২৪ জানু, ২০১৪

প্রাইভেসি

​প্রাইভেসি তো আজকাল খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তবে, আমি শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে প্রাইভেসির কথা বলছি না। এইসব অতি-টেকি যুগের আগের আমলের একটা প্রাইভেসি ছিলো না? সেটার কথা মনে পড়লো। টিন-এজের মাঝের দিকে, বন্ধুদের কেউ কেউ একটু বড় হয়ে 'প্রাইভেসি' পেয়ে আলাদা রুম পেতো। ছুটির দিন ক'জন একসাথে হয়ে 'প্রাইভেসি'-পাওয়া বন্ধুদের বাসায় তাদের রুমে যাওয়া হত আড্ডার উদ্দেশ্যে, তখনই জানতাম প্রাইভেসিওয়ালাদের কম্পিউটারে 'হিডেন' কিছু ফোল্ডার অনেকের 'এক্সাইটমেন্ট' থাকতো। এসব জানার পরে এক ধরণের আতঙ্ক থেকে আর কখনো ঐরকম বন্ধুদের ঘরে সেঁধিয়ে যাবার সুযোগ দিতাম না নিজেকে।

মনের জানালা মাঝে # ৭


(৭১)
কোন কিছু দিতে হলে নিজের কাছে যথেষ্ট থাকতে হয়। যে রিক্ত, শূণ্য সে কখনো অনেকজনকে দান করতে পারে না। সূর্যের আলো থাকে তাই সে আলো বিলায়। জ্ঞান এবং প্রাণের শক্তি বা অনুপ্রেরণার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন। যারা জ্ঞানী, তাদের অনেক থাকে বলেই তারা যেখানে যান জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে পারেন। যিনি অনুপ্রেরণা দিবেন, তার ভেতরেও যথেষ্ট উৎসাহ, অনুপ্রেরণা আর মনের শক্তি না থাকলে তিনি দিতে পারেন না, পারবেন না। আমরাও তাই যেন ভুল কারো কাছে আশা না করি।। যার-তার কাছে উদ্দীপনা আর আশার কথা শুনতে চাইলে কি আর হয়? তাদের সামর্থ্য আর যোগ্যতার কথাও মাথায় রাখা জরুরী বটে!

(৭২)
কেন শুধু বেশি বেশি দুশ্চিন্তা মানুষের? এই পৃথিবীর কিছুই তো কারও নয়, ছিলো না, হবেও না। সাময়িক এই ভ্রমণে এত চাপ নেবার কিছু নেই। যিনি অনাদি-অনন্ত তার কথা ভাবুন, দুঃচিন্তা-দুর্ভাবনা চলে যাবে।

(৭৩)
আমি আমার শত্রুর ঘৃণার কাছে পরাজিত হইনি, তাদের আমি এড়িয়ে গেছি নিশ্চিন্তে, নির্বিকারভাবে। কিন্তু কাউকে কোন কারণে নিজ থেকে অপছন্দ করে কথা বলার পরেও তার ভালোবাসা পেয়ে সেথায় পরাজিত হয়েছি, লজ্জায় অধোবদন হয়েছি নিজে নিজেই, নিঃশব্দে। 

সেদিন থেকেই শিখেছি, মনের কাছে জিততে হলে ভালোবাসা দিয়েই কেবল জেতা যায়। শর্তহীন, চিন্তাহীন, দ্বিধাহীন ভালোবাসা... সম্পর্কগুলোর মাঝেও শান্তি আসে কেবলই ভালোবাসায়।

(৭৪)
আমার জীবনের তীব্র এক উপলব্ধি হলো, আমরা চারপাশে যেসব গল্প-তত্ব-রোমান্টিকতা-মিষ্টি কথা শুনে বড় হই, পথ চলি তার প্রায় সবই প্রচন্ড তীব্রভাবে জীবনবিমুখ আর অবাস্তব। এই ভ্রমের মাঝে থেকে ভ্রমকে বাস্তব করার চেষ্টাতেই সবাই কেমন হুমড়ি খেয়ে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে নানাবিধ অশান্তি, বুকের মাঝে শূণ্যতায় বসবাস করে সবাই। প্রেম-ভালোবাসার প্রায় সবই মিথ্যে আর অলীক গল্প, মুভি-উপন্যাসের সবই প্রায় জীবনবিমুখ অস্বাভাবিক কাহিনী।

খানিক আগে একজন এক প্রেমের কৌতুক বলছিলো, উপস্থিত সবাই হাসলো। আমিও ভেবে দেখলাম, এরকম কথা অবাস্তব বলেই সবাই মজা পেলো, সত্য গল্প আমজনতাদের কেউ মজা পায় না, হিংসা করে। কিন্তু তরুণ মনেরা এগুলোকেই সত্য ভেবে ভ্রমকে সত্য করতে চায়। যন্ত্রণাও পায়। এই জীবন খুব সহজ কিছু না, এই জীবন আসলে মুসাফিরের পথ চলার; উপভোগ করার না। যারা উপভোগ করতে মন দেয়, তারা পথ হারিয়ে ফেলে।

(৭৫)
আমরা অনেকেই নিজেদের জীবনের শুরুর সময়গুলো পার হয়ে শেষ সময়ে এসে নিজেদের সত্যিকারের কাজগুলো শুরু করেছি। শেষ এসে যে কাজ শুরু করেছি, তার জন্য সূচনার দিকের সফলতা পাওয়া আপাতদৃষ্টিতে সম্ভব না। কিন্তু, এই সময়েরই কি শেষ আছে? জীবনের শেষ হলো অনন্তের জগতের শুরু। তবে, আমরা যদি সময়গুলোর সঠিক ব্যবহার করতে চেষ্টা করি, আল্লাহকে কাছে চাই তাহলে আল্লাহ আমাদের সূচনা আর শেষ উভয়কেই প্রাপ্তিতে ভরে দিবেন ইনশা আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের উপরে খুশি হলে পাপগুলোকেও পুণ্যে রূপান্তরিত করে দিতে পারেন।

আল্লাহর ভান্ডার অফুরন্ত, তার কাছে চাইলে তিনি দান করেন। আর আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যদি সুন্দর হয়, জীবনের স্বর্বস্ব দিয়ে কেবল তার জন্যই আমরা বাঁচি, তাহলে আমরা শেষে এসে শুরু করলেও আমাদের সূচনাও প্রাপ্তিতে ভরে যাবে, গোটা জীবনটাই তখন সফলতায় ভরে যাবে। শেষে এসে শুরু করলেও তখন সূচনাতেও অনেক কিছু পাবো..

শেষটা খারাপ হলে সফল সূচনা অর্থহীন হয়ে যায়।
শেষটা সুন্দর হলে খারাপ সূচনা মনেই থাকেনা।

(৭৬)
যারা মানুষদের মাঝে তুলনা করে তারা বোকা। অবস্তুগত কিছুকে পাল্লায় তুলে নিখুঁত হিসাবের জায়গা পৃথিবী না। এভাবে বিচারে দুইটি পাল্লা মাপার প্রক্রিয়া কোনদিন পরমভাবে সঠিক হবেনা পৃথিবীতে। তাই, মানুষকে হিসেব করা বাদ দিয়ে এগিয়ে চলুন কর্তব্য বুঝে। হিসেব হোক অন্তরের ভেতরের আপনার অবস্থার সাথে, বাইরের পৃথিবী নয়। হৃদয়ের প্রশান্তি গরীবেও পায়, ধনীয় পায়। খারাপ থেকে ভালো হতে চাওয়া মানুষটাও পায়। নিজের ভেতরেই নিজেকে খুঁজে নিন, বুঝে নিন।

(৭৭)
মানুষ খুব অদ্ভুত। আপনি তার কাছে কখনই কিছু প্রত্যাশা করলে সে তা পূরণ করবেই এমন আশা করতে পারেন না। যে মানুষ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর প্রতিই অকৃতজ্ঞ, সে একজন মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে এমনটা আশা করাই কেমন যেন বোকামি মনে হয়। এই জীবনে, কত মানুষ আপনাকে আশার বাণী শোনাবে, কথা দিবে রঙ্গিন ফানুশ ওড়ানোর মতন করে; কিন্তু ওয়াদা পূরণের সময় ধানাই পানাই করবে। বস্তুগত বা অবস্তুগত যেকোন কথার প্রতিদানের ব্যাপারেই কেন যেন সবসময় এমনই হয়!

(৭৮)
মানুষের কাছে প্রত্যাশা করতে নাই, সেক্ষেত্রে অবশ্যই কষ্ট পেতে হবে। আসলে, মানুষের কাছে কিছু পেলে তাতেও তার প্রতি খুব বেশি উচ্ছ্বসিত হতে নেই। যে কোন কিছুর প্রকৃত দাতা আল্লাহ, তাই প্রতিটি প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা তারই প্রতি হওয়া উচিত। বিভিন্ন মানুষ মূলত প্রাপ্তির উপলক্ষ হয়। তেমনিভাবে কিছু চাইতে হলে আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত। তিনি চাইলে দিবেন, তিনি না চাইলে সমগ্র পৃথিবী চাইলেও আপনি কিছুই পাবেন না, শূণ্য আর রিক্ত হয়ে পড়ে থাকবেন।

(৭৯)
বনের বাঘে খায় না, মনের বাঘে খায়। চিবায়া চিবায়া খায়। কুড়মুড় করে খায়... 

তাই, মনের বাঘ হইতে সাবধান।

২৩ জানু, ২০১৪

কৈশোর-তারুণ্য ও যৌবনের জন্য সহজ পর্নোগ্রাফি

​আপনি শহরের রাস্তায় চলবেন আর আশেপাশের হুড তোলা রিকসায়, সিএনজির দিকে জোড়া নারী-পুরুষের নির্লজ্জতার শঙ্কায় তাকাতে অস্বস্তিতে থাকবেন না -- এমনটা মনে হয় খুব কম মানুষেরই হয় ইদানিং। সেদিন বাসে করে এক তিন রাস্তার মোড় পার হচ্ছি, একদিকে শীতের প্রসাধনীর বিলবোর্ডে অর্ধনগ্ন নারী, চোখ ফিরিয়ে বামে তাকাতেই একটি ফার্নিচারের বড় বিজ্ঞাপন, তাতে এক নারী সি-বিচে আধশোয়া, এবার সামনে তাকাতে আরেকটা পণ্যের একই রকম বিজ্ঞাপন। শেষে জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে হাতের উপরে চোখ স্থির করতে হলো। বিজ্ঞাপনগুলোর অবস্থা এমনই যে বাসের টিকিট বিক্রি করতেও এখন নারীর ছবি থাকে। বিশাল বিশাল বিলবোর্ডে এক তৈরিপোশাক ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন দেখে মনে হয় নারী ছাড়া কেউ পোশাক পরে না আর পড়লেও দেশের নারীরা হয়ত স্লিভ পরেননা। এমনকি, ফার্নিচারেও নারী, ড্রিংসেও নারী -- সকলেই আঁটোসাঁটো পোশাকের, অথবা অর্ধনগ্না। মোবাইল অপারেটরদের বিষয় নিয়ে নতুন করে বলার নেই, তরুণদের ডিজুস করা, বন্ধু ছাড়া লাইফ ইম্পসিবলের ট্যাবলেট গিলিয়ে সমাজকে ঘুণপোকা ধরানোর কাজটা ওদের হাতে হয়েছে আজ থেকে দশ বছর আগে থেকেই।

দুঃখের সময়ে যখন খুঁজে পাই না কী করবো

​জীবনের এই বন্দরে বসবাস, কত রকম আনন্দ-বেদনা আসবে। কিছুই থাকে না স্থায়ী হয়ে, না সুখ, না দুঃখ। কষ্টগুলোও আসে, থেকে চলে যায়। সুখের বন্যা বয়ে যায়, আবার ক'দিন বাদেই জীবনের সুখের সময় খুঁজতে বের হতে হয়। বারবার তাঁর কথা ভুলে যাই, বিস্মৃত হয়ে যাই তাই হয়ত আল্লাহ এমন বৈচিত্র্য দিয়েই আমাদের ব্যস্ত রাখেন -- যেন গন্তব্য আর এই চলার পথের দুই ভিন্ন স্বাদকে এক করে বিভ্রান্ত না হই। জীবনে কঠিন সময় আসে, কখনো কখনো সবাই অবিশ্বাস করতে শুরু করে, কাছের মানুষরাও আশাহত হয়ে যেতে পারে, সবকিছুর হিসেব একদম উলটে পালটে যেতে পারে। অনেক কিছু হয়ত ছিলো চারপাশে, এক দমকা হাওয়ায় হয়ত সব হারিয়ে যেতে পারে। অথচ, এই সবকিছুকে উপলব্ধি করতে পারাও একটা ক্ষমতা, এই অস্তিত্বের প্রতিটি মূহুর্তই অনেকগুলো *প্রাপ্তির* উপরেই দাঁড়ানো।

২১ জানু, ২০১৪

​ বিয়ে আপনার জীবনের সমস্যাগুলোকে অলৌকিকভাবে সমাধান করে দিবে না

​"বিয়ে আপনার জীবনের সমস্যাগুলোকে অলৌকিকভাবে সমাধান করে দিবে না। বিয়ে কিন্তু সবসময় আপনার একাকীত্ব থেকে মুক্তির কিংবা বর্তমান অবস্থাটা থেকে বের হবার কোন পথ নয়। ভাই ও বোনদের উচিত বিয়ে জীবনটাকে যাদুমন্ত্র দিয়ে বদলে দিবে এমন আশা না করে ব্যক্তিগত ও আত্মিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করা।

বিয়ে ব্যক্তিগত উন্নয়নের একটি বিশাল মাধ্যম হতে পারে, হতে পারে আমাদেরকে উত্তম মানুষ হয়ে বদলে যাওয়ার জন্য সাহায্যকারী, ইন শা আল্লাহ। একজন মানুষের প্রতি আল্লাহর শ্রেষ্ঠ নি'আমাতগুলোর একটি হলো সুখী-সুন্দর বিয়ে; এবং এর ফলে একটি পরিবারের সৃষ্টি, সেই পরিবারের সেবা-যত্ন করা -- যা সেরা ইবাদাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যে ব্যক্তি নিজের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য এখনই তেমন কোন কাজ করতে পারছে না, কীভাবে আশা করা যায় যে আরেকজন মানুষের আরো কিছু দায়দায়িত্ব ও মালপত্র কাঁধে নিয়ে সেই কাজটি তার জন্য সহজ হবে, এমনকি যখন সেই মানুষটিও নিখুঁত নন?

আপনি নিজেই কি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হতেন? যদি না হন, তাহলে সেই আকাঙ্খিত অবস্থায় যেতে আপনার আরো কী কী করতে হবে? যদি হয়ে থাকেন, তাহলে কি ভেবেছেন আপনার ভালো গুণাবলীকে আরো বৃদ্ধি করতে আপনি কী করতে পারেন।"

-- মারিয়াম আমির ইব্রাহিমি

[মিশরীয় বোনটির ফেসবুক পোস্ট থেকে অনূদিত]

​ বিয়ে হলো দু'জনের ভালোবাসার মেলবন্ধন, কোন লড়াই নয়

"যখন আমি শুনি কেউ হয়ত আগামীতে বিয়ে করতে যাচ্ছে এবং আলাপ করছে যে তারা তাদের সম্ভাব্য স্বামী বা স্ত্রীর ব্যাপারে কী কী "মেনে নিবে না/সহ্য করবে না", তখন আমি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। কারো এমন চিন্তা নিয়ে বিয়ে করতে যাওয়া উচিত নয় যেন তারা লড়াইয়ে যাচ্ছে অন্যকে আঘাত করার জন্য যুদ্ধাস্ত্র হাতে প্রস্তুত রেখে এবং নিজেকে রক্ষা করতে বর্ম আচ্ছাদিত হয়ে।

বিয়ে হলো দু'জনের ভালোবাসার মেলবন্ধন, কোন লড়াই নয়। সেখানে শুধুমাত্র নিজের ভেতরকার দুর্বলতাগুলো এবং নফসের সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া কোন যুদ্ধ নেই এবং অস্ত্রু বলতে আছে শুধুই দু'আ, তাওয়াক্কুল (আল্লাহর উপরে পরিপূর্ণ নির্ভরশীলতা) এবং স্বামী কিংবা স্ত্রী হিসেবে সফল হবার জন্য দৃঢ় একটি সংকল্প -- যা এই দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্যেও।"

-- উম্মু যাকিয়্যাহ

['দি জার্নাল অফ উম্মু যাকিয়্যাহ' থেকে অনূদিত]

১০ জানু, ২০১৪

আমাদের হৃদয়টার যত্ন নেয়া প্রয়োজন

আমরা কত্তো কিছুই তো করি... নিজের জন্য, অন্যের জন্য। অন্য কারো সুখের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতেও চেষ্টা করি। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই, তাদের চেষ্টাও থাকে যত বেশি পারা যায় লোকের সামনে হোক অথবা অগোচরেই হোক, বেশি বেশি অন্যের উপকার করতে থাকা। কখনো জনমভোর অন্যের জন্য করে একসময় কষ্ট পেয়ে যাওয়া, অথবা কারো ভালো করতে গিয়ে যেন হয়ত নিজের ক্ষতি হলেও মেনে নিই, ভালোবাসা থেকে, দয়া থেকে। অন্যের জন্য নিজের কেমন ধরণের ক্ষতি মেনে নিচ্ছি, সেটা নিয়েও একপ্রস্ত চিন্তা করার আছে...

মনে হয় একটা অন্যরকম ব্যাপার আছে, যেটা হয়ত আমাদের চিন্তা থেকে এড়িয়ে যায়--  আল্লাহ যেদিন আমাদেরকে দাঁড় করাবেন, সেদিন আমরা কারো ভাই হিসেবে না, কারো বোন হিসেবে না, কারো ছেলে কিংবা মেয়ে হয়ে নয়, কারো সন্তান কিংবা বাবা/মা হয়েও নয়, কারো স্বামী বা স্ত্রী হয়েও নয় -- আমরা দাঁড়াবো 'আমি' হয়ে। যেই আমি আমার অন্তরটাকে ধারণ করতাম, যেই আমি আমার হৃদয় নিয়ে কাজ করেছি পৃথিবীতে... বাইরে যা-ই করেছি, হৃদয় জানতো আসল উদ্দেশ্য কী ছিলো, কী করতে পারা যেত অথচ হয়ত করা হয়নি... এমন আরো অনেক কিছু...

জীবনটা এমন ছিলো না আগে

জীবনটা এমন ছিলো না আগে... শুধু আমার না, প্রায় কারোই জীবন এমন ছিলো না, সময়ের সাথে সাথে বদলে যায়। একসময় যা আমাকে মুগ্ধ করতো, এখন করে না, যা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো না, এখন তা যেন খুব জীবন্ত আর আপন লাগে। এরকম আমরা কমবেশি সবাই অনুভব করি। সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবন বদলায়, আল্লাহ তার অপার ভালোবাসায় আর করুণায় আমাদেরকে অনেক কিছু দেন, অনেক কিছু থেকে সরিয়ে দেন। 

এই কথাগুলো আমি এভাবে কখনো বলিনি, কারণ ঠিক এভাবেই আগেও ভাবিনি -- ইদানিং জীবন থেকে নতুন করে শিখলাম, কোন কিছুর অনুপস্থিতির কারণে কখনো হাল ছেড়ে দিতে নাই, আল্লাহ কখন কী ঠিক করে রেখেছেন আমরা জানিনা। হয়ত একদিন না-থাকা জিনিসটা ফিরে আসে, তখন আফসোস যা হয়, তা হলো হাল ছেড়ে দেয়ায় যা যা ক্ষতি হয়েছে তার জন্য। আমরা রেগে গেলে ভুল হয়ে যায়, গালাগালি, বাজে কথা, ক্ষতি করে বসা -- একসময় ভুল বুঝে তাদের সাথে আমার সব মিটমাট হয়ে গেলেও, সেই ক্ষতিগুলো রয়ে যায়। তেমনি জীবনে কোন কিছুর কারণে যদি আমল তথা ভালো কাজের অভাব হয় -- একদিন সেই সমস্যা দূর হয়ে গেলে যদি আমাদের জীবনে আর সময় না থাকে, যাবার সময় চলে আসে -- ক্ষতিগ্রস্তই তো হয়ে যাবো। 

৬ জানু, ২০১৪

সফল হতে কী লাগে?

একটি ছোট্ট ব্যক্তিগত উপলব্ধি হলো আজো। হয়ত লেখার মতন তেমন কিছু না, তবুও লিখেই না হয় ফেলি...

আমার ৪ বছরের পিচ্চি ভাতিজিটাকে আদর করার সময় আজ উচু চেয়ারের একদম উপরের সরু কাঠের উপরে তুলে দাঁড় করিয়ে আমি হালকা করে ছেড়ে দিলাম। সে দাঁড়িয়ে থাকলো, থাকতে পারলো। একটা বিশ্বাস ছিলো তার, চাচ্চু ধরে আছে ওকে, পড়বে না। আমাকে বলছিলো, "চাচ্চু, ধরো কিন্তু আমাকে ভালো করে।" সে খেয়াল করেনি আমি হালকা ছেড়ে দিয়েছিলাম ঐ মূহুর্তে, আমার আঙ্গুলগুলো ওর শরীর থেকে দু' এক ইঞ্চি দূরে ছিলো।

সত্যসন্ধানীদের কথা ভেবে

জীবনে সত্যসন্ধানীদের অনেক ছোট ছোট আলাপ জেনেছি। সালমান আল ফারেসি (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সম্পর্কে জেনে যেমন হেঁচকি তুলে কেঁদেছি, তেমনি আরো অনেকের কথা শুনে। মনে আছে, ড বিলাল ফিলিপ্স নিজের জীবন নিয়ে একটা সাক্ষাতকারে দিয়েছিলেন, ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে দেখার সময় তার অর্ধেক গিয়ে আবেগরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম নিজের অবস্থার শোচনীয়তা ভেবে।

# মনোমুগ্ধকর বক্তা ইমাম আওলাকির (রাহিমাহুল্লাহ) কন্ঠে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবী সালমান আল ফারেসির (রাদিয়াল্লাহু আনহু) সত্যের সন্ধানে ছুটে বেড়ানোর অতি মনোহর সেই গল্প শুনে নিতে পারেন : এই লিঙ্কে ক্লিক করে

# ড বিলাল ফিলিপস ছিলেন ইসলামের সম্পূর্ণ ভিন্নধারার এক লোক। কেমন করে ঘুরতে ঘুরতে তিনি এলেন এই পথে, আল্লাহ ইতোমধ্যেই তাকে দিয়ে কত কিছুই না করিয়ে নিয়েছেন (হাফিজাহুল্লাহ), সেই জীবনের গল্প দেখে নিন এই লিঙ্ক থেকে : https://www.youtube.com/watch?v=NtR-Z3c1720

সব কিছুর পরে একটাই আশা, একটাই স্বস্তি

​ইদানিং যা হয়, তেমন কোন পড়াশোনাই হয়না, তবে গুতাই এখানে-ওখানে। প্রায়ই আবিষ্কার করি, আমার বলা/চিন্তা করা সব কথাই আসলে বলা হয়ে গেছে, স্কলাররা বলে দিয়ে গেছেন। পড়া হয়নি তাই জানিনা। অনেকসময় ব্যাপক চিন্তাভাবনা করে একটা কথা ভেবে বের করে রাখার পরে দেখেছি অমুক কথার চেয়ে অনেক সুন্দর করে আরো বিস্তৃত কথা সংক্ষেপে বলে গিয়ে গেছেন অন্য কোন পূর্বেকার মানুষ, যাদের আল্লাহ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করেছিলেন। তাদের কথাবার্তা পড়লে বলার কিছু খুঁজে পাইনা। নিজের পুরোনো কথাবার্তাগুলোর কথা ভেবে লজ্জিত হয়ে যাই, না জানি কী লিখে রেখেছি সেখানে...

১ জানু, ২০১৪

কবিতা : তোমাকে



আমার অবসরের একেকটি অংশ তোমার জন্যই।
অবাক হলে? হবারই কথা। কী অদ্ভুত কথা!
আমার অবসরে আবার তুমি কোত্থেকে, তাইনা?
আমার অবসর তো অখন্ড নয়, খন্ডিত অবসর।
সেখানে একাকীত্ব আছে, নিঃসঙ্গতা নয়। আছে সঙ্গীহীনতা।