১৫ ফেব, ২০১২

এর বেশি ভালোবাসা যায়না ও আমার প্রাণপাখি ময়না

ক'দিন আগে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম, একটা গান কানে এলো পথের ধার থেকে -- "এর বেশি ভালোবাসা যায়না, ও আমার প্রাণপাখি ময়না"। প্রেমিক লোকের চিৎকার করা আর্তনাদ। এই প্রেমিক গায়ক আবার ভালোবাসার একটা স্কেল আবিষ্কার করেছেন, যার সর্বোচ্চ রেটিং-এর ভালোবাসা তিনি বেসেও ফেলেছেন। সম্ভবত এইটা চেক করে দেখার পর তিনি আরো জোরে চিৎকার করছিলেন, এবং তার সমস্ত চিৎকার তার প্রাণপাখি ময়নার উদ্দেশ্যে হলেও ভুলক্রমে আমার সাথে আরও বহু পথচারীর কর্ণকুহর ফুটো করে দেয়ার উপক্রম করছিলো।

নুমান আলী খান : লক্ষ তরুণের অনুপ্রেরণা

দীর্ঘদিন অযত্নে পড়ে থাকলে শক্তিশালী লোহাতেও মরিচাতে পড়ে ক্ষয়ে যায়। একজন মুসলমানের ঈমানের যত্ন না নিলে তেমনি ক্কালবের উপরে প্রলেপ পড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যেতে থাকে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস -- আমাদের আত্মা। এই ব্যাপারটা নিজ জীবনে উপলব্ধি করেছি জীবনে আমি। একটা প্র্যাক্টিসিং মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও পরিবারের বাইরে পড়াশোনা করতে গিয়ে একটা সময় যেন হারিয়ে গিয়েছিলাম নিজের কাছ থেকেই। কোন কাজেই শান্তি পেতাম না, কোন কিছুতেই স্বস্তি পেতাম না ।

এমন এক সময়ে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার রাহমাতে ক'জন মানুষের সাথে পরিচয় হয় আমার। সেই সময়টাকে আমি আমার জীবনের "রেঁনেসা" বলে মনে করি। তাদের মাধ্যমে আমি অনলাইনের বিশাল রিসোর্সের খোঁজ পাই। চিনতে পারি আত্মিক জ্ঞানের শিক্ষকদের, আল্লাহর দ্বীন নিয়ে পড়াশোনা করা আর সেই সুন্দরতম জ্ঞানকে ছড়িয়ে দেয়ার মহান কাজে ব্রতী কিছু স্কলারকে। আমার প্রথম উস্তাদ ছিলেন নুমান আলী খান। তারপর ধীরে ধীরে চিনলাম ইমাম সুহাইব ওয়েব, ডক্টর বিলাল ফিলিপস, ইয়াসির ফাজাগা, ইউসুফ এস্তেত, তারিক রামাদান, হামযা ইউসুফ, আবদুল নাসির জান্দা, উয়িসাম শারিফ, খালিদ ইয়াসিন, আসিম আলহাকিম এবং ইয়াসমিন মোজাহেদ এবং আরো অনেককে। আমার ক্ষুদ্র জীবনের ক্ষুদ্র আত্মা এক অন্য দিগন্তের খোঁজ পায় সেদিন থেকে। আল্লাহ তাদের সবাইকে কবুল করে নিন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাদের জায়গা বরাদ্দ করে দিন।

উস্তাদ নুমান আলী খানের কথা আলাদা করে না বললেই না। দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুতে আমার মনে হতো -- এটা কেন এমন, ওটা কেন অমন হয়, কেন এসব এমন হয়না, সবকিছু এরকম কেন হয় টাইপের। আমি নিশ্চিত জানতাম যে এইসবের পরিষ্কার উত্তর আমাদের রব আল্লাহ তা'আলার দেওয়া জীবনবিধানে পরিষ্কারভাবেই আছে। কিন্তু সেগুলো কীভাবে বুঝতে হয়, কীভাবে মনের এই সময়গুলোকে "ডিল" করতে হয় তা জানতাম না। যেহেতু প্রশ্নগুলো দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির যার সাথে আত্মিক বিশ্বাস যুক্ত -- এমন মানুষ পাইনি যারা অমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। কিন্তু নুমান আলী খানের অল্প কিছুক্ষণের কয়েকটা ভিডিও দেখেছিলাম। আমার মনে জেগে ওঠা সাধারণ ও সমস্যামূলক অনেক জিজ্ঞাসার অসাধারণ সুন্দর সমাধান পেয়েছিলাম তার কথাতে।

আমার জীবনের একটা অভিজ্ঞতা হলো -- সাধারণত কিশোর-তরুণরা গড়ে ওঠার সময়ে দ্বীন-ইসলাম সংক্রান্ত প্রচুর প্রশ্নের সম্মুখীন হই মনে মনে। হতে পারে সেটা পর্দা নিয়ে, কোন ক্রিটিক্যাল প্রশ্ন নিয়ে, ফিকহ অথবা থিওলোজি সংক্রান্ত প্রশ্ন, হয়ত কোন অশ্লীল বিষয়কে কীভাবে ডিল করতে হবে তা নিয়ে, অথবা কীভাবে দান করতে হয়, নিয়্যাত কেমন থাকা উচিত -- এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে করে। অথচ এই বিশ্বাসী তরুণ-তরুণীরা উত্তর না পেয়ে শেষে ভুল করতে থাকে। একদিন হয়ত তাদের ইচ্ছেটাই হারিয়ে যায়... কুরআনের স্বতঃস্ফূর্ত পড়াশোনা, ইসলামেকে তরুণ প্রজন্মের কাছে সুন্দর করে উপস্থাপনার আয়োজন বাংলাদেশে, আমাদের সমাজে খুবই কম। এই অদ্ভূত অবস্থায় আমার মতন ছেলেদের জন্য অশেষ রাহমাত অনলাইনের রিসোর্সে পাওয়া স্কলাররা -- যারা তরুণ প্রজন্মের সাথে খোলামেলা আলাপ করেন, কীভাবে চিন্তা করতে হবে শেখান, কীভাবে ভাবতে হয় সেটা শেখান। আর সেগুলোর ভিডিও অ্যাভেইলেবল পাওয়া যায় ইন্টারনেটে। বস্তুতঃ হিদায়াতের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা।

গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্কসমূহঃ
ফেসবুক পেইজঃ নুমান আলী খান 
লেকচার ডাউনলোড লিঙ্কঃ নুমান আলী খান কালেকশন [অডিও এবং ভিডিও] 
ড্রিম তাফসীরের ওয়েবসাইটঃ লিঙ্গুইস্টিক মিরাকল 
সমস্ত ভিডিও এখানে পাবেনঃ ইউটিউব লিঙ্ক 
নুমান আলী খানের সমস্ত অডিও লেকচার
লেকচার কালেকশন হালাল টিউব চ্যানেল :: নুমান আলী খান


নুমান আলী খান আমার জীবনে পাওয়া সেরা বক্তাদের একজন, যার কথার ভঙ্গি আর শব্দচয়নে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। সুবহানাল্লাহ!! উনি এত সুন্দর করে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা দেন। আমি বিয়ে বিষয়টা নিয়ে সবার মতই বেশি এক্সাইটেড এবং কনফিউজড ছিলাম। যদিও এই সংক্রান্ত বিষয়ে তাফসীরগ্রন্থ পড়েছিলাম কয়েকটা, তাতে অনেক বিষয় ছিলো আলোচনায় -- কিন্তু সেই জিনিসগুলোকে মাথায় নিয়ে আসলে কীভাবে চিন্তা করতে হবে আমার প্রতিদিনের জীবনে সেটা ভেবে পাচ্ছিলাম না বা বুঝতে পারছিলাম না। নুমান আলী খানের হেলদি ম্যারেজ একটা অসাধারণ আলোচনা। আমি অনেকবার শুনেছিলাম এবং আমার প্রাথমিক ধারণাটা আলহামদুলিল্লাহ পরিষ্কার হয়ে যায় -- কী কর্তব্য, কী দ্বায়িত্ব একটি পারিবারিক জীবনে।

উস্তাদ নুমান আলী খানের বক্তব্যের সুন্দর দিক হলো, তিনি সাধারণ আর সরল ভাষায় তরুণদের বোধগম্য হবার মতন করে বিষয়গুলো আলোচনা করেন। আমি দেখেছি, আলহামদুলিল্লাহ একেকটা লেকচার শোনার পর আমার মধ্যে ওই বিষয়ক খটকা এবং প্রশ্ন থাকেনা এবং পালন করার ব্যাপারে সন্দেহ আর অজুহাত থাকেনা। হয়ত এইটুকু বুঝতে হলে আমাকে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পড়তে হতো। আলোচনা শোনার অর্থ পড়াশোনা কমিয়ে দেয়া নয়, পড়াশোনা তো আমাদের আবশ্যকীয় দ্বায়িত্ব। কিন্তু মুমিনদের সাথে দ্বীন নিয়ে আলোচনা আমাদের জন্য কল্যাণকর হয়, বোধকে সুন্দর করে, ঈমানকে সুদৃঢ় করে।

নুমান আলী খানের ইসলাম এবং ইগো ভিডিও লেকচারটিকে বর্তমানকালের সেরা ১০ টি ভিডিওর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট মুসলিমম্যাটারস । এছাড়াও এই সরল, সাদামাটা, হাস্যোজ্বল লোকটার আলোচনা বিশ্বজুড়ে তরুণদের ইসলামের জন্য উদ্বোধিত করে, অনুপ্রাণিত করে, আগ্রহী করে দ্বীনের প্রতি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মও ব্যতিক্রম নয়। বর্তমানে তিনি DREAM নামের তাফসীর কোর্স নিয়ে সম্পূর্ণ সময় দিচ্ছেন। এই তাফসীর কোর্সের অসাধারণ দিক হলো কুরআনুল কারীমের শাব্দিক অলংকার আর ব্যবহারের অনুপম সৌন্দর্য পরিষ্কার হয় আমাদের কাছে। নুমান আলী খানকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেই সুন্দর যোগ্যতা দিয়েছেন, তার একটা প্রয়াস এই তাফসীর কন্টেন্টগুলো। আল্লাহ উস্তাদ নুমান আলী খানকে কবুল করুন, তার যোগ্যতা আরো বাড়িয়ে দিন, তার মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতকে আরো ছড়িয়ে দিন বিশ্বের এক প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে।


নুমান আলী খানের বায়োগ্রাফিঃ

নুমান আলী খান একজন মুসলিম দা’ঈ । কুরআনের জ্ঞানে তার অসাধারণ গভীরতা এবং সুন্দর উপস্থাপনা শৈলীর কারণে সমগ্র বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাভাষী অনেক ইসলাম অনুরাগী তরুণ প্রজন্ম তার অসাধারণ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে নিয়মিত। নুমান আলী খান যুক্তরাস্ট্রে অবস্থিত বাইয়্যিনাহ ইনস্টিটিউট [ওয়েবসাইট] নামক একটি আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের CEO এবং প্রতিষ্ঠাতা। বায়্যিনাহ এর কোর্স "ফান্ডামেনটালস অফ ক্লাসিক্যাল এরাবিক" এবং "ডিভাইন স্পিচ" এর প্রধান বক্তা।

আরবি ভাষার উপরে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে। যেখানে তিনি তার প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা সম্পন্ন করেন। তিনি আরবি ব্যাকরণ শিখেন পাকিস্তানে। সেখানে তিনি ১৯৯৩ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় জাতীয় পর্যায়ের মেধাতালিকায় প্রথম ১০ জনের মধ্যে স্থান দখল করেন। কিন্তু আরবিতে তার গভীর পড়াশোনা শুরু হয় ১৯৯৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ডক্টর আব্দুস সামি এর তত্বাবধানে। ডক্টর আব্দুস সামি পাকিস্তানের ফয়্সালাবাদের কুরআন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ যিনি মাঝে মাঝে আমেরিকাতে যেতেন আরবি শিক্ষা এবং কুরঅনের তাফসিরের উপরে গভীরতাপূর্ণ বক্তব্য রাখতে। তার অধীনে পড়াশুনায় নুমান আলী খান আরবি ভাষা ও ব্যাকরণের উপরে তীক্ষ্ম এবং গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি পরবর্তীতে ডক্টর আব্দুস সামির কাছে আরো উপকৃত হন তার সম্পূর্ণ শিক্ষাদান পদ্ধতিকে আত্মস্থ করে, তিনি ডক্টর সামির করা কাজগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন তার নিজের ছাত্রদের উপকারের জন্য।

তিনি ১৯৯৯ সাল থেকে যুক্তরাস্ট্রে আধুনিক এবং ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষাদান শুরু করেন। ২০০৬ সাল পর্যন্ত ৭ বছর ধরে নুমান আলী খান নাসাউ কমিউনিটি কলেজে মডার্ন শিক্ষকতা করেন। সেখানে তিনি "মডার্ন স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ক্লাসিক্যাল অ্যারাবিক" শেখান দেশজুড়ে। তিনি মূলত তার দাওয়াত প্রচার করে থাকেন ভিডিও বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি ICNA আয়োজিত কনভেনশনে নিয়মিত বক্তব্য দিয়ে থাকেন। নুমান আলী খান ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন -- জীবন, পরিবার এবং ইসলামী মূল্যবোধের উপরে তিনি আলোকপাত করে থাকেন।

বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেছেন বিভিন্ন জায়গায় ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে সাত বছরের বড় একটি প্রজেক্টে। এই প্রজেক্টে কুরআনের শাব্দিক শৈল্পিক সৌন্দর্যকে মূল ধরে ইংরেজিতে তাফসির সিরিজ করা হচ্ছে, যার নাম DREAM প্রোগ্রাম। এই তাফসীর সিরিজের বিভিন্ন কন্টেন্ট রেকর্ডিং Linguistic Miracle ওয়েবসাইটটিতে ওয়ার্ড ডকুমেন্ট এবং অডিও ফরম্যাটে পাওয়া যাচ্ছে।

# তথ্যসূত্রঃ  উইকিপিডিয়া  বাইয়্যিনাহ ডট কম

১১ ফেব, ২০১২

এখনো বাতাস বইছে চারিধারে

এখনো বাতাস বইছে চারিধারে, আজো দিন শেষে রাত নেমেছে ।
অথচ ওযুর পানির রঙ লাল যেন হয়ে ঝরছিলো -- উষ্ণ রক্তের মতন
মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি বুক কাঁপিয়ে দেয় হঠাৎ
ইমামের অশ্রুভেজা চোখের তিলাওয়াত কানে ভেসে আসে যেন
"আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না,
বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝো না। "

৩ ফেব, ২০১২

এই জীবন, ভালোবাসা আর ফেলে আসা সময়েরা

অদ্ভূত একটা সময়ে বেঁচে আছি। কাগজের উপরে ২০১২ সাল লিখতে গেলে হাতে কেমন যেন বেঁধে যায়। দু'হাজার বছর পেরিয়ে আরেকটা যুগ কেটে যাচ্ছে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম চলে যাবার পরে। আজ থেকে পনের'শত বছর আগে চলে গেছেন পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর চরিত্রের মানুষটি। হয়ত হাজার-কোটি বছরের আগের এই পৃথিবী -- তার একটা আবশ্যকীয় ধ্বংসের নিশ্চিত বারতা ছিলো নবীকরীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিদায়ের মাঝেই।

এরপর আরো কতকিছুর ইতিহাস! মিশরের ফারাওদের পিরামিডগুলোর ছবি দেখছিলাম সেদিন একটা ওয়েবসাইটে, দেখছিলাম সেই ফিরাউন 'নেমেসিস' এর মৃতদেহটার চিত্র। বনী ইসরাইল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে কত যে নবী এসেছিলেন আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াহ প্রচারের জন্য! হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং হযরত হারুন আলাইহিস সালামের পরেই শেষ হয়ে যায় প্রবল প্রতাপশালী ফিরাউন এর "খোদায়ী"। তাদের ইতিহাসটা জানতে আগ্রহী হয়েছিলাম পবিত্র কুরআনুল কারীম তিলাওয়াতের সময় বারবার "ইয়া বানী ইসরাইল" আসে বলে...

পিরামিড কীভাবে বানিয়েছিলো, কীভাবে অত বছর আগে এতগুলো মৃতদেহকে 'মমি' করে রেখে দিয়েছিলো ফারাওরা -- সেই রহস্য আজো উন্মোচিত হলো না আমাদের এই 'ড্রোন হামলার' যুগেও। সেই ক্ষমতাশালী রাজারাও হারিয়ে গেছে... কোথায় হারালো তারা? মৃত্যুর কাছেই। যেখানে এই জগতের সমস্ত প্রাণের একটাই নিশ্চয়তা আছে -- সেটা হলো মৃত্যু।

আচ্ছা, ইতালির পম্পেই নগরীতে কী হয়েছিলো? আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত না? পুরো নগরীটাই হারিয়ে গিয়েছিলো সেই উত্তপ্ত লাভাতে। ভষ্মীভূত হয়ে গিয়েছিলো একটা রঙ্গিন শিল্পকলার নগরী। পিসার হেলানো মিনারের মতন আর কিছু কেন আর কেউ হেলাতে পারলো না? এখনো কেন সবাই যখন উঁচু উঁচু টাওয়ার বানাচ্ছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রবল প্রযুক্তিতে তখনো সেই সহস্র বছর আগেকার হারিয়ে যাওয়া সভ্যতাগুলোকে কেন বুড়ো আঙ্গুল দেখানো যাচ্ছেনা?

আমার কাছে অনুভব হয় -- আমরা যেমন আইফোন, আইপ্যাড আর স্মার্টফোনের যুগে আঙ্গুলের স্পর্শে কল করে, ছবি তুলে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করে 'কানেক্টেড' থেকে 'কমিউনিকেট' করে নিজেদের স্মার্ট মনে করছি -- অমন স্মার্ট সভ্যতা এই পৃথিবী হাজার হাজার পেয়েছে। আমরা খালি একটা সময়কে অতিক্রম করছি। ঘুরে ফিরে এই জীবনধারণে একটা গুগল ও মাইক্রোসফটের প্রোগ্র্যামার হওয়াতে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে উঁচু বেতনের চাকুরি করার কৃতিত্ব আসলে গর্বিত হবার এমন কিছু না যা কিনা কোটি বছরের এই পৃথিবীর সমুদ্রসমান ইতিহাসে জায়গা পাবার একটা ফোঁটা জল হতে পারে!!

আমরা এতই ক্ষুদ্র একেকটা স্বত্ত্বা। তবে হ্যাঁ, এরই মাঝে সফলতাও আছে। দেখা যায়না! আমার পাশের বাড়ির টিনের চালার ঘরে বড় হওয়া করিম আর সামনের দিকের অ্যাপার্টমেন্টের ন্যান্সী আপুর ভাই এরিক -- এই দু'জনের জীবনে জন্মের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। তাতে কারো কোন ক্রেডিট নাই। করিম, এরিকদের সাথে আম্রিকাতে জন্ম নেয়া জাস্টিন বিবার আর সিডনির মাইকেলের জন্ম আর জীবনধারণের উপকরণ আর পরিবেশে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আবার এই মার্কিন ও ইংরেজ হিসেবে জন্মানো জাস্টিন বিবার আর এমা ওয়াটসনদের তুলনায় সেই ফারাওদের রাজপ্রাসাদের খেনশা ও খুফুদের জীবন খুব খারাপ ছিলোনা। তাদের ছিলো অবারিত রাজ্যক্ষমতা আর বিশাল এলাকার রাজত্ব -- অসামান্য প্রযুক্তি -জ্যোতির্বিজ্ঞান -শিল্পকলা।

তাহলে সফলতা কোনটা? আইফোন, ম্যাকবুক, মজার বিছানা, হিপহপ গান শুনে নিজেকে স্মার্ট ভাবা, জোশিলা বয়ফ্রেন্ড আর খুউল গার্লফ্রেন্ড থাকা, ব্যাটে/জিপিতে অথবা মাইক্রোসফটে চাকুরি করে বিশাল টাকা ঘরে আনা? এই টাইপেরই স্মার্ট মানুষ এই জগতে আরো শতকোটি ছিলো। কিন্তু খুব কম জনই আসলে সফল। এই জীবন কেন -- এই প্রশ্নের উত্তরে কেউই আসলে ভাবতে চায়নি। নিজেদের ভাবনাদের মাটিচাপা দিয়ে আবার ফিরে যাওয়া শরীরের চাওয়ার কাছেই...

ডাক্তার হয়ে, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে, বিশাল বাড়ি-গাড়ি করে, অনেক টাকার ব্যাংক-ব্যালেন্স করে, পার্লারে গিয়ে চুলস্ট্রেইট-রিবন্ডিং-ম্যানিকিউর-পেডিকিউর করে, চুলে জেল লাগিয়ে স্পাইক করে দামী পার্ফিউম লাগিয়ে নতুন লেটেস্ট মডেলের বাইকে ভুমভুম করে রাস্তা কাঁপানোতে? এগুলো আসলে কোন সফলতা না। সফলতা আসলে সেই মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার দাসত্ব করাতে -- যেই আল্লাহর দাসত্ব করা এই পৃথিবীর প্রথম মানুষ আদম আলাইহিস সালাম তার জীবনসঙ্গিনী হযরত হাওয়াকে নিয়ে দু'জন মিলে ছিলেন কেবল তখনো একমাত্র কাজ ছিলো। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মানুষ আমরা -- একটা ভূমিকম্প, একটা সুনামি আমাদেরকে ভাসিয়ে গ্রাস করে দেয়। আমাদের এই দুনিয়া অনন্ত জগতের আখিরাতের শস্যক্ষেত্র। যেই অনন্ত জগতের শুরুতেই আমার পৃথিবীতে আমি যতটুকুই সুবিধা পেয়েছি তার অনুপাতেই বিচার হবে -- বিচারক হবেন মহাবিশ্বের অধিপতি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। যিনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জিনিসেরও নিপুণ বিচার করবেন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবারই সমান আপন। সৌদিতে জন্ম নেয়া পবিত্র কাবার খতীবের যতটা কাছে তিনি, সেনেগালের আব্দুল্লাহ নামের ছেলেটাই হোক, উইসকনসিনের ইয়াসমিন হোক, ঢাকার তানভীরই হোক, মিশরের নুসাইবা হোক -- সবারই তিনি সমান আপন, একটুও পার্থক্য নাই। গায়ের রঙ-বংশ-বর্ণ-গোত্র-সময়-সম্পদ-জ্ঞান সবকিছুর উর্ধে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রিয়তম, অন্তরতম, আপনতম। জীবনের প্রতিটি ক্ষণ আমাদের সবারই সমান স্কেলে মূল্যায়ন হবে উনার কাছে। আল্লাহ শুধু দেখবেন অন্তরের আর্তিগুলো, জীবনে পাওয়া সময়ে তার নির্দেশ পালনের প্রতি ভালোবাসাটুকু, তার স্মরণে চোখের পানিগুলো -- এটাই না জীবন!! সব সংকীর্ণতা,শংকার উর্ধে অর্থপূর্ণ জীবন আমাদের সবারই!

এই অল্প ক'টি বছরের এই জীবনের পাওয়া না পাওয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে দুঃখী হলে কি চলে? যেদিন জান্নাতে সুন্দর লেকের উপরে বয়ে যাওয়া রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হয়ত দেখা হবে হযরত ইদ্রিসের সাথে, হযরত আবু বকরের সাথে, হয়ত আমাদের আব্বু-আম্মুর সাথে, হযরত আসিয়া আর হযরত ফাতিমাদের সাথে , আর আমাদের জীবনে পাওয়া প্রিয় ভাই-বোন-বন্ধুদের সাথে -- সেদিন অনুভব করতে পারবো আমাদের জীবনটা কতটা সুন্দর ছিলো, ছিলো অর্থপূর্ণ! "দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র" -- আমরা জানি বলেই তো চারা বুনেছি ঈমান দিয়ে এই বুকে। পানি দিয়ে উর্বর করবো আমল দিয়ে, যখন নিড়ানি দিবো তখন কষ্ট হয়ে যাবে বুকের উপর ; যন্ত্রণা হবে। আবার যত্ন নেবো ঈমানের, আমলের। ভালোবাসবো আল্লাহকে, নবীদেরকে, আব্বা-আম্মাকে, আর তাদেরকে যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন। ফল তো আজকে না -- এই শস্যের চালান আমরা রিসিভ করবো ইয়াওমুল কিয়ামাহ তে গিয়ে।

আমাদের রব, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের ঈমানকে শক্তিশালী করে দিন, আমাদেরকে তিনি সিরাতাল মুস্তাকীমের পথ দেখান, আমাদের মুসলিম উম্মাহকে একই পতাকাতলে আসার তাওফিক দান করুন, আমাদেরকে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সবার চাইতে ভালোবাসার এবং তাদের নির্দেশিকা অনুযায়ী দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করে অনন্ত জগতে সফলদের দলে অন্তর্ভুক্ত হবার যোগ্য করে দিন।

ফেব্রুয়ারি ২০১২

১ ফেব, ২০১২

টূকরো টুকরো ভালোলাগা ১


মন খারাপ করতে কারণ লাগেনা, পত্রিকার পাতায় তাকালে অথবা রাস্তায় বের হলেই মন খারাপ হতে বাধ্য। নিজ জীবনের ঘটনাগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম। তাতে আছে অনেক কষ্ট, না পাওয়া, সমস্যায় জরাগ্রস্ততা আরো কত কী! আমি নিশ্চিত জানি, আমার জীবনটা অনেক নিয়মের সীমানার ভিতরেও অনেক বেশি স্যাক্রিফাইসের মধ্যে অনেক কঠিন শারীরিক আর মানসিক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যায় -- যা প্রায় সময়েই আমার মন ভেঙ্গে দেয়। ডিপ্রেশনে ভুগতে শুরু করি... তখন মনে হয় যেন সমস্ত সমস্যা কেবল আমাকে কেন্দ্র করেই হয়, সব অপ্রাপ্তিগুলো কেবল যেন আমাকেই ক্ষয় করে।