২৮ ফেব, ২০১৩

যাব যেদিন তোমার কাছে



কাল যেই মাটির উপরে দাঁড়িয়ে আলাপ করছিলাম, আজ যেই মাটির উপরে গড়ে ওঠা বাসায় রাতভর ঘুমালাম -- কে জানে হয়ত আজ থেকে হাজার বছর আগে ঠিক এই মাটিতেই শত শত মানুষকে কবর দেয়া হয়েছে, তারা আজ মিশে গেছে মাটির সাথে। সেই মানুষগুলোরও আমাদের মতন অনুভূতি ছিল। তাদেরও ইচ্ছে করত আরাম কেদারায় শরীর এলিয়ে ঝিরিঝিরি বাতাসে আয়েশ করার, তাদেরও ইচ্ছা করত রসনাময় খাবারের স্বাদ আস্বাদন করার, নিকটাত্মীয়দের সাথে আনন্দময় সময় কাটানোর... কে জানে সেইসব! কিন্তু এটা সত্য, তারা আর নেই। আমরা জানিও না কারো কথা। ততটুকুই জানি, যতটুকু জানিয়েছেন আমাদের রব। সময়ের সাথে সাথে তাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে এই মাটির বুকে। তারা মিশে গেছে এই মাটিতেই, যেখানে জন্ম হয়েছিল তাদের। তাদের করা কাজগুলো তাদের ভবিষ্যতকে রচনা করেছে।

আমরাও এখন এই মাটিতেই বাস করছি। আমাদের কাজগুলোও নির্ধারণ করবে আমাদের গন্তব্য। এদিকে সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত কাটে 'উন্নত জীবন যাপনের' প্রচেষ্টায়। অথচ মৃত্যুই সবচাইতে বড় সত্য। কিন্তু প্রতিদিন কাজে এবং কথায় কেবল আমরা বুঝে-জেনে তবেই সত্যকে এড়িয়ে অসত্যকে আঁকড়ে ধরি, নিজের সুবিধার জন্য মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টাতেও কুণ্ঠিত হই না। সত্য মানার ভয়ে সত্যকে নিয়ে চিন্তাও করতে চাইনা। অথচ আমাদের এই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাজগুলোই রচনা করে দেয় আমাদের অনন্ত ভবিষ্যত। মালাকুল মাওতের আগমনের পরে যেখানে আর কোন অনুশোচনা, উদ্যম, স্পৃহা আর সৎকাজের প্রতি ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কাজে আসবে না। এই বিভ্রমের পৃথিবীতে অন্য মানুষের প্রাপ্য নষ্ট করেই বেঁচে থাকা হতভাগা আমাদের!

হে রাহমান! আমরা জানি, সব আপনারই সৃষ্টি। আপনার অপার ভালোবাসায় সিক্ত আমাদের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত। ধ্বংস হয়ে যাবে এই বিশ্বচরাচর আপনারই নির্দেশে, আপনি চিরন্তন, আপনি শ্রেষ্ঠ, আপনিই আমাদের শেষ ঠিকানা। হে আমাদের প্রিয়, আপনি আমাদেরকে সেই দলের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা আপনার প্রতি সবসময়েই সন্তুষ্ট এবং আপনিও তাদের প্রতি সন্তুষ্ট। আপনার সামনে দাঁড়ানোর দিন যেন আমরা হাসিমুখে সেই মানুষদের সান্নিধ্যে থাকতে পারি যারা আপনাকে ভালোবেসে অকাতরে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিয়েছেন, হয়েছেন আপনার প্রিয়তম। হে আল্লাহ! আমরা বড়ই অসহায়, আমাদেরকে দয়া করুন, আপনিই তো গাফুরুর রাহিম।

২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩

২১ ফেব, ২০১৩

আমার ভালোবাসা, আমাদের ভালোবাসা

ভালোবাসব বলে কেন আমরা এমন কাউকে ভালোবাসি, যে কখনই বুঝেনা আমাদের আর্তি আর গভীরতা। যাকে ভালোবাসি, সেওতো দুর্বল হয়ে ক্ষয়ে যায়, ভুলে যায়, মরে যায়। অল্পতেই বলে বসে বুকের গভীরে ক্ষত সৃষ্টি করে এমন কথা...

অথচ এমন কাউকেই ভালোবাসা উচিত, যে ভালোবাসা অক্ষয়, অবিনশ্বর। যে ভালোবাসা রয়ে যাবে অনন্তকাল। যেই অনুভূতির শেষ নেই, কাল নেই। ধনী-গরীবে পার্থক্য হয়না, রং-বয়সে পার্থক্য হয়না, পাপী-নিষ্পাপ সবার জন্যই রাস্তা খোলা সেই ভালোবাসার...

[২৪ জানুয়ারি, ২০১৩]

* * *

আচ্ছা, আমাদের রাগ হয় কখন? মূলতঃ তখনই, যখন আমাদের ভালোবাসার কোন কিছু হুমকির মুখে পড়ে।আমার নতুন মোবাইলটা কেউ নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলে রাগ হই, আমার মানহানিকর কোন মন্তব্য কেউ করলে রাগ হই। এমনি করেই কাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসি তা বোঝার উপায় হলো কীসে আমি বেশি রাগ হই সেটা বুঝতে পারলে। আমাদের মা-বাবা, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি, ভাই-বোন, অর্থ-সম্পদ, সম্মান-ইজ্জত নাকি অন্য কিছু।

সাধারণতঃ আমাদের বাবা-মা নিয়ে কেউ কটুক্তি করলে আমরা তেড়ে আসি, আমরা ক্ষেপে উঠি দেশ নিয়ে কেউ বাজে মন্তব্য করলে, আমার প্রিয় মানুষটিকে কেউ আঘাত করলে ক্ষেপে উঠি। এটাই স্বাভাবিক একটা ঘটনা প্রতিটি মানুষের জন্য। যেই মানুষ মনে করেন তিনি মুসলিম, যিনি মনে করেন তিনি আল্লাহকে রব হিসেবে মানেন, যিনি মৃত্যুর পরের জান্নাতের স্বপ্ন দেখেন -- তার জন্য তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি এমনকি নিজের চাইতে বেশি প্রিয় হবার কথা এই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটা, যিনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আমাদেরই এই দেশের মাটিতে, আল্লাহর সৃষ্টি ও রাহমাতের এই পৃথিবীর হাওয়া বাতাস খেয়ে বড় হয়ে কিছু নরাধম, ঘৃণ্য জঘন্য কীট আমাদের প্রিয় নবী ও আল্লাহকে নিয়ে কটাক্ষ করেছে, নোংরা কথা বলেছে। এই কথা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হবার পরেও যদি কেউ বিশ্বাস করতে চায় এসব তারা করেনি, এরপরেও যদি এই ঘটনা ভুলে অন্য কিছুর নেশায় চুর হয়ে ভুলে থাকতে চায়, রক্ত গরম হয়ে খেপে না উঠে -- তাহলে এই ব্যাপারে কোন সন্দেহই নেই যে তার মধ্যে ঈমান নেই, সে মুসলিমদের মধ্যে গণ্য হতে পারে না। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা জানিয়ে দিয়েছেন মু'মিনরা কেবল মু'মিনদেরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে। যদি আমাদের সবচাইতে বেশি ভালোবাসার জায়গাটিতে প্রিয় নবী (সা) না থাকেন, তাহলে আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব না। আমরা কোন ধরনের মানুষ? ভেবে দেখেছি কি?

♥"যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।"♥
----[সূরা আল মুজাদিলাহ : ২২]

১৯ ফেব, ২০১৩

যাপিত জীবনে দিনশেষে উপলব্ধি

জীবন ধরে আমি অপেক্ষা করতাম -- সময় অতিক্রমনের। এইতো ক'টা দিন যাক, এইচএসসি হয়ে যাবে, ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে নতুন জীবন, তখন মন দিয়ে নামাজ পড়ব, কুরআন পড়ব, সুন্দর জীবন গড়ব। ভার্সিটিতে ঢুকে নতুন জীবনে কিছুই হয়না ঠিকমতন, সব আউলা ঝাউলা নিয়ম। তাই নতুন গান ধরলাম : এই টার্ম যাক, আগামী টার্মে নিয়মিত থাকব, ক্লাস করব ঠিকমতন, ভালো রেজাল্ট করব, প্রতিদিন জামা'তে নামাজ মিস করব না। আগামী কয়েক মাসে কয়েক পারা কুরআন তাফসির পড়ে ফেলব। হয়নি ঠিকমতন কিছুই। চাকুরি জীবনে এসেও মনে হয়, আরেকটু স্ট্যাবল হই, তখন এই-সেই ঝামেলা কেটে যাবে, এটা-ওটা অর্জিত হবে। আগামী সপ্তাহ থেকে একটা 'পরম সুন্দর' জীবন কাটাবো। এইরকমের অদ্ভুত কিছু চক্র অনেকের জীবনেই আছে, শুনেছি, জেনেছি, দেখেছি। নতুন করে ক্রমাগত প্ল্যানিং করতে থাকলে জীবনে উন্নতিই হয়। এটা খুবই কল্যাণকর। তবে, একটা পয়েন্টে বোধহয় মিস করতে থাকি আমি সবসময়েই।

গত কয়েকসপ্তাহে প্রায় প্রতিদিন মনে হচ্ছে, দিন শেষে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কি আমি চিন্তা করে দেখি আজকে কি অর্জন করলাম? আজকে আমি রাতের ঘুমের সময়ই কি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ডাকে চলে যেতে কি প্রস্তুত? কত কিছু চলে যায়, কত কিছু হয়ে যায়। এমন করেই এসেছিল জগতে হাজার হাজার কোটি মানুষের প্রাণ। নিজেকে অনেকগুলো প্রশ্ন করার দরকার হয়ে যায় -- আমি কি পেরেছি আজকে সবগুলো ওয়াক্তের নামাজ সঠিক সময়ে সঠিক মনোযোগে ও যত্নে আদায় করতে? মিথ্যা না বলে থাকতে? পেরেছিলাম বাসে উঠে ভাড়াটা বুঝিয়ে দিয়ে নামতে? কথা দিয়ে কি কথা রেখেছিলাম? অন্যের নামে খারাপ বলে আত্মতৃপ্তি নিইনি তো? চেনাজানা লোকের খারাপ দিকগুলো অন্যকে বলে মজা নিয়েছিলাম কি? অশ্লীলতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছিলাম তো? আমি কি আব্বু-আম্মুর সাথে সুন্দরতম ব্যবহারটুকু করেছিলাম? দু'আ করেছিলাম আমার মুসলিম উম্মাহর মজলুম ভাইবোনদের জন্য? দু'আ করেছিলাম নিজের জন্য? আমি কি নিজের তুচ্ছতাকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করে তার সাহায্য চেয়েছিলাম? এই জীবনে কী অর্জন করলাম আমি? অন্তরে আমার আল্লাহ ছাড়া দুনিয়া রয়ে গেছে কি? দুনিয়ার মোহ?

জীবন থেকে সময়গুলো বয়েই যায়, কিছুতেই থামে না। আমাদের মতন সময় কাটিয়েছে এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া সবাইই। এই জমিনে সত্যের পথ সবসময়েই কঠিন ছিলো। আজকের কঠিন এই সময় আগামীকাল বন্ধ হয়ে যাবে না। আমাদের প্রতিরোধ শয়তানের সাথে --  কখনো সেইটা নফসের সাথে, কখনো শয়তানের পদাংক অনুসরণ করা উন্মত্ত অন্য মানুষদের সাথে। শয়তানের সাথে এক আমৃত্যু সংগ্রাম আমাদের। অন্যদিকে এই পর্দার ওপাশেই অনন্ত জীবনের হাতছানি। প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্তত প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ভাবতে হবে নিজেকে নিয়ে, নিজের সমালোচনা করতে হবে। গতকালের চাইতে যেন আজকের দিনটা ঠিক থাকে, সেটা নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। নিজেকে নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। কেননা আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তো হবে খুবই কঠিন! তার আগে যেন নিজে থেকেই সাবধান হয়ে যাই। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং সরল সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
১৯ ফেব্রু, ১৩

ফিতনাহময় সময়ে ছোট্ট একটা স্মরণিকা

সমস্ত ক্ষমতা মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার। তিনি বিচার দিনের মালিক, তিনি যেদিন আমাদেরকে দাঁড় করাবেন, সেদিন আমাদের হাত-পা সাক্ষ্য দিবে, সেদিন আমাদের নামে সাক্ষ্য দিবে সবকিছুই। আমাদের দ্বারা সংঘটিত প্রতিটি কাজ সেদিন পরিষ্কার করে দেখানো হবে আমাদেরকে।

দিনশেষে নেটে ঢুকে একটা কিছু ঘটনা জানলাম। এই চলমান সময়ে মিথ্যার বেসাতি খুলে বসা ফেসবুকের মানুষদের শত শত পোস্ট দেখে ক'দিন আগে দাজ্জালের ফিতনার কথা মনে হয়েছিলো, আজকেও সারাদিনে কয়েকবার মাফ চাইলাম আল্লাহর কাছে যেন এইসব ফিতনা এবং সেইসব কঠিন ফিতনাতে ঈমান সঠিক রাখতে পারি, মৃত্যু যেন হয় ঈমান নিয়ে।

প্রিয় ভাই ও বোন, যেকোন মানুষ-কুকুর-বিড়াল-শয়তান দেখলেই বা তাদের নিয়ে কিছু শুনলেই যে ফেসবুকে কমেন্ট বা পোস্ট দিতে হবে, তা নয়। মনে রাখবেন, আপনার কথার কারণে কোন অপ্রয়োজনীয় ফিতনাহ যেন বেড়ে না যায়। সবশেষে মনে রাখবেন, আমাদেরকে কিন্তু কেবলমাত্র এবং কেবলমাত্র আমাদের নিজ নিজ কর্মফল নিয়েই আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। সেদিন কেউ ভাগ নিবে না, সেদিন কেউ আমার বোঝা হালকা করে দিবেনা।

সবচাইতে বড় শত্রু ও খারাপ লোকের নামে যদি নতুন কোন অপরাধ শুনি, তবে ধারণার ভিত্তিতে সেটাকেও জাস্টিফাই করতে যাওয়া সঠিক হবেনা। আমাদের পরিষ্কার মনে রাখা উচিত, এই দুনিয়ার ধন-সম্পদ, খ্যাতি-যশ, ট্রেন্ড-ফ্যাশনের মূল্য আমাদের কাছে একটা ধূলার মতনও হবার কথা নয়; আমাদের লক্ষ্য আখিরাত। প্রতিটি কাজ যেন হয় সেই আখিরাতের কথা স্মরণ করে। অনুগ্রহ করে তাই, কিছু ভালো করতে না পারলে হাত দুটোকে অর্থহীন নোংরা কথা এবং কারো সম্পর্কে কিছু না জানা ইস্যুতে সামলে রাখুন। শয়তানের পরিকল্পনা ও দুরভিসন্ধিকে সফল হতে দিবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে সরল সঠিক পথে রাখুন। আল্লাহ শয়তান এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণকারীদের ধ্বংস করে দিন, তাদের সমস্ত কুচক্রী পদক্ষেপকে নিশ্চিহ্ন করে দিন।


১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 

আমার স্পেনের গ্রানাডার কথা মনে পড়ে

আমার স্পেনের গ্রানাডার কথা মনে পড়ে, নিশ্চিন্তমনা গর্দভ জাতিগোষ্ঠির কথা মনে পড়ে। ফার্ডিনান্ড আর ইসাবেল যেদিন ঢুকেছিল ভূমিতে, সেদিন তারা বিশ্বাস করতে পারছিল না আব্দুল্লাহর শাসনামল শেষ। আমার মনে পড়ে পলাশীর প্রান্তরের কথা, নিশ্চিন্ত নির্ভাবনায় রাস্তার দু'পাশে দাঁড়িয়ে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানীর আগমন দেখতে দাঁড়িয়ে যাওয়া লোকদের কথা। আমার মনে পড়ে বাগদাদ নগরীর কথা, কুয়েত-ইরাক-কুর্দি-সাদ্দামদের কথা। কাশ্মীর আর ফিলিস্তিনের অসহায় বোনদের চিৎকারের কথাও মনে পড়ে, চেচনিয়া আর বসনিয়ার কথা মনে পড়ে। ইতিহাস পাঠের সময়ে স্মৃতির পরতে পরতে ফেলে রাখা অশ্রুফোঁটাগুলোর কথা মনে পড়ছে আজ। ক'জনই বা সেই ইতিহাস জানে, জানতে চায়, বুঝতে চায়?

হে আল্লাহ! সেই গ্রানাডার মানুষদের মতন বা তার বেশি যত মূর্খ অপদার্থ --তাদের হিদায়াত দিন। সেটার যোগ্য না হলে তাদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিন, তাদের একটা পশমও যেন জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি না পায়। নিশ্চয়ই আপনিই বিচার দিনের একমাত্র মালিক। নিশ্চয়ই আপনি শ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী। নিশ্চয়ই সমস্ত শক্তি কেবলই আপনার। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই সত্য আর মিথ্যা এক নয়। নিশ্চয়ই আপনি অন্তর্যামী, আপনি মহাপবিত্র, আপনি পবিত্রতা ভালোবাসেন। নিশ্চয়ই আপনি মহাপরাক্রমশালী,আপনার পাকড়াও বড় শক্ত। আপনার ভালোবাসার চাদরে আমাদের আচ্ছাদিত করুন। আমাদের ধৈর্য্য বাড়িয়ে দিন, আমাদেরকে পদস্খলিত হওয়া থেকে রক্ষা করুন, আপনার ক্রোধ থেকে ক্ষমা করুন।


১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

আমরা এবং আমাদের উম্মাহর মজলুম ভাইয়েরা

কী যে অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয় যখনই পড়েছি দুনিয়া মু'মিনদের জন্য কারাগার। সারা পৃথিবীতে শুধুমাত্র 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলে তাতে দৃঢ় ও অবিচল থাকার কারণে কত ভাই-বোনকেই না ত্যাগ করতে হয়েছে। প্রতিক্ষেত্রেই নানাভাবে কথায় খোঁটা/গালাগালি, চোখের সামনে সবাই যা ইচ্ছা করে এবং সেগুলো দেখে মনে রাখতএ হয় আল্লাহ এসব পছন্দ করেন না। এরপরেও অর্থকষ্ট, নানান ক্ষতির আশংকা/ভয়, ক্ষুধা-দারিদ্রসহ আরো কত কী! তাতে কি কারো 'আলহামদুলিল্লাহ' বলা বন্ধ হয়েছে? কারণ, আমাদের লক্ষ্য তো এখানে না। আমাদের লক্ষ্য অল্প কয়েক বছরের বিভ্রমের পৃথিবীতে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়ে আখিরাতে তার কাছ থেকে পুরষ্কার পাওয়া।

নিজের কষ্টের সময়গুলোতে মুসলিম উম্মাহর ভাইবোনদের কথা মনে হয়, যখন দু'আ করতে হাত তুলি, তখন স্মরণ করতে চাই কাশ্মীরি ভাই-বোনদের কথা;সিরিয়া, চেচনিয়া, বসনিয়া, ফিলিস্তিন, মালি, সোমালিয়া, সুদান, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাসহ বিশ্বের আনাচে ছড়িয়ে থাকা এবং সর্বোপরি আমাদের এই দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করা ভাই-বোনেরা কত কঠিন পরীক্ষা দিয়ে গেছে, দিয়ে চলেছেন। পৃথিবীতে অমন অনেক মুসলিম ছিলেন, আসবেন।

নিশ্চয়ই এই মজলুম মানুষদের মধ্যেই আল্লাহর অজস্র প্রিয় বান্দা রয়েছেন। তাদের জন্য অশ্রুসিক্ত দু'আ করে কিছু উপহার পাঠিয়ে দিতে চাই তাদের কাছে। তারা হয়ত এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন, কষ্ট করছেন আল্লাহর জন্য অথবা আল্লাহর কাছে চলে গেছেন। আখিরাতে যদি আমিও জান্নাতে যেতে পারি, তারা নিশ্চয়ই সেই উপহারগুলোর কারণে আমাকে দেখলেই চিনবেন, ভালোবাসা জানাবেন। আমরা সবাই একসাথে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বসে আলাপ করতে পারব। আমরা সেদিনের সেই স্বপ্নে বিভোর থাকি। অনন্তকালের সেই আনন্দে বিভোর থাকি। ♥ ♥

আমাদের স্বপ্নেরা পবিত্র, আমাদের স্বপ্নরা সত্য, আমাদের স্বপ্নরাই সুন্দর। আমরা স্বপ্ন দেখি আল্লাহর দেখানো দৃষ্টিতে, তার আলোয় আলোকিত হয়ে। আমাদের লক্ষ্য এক-- আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সন্তুষ্টি। আমাদের অভীষ্ট জান্নাত, সেই চলার পথের কষ্টগুলো আমাদেরকে থমকে দিতে পারবেনা ইনশাআল্লাহ। হে মহাপবিত্র আল্লাহ, আপনার ভালোবাসায় আমাদেরকে সিক্ত করুন। আমাদেরকে কবুল করুন।


 ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩

একজন আব্দুল্লাহ বিন উমার এবং আমরা

একটা স্মরণিকা, নিজের জন্য, আমার ভাইদের জন্য। নিঃসন্দেহে ঈমানের কঠিন পরীক্ষার সময় আমাদের আসে। কেউ আমাকে অত্যাচার করলে, মিথ্যাচার করলে, যুলুম করলে, গালি দিলে কি আমিও গালি দিব? সেইটা কি হবার কথা? আমাদের দ্বীন কি সেটাই শিক্ষা দেয়? প্রিয় রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শ্রেষ্ঠ চরিত্রের কথা বাদই দিলাম, তার সাহাবা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) কেমন ছিলেন?

"কোন বাছ-বিচার না করে ছোট বড় সকলকে সালাম করতেন। পথ চলতে কোন ব্যক্তিকে সালাম করতে ভুলে গেলে ফিরে এসে তাকে সালাম করে যেতেন। অত্যন্ত কটু কথা শুনেও হজম করে যেতেন, কোন জবাব দিতেন না। এক ব্যক্তি কটু ভাষায় তাকে গালি দিল। জবাবে তিনি শুধু বললেন, আমি ও আমার ভাই অত্যন্ত উঁচু বংশের। এতটুকু বলে চুপ থাকলেন।"

যিনি ছিলেন জ্ঞানের অমূল্য ভান্ডার, যিনি নবীজীকে (সা) পেয়েছেন ছোট্ট থাকতেই আপন করে, তার বাবা উমার ইবনুল খাত্তাব (রা), তিনি কি পারতেন না কেউ কটু কথা বললে তাকে চরম কথা শোনাতে? তিনি কোন শ্রেষ্ঠত্বে কম ছিলেন এই জমিনের বুকে? তার আচরণে কিছু শিখতে কি পাই? আল্লাহ আমাদেরকে সংযত হবার তাওফিক দিন, কেননা প্রতিটি বর্ণ উচ্চারণের হিসাব আমাদেরকে দিতে হবে সেই মহান আল্লাহর সামনে, যিনি বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।

১০ ফেব, ২০১৩

জীবনের পরীক্ষার সময়টাতে সেরা মানুষটার কথা স্মরণিকা

হে আমার ভাই! ঈমান থাকবে, পরীক্ষা আসবে না, তাই কি হয়? আমাদের নেতার কথা মনে পড়েনা? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা নবুওয়্যাত যখন দিয়েছিলেন, তখন অবস্থাটা কেমন ছিলো? তিনি যেই জমিনের বুকে দাঁড়িয়ে ছিলেন, সেখানে মেয়েদের জ্যান্ত কবর দেয়া হত, শরাব পানে অচেতন হয়ে থাকত লোকেরা, দুর্বলকে পেলে সবলেরা অত্যাচার করত, গোত্রগুলোতে মারামারি লেগেই থাকত বছরের পর বছর (এখনকার রাস্ট্রগুলোর যুদ্ধের মতন); তাঁর নেই বাবা-মা, যেই দাদার কাছে বড় হয়েছিলেন, তিনিও নেই। আল্লাহ তাকে পৃথিবীর সবচাইতে বড় দায়িত্ব দিলেন। মক্কা শুধু না, সমগ্র পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য কিয়ামাত অবধি আদর্শ রেখে যাওয়াই তার কাজ হয়ে গেলো। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন, তখন এই সমগ্র বিশ্বের বুকে তিনিই কেবল ঈমানদার, সমগ্র পৃথিবী তার বিপরীতে।

তার বিপদের দিনে কেমন করে আঘাত করত আত্মীয়রা মনে আছে? পুত্রসন্তানের মৃত্যুতে যখন তিনি শোকার্ত তখন চাচা আবু লাহাব আনন্দ প্রকাশ করে কটু কথা বলে বেড়িয়েছিলো। স্ত্রী খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহা এবং চাচা আবু তালিব যে বছর চলে গেলেন, তিনি সেই বছরে তায়েফে মানুষকে শুধু দিতে গিয়েছিলেন, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'-এর দাওয়াত; তাঁকে রক্তাক্ত করে ফেলেছিল ওরা আঘাতে আঘাতে। রাহমাতাল্লিল আলামীনকে কতই না কষ্ট সইতে হয়েছিলো। এই শ্রেষ্ঠ মানুষটার অনুসারী আমরা। বলো, দুঃখে ডুবে হতাশ হওয়া কি আমাদের চলে? মজলুমের দু'আর শ্রেষ্ঠত্ব তো এমনই যে তার দু'আ এবং আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা থাকেনা। যার কাছ থেকে এসেছি, যার কাছে ফিরে যাব, যাকে পেয়েই তৃপ্ত হবো, যার সন্তুষ্টিই আমাদেরা আজন্ম প্রত্যাশা -- তার কাছেই তো দু'আ করব, চোখের পানিতে সিক্ত হয়ে...

♥ হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে আমার দুর্বলতা, অসহায়ত্ব এবং মানুষের কাছে আমার তুচ্ছতা সম্পর্কে অভিযোগ করছি। হে শ্রেষ্ঠ দয়ালু ও দয়াময়, তুমি দুর্বলদের রব, তুমি আমারও রব।

তুমি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছ ? আমাকে কি এমন কারও কাছে অর্পন করেছ যে আমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে? নাকি কোন শত্রুর কাছে আমাকে ন্যস্ত করেছ যাকে তুমি আমার জীবনের উপরে কর্তৃত্ব দিয়ে দিয়েছ? যদি তুমি আমার উপর অসন্তুষ্ট না হয়ে থাকো, তবে আমার কোন দুঃখ নেই, আফসোসও নেই। তোমার সন্তষ্টিই আমার জন্য অনেক বড় প্রশান্তি। তোমার ক্ষমাশীলতা আমার জন্য প্রশস্ত ও প্রসারিত করো।

আমি তোমার সে সত্ত্বার সে আলোর আশ্রয় চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দূর হয়ে আলোয় চারিদিক ভরে যায় এবং দুনিয়া এবং আখিরাতের সকল বিষয় কল্যাণময় হয়। তোমার অসন্তুষ্টি ও ক্রোধ থেকে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি। সকল ক্ষমতা এবং শক্তি শুধু তোমারই, তোমার শক্তি ছাড়া আর কোন শক্তি নেই।♥

৮ ফেব, ২০১৩

জীবনের উদ্দেশ্য কি বদলে যায় সময়ের সাথে সাথে?

একটা কথা মনে হয় আমাদের সবসময়ে মনে রাখা প্রয়োজন যে আমরা জল-স্থল-অন্তরীক্ষ, একাকী-কোলাহলে, ক্রুদ্ধতায়-দুঃখে-আনন্দে -- যে অবস্থাতেই যখনই থাকি না কেন আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্যটা কখনই বদলে যায় না। আমাদের প্রিয় আল্লাহ তা'আলা বলেই দিয়েছেন যে আমাদেরকে দুর্বল হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। আমাদের পৃথিবীর বুকে পাওয়া শক্তিমত্তা একটা পরীক্ষা, আমাদের দুর্বলতার সময়গুলোও পরীক্ষা। আমার যদি অনেক শক্তি হয়, আমার যদি অনেক ক্ষমতা হয়, আমার দোর্দন্ড প্রতাপে যদি কেউ সামনে দাঁড়াতে না পারে, আমার কথার প্রতিবাদ করার হিম্মত যদি কেউ না রাখে -- তাহলে কিন্তু আমি সফলতম মানুষ হয়ে যাইনা।

৬ ফেব, ২০১৩

কী করে সফল হব এ জীবনে?

জীবনে উন্নতি করা এবং সফল হওয়াই বোধহয় আমার জীবনের লক্ষ্য -- এমন একটা ভুল জীবনবোধে আমরা ডুবে থাকি বুঝে বা না বুঝে। আমাদের জীবনের মূল উদ্দেশ্য তো কেবলমাত্র আল্লাহর ইবাদাহ করা, তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। এই দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণিকের বিভ্রম -- এখানে আমাদের উদ্দেশ্যই আখিরাতের জীবনের জন্য পাথেয় সংগ্রহ। আমরা সবাই একটা নির্দিষ্ট পারিবারিক, সামাজিক অবস্থানে জন্মগ্রহণ করেছি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা আমাকে পাঠাবেন কোথায়, তা তিনি ঠিক করে রেখেছিলেন। তিনি কাউকে হয়ত আর্থিক সংকটের পরিবারে পাঠিয়েছেন, কাউকে তিনি পাঠিয়েছেন পারিবারিক সমস্যাগ্রস্ত জায়গাতে, কাউকে তিনি দিয়েছেন শারীরিক সীমাবদ্ধতা। এগুলোকে সাথে নিয়েই আমরা জীবনযাপন করি, প্রতিটি দিন অতিক্রান্ত করি সংকট নিরসনের জন্য। অথচ নিশ্চিত, আমাদের জীবন কখনই সমস্যাহীন থাকবে না। প্রতিদিন থাকবে নানান রকম পরীক্ষা। তাইতো, হাল ছেড়ে হতাশ হওয়ার কথা না একজন মু'মিনের।

৫ ফেব, ২০১৩

আর কত দিব বলো?

সেদিন আমার ছেলেবেলার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম। বিগত এক যুগ ধরে দেখা কনসিস্টেন্ট ভালো ছেলে, আবেগের ঝোঁকে সাময়িক মুসলিম না। আমাদের সাক্ষাতস্থল ছিলো একটা পাবলিক প্লেস, স্থানীয় এক মার্কেট প্রাঙ্গনের চায়ের দোকান, সেখানে একটু পরপর ভিখিরির আনাগোনা। বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, বিকলাঙ্গ, শিশু... অনেকরকম! স্বাভাবিকভাবেই, দু'একজনকে কিছু দেওয়ার পর অন্যদের প্রতি আমাদের স্বাভাবিকভাবে আর আগ্রহ থাকে না। ভাবখান এমন করি আমরা, 'আর কত দিব !"

আমার বন্ধুটি ইদানিং বেশ আর্থিক টানাপোড়েনে আছে, নতুন বিয়ে। নতুন চাকুরিটার বেতনও সংসারকে হেলেদুলে টানার মতন না। বন্ধুরাও হয়ত ওর এই কঠিন সময়টা টের পাবেনা মুখে লেগে থাকা হাসি আর প্রশান্ত মনের ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটার ভঙ্গি দেখে। আমি বেশ অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, হাত পাততে থাকা কাউকেই সে ফেরত দিচ্ছেনা। আধাঘন্টার মধ্যে প্রায় জনাদশেক ভিখিরি এসেছিল, সে আগ্রহভরে পকেট থেকে বের করে দুই টাকা, এক টাকা দিচ্ছিলো ক্রমাগত। একসময় আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম। তখন মনে যেন নতুন করে উপলব্ধি হলো, দান করা আসলে আমার অনেক থাকার উপরে নির্ভর করেনা, আমার নিয়্যাতের উপরেই নির্ভর করে।

আলাপন : আল্লাহর সাথে অভিমান?

আল্লাহর সাথে অভিমান করে নামাজ না পড়া -- এই জিনিসটা যে আমি কত কত মানুষের মাঝে দেখেছি তার ইয়ত্তা নাই। আমার লাইফে এমন কেন হলো -- এই বলে নামাজ নাই, বিশেষ কিছু ইবাদাহ করা হত, সেটাও ছেড়ে দেয়ার মতন কাজ অহরহ করে সবাই। আমিও এই সাইকোলজির বাইরে ছিলাম না। মজার ব্যাপার হলো, সবাই কমবেশি বুঝে যে এটা ঈমানের দুর্বলতার একটা প্রতিচ্ছবি। তারপরেও ভিতর থেকে আগ্রহ আসে না, চেয়ে চেয়ে সবাই শয়তানকে প্রশ্রয় দিতে থাকে।  

৪ ফেব, ২০১৩

ক্রিটিক্যাল মাইন্ড নিয়ে চিন্তাভাবনা

কে আমাকে কী বললো, সেইটা আমি নই। কে আমার বিশ্বাসকে নিয়ে কী বললো, সেইটা আমার বিশ্বাস নয়। মানুষের কাছে ভালো হতে চাওয়া জীবনের উদ্দেশ্য নয়। অবিশ্বাসীদের কাছে আমার বিশ্বাসকে 'ফ্রেশ' প্রমাণ করতে চাওয়াও আমার বিশ্বাস নয়।

বিশ্বাস জিনিসটা এক মূহুর্তে হারিয়ে যাওয়ার উর্ধের জিনিস। বিশ্বাস করার আগে এবং বিশ্বাস করার সময়কালে সবসময়েই আমরা 'ক্রিটিক্যাল' থাকি, ক্রমাগত সেইটা নিয়ে যাচাই-বাছাই করি এবং বিশ্বাস করি -- এমনটাই নিয়ম। আমার বিশ্বাসকে নিয়ে কারো একটা অযৌক্তিক আগ্রাসী মন্তব্যে টলে যাওয়া মূলত আমার ব্যক্তিত্বকেই কৌতুকে রূপান্তরিত করে, যাকে বিশ্বাস করতাম সে সমুন্নতই থাকে।

নিজেদের চিন্তার ধরণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন সবসময়েই। তাহলে সংশয়বাদী, নাস্তিকদের এলোমেলো কথাতে আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতে হবেনা। নিজেকে এবং নিজের বিশ্বাসকে আগেভাগেই চিনে রাখা উচিত।

"There is not faith, without a critical mind" -- তারিক রামাদান | Tariq Ramadan

সেনসিটিভিটি

সেনসিটিভ যারা, তারা এই যন্ত্রের নির্দয় যুগে বেশ কষ্টেই থাকেন। আরেকজন মানুষের কষ্টে আপনি যদি ব্যথিত হয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন, যদি কারো আহাজারিতে আপনার হৃদয় গলে -- আপনাকে অনেকেই উপহাস করতে পারে। করতে পারের চাইতে বলব, করে। বন্ধুমহলে সেনসিটিভিটিকে দুর্বলতা হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। যে আরেকজনের কথাকে গুরুত্ব দেয়, কারো জন্য সময়ের আগেই এসে অপেক্ষা করে, কারো জন্য খেয়াল করে তার অপছন্দের কাজগুলো এড়িয়ে চলে -- বন্ধুরা তাকেই বেশ মজা করে বেশি বেশি ইউজ করে আজেবাজে উপায়ে।

ছেলেদের মহলে এটার সমস্যা বেশি প্রকট হয়। বয়ঃসন্ধিকাল থেকে এই সমস্যাগুলোকে বড়ো হতে দেখেছিলাম চারপাশে। সেনসিটিভ মানুষগুলোকে ক্রমাগত বিরক্ত করে নির্দয় আচরণ করা ছেলেদেরকে দেখেছি সুযোগ নিতে। আপাততদৃষ্টিতে এসব নিয়ে কেউ ভাবেনা। সময় কই! কিন্তু আমি একাধিকজনকে চিনি, যারা মানসিকভাবে কিছু কিছু আচরণে খুবই ভয়ংকর প্রতিক্রিয়া দিত। অনেকেই তার সার্কেলে সেনসিটিভিটির কারণে অত্যাধিক হাসিঠাট্টার কারণে এবং সেই গুণাবলির 'অ্যাবিউজ' হবার কারণে নিজেদের বদলে ফেলে 'আনইভেন রুড' হয়ে যেতে দেখেছি। অথচ, সেই মানুষগুলো একসময় অনেক সুন্দর ব্যবহার করত সবার সাথে, কেউ তাদের কাছে এলে ফিরে যেত না বিনা উপকারে।

সেনসিটিভ মানুষদেরকে বেশিরভাগ সময়েই আমার রাহমাত হিসেবে মনে হত। এই মানুষদের কাছে গিয়ে যতটা সহমর্মিতা পাওয়া যায়, তারা আরেকজনের কথাকে যতটা মূল্য দেয়, অন্যেরা তাকে কিছুতেই বুঝে দেখতে চায়না। 'রাফ এন টাফ' হয়ে পৌরুষত্ব প্রমাণের তারুণ্য-যৌবনকালে ব্যস্ত সবার মাঝে যারা সেনসিটিভিটিকে আগলে রেখেছিল, তাদেরকে আমি অনেকদিন পর পর হলেও ঘুরে ঘুরে দেখা করে এসেছি, ভালোবাসা জানিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। সুবহানাল্লাহ! ক'দিন আগে প্রফেসর তারিক রমাদানের একটা উক্তি দেখে আমার মনের ভার যেন নেমে গেলো, ভালোলাগায় মনে ভরে গেলো। সেনসিটিভ মানুষদেরকে তাদের এই যোগ্যতা ও শক্তিটিকে দুর্বলতায় পর্যবসিত হতে না দেবার উদার আমন্ত্রণ রইলো...

“Your sensitivity is power. Don’t let people transform your qualities into weaknesses.” --- Tariq Ramadan

৩ ফেব, ২০১৩

চারিদিকে হতাশার কথা, যাবো কোথায়? করবো কী?

আজকে ক'জন অন্তরালোকিত মানুষের সাথে কিছু ঘন্টা কাটানোর পরে মনে হচ্ছিলো, শুধু আজকের এমন একটা সন্ধ্যার, এরকম কিছু সুন্দরতম আলোকজ্জ্বল, জ্ঞানগর্ভ, বুদ্ধিবৃত্তিক প্রাণময় আড্ডাবাজির একটা আকাঙ্ক্ষা আমার অনেক অনেক বছর ধরে ছিলো মনের মাঝে। 'অবশেষে আমি পাইলাম, আমি ইহারে পাইলাম'। আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার অশেষ রাহমাত তো চিন্তা করেও কুলাতে পারিনা। বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ মনে হচ্ছিলো, জীবনে এমন কিছু লোকের সাথে আমার বছরের পর পছর উঠতে বসতে হয়েছে -- যারা প্রায় প্রতিটি বিষয়ের সমালোচনা করে, গালি দিয়ে কথা বলত। সেই সময়ে বাধ্য হয়ে সেইসবের মাঝে কাটালেও খুব ইচ্ছা করত, শুদ্ধভাষী প্রাঞ্জল মন-প্রাণের সচ্চরিত্র মানুষদের মাঝে কিছু সময় কাটানো না জানি কত সুন্দর!

আলাপন : বিশ্বাসীর চোখের দৃষ্টিসীমানা

একজন ঈমানদারের দৃষ্টির সাথে অবিশ্বাসীর তুলনা হয়না। কেননা, একজন মু'মিনের অন্তরের দৃষ্টির সীমানা অসীমে বিস্তৃত। তারা জগতের ঘটনাগুলো এবং তার ফলাফলকে দেখতে পারেন পৃথিবীর এবং সময়ের সীমা ছাড়িয়ে অনন্তকাল ঘিরে। সেখানে মানুষ ছাড়াও থাকে, জ্বিন, ফেরেশতা এবং মহান আল্লাহ তা'আলা। সেখানকার পরিবেশ পার্থিব না, অপার্থিব এক পরিবেশ যার একক অধিপতি সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ। এই দৃশ্যগুলোকে দেখার পর জাগতিক জীবনের আনন্দ ও দুঃখের বিষয়গুলো তাদেরকে তেমন স্পর্শ করেনা, যেসব বিষয়ে অবিশ্বাসীরা যথাক্রমে উল্লাস ও আহাজারি করে। 

"Indeed the people were not pleased with their Creator although He provides for them, so how can they be pleased with another creation like themselves?" - Al Bidaya wal-Nihaya ( 9/318)


"যেসব মানুষ তার সৃষ্টিকর্তার উপরে সন্তুষ্ট হয়নি যদিও তিনি তাদের সবকিছুর দাতা,
তারা কীভাবে তাদের মত অন্য একজন সৃষ্টির উপরে সন্তুষ্ট হতে পারে?"

[আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া, ৯/৩১৮]

১ ফেব, ২০১৩

অনলাইন অ্যাক্টিভিজম নিয়ে কিছু ভিন্ন দৃষ্টিকোণের ভাবনা

ফেসবুক এবং অন্যান্য অনলাইন অ্যাক্টিভিটি নিয়ে আমার একান্তই নিজস্ব কিছু অভিমত ও অনুভূতি আছে। অনেকেই মনে করেন অনলাইন শুধুই ফান করার জায়গা, যা ইচ্ছা তা-ই বলা যেতে পারে। আবার, অনেকে মনে করেন এখানে অ্যাক্টিভিজম দিয়ে তারা দেশ-সমাজ বদলে দিবেন। এছাড়া অনেকের মাথায় অনেক রকমের ক্ষতিকর এবং খারাপ চিন্তার কথাও আছে জানি। কিন্তু সেসব না, বরং ভিন্ন কিছু বিষয় খুব মনে হয়।

ক'দিন আগে তিন চার বছর আগের ইমেইল আর ফেসবুকে মেসেজ-পোস্ট পড়তে গেলাম। নিজের সেই সময়ের ভাষার ব্যবহার আর চিন্তাগুলো দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। সিরিয়াস টাইপের খারাপ লাগা যাকে বলে। সেদিন থেকে একটা অনুভূতি আমাকে বেশ তাড়ায়, তা হলো -- এমন কিছু যেন না বলি বা লিখি যা খুবই যাচ্ছেতাই। একসময় বন্ধুদেরকে খোঁটা মেরেও বেশ অনর্থক কথাবার্তা লিখতাম।