৩১ ডিসে, ২০১২

অসহায় একাকীত্ব, পরম প্রিয়জন ও একটি খরুচে বিয়ে


{ ১ }
মাঝে মাঝে যখন নিজেদের অসহায়ত্ব টের পাই, আপন ক্ষুদ্রতাকে অনুধাবন করি এই সমাজের উদ্ধত মানুষদের, পৃথিবীর ঘটনাপ্রবাহের মাঝে। যদি অনেকসময় নিজের একাকীত্ব অনুভব করি, আশেপাশের মানুষগুলো নিজ নিজ জীবনধারনের কাজে ব্যস্ত থাকলে যদি একা হয়ে যাই খুব বেশি, তখন বুঝতে হবে, এই অনুভূতিগুলো আসলে একটা সুযোগ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা চারপাশ থেকে সবাইকে সরিয়ে এই সময়টিতে আমাদেরকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইছেন, তাকে গভীর করে স্মরণ করতে বলছেন। মৃত্যু তো সবার একা একাই হবে, তার পরের অনন্তকালের যাত্রাতেও একাই থাকব। আমাদের পৃথিবীর বন্ধন, সম্পর্ক সবই তো বিভ্রম। সেই কঠিন সময়ের যাত্রার প্রকৃত অনুভূতিটা এখন অনুভব করে প্রস্তুতি নিতে পারাটাই বেশি কল্যাণকর না?

২৯ ডিসে, ২০১২

গানের আসর, ঘুম ও মৃত্যু


{ ক }

আব্বু-আম্মু রোজা রেখেছিলেন আজ, বয়সের কারণে শারীরিকভাবেও তারা পুরো সুস্থ নন। কিন্তু বাড়ির ছাদের ভয়ঙ্কর শব্দের এই ব্যান্ড শো-তে যেই শব্দ দূষণ তাতে আমারই ঘুম দূরে থাক, মাথা ধরে গেছে। মানুষের ন্যুনতম কোন কমন সেন্স থাকলেও এইরকম অত্যাচার করা সম্ভব হত না।

আল্লাহ এই মানুষরূপী ইতরগুলোকে হিদায়াহ দিন। আধাঘন্টা ধরে বসে বসে প্রার্থনা করছিলাম যে থামবে হয়ত। ছাদভর্তি তরুণ-তরুণীদের উদ্দাম চিৎকারও শুনতে পাচ্ছি। এক নারীকন্ঠ আজকের এই আয়োজনে খুব হ্যাপি হয়েছে বলছে, সবাইকে এরপরের গানে নাচতে আহবান করছে -- হুম, ইতোমধ্যে নারীকন্ঠের হিন্দি গান শুরু হয়েছে।

জীবনসঙ্গিনীকে ইহসান করা

সুবহানাল্লাহ ! আল্লাহর দ্বীনটা এত সুন্দর, এত বেশি দারুণ। সত্যিই, পারিবারিক থেকে ব্যক্তিগত সমস্ত সম্পর্কগুলোতে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, ইহসান করা, পারস্পরিক ব্যবহার-আচরণ, ক্ষমাশীলতা, উদারতা, ভালোবাসার ব্যাপারগুলোতে আমাদের নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার স্ত্রী উম্মুল মু'মিনীনদের জীবনীতে যে নিদর্শন ও উদাহরণ রেখে গেছেন, তা সমগ্র মানব ইতিহাসে নেই। আমি রোমান, পার্শিয়ান, ভারতীয়, ইংরেজ সভ্যতাগুলোর অল্পবিস্তর যা ইতিহাস পড়েছি, তাতে পারস্পরিক সম্পর্কে ইহসান জিনিসটার জায়গাও দেখিনি।

২৮ ডিসে, ২০১২

এত সুর আর এত গানে উদাসীর একাকীত্ব



আজ সারাদিন অন্য কিছু চিন্তা ভর করে ছিলো মাথায়। দিনশেষে বাসায় ফিরলাম খানিকক্ষণ আগে, পাশের বিল্ডিং নানা রঙের আলোয় আলোকসজ্জিত, গান চলছে শাফিনের "কখনো কি তোমার মনে পড়েনা", হিন্দি সিনেমার "থারাসা দিলমে দে জাগাদু" -- বিয়ে বাড়ি, বিয়ের আসর। দু'জন মানব-মানবী জীবনের বাকিটা পথ একসাথে পাড়ি দেবার আয়োজন। অনেক অর্থব্যয়, জাঁকজমক, গানের আয়োজন -- বন্ধু-আত্মীয়দের দাওয়াত, খানাদানা, নতুন পোশাকে সবাই আয়োজিত... হয়ত রাতে ডিজে হবে, এখনকার বিয়েতে এমনই হয়। কেউ হয়ত নতুন এই দম্পতির জন্য প্রাণভরে দোয়া করেনা, অনেক 'উইশ' করে। দুআ করার শান্ত সময় কোথায় এই কোলাহলে, উত্তাল উচ্ছ্বাসে? 

মন খারাপ বুঝি? কেন বলুন তো?

সত্যি বলছি, নিজের ব্যাপারটা নিশ্চিত জানি, অন্যদের ব্যাপারেও দেখেছি -- আমরা মূলত তুলনামূলক দুঃখে ভুগি। ব্যাখ্যা করছি। ইসলামের নির্দেশনা জানার ব্যাপারটা বাদই দিলাম, ধরেই নিচ্ছি, যার কথা বলছি তার ঈমান দুর্বল। ব্যাপারটা হচ্ছে এমন --

২৬ ডিসে, ২০১২

কষ্টের সাথে কীভাবে স্বস্তি থাকে?


 ♥ "নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে। নিশ্চয় কষ্টের সাথে স্বস্তি রয়েছে"
-- [সূরা ইনশিরাহ, আয়াত ৫-৬]

এই আয়াতটা অনেক জায়গাতে উল্লেখ হতে দেখেছি, অর্থ ঠিক বুঝতাম না। আজকে কষ্টে অনন্যোপায় হয়ে সূরা ইনশিরাহ এর উপরে ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনা শুনতে বসলাম শুধু এই আয়াত দুইটার অর্থ জানবো বলে। মাত্র দু'টি আয়াতের অনন্য সৌন্দর্যে আমার অন্তরাত্মা প্রশান্ত হয়ে গেছে যার শাব্দিক ও অলংকারিক সৌন্দর্যের কথা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না। আমি আমার শেখা কয়েকটি চিন্তা ও অনুভূতির কথা বলতে চাই --

প্রথমে উল্লেখ আছে "ফা ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"। পরের আয়াতে আছে "ইন্নামা'আল উসরি ইয়ুসরান"।

এই ফা আগে আসার ব্যাপারটার আলোচনাটা দারুণ!

একই আয়াত দু'বার পুনরাবৃত্তি করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেয়া বার্তাটার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। এই আয়াত দু'টো সমস্ত উম্মাহর জন্যও প্রযোজ্য।

সবচাইতে সুন্দর জিনিস লেগেছে আমার কাছে, শেষের 'ইয়ুসরান" বা দুই যবর এর ব্যাপারটাতে। এই দুই যবর জিনিসটা শব্দটার সার্বজনীন ব্যাপ্তিকে বুঝায়। এখানে 'আল উসর' যেমন সব ধরণের কষ্ট/পরীক্ষা, তেমনি 'ইউসরন' দিয়েও কেবল চলমান কষ্ট/পরীক্ষার স্বস্তিকে বুঝায় না, বরং তা সার্বজনীন স্বস্তি/প্রশস্ততা।

হযরত উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুকে একবার আবু উবায়দা ইবনুল জাররাহ (রা) রোমানদের সাথে যুদ্ধে মুসলিমরা কেমন দুঃখ-কষ্ট ও ভয়ের সম্মুখীন হচ্ছিলো তা লিখেছিলেন চিঠিতে, উত্তরে উমার (রা)-এর লেখা কথাগুলোর একটা ছিলো, ঈমানদাররা সবসময়েই কোন না কোন পরীক্ষা, বিপদাপদ, কষ্টের সম্মুখীন হয় যখন তাদের উপলব্ধি করা উচিত যে কেবলমাত্র আল্লাহই পারেন তাদের এই কঠিন সময়কে সহজ করে দিতে।

এই আলোচনাটিতে আমার মনটাকে দ্রবীভূত করে দিয়েছে ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) এর একটা কথা যেখানে তিনি বলেছেন, ঈমানদাররা তাদের ঈমানের পরীক্ষা দিতে দিতে, দিতে দিতে এমন একটা অবস্থায় চলে যায়, যখন সেই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে ফিরে আসে এবং তাঁর কাছে নিজেকে পুরোপুরি সঁপে দেয়। তখন তার অন্তরে অনুভব করে ঈমানের গভীর আর পূর্ণাঙ্গ স্বাদ, আল্লাহর কাছে সে ফিরে পায় আশা, তার বিশ্বাস, নির্ভরতা।

ঈমানদারদের আত্মার এই পরিতৃপ্তির এই অসাধারণ মাত্রাটা আর কে বুঝবে তিনি ছাড়া যিনি এমন অবস্থায় পড়েছেন আর আল্লাহর উপরেই নিজেকে সঁপে দিয়েছেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু, সর্বদ্রষ্টা, সর্বজ্ঞানী। আল্লাহ আমাদের জন্য দ্বীনের পথে চলা সহজ করে দিন।

স্মরণ করতে পারি শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়ার একটি হৃদয়গ্রাহী উদ্ধৃতিকে --

 “ঈমানদারদের জীবন ক্রমাগত বিভিন্ন কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করানো হয় তাদের ঈমানকে বিশুদ্ধ এবং তাদের পাপকে মোচন করানোর জন্য। কারণ, ঈমানদারগণ তাদের জীবনের প্রতিটি কাজ করেন কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য; আর তাই জীবনে সহ্য করা এই দুঃখ-কষ্টগুলোর জন্য তাদের পুরষ্কার দেয়া আল্লাহর জন্য অপরিহার্য হয়ে যায়।”
– ইমাম ইবনে তাইমিয়া
[মাজমু'আল ফাতাওয়া : ভলিউম ১৮/ ২৯১-৩০৫]


রেফারেন্সঃ

২৬ ডিসেম্বর, ২০১২

২১ ডিসে, ২০১২

মানসিকভাবে ডাউন টাইম চললে কী করা যেতে পারে?

মানসিক আপ আর ডাউনের মাঝে মনে হয় সবারই বসবাস। আজকে একটা ধাক্কা পেরিয়ে এসে আবিষ্কার করলাম, জীবনের সবকিছুই আসলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপার। জীবনের ঘটনাগুলোর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর আচরণ যখনই বদলে যায়, তখনই ঘটনা আরো জটিল হয়ে যায়। তাই, নিজেদের অন্তরের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। এই বিষয়ে কিছু অভিজ্ঞতা উল্লেখ করব।

২০ ডিসে, ২০১২

অন্তহীন ধৈর্যযাত্রা

সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে আমার খুব অদ্ভুত আর গভীর একটা উপলব্ধি হচ্ছিলো। বারবার ফিরে ফিরে আমার মনে হচ্ছিলো, জীবনে একবার যখনই নিয়াত করেছি সবকিছু বুঝে -- আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হবো না। তখন থেকেই আসলে আমার ধৈর্যের সীমাহীন পথে পা রাখা শুরু হয়েছে। আল্লাহর বান্দা হবার জন্য অনন্ত ধৈর্যধারণ আসলে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কেমন এই ব্যাপারটা? হযরত নূহ আলাইহিস সালাম নাকি প্রায় সাড়ে নয়শত বছর দাওয়াত দিয়েছিলেন উনার কওমকে, বিনিময়ে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪০ জোড়া ঈমানদার নারী-পুরুষ। হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালামকে সবাই ফেলে রেখে চলে গিয়েছিল রোগাক্রান্ত অবস্থায়, একদিকে রোগ, অন্যদিকে আশেপাশে কেউ না থাকা। অত্যন্ত কষ্টকর ব্যাপার -- উনি ধৈর্যহারা হননি।

১৯ ডিসে, ২০১২

একটু শান্তির খোঁজে


অনেক চিন্তাভাবনার পরে অবশেষে মানসিকভাবে পার করা প্রতিটি কঠিন সময়ের পরে, অশান্তির বিশাল শেকলবদ্ধ সময়ের পরে আমি ঘুরে ফিরে অন্তরের সকল অশান্তির মূলে একটা জিনিসকেই খুঁজে পাই -- সেখানে জটিলতা নেই, অনেক কাহিনীর হুড়োহুড়ি কাহিনী নেই। স্রেফ একটাই ব্যাপার, যা দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়ন্ত্রণ করে, চোখের দেখাকে বদলে দেয় দেয়, প্রাণের শান্তি হারিয়ে দেয়।

আর সেই জিনিসটা হলো, আল্লাহর সাথে সম্পর্কে ভাটা পড়া। নামাজে খুশু না থাকলে সেই মানুষ দুনিয়াবী অনেক কিছু আঁকড়ে ধরে সেগুলোকেই সবকিছু মনে করবে। অথচ, আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুলকারী জানেন, আমাদের শূণ্য অন্তরকে অনেক আনন্দে আর প্রাপ্তির জোয়ারে পূর্ণ করে দিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার একটা ইচ্ছাই যথেষ্ট।


কঠিন সময়? অনেক যন্ত্রণা বুকে? অনেক বিপদ? তাহলে একমাত্র বড় *চিকিৎসা* হচ্ছে নামায। আর সেই ধৈর্যধারণ করে যাইতে হলে বিনয়ী হতে হবে। যে কষ্ট পেতে পেতে বিরক্ত হয়ে হারিয়ে যাবে না আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়ার আশা হতে। সে আবার বিনয়ী হয়ে আল্লাহর কাছে চাইবে মুক্তি। নয়ত আধ্যাত্মিক শূণ্যতায় ভুগতে হতে পারে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেনঃ

  "হে মুমিন গন! তোমরা ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন" [১]
  "ধৈর্য্যের সাথে সাহায্য প্রার্থনা কর নামাযের মাধ্যমে। অবশ্য তা যথেষ্ট কঠিন। কিন্তু সে সমস্ত বিনয়ী লোকদের পক্ষেই তা সম্ভব।" [২]

এই নামাজে কখন কী বলছি, তার অর্থ কী, সেগুলো কীভাবে এলো আমাদের কাছে -- এই দারুণ সব তথ্যগুলো ও অর্থগুলো উস্তাদ নুমান আলী খানের ওয়েবসাইটে অ-নে-ক সুন্দর করে উল্লেখ করা আছে। আজকে অনেকদিন পর আবার চোখ বুলাতে গিয়ে সবার সাথে শেয়ার করতে প্রয়োজন মনে করলাম। এগুলো জেনে বুঝে নামায পড়লে নামাযের মাত্রা অন্যরকম সুন্দর হয়। এই সাইটটি অনেক সুন্দর!

[Meaningful Prayer] :: অর্থপূর্ণ নামায : বাইয়্যিনাহ ইনস্টিটিউট

সেই সাথে আমাদের যাদের আরবি উচ্চারণ শুদ্ধ নয়, তিনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও হয়ে থাকেন, ভুল লাজ-শরম-জড়তা ভেঙ্গে শুদ্ধ উচ্চারণে কুরআন পড়া শেখার জন্য এখনি পদক্ষেপ নেয়া উচিত। শুদ্ধ করে কুরআন পড়া/শোনার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশের মতন নয়! একজন ইমাম বলছিলেন, "আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম" পড়লে তো শয়তান পালিয়ে যায়। কিন্তু আমাদের তো উচ্চারণই শুদ্ধ হয়না...

আমাদের ফরজ নামাযগুলো আদায় করতে দেখে যদি কেউ অবাক হয় বা আমাদের ধর্মভীরু মনে করে, বুঝতে হবে আমরা আসলে এখনো নামাযকে স্থাপন করতে পারিনি সমাজে। তাই কিঞ্চিত লজ্জিত হওয়া উচিত মনে হয়! সদলবলে নামায পড়তে হবে, নামায নিয়ে খুবই সিরিয়াস হতে হবে। নামায জান্নাতের চাবি, শান্তির বাগান হলো জান্নাত, সেখানে যেতে হলে এই চাবি লাগবেই। এই নামায হচ্ছে নামায কুফর ও ঈমানের পার্থক্যকারী। ঈমানের প্রথম পরিচয় নামায আদায়ের মাঝেই নিহিত, যার নামায নেই, তাকে কুফরকারীদের সাথে আলাদা করা যায়না।

পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা যে মুসলমানিত্বের মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট, এটা অচেতন মুসলিমদের বুঝিয়ে দেয়া প্রয়োজন বেশি বেশি নামায আদায়ের মাধ্যমে, যেন এতটুকু পালন করেই কেউ আত্মতুষ্ট না হয়, আবার কেউ করলে অন্যরা তাকে সো-কলড *ধার্মিক* মনে না করে। দ্বীনদার হওয়া তো আরো অজস্র জিনিসের সমন্বয়।

হযরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম একটা দু'আ করেছিলেনঃ

"হে আমার পালনকর্তা, আমাকে নামায কায়েমকারী করুন এবং আমার সন্তানদের মধ্যে থেকেও। হে আমাদের পালনকর্তা, এবং কবুল করুন আমাদের দোয়া। হে আমাদের পালনকর্তা, আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে ক্ষমা করুন, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।" [৩] 

উচ্চারণঃ রব্বি জা'আলনি মুক্কিমাস সলাতি ওয়া মিন যুররিয়্যাতি রব্বানা ওয়া তাক্কাব্বাল দু'আ। রব্বানাগ ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়া ওয়া লিল মু'মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্কুমুল হিসাব।

কঠিন সময়গুলোর মাঝেও মাঝে মাঝে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ায় আকাশের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত সুন্দর একটা অনুভূতিতে বুকের উপরে হাত দিয়ে বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে চোখটা বন্ধ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলাকে স্মরণ করতে খুব ভালো লাগে এই বলে --

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ। মহাসুন্দর, মহাপবিত্র, মহামহিম। একদিন সবচাইতে সুন্দর তোমার সাথে দেখা হবেই ইনশাআল্লাহ। জানি সেদিনের সুসংবাদ পাবার আগে আমার বুকের এই শূণ্যতা কখনো পূর্ণ হবেনা। তুমি আমার পথ দেখিয়ে নিয়ে যেয়ো আল্লাহ, তুমি তো জান আমি কত দুর্বল, কত ক্ষুদ্র, কত অকৃতজ্ঞ। তুমি তো দয়াময়, প্রেমময়, ক্ষমাশীল... ♥ ♥




  নির্ঘন্ট 

ইস্তিখারা কেমন করে করতে হয়?

খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য হলো, ইস্তিখারা করা। শাইখ আব্দুল নাসিরের আলোচনাতে শুনেছিলাম ইস্তিখারার প্রয়োজনীয়তা ও মর্যাদা। আমি যা বুঝেছিলাম, আমাদের জীবনে আমাদেরকে অজস্র বড় বড় সিদ্ধান্ত নিতে হয়, আর সেইসব সিদ্ধান্ত যেন আল্লাহর পথেই হয়, সেই সাহায্য চাওয়ার একটি উপায় এই ইস্তিখারা।

যেহেতু আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যই আল্লাহর দাসত্ব করা, তার সর্বময় ক্ষমতাকে প্রতিটি নিঃশ্বাসে আন্তরিকতার সাথে মেনে নেয়া -- ছোট ছোট কাজেও দু'আ করা আমাদের ইবাদাতের একটা বড় রূপ। এটা খুবই কল্যাণকর। তাছাড়া, ইস্তিখারা করা হয় বিয়ে, নতুন চাকুরির সিদ্ধান্তের সময়সহ আরো অজস্র সিদ্ধান্তের সময়। ইস্তিখারার দু'আ খুবই সুন্দর, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার কাছে এত সুন্দর করে প্রার্থনা করতে পারাও একটা আনন্দের বিষয়। স্কলাররা ছোট ছোট সিদ্ধান্তকেও আল্লাহর সাহায্যপূর্ণ করে কল্যাণময় করে নিতে দু'আ করতে উৎসাহিত করেন। দু'আ পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, এত সুন্দর দু'আ সব কাজের আগেই পড়ে ফেলা উচিত, বুঝে বুঝে, অন্তরের গভীর থেকে।

শাইখ বিলাল ফিলিপস ইস্তিখারার ব্যাপারে বলেছেন,

"ইস্তিখারা নামায হচ্ছে যখন কেউ মনে মনে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয় তখন দুই রাকাত নামায পড়ে আল্লাহর কাছে বলে, সর্বজ্ঞানী আল্লাহ যেন তার এই সিদ্ধান্ত এই জীবন ও পরকালের জন্য শুভ হলে কাজটা সহজ করে দেন এবং শুভ না হলে কাজটা কঠিন করে দেন। এই পদ্ধতি অতীব সহজ সরল ও বোধগম্য। আপনি কি করতে হবে বুঝতে না পারলে ইস্তিখারা নামায পড়বেন, ব্যাপারটি তা নয়। এ অবস্থায় এ নামায নয়। আমাদের প্রথমে অবস্থা বুঝে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্তে পৌছঁতে হবে, এরপর আল্লাহর কাছে দোআ করতে হবে এই সিদ্ধান্ত কি আমার জন্য ঠিক? যদি ঠিক হয় তবে আমার জন্য তা সহজ করো আর ভুল হলে কঠিন করো। এটাই হচ্ছে ইস্তিখারা নামাযের সঠিক পদ্ধতি।"

ইস্তিখারার দু'আ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছেনঃ

♥‌'হে আল্লাহ, আমি আপনার ইলমের মাধ্যমে আপনার নিকট কল্যাণ কামনা করছি। আপনার কুদরতের মাধ্যমে আপনার নিকট শক্তি কামনা করছি এবং আপনার মহা অনুগ্রহ কামনা করছি।‌ কেননা আপনি শক্তিধর, আমি শক্তিহীন, আপনি জ্ঞানবান, আমি জ্ঞানহীন এবং আপনি অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। হে আল্লাহ, এই কাজটি (এখানে উদ্দিষ্ট কাজ বা বিষয়টি উল্লেখ করবেন) আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, আমার জীবিকা এবং আমার পরিণতির ক্ষেত্রে অথবা ইহলোক ও পরলোকে কল্যাণকর হয়, তবে তাতে আমাকে সামর্থ্য দিন। পক্ষান্তরে এই কাজটি আপনার জ্ঞান মোতাবেক যদি আমার দীন, জীবিকা ও পরিণতির দিক দিয়ে অথবা ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিকর হয়, তবে আপনি তা আমার থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং আমাকেও তা থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এবং কল্যাণ যেখানেই থাকুক, আমার জন্য তা নির্ধারিত করে দিন। অত:পর তাতেই আমাকে পরিতুষ্ট রাখুন।'♥

[বুখারী : ১১৬৬; আবূ দাউদ : ১৫৪০]

♣ আরেকটু বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন : https://learningdeen.wordpress.com/2012/07/22/istikhara/

১৮ ডিসে, ২০১২

আলাপন : নিজেদের ছাঁচে ইসলামকে বানানো

এই পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ মানুষ আল্লাহ উপরে বিশ্বাস করে বা তাদের পরিচিতি মুসলিম। অর্থাৎ পৃথিবীর মাটিতে এই মূহুর্তে পা রাখা প্রতি চারজন মানুষের একজন মানুষ মুসলিম। অথচ মুসলিমদের কোন জনবসতিতেই শান্তি নেই, তাবত পৃথিবীর কথা বাদই দিলাম। মুখে বিশ্বাসের আমরা আসলে প্রাণে নিতে পারিনি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ', সজ্ঞানে এবং অজ্ঞানে দাসত্ব করি কালচারের, সেলিব্রেটিদের, শাসকদের, ব্যাংক ব্যালেন্সের, সুনামের, অভিশপ্ত শয়তানের।

আমরা দুনিয়া ও আখিরাতের ব্যাপারে সতর্ক থাকি না, ভাবি না। ইসলামের দ্বারা অনুপ্রাণিত হই না সচরাচর। আর তাই, ইসলামের ছাঁচে নিজেদেরকে না গড়ে আমরা নিজেদের ছাঁচে ইসলামকে গড়তে চাই। যেটুকু ভালো লাগে নিয়ে মানসিক তৃপ্তি পাই, যেটুকু মিলেনা তাকে "বেশি বেশি" বলে ভাবি। অন্তরের লক্ষ্য যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি হয়, মহান আল্লাহর কাছে তার প্রিয় বান্দা হয়ে ফিরে যাবার প্রেরণা হয় -- তাহলে আমরা আল্লাহর দ্বীনকে কাটাকুটি করতাম না, আবার কঠিনও করতাম না। আমাদের প্রিয় নেতা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়ে গিয়েছেন মধ্যম পথের অনুসরণ। সেটা সম্ভবত কাটাকুটি না, ঢিলামি না, ফাঁকিবাজিও না।

দ্বীনদারীর পরিচয় মুখেও প্রয়োজন হয়, পোশাক-পরিচ্ছদেও প্রকাশের দরকার হয়, কিন্তু তার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্তরের জন্য -- সেটা কেউ দেখতে পায় না। অন্তরের ব্যাধিগুলোও আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না। আমরা অন্যদের প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করে ভুল প্রমাণ না করে নিজেদের দিকেই যেন ফিরিয়ে নিই --এতে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ নিহিত ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদেরকে কেবলমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য জীবনধারণের যোগ্যতা দান করুন।

১৮ ডিসেম্বর, ২০১২

পকেটে গুপ্তধন !!


গত কিছুদিন যাবত কিছু গুপ্তধন আমার পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি ভেবেই অবাক লাগছিলো। এই ব্যাপারটা কেউ টের পাচ্ছিলো না, আমি নিজেই পাইনি প্রথমে। পরে যখন কিছুটা সময় গেলো, ব্যাপারগুলো নেড়েচেড়ে উপলব্ধি করলাম -- এই সম্পদের খোঁজ পেলে বাঘা বাঘা ডাকুরাও হয়ত দৌড়ে আসত আমার পেছনে পেছনে। আফসোস! কেউই টের পায়না সচরাচর!

১৭ ডিসে, ২০১২

হানিমুন ভাবনা


'হানিমুন' শব্দটা প্রথম শুনেছিলাম মনে হয় ক্লাস টু-থ্রিতে পড়তে, পাশের বাসার ভাইয়াটার মুখে। সেই প্রাইমারিতে পড়ার সময়ে অনেক গল্পের বইতে 'মধুচন্দ্রিমা' শব্দটি দেখেও টের পেতাম না ব্যাপারখানা কী। সময়ের সাথে সাথে একসময় বড় হলাম, জানলাম, বিয়ের পরে সবাই হানিমুনে যায়, ব্যাপক আনন্দের বিষয় সেইটা! ছোট থেকে বড় হবার সময়টায় নিজ পরিবারের গল্পগুলো শুনে নিশ্চিত হয়েছিলাম, আমার বাবা-মায়ের চৌদ্দ গুষ্টিতে কেউ কখনো হানিমুনে যায়নি; আত্মীয়-পরিজনের কেউ কোনদিন এই শব্দটা আলাপও করেনি। এমনকি ভাইবোনদের বিয়েতেও এই শব্দ শুনিনি কোনদিন, কখনো।

কিন্তু হানিমুনের আলাপ খুবই জীবন্ত থাকত বন্ধুমহলে, কলেজের ক্লাসে, হল লাইফে। ভার্সিটিতে পড়ার সময় এর-ওর হানিমুন কেমন হবে, কোথায় হবে -- তা নিয়ে আলাপ জমিয়ে মুখ টিপে টিপে সবাই হাসাহাসি করত মনে আছে। সেই সময়ে এসব আলাপে ঢোকার আগ্রহ না থাকায় দেখেই যেতাম কেবল। খুব অস্বস্তি লাগত আর তাই ভাবতাম --'আমি ব্যাকডেটেড আনস্মার্ট হয়ত'।

১৬ ডিসে, ২০১২

বিজয়ের দিনে এ আবার কেমন আনন্দ?

আজ ১৬ই ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। বিজয়ের সেই আনন্দে আজ আমাদের অনেক আয়োজন ছিলো, চলছে। আনন্দে মেতেছে আমাদের পাশের বিল্ডিং এর ছাদের প্রকান্ড সাউন্ডবক্সগুলো, হিন্দি গানে (!) আর লিংকিন পার্কের অল্টারনেটিভ রক গান দিয়ে। বিজয়ই বটে!! আজ আনন্দে মেতেছিলো রাজপথ, হুডতোলা রিকশার আরোহীরা, চিপায়-চাপায় কপোত-কপোতি, দুপুরে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া পাশাপাশি বসা উদ্দাম উত্তাপে আরক্ত তরুণ-তরুণীরা। বাসায় ফিরে বুকে অদ্ভুত একটা কষ্ট নিয়ে শুয়ে ছিলাম, মা কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলেন কী হয়েছে। অজানা খারাপ লাগাকে বুঝতে না পেরে আধাঘন্টা স্রেফ শুয়েই ছিলাম। একটু আগে বুঝলাম কেন এই খারাপলাগা...

আজ সন্ধ্যার পরপরই বাসায় ফিরছিলাম, দেখলাম "বিজয়ে পার্বণে" নামের অনুষ্ঠান চলছে ঢাবিতে, সেখানে জ্যামে পড়ে বসেছিলাম। রাস্তায় রিকসায় বসে চারপাশের এমন কিছু অভিজ্ঞতায় আক্রান্ত চোখ অশ্রুভেজা হবার ঘটনা আমার আগে হয়েছে বলে মনে পড়েনা। এই কষ্টটা অন্যরকম। তরুণদের এই উদ্দাম আনন্দকে আমি একই রূপে আগে দেখেছি বিভিন্ন *দিবসের* উপলক্ষে। তবে এরকম আতঙ্কজাগানিয়া নির্লজ্জতা আগে দেখিনি। রিকসাআরোহীরা পশুর মতন অদ্ভুত নির্লজ্জ শব্দ করে জ্যামে পড়া চারপাশের মানুষদের *চমকে* দেয় -- তা দেখিনি আগে।

১৩ ডিসে, ২০১২

আলাপনঃ ইসলামে ব্রাহ্মন সমাজের মতন কিছু আছে নাকি?

ইসলামে কোন ব্রাহ্মন সম্প্রদায় নাই, থারকার সম্ভাবনাও নাই। কিছু কারণে যে/যারা নিজেকে এলিট সোসাইটির মনে করেন, সেই মানুষদের দ্বীন বুঝার ব্যাপারে ঘাটতি থাকার কথা। চলতে ফিরতে এরকম অজস্র ব্রাহ্মন মানসিকতাসম্পন্ন জ্ঞাতিগুষ্টির কাছে বিচিত্র উপায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হইতে হচ্ছে। সবর ধারণ কতটা জটিল, তা টের পাচ্ছি। একজন মানুষ কেন হঠাৎ এত বেশি কঠোর আচরণ করতে শুরু করে চারপাশের মানুষদের সাথে, তা আমার মাথায় আসে না। একজন মানুষ, যিনি ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মানতে চেষ্টা করে বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন, তার কি চিন্তা করা উচিত না যে তার পেছনের জীবনের এমনকি এখনকার জীবনের অজস্র পাপ আল্লাহ ঢেকে রেখেছেন বলেই তিনি নিজেকে (যতটুকু ভাবছেন) সৎ মুসলিম হিসেবে মনে করছেন? আল্লাহ তার একটা কাজ প্রকাশ করে দিলেই কি লজ্জায় তিনি মাটির নিচে ঢুকে যেতে চাইবেন না? 

তাহলে কেন অকারণে অযথাই ছোট ছোট বিষয়ে অন্যদেরকে আঘাত করার চেষ্টা, যখন সমগ্র পৃথিবীর আনাচে কানাচে মানুষ কেবলমাত্র সঠিক জ্ঞানের অভাবে, আশাবাদের অভাবে, ভালোবাসার অভাবে, ভালোবাসা পাওয়ার সম্ভাবনার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে দ্বীনের পথ থেকে -- তখনো নির্লজ্জের ম তন আজেবাজে ইস্যু নিয়ে হাউকাউ? আল্লাহর দ্বীন কি অ্যান্টার্কটিকা থেকে গ্রীনল্যান্ডের সবার জন্যই না? ক'টা লাইন পড়ে কেন এত দম্ভ হয় মানুষের? যাদের নিজেকে এত ভালো মুসলিম মনে হয়, তাদের উচিত নয় কি প্রথমত অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবন জেনে জীবনকে তার দেখানো পথেই চালানো? সেই সাথে সাহাবাদের জীবন পড়া, ইমামদের জীবন জানা? তাহলে উপলব্ধি হবে নিজেদের জ্ঞান ও কাজে কী গভীর দৈন্য ও ক্ষুদ্রতা... মানুষকে বিচার করার দ্বায়িত্ব আমার না, আমাদের না। এই একই বার্তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের প্রিয় নবী (সা)-এর মাধ্যমে জানিয়েছিলেন যেন আমরা শিখতে পারি।

আমাদের কাজ হলো সত্য ও সুন্দরকে স্থাপন করে যাওয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টা।  আমরা কেউ জানিনা, যাকে আমি খারাপ ভাবছি, সেই লোকটা ভুল বুঝতে পেরে হয়ত তাওবা করে আল্লাহর পথে ফিরে আসার পর মূহুর্তেই আল্লাহর প্রিয়তম কাজের মাধ্যমে প্রিয়ভাজন হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারেন। ভাই আমার, দয়া করে বিচারকের আসনে না বসে দু'হাত বাড়িয়ে মানুষকে ভালোবাসা দিই। অন্তত এইভাবে দুনিয়াকে আরো কিছুটা সুন্দর রেখে যেতে পারব, অন্তত আরো একটা মানুষকে দিনরাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করার মতন করে রেখে যেতে পারব। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের অন্তঃকরণকে পরিশুদ্ধ করার তাওফিক দিন, আমাদেরকে সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

৫ ডিসে, ২০১২

একটি বন্ধু এবং একটি বইয়ের কথা

আমাদের একটা বন্ধুসার্কেল ছিলো, বহুমাত্রিক। আমাদেরই ফ্রেন্ড সার্কেলে এক বন্ধুর আন্তর্জাতিকভাবে পেটেন্ট পাওয়া রিসার্চ আছে, পিএইচডি প্রায় শেষ করে ফেললো। দুই হাতের আঙ্গুল দিয়ে গুণে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ছেলেদের হিসেব করতে হবে। কিন্তু অসাধারণ প্রতিভার এতজনের কাউকেই আমার তেমন একটা হিংসে হত না সেই স্কুলজীবন থেকেই। আজকেও হয়না। অবশ্য এখন জানি, কেবলমাত্র দ্বীনের জ্ঞানে এগিয়ে থাকা এবং দানশীলতায় এগিয়ে থাকা মানুষদের ছাড়া কাউকে হিংসা করার নিষেধ। তাই এখন দুনিয়ার বিভিন্ন কাজে এগিয়ে থাকা মানুষদের প্রতি এমন হিংসাকে প্রশ্রয় দেবার প্রশ্নই উঠেনা।

কেমন হবে চিরবিদায়ের বেলা?


এই পৃথিবীর সবকিছুর শেষ আছে। আমাদের এই জীবনের শেষ আছে, দুঃখের দিনগুলোরও শেষ আছে। সুখের দিনগুলোও একটানা থাকেনা, তারও শেষ থাকে। এই পৃথিবীটার সবকিছুই এমন। অত্যাচারেরও শেষ আছে, শেষ আছে দাম্ভিকের দম্ভের, মিথ্যাবাদীর মিথ্যার। একদিন শক্তিশালীও হবে দুর্বল। রাস্তার মোড়ের জওয়ান রগচটা ছেলেটাও বৃদ্ধ বয়েসে লাঠি নিয়ে হাঁটবে। তাই যেকোন ক্ষমতার, শক্তির এই ভুলে ডুবে থাকার অর্থ নেই কোন, এ এক পরিপূর্ণ বিভ্রমমাত্র...

চলে যাব, এর চাইতে বড় সত্য আর নেই। পৃথিবীতে আসার পর থেকেই মৃত্যুই আমাদের সবচাইতে অবশ্যম্ভাবী সত্য। আর সবকিছুই হতেও পারে, নাও পারে.. সহস্র কোটি বছরের এই পৃথিবীতে আমার মতন মানুষ এসেছেও ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন। অনেক দূর থেকে যদি দুনিয়াতে আসা এইসব মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয়া অবস্থায় দেখার কথা কল্পনা করি, তাহলে বুঝব, সেই মানুষগুলো উপস্থিতি আমাদের চোখে কীটপতঙ্গের ঝাঁকের একেকটা পোকা, বা পিঁপড়ার বাহিনীর একটা পিঁপড়ার মতন।

২ ডিসে, ২০১২

যে ভালো অনুভূতি পাওয়ার জন্য আল্লাহর ইবাদাত করে, সে তার অনুভূতির দাসত্ব করে, আল্লাহর নয়

কলেজ-ভার্সিটির সহপাঠিদের আলাপের মাঝে সুযোগ পেলেই *সুখ* জিনিসটা আসলে ভালো স্যালারি, ধবল-ফ্যাশনেবল গার্লফ্রেন্ড, গাড়ি-ফ্ল্যাটের মধ্যে নাই এমন টপিকে আলাপ ঠেলে দিতাম সূক্ষ্ম কৌশলে, সবসময়েই। প্রায় সময়েই কিছু বন্ধু একটা কথা বলত, যাদের *স্বার্থপরতা* কথার মাঝেই ফুটে উঠতো -- "আমি আল্লাহর কাছে চেয়ে দেখসি, যখন চাই, তখনই পাই কিন্তু সবসময় নামাজ পড়া হয়ে উঠেনা"। অথবা, "নামাজ পড়লে আমার অনেক ভালো লাগে। মন খারাপ লাগলে আমি নামাজে যাই, মনে ভালো হয়ে যায়"। বলাই বাহুল্য, যাদের মন ভালো হয়ে যেত, তারা আর পরবর্তীতে পুনরায় মন খারাপ না হলে, ঠেকায় না পড়লে, বিপদে না পড়লে নামাজে যেত না।

এইরকম কিছু বিষয় নিয়ে আমি পাজলড ছিলাম। মনে হত, যে কারণেই হোক, একজন মানুষ তো আল্লাহকে স্মরণ করছে, হয়ত আরো হিদায়াহ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যাচ্ছে ... নিজের অবস্থা যেমন তেমন ছিলো, আমিও পুরাই ভুলে ডুবে ছিলাম, এর মাঝেও ওদের এই আচরণটা সুন্দর মনে হত না। আর ওদের দেখার পরেই নিজে বিপদে পড়লে, নিজের অস্থিরতার মাঝে ভালো লাগার অনুভূতি পেতে নামাজ পড়ার ব্যাপারে আমার খুব সঙ্কোচ লাগত। মনে হত, এইসময়ে আমার আর ওদের কাজ একই হয়ে গেলেও আমাদের চিন্তার তো অনেক ফারাক! বিচিত্র ছোট ছোট ক্ষুদ্রতার প্যাঁচে পড়ে নাজেহাল অবস্থা! উত্তরও জানা ছিলো না!

আলহামদুলিল্লাহ, একটা দারুণ জিনিস শিখলাম ক'দিন আগে ইমাম সুহাইব ওয়েবের আলোচনা শুনতে গিয়ে। আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, অনেকে তার কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বলেছেন, আমি অনেক বছর ধরে নামাজ পড়ি, কিন্তু আমি আসলে খুব ভালো ফিল করিনা, শান্তি পাইনা, ইবাদাতে মজা পাইনা। নওমুসলিমরা তো অল্প ক'দিন ইসলামে ফিরে এসেই দেখি অনেক শান্তি পায়, কেন?

এই প্রসঙ্গে তিনি দারুণ একটা কথা জানিয়েছিলেন। ইমাম ইবনু আতা আল্লাহ আল ইসকান্দারী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে ব্যক্তি ভালো অনুভূতি পাওয়ার জন্য আল্লাহর ইবাদাত করে, সে একজন বোকা। সে আসলে তার অনুভূতির দাসত্ব করে, আল্লাহর নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইবাদাত করতে হবে কেবলমাত্র একটা কারণেই, তা হলো, তিনি আল্লাহ। আর এই কাজের মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে হবে।

অন্যরকম একটা মাত্রা আছে এই উপলব্ধিটার মাঝে। আল্লাহ রব্বুল আলামীন হলেন মহান, তিনি এক, অদ্বিতীয়, সুন্দরতম, মহাপরাক্রমশালী। সমস্ত চিন্তা, কল্পনার শ্রেষ্ঠত্ব যেই আল্লাহর, তিনি আমাদের কোন কিছুতেই দায়বদ্ধ নন, আমরা সম্পূর্ণরূপে তার, আমরা ক্ষুদ্রের চাইতেও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র। আর আমাদের সাথে আল্লাহর কোন দেয়া নেয়ার সম্পর্ক হতে পারেনা। মহান আল্লাহ মহামহিম, বিশ্বজগতের প্রতিপালক, তিনি আমাদের মালিক আর আমরা তাঁর দাস -- এটাই আমাদের দাসত্বের কারণ। আমরা দাস হতে পেরে গর্বিত, আনন্দিত। আর স্বতঃস্ফূর্ত এই দাসত্বই আমরা করতে চাই, এতেই আমাদের আনন্দ। চিন্তাগুলো বারবার ঝালিয়ে নিলে আমাদের অন্তরের ব্যধিগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিতে সহজ হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে তার অনুগত ও সন্তুষ্টি অর্জনকারী বান্দা হিসেবে কবুল করে নিন।

*প্রাসঙ্গিক ভিডিও লেকচার লিঙ্ক - I Tried But It Didn't Work - ইমাম সুহাইব ওয়েব :: http://www.youtube.com/watch?v=an30sWAUr74

[১২/১২/১২]

১ ডিসে, ২০১২

দিনের রুটিন করবো কীভাবে?

ক'দিন আগে রাতে বাসায় ফেরার সময় মনে হচ্ছিল, ছোট থাকতে অনেক বইতে পড়েছিলাম,, এই জমিনের মাটিতে এমন মানুষ ছিলো যারা একজন মুসলিমের সাথে দেখা করতে অনেক মাইল পাড়ি দিয়ে গিয়েছেন। এখনো এমন মানুষ অনেক আছেন। আর আমি তো মাত্র কয়েক কিলো পেরিয়ে দেখা করতে যাই মাঝে মাঝে... এটা অনেক বড় একটা সুযোগ ও রাহমাত আলহামদুলিল্লাহ।

একটা উপলব্ধি কাল থেকে আরো গাঢ় হলো -- একদিন ইমাম সুহাইবের আলোচনায় বলছিলেন, স্কলাররা হলেন চাঁদের মতন, তারা সূর্যস্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্ঞানের আলোকে প্রতিফলিত করেন, আর যারা তাদের কাছ থেকে শোনেন এবং শিখেন, তারাও ভাগ্যবান যে সেই আলোয় আলোকিত হয় -- তারা একেকটা তারার মতন। জ্ঞানের পৃথিবীতে ছোট্ট তারা হতে পারাও কতই না দারুণ ব্যাপার!

পথে-ঘাটে বেহায়াপনার মুখোমুখি হলে কী করা যাবে?



মাঝে মাঝে আফসোসের ঢেউতে বুক উথাল পাথাল হয়ে যায়। হাইস্কুল লাইফ থেকে ভার্সিটি লাইফটা আসলে আত্মিক উন্নতির একটা চরম সময়। অথচ এই সময়টাতে কত অজ্ঞানতা আর অস্থিরতায় পার করেছি! অথচ এত সুন্দর কিছু দিক নির্দেশনা আছে, যা জীবন, আত্মা আর মনকে শান্ত ও তৃপ্ত করে। হতভাগা আমি সেগুলো সঠিক সময়ে জানতেই পারিনি। কথাগুলো মনে হয়েছিল ক'দিন আগে যখন সন্ধ্যার দিকে ঢাবি এলাকায় গিয়েছিলাম, তখন পথে প্রান্তরে দুঃখজনক, অগ্রহণীয় কিছু দৃশ্য দেখেছিলাম বলে। চারিদিকে ছেলেমেয়েদের উদ্দাম আনন্দের নামে বেহায়াপনাগুলোর সদম্ভ উপস্থিতি দেখে ভয় লেগে গিয়েছিল।

মনে পড়লো আব্দুল নাসির জাংদার 'Fighting Temptation' আলোচনাটির কথা, যেখানে তিনি সূরা ইউসুফের ২৩ নাম্বার আয়াত নিয়ে আলাপ করছিলেন। মিশরের যে ব্যক্তি ইউসুফ আলাইহিস সালামকে কিনেছিলেন, তিনি উচ্চ পদমর্যাদার আর অভিজাত লোক ছিলেন। তার স্ত্রী [বাইবেলে যে যালিখা নামে উল্লেখিত] একদিন ইউসুফ (আ)-কে একা পেয়ে তার মনের খারাপ ইচ্ছাকে চরিতার্থ করতে চেয়েছিলো। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেছেনঃ

♥"যে মহিলাটির ঘরে সে ছিল সে তাকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে থাকলো এবং একদিন সে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বললো, "চলে এসো"। ♥ [সূরা ইউসুফ ২৩]