করে ফেলেছে।নিজেকে তখন হঠাত বাচ্চা বলে মনে হতে থাকে.... সেদিন একটা বই পড়তে গিয়ে একটা মজার জিনিস জানলাম, সেটা অভ্যাসবশত শেয়ার করার জন্য  লাফ দিয়ে ফোন হাতে নিয়েই থেমে গেলাম। ছোট ভাইটা নিশ্চয়ই এসব পড়ে রেখেছে অনেক বছর আগেই। সবাই তো আর আমার মতন মূর্খ ছিলনা!

আজকাল কুরআনের তাফসীর পড়তে গিয়ে দেখি আব্বু অজস্রবার পড়ে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আন্ডারলাইন করে, হাইলাইটার দিয়ে হাইলাইট করে রেখেছেন। অথচ আমি হতভাগা একবারও পড়ি নাই।

ইদানিং দ্বীনের জ্ঞানের আলোয় আলোকিত সব মানুষগুলোকেই ব্যাপক হিংসা হয়... ছোটবড় কোন ছাড়াছাড়ি নাই...