২৫ এপ্রি, ২০১৪

মনের জানালা মাঝে # ১২


(১২৬)
অনেক সম্পদশালী রোলস রয়েস গাড়িওয়ালা কারো সামনে কিংবা ঝা তকতকে কর্পোরেট হাউসের ভেতরে আটপৌরে সাধারণ পোশাকের আমি হয়ত কখনো কখনো *অস্বস্তি* অনুভব করি ...

কিন্তু আজ টের পেলাম, বিশাল সমুদ্রের সামনে বা পাহাড়ের চূড়ায়, জ্ঞানী মানুষদের সামনে আমি অস্বস্তি নয়, রীতিমতন *অসহায়* অনুভব করি। প্রবল অসহায়... যে অসহায়ত্ব আমাকে দংশন করে...

জ্ঞানের সাথে কি সমুদ্রের অনেক মিল? দুটোই কি আমার জন্য বসে বসে দূর দিগন্ত দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্যই ফিরে ফিরে সামনে আসবে?

(১২৭)
মানুষকে কষ্ট-যন্ত্রণা দিলে তার ভোগান্তির আগুনে আপনাকে জ্বলতেই হবে..

(১২৮)
ক্রমাগত অভাবনীয় এবং অনাকাঙ্খিত ধাক্কা খাওয়ার ব্যাপারগুলোতে অবাক হবেন না, এটাই স্বাভাবিক। এমনটা না হওয়াই অবাক করা ব্যাপার!

(১২৯)
কোন মানুষের সাথে কথা বলে যদি নিজেকে ছোট আর ভুলে ভরা মনে হয়, আপনি আশাবাদী হতে না পারেন, বুঝবেন আপনি ভুল মানুষের সাথে আলাপ করেছেন। ভবিষ্যতে তার থেকে দূরে থাকবেন।

(১৩০)
কারো ভালোবাসা পাওয়ার মাঝে রয়েছে আনন্দ,
কাউকে ভালোবাসতে পারার মধ্যে রয়েছে মুক্তি।

(১৩১)
প্রতিদিন চারপাশে বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের ধ্বংস করে জাহান্নামের পথে গর্ত খুঁড়তে থাকে মেধা ও শ্রম দিয়ে যখন...

তখনো কিছু মানুষ জান্নাতে যাবার প্রবল স্বপ্নে ছোট ছোট ভালো কাজ করতে থাকে প্রতিদিন, আত্মসমালোচনা আর কল্যাণমুখী শ্রমের বেলুনে চেপে উড়ে যেতে থাকে নিঃশব্দে...

গন্তব্যে পৌঁছানো আসলে একটা সিদ্ধান্ত, একটা প্রার্থনা, আর প্রতিদিনের কিছু কাজ...

(১৩২)
অযুর পানির সাথে সাথে যখন অশ্রুগুলো ধুয়ে যায়, তখন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়...

(১৩৩)
কম চ্যাটিং এবং মোবাইলে বা আড্ডায় বেশিক্ষণ অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা না বলা অন্তরকে হু-হু শূণ্যতা থেকে অনেকখানি রক্ষা করে। তবে, কুরআন তিলাওয়াত এবং নিয়মিত নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে অন্তর প্রায় পুরোপুরি প্রশান্তি পায়...

(১৩৪)
আমরা আসলে যত বেশি ভালোবাসি, ততই প্রিয়জনের ভালো গুণগুলোকে বড় করে দেখে তাতে মুগ্ধ হতে থাকি আর সীমাবদ্ধতা ও ত্রুটিগুলোকে এড়িয়ে গিয়ে ভুলে যেতে থাকি...

(১৩৫)​
শেষ রাত থেকে ঘুম হয়নি। উঠে বসে ছিলাম। ফজরের পরে জোর করে ঘুমুতে চাইলেও কয়েকবার কেমন অস্পষ্ট স্বপ্ন দেখে ধরফর করে উঠে বসলাম। উপায়ন্তর না পেয়ে বেশ সকাল সকাল তাই অফিসে রওনা হয়ে গেলাম।

অমন সকালে যেমন ফুরফুরে মেজাজে অফিসে আসার কথা, তেমন মেজাজ ছিলো না। একটু যেন বিরক্তই ছিলাম। রিকসা থেকে নামতেই এক মধ্যবয়েসি মহিলা বেশ অধিকারের ভঙ্গিতে শক্তপোক্ত গলায় টাকা দাবী করলো... ভিক্ষা চাইছেন তিনি। বিরক্তি আমার ধুম করে বেড়ে গেলেও নিচু স্বরে "মাফ করেন চাচী" বলে এগিয়ে গিয়ে বিরক্তি ঝাড়লাম যেন সিঁড়িগুলোর উপরে। সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে খেয়াল হলো, এই মূহুর্তে যদি পা ফসকে পড়ে গিয়ে গড়াতে থাকি আর ঐ ভিখারিনী চাচীর সামনে গিয়ে পড়ি -- আমার এই বিরক্তি কি আর থাকবে? আমি কি আর তখন ওভাবে "মাফ করেন" বলার সময়ের মতন করে কথা বলতে পারবো?

আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে কৃতজ্ঞ হবার মতন শত-শত জিনিস মনে হয় চারপাশে থাকে। টের পাইনা আমরা। মাঝে মাঝে টের পেলেও হয়ত আমলে নিই না।

১৫ এপ্রি, ২০১৪

ভয়ংকর ফেসবুক

​আপনি যখন ফেসবুকে নিয়মিত থাকবেন, মোটামুটি নিশ্চিত থাকুন আপনি আর আগের মতন নিজেকে খেয়াল করতে পারেন না। আপনি সবসময় অন্যদের বিষয়গুলোকে আপনার নিজের বিষয়ের উপরে না হলেও সাথে সাথে ভাবতে থাকেন। মানুষের সাথে তুলনা করার রোগটি এবং দরকারে-অদরকারে, ভালো এবং খারাপে মানুষের সাথে তাল মিলানোর উদগ্র কামনা আপনার ফেসবুকে সময় কাটানোর সাথে সাথে বাড়তে থাকে। আপনার মনোযোগ আর আগের মতন গভীর থাকে না, আপনি একটু পর পর কে কী বললো সেটা নিয়ে ভাবতে থাকেন। আপনার চিন্তা যতই তুচ্ছ আর অদরকারী হোক, আপনার আলু-পটলের তরকারি খাওয়ার বিষয়টা হোক বা আজকে একটা ভালো রেজাল্ট করেছেন-- সেটাই হোক, সবার *প্রতিক্রিয়া* আপনার মূল ক্রিয়াকেই প্রভাবিত করে। অন্যদের প্রতিক্রিয়া আপনার কাছে এতই বড় হয়ে যায় যে আপনার নিজস্ব পছন্দ, আপনার নৈতিকতা, আপনার আদর্শ বিষয়গুলো আপনি তেমন একটা ভাবতেই পারেন না।

৮ এপ্রি, ২০১৪

​ মনের ​ জানালা মাঝে # ১১​


(১১২)
যিনি বিনয়ী, তিনি কখনো কোনভাবেই অসম্মানিত হন না। বরং তারা ক্ষণিক সময় নিজেদের প্রদর্শিত না করায় লোকের অন্তরে স্থায়ী ভালোবাসা লাভ করেন। মানুষ দীর্ঘ সময় পরে যখন কোন বিনয়ী মানুষের কথা ভাবে, তখন কেবলই শ্রদ্ধা অনুভব করে।

(১১৩)
তেমন কিছুই মনমতন পাইনি, তবুও দুনিয়ার জীবনে অনেক অনেক বছর কেটে গেছে কষ্টে হলেও, ক্ষণিকের আনন্দ হলেও। জান্নাতে সবকিছু পাবো, আল্লাহর সন্তুষ্টি পাবো... ভাবলেই কেমন শিহরিত হই। আল্লাহ গুনাহ মাফের আশ্বাস দিয়েছেন, তাওবা কবুলের আশ্বাস দিয়েছেন, ভালো নিয়াত রেখে দোয়া করতে থাকলে পথ দেখাবেন -- এতকিছুর পরেও বাকিটা জীবন আল্লাহর জন্য কাটিয়ে জান্নাতে যাওয়ার চেষ্টাটায় কেন এত কমতি করি? হে আল্লাহ! আমাদেরকে পথ দেখান, আমাদের অন্তরকে দ্বীনের দিকে ঘুরিয়ে দিন...

(১১৪)
ফেসবুকে অনেকদিন একদমই না লগইন করার কল্যাণ সীমাহীন। সামাজিক নেটওয়ার্কে আমরা যা দেখি তার বেশিরভাগই বস্তাপচা আবর্জনা। অন্তরকে খুব বেশি অস্থির করে, অপ্রয়োজনীয় তথ্যে মস্তিষ্ককে ভরিয়ে দেয়...

(১১৫)
একটা মুসহাফ আর রিয়াদুস সলিহীনের সাথে কয়েকটা দিন একান্তে কাটানোর অনুভূতি মানুষমাত্রই উপলব্ধি করতে পারবেন। সুন্দর হোক আমাদের অন্তরগুলো, পরিচ্ছন্ন হোক আমাদের হৃদয়গুলো...

(১১৬)
পরিবার হতে পারে হৃদয় শীতল করা শান্তির, নয়ত হৃদয় উত্তপ্ত করা দুঃসহ যন্ত্রণার...

(১১৭)
অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয় যখন আমরা পরস্পরের সঙ্গটুকুর চেয়ে ভুলত্রুটিগুলোর দিকেব বেশি মন দেই...

(১১৮)
আমি তো অন্য কেউ হতে পারতাম। অন্য কোন দেহে এই মন, অথবা অন্য কোন মনে এই দেহ...

(১১৯)
সুন্দর চিন্তাগুলো আমাদের হৃদয়কে সতেজ করে। 'খারাপ আছি, খারাপ হবে' এই চিন্তাগুলো আপনার অন্তরকে বিষাক্ত করে মেরে ফেলবে।

(১২০)
আপনি হয়ত অনেক কিছুই পারেন না। কিন্তু আপনি কিছু না কিছু কাজ খুব ভালো পারেন। সেটাই আপনার সম্পদ। সেটাকে ঘিরে আখিরাতের মুক্তির স্বপ্নে কাজ করুন।

(১২১)
প্রতিটি সকালই অকুন্ঠ কৃতজ্ঞতার। আরেকটি দিন দেখতে পাওয়ার, আরেকবার তাওবা করার, দোয়া করার, মাফ পাওয়ার সম্ভাবনায় ভরপুর সকাল। আলহামদুলিল্লাহ!

(১২২)
খুব বিশ্রাম নিতে ইচ্ছা করে। কিন্তু হায়! পূর্বেকার অনুকরণীয় মানুষগুলোর জীবনে তাকিয়ে বুঝি, বিশ্রাম তো কবরে পিঠ ঠেকানোর পরে যেন শান্তিমতন হয় আজীবন --সেই কারণেই এই জীবনে বিশ্রামের কথা ভুলে যাওয়া উচিত; সৎকাজের প্রসারে ও অন্যায়কে বন্ধের জন্য কাজ করা উচিত। নইলে, এখানে বিশ্রামটাও পুরোপুরি বিশ্রাম না, আর কবরের পরের জীবনটা হবে খুবই কষ্টের...

(১২৩)
যেসব ছেলেমেয়েদের খুব ভালো করে চিনি, তারা ফেসবুকে লোকের কাছে ফাপড় দিতে যখন বানোয়াট 'শো-অফ' করে, খুব ইচ্ছা করে সত্যটা বলে দিই। ধৈর্যধারণ করে তার সম্মান রাখি। কিছু কিছু শো-অফে লোকে হয়ত ভালো দিকেই অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আর আল্লাহর কাছে দু'আ করি, আমার সবরের উসিলায় নিশ্চয়ই তিনি আমাকে একদিন পুরষ্কার দিবেন। এটা ভেবে তখন আমার অন্তর প্রশান্ত হয়...

(১২৪)
ফেসবুকের একই পাতায় কারো পিরিতির আলাপ, কারো বিয়ে, কারো ছ্যাবলা মন খারাপ, কারো কবিতাবিলাস, কারো দুঃখবিলাস, কোথাও টেনেহিঁচড়ে পিটিয়ে মুসলিম নিধন, কোথাও রক্তাক্ত লাশের উপরে পা দেয়া মানুষ, কোথাও ভাবের আলাপ...

হঠাৎ কষ্টে বুক মুচড়ে আসে নিজের অনুভূতির অসহায়ত্ব। হে আমার রব, শত গঞ্জনা আর আর্তির মাঝে আমার নিজেকে আপনার কাছেই সোপর্দ করলাম... আমার হৃদয়কে আপনি আপনার পছন্দের পথে পরিচালিত করুন। নিশ্চয়ই আপনার কাছে ফিরে যাওয়াই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় সত্য...

(১২৫)
জুমার খুতবা চলছে। বসেছি নিচতলার ভেতরের অংশের দরজাটার এক কাতার পেছনে। সামনে দরজাটার উপরে ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছে, নিচের ডান কোনায় লেখা দেখতেসি, Dajjal Electronics..

দাজ্জালের কথা ভাবতেই বুক ধক করে উঠলো...
এরপর ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম লেখা আছে, Digital Electronics।

রিয়াদুস সলিহীন চতুর্থ খন্ডের একদম শেষ দিকের হাদিসগুলো পড়ে দাজ্জালের ফিতনাহর ভয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো দোয়াটা প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্তে পড়ার চেষ্টায় করছিলাম বিগত অনেকদিন যাবত। সেই চেষ্টারই একটা সাইড ইফেক্ট মনে হয় এটা... :P

একগুচ্ছ অনুবাদ [৩]

মনের দুঃখ হালকা করতে কারো কাঁধে মাথা রাখার কোন প্রয়োজন আপনার নেই যখন এই বিশাল জমিন রয়ে গেছে আপনার কপাল স্পর্শ করার জন্য। ~ জনৈক

 * * *
- ​আমরা খুব ভালো করে জানি, ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ছাড়া আমাদের স্বাধীনতা অপূর্ণ রয়ে যাবে। ~ নেলসন ম্যান্ডেলা


 * * *
একজন পুরুষের চরিত্র আপনি বুঝতে পারবেন সে কেমন নারীকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দ করেছে তা দেখে। ~ জনৈক

 * * *
কখনো কখনো নিজ জীবনের পেছন দিকে ফিরে আপনি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করেন এই ভেবে যে আপনি এমন অনেক কিছু চেয়েছিলেন যা আল্লাহ আপনাকে দেননি, কিন্তু সেগুলো না পাওয়া আপনার জন্য সীমাহীন কল্যাণকর হয়েছে। ~জনৈক


 * * *
অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা আপনার আগামীকালকের সমস্যাগুলোকে দূর করে দিবে না, কিন্তু আপনার আজকের শান্তিগুলোকে দূর করে দিবে। ~জনৈক

 * * *
চোখের পানিগুলো ঝরে গিয়ে চোখকে পরিষ্কার করে, আর পরিষ্কার করে আমাদের হৃদয়টাকেও। ~ ইয়াসমিন মোগাহেদ

 * * *
অনেকে মনে করেন ক্ষতচিহ্নগুলো কদাকার। কিন্তু আমি মনে করি ক্ষতচিহ্নগুলো অপূর্ব। তারা প্রমাণ রেখে যায় আপনি বেঁচে ছিলেন, ভালোবেসেছিলেন, শিখেছিলেন। -- ইয়াসমিন মোগাহেদ

 * * *
আমরা যখন কোন হারাম/অশ্লীল/অন্যায় কিছুর প্রেমে পড়ি এবং সেগুলোকে ভালোবাসতে থাকি, তখন আমরা হালাল এবং পবিত্রতাকে ভালোবাসার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলতে থাকি। ~ আবদেল রাহমান মারফি


 * * *
আপনি যখন কোন যন্ত্রণার মাঝে থাকেন, মনে রাখবেন, আল্লাহ খুব ভালো করে জানেন তিনি আপনার জীবনে কী ঘটাচ্ছেন। ~ ইয়াসমিন মোগাহেদ

 * * *
অনেকে মনে করেন ক্ষতচিহ্নগুলো কদাকার।কিন্তু আমি মনে করি ক্ষতচিহ্নগুলো অপূর্ব। তারা প্রমাণ রেখে যায় আপনি বেঁচে ছিলেন, ভালোবেসেছিলেন, শিখেছিলেন। ~ইয়াসমিন মোগাহেদ

 * * *
আপনি যখন কিছু বলে ফেলেন, তখন তা আর আপনার অধিকারে থাকে না। সুতরাং আগামীতে যখন মুখ খুলবেন, তখন কথা বলার আগে তা মেপে নিয়ে বলুন নইলে মুখে ছিপি এঁটে দিন। ~ শাইখ আসিম আল-হাকীম

* * *
মুভিতে দেখা বিয়েগুলোর সাথে আপনার বিয়ের তুলনা করতে যাবেন না। মুভির বিয়েগুলো লিখেছে স্ক্রিন-রাইটাররা, আপনারটা লিখেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা। ~ জনৈক

 * * *
জীবনের কোন মূহুর্তেই আমাদের আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ছাড়া এমন কোন ভালোবাসাতে জড়িয়ে পড়া উচিত নয় যা ছাড়া আমরা জীবনটাকে ধারণ করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কেননা, এই 'ভালোবাসা' কোন ভালোবাসা নয় বরং তা এক ধরণের দাসত্ব যা কষ্ট ছাড়া আর কোন কিছুই দিবে না। ~ ইয়াসমিন মোগাহেদ

 * * *
এক ব্যক্তি অনেক বেশি দান করতেন তাই লোকে তাকে তা করতে নিষেধ করতো। তিনি উত্তর দিলেন: "যখন তুমি এক বাড়ি ফেলে অন্য বাড়িতে স্থানান্তর হও, তুমি কি আগের বাড়িতে কিছু ফেলে আসো?" ~ আসিম আল-হাকিম

 * * *
মানসিকভাবে সুস্থতা এবং ভারসাম্য বজায় রাখতে নির্জনে আপনার চরিত্র এবং প্রকাশ্যে আপনার আচরণগুলোর মাঝে একটা সঙ্গতি থাকা প্রয়োজন। আপনার নিজের কাছে এবং চারপাশের মানুষদের কাছে অকৃত্রিম হোন। ~হালেহ বানানি

 * * *
​​হোঁচট খাওয়া মানেই পড়ে যাওয়া নয়। ~ ম্যালকম এক্স

আল্লাহ জান্নাতবাসী করুন শাইখ মুহাম্মাদ কুতুবকে

০৪ এপ্রিল, ২০১৪

​ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন... নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই এবং তার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। ইদানিং একের পর এমন সব মানুষদের বিদায় দিচ্ছি যাদের কাছ থেকে আমি শক্তি নিতে শুরু করেছিলাম কেবল... আলেমদের বিদায়ে আমার খুব কষ্ট হয়, একটা হাদিসের কথা স্মরণ হয়। আল্লাহ আমাদের উপর থেকে অভিভাবকদের, জ্ঞানের আলোকবর্তিকাদের সরিয়ে নিচ্ছেন না তো? আল্লাহ আমাদেরকে মাফ করুন, দয়া করুন।

উস্তায সাইয়্যেদ কুতুব (রাহিমাহুল্লাহ)-কে আমরা কমবেশি সবাই চিনি তার শক্তিশালী গ্রন্থ "ইসলামী সমাজ বিপ্লবের ধারা" পড়ে। তারই ভাই শাইখ মোহাম্মদ কুতুবকে (রাহিমাহুল্লাহ) আমি চিনেছিলাম "ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম" বইটি পড়ে... এইতো মাত্র কয়েক মাস আগেই বইটি পড়ছিলাম। ফেসবুকে বইটির কিছু চুম্বক অংশ শেয়ারও করেছিলাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার এই বান্দার মৃত্যু আজ নির্ধারিত করে রেখেছিলেন। সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে ৯৫ বছর বয়সে এই মহান ব্যক্তিত্ব আজ আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন।

ভয় হয় সন্তানদের জন্য কেমন সমাজ যে রেখে যাচ্ছি তা ভেবে

​​মাঝে মাঝে খুব ভয় আর আফসোস লাগে আমাদের সন্তানদের জন্য কেমন একটা সমাজ যে রেখে যাচ্ছি তা ভেবে। নিজেদের তারুণ্য আর যৌবনটাই অশ্লীলতা-নোংরামি-নির্লজ্জতা-পাপাচারের স্রোতের বিপরীতে হাঁচড়ে-পাচড়ে বেঁচে থাকার চেষ্টাতে কেটেছে তাই জানি এখনকার মুসলিম কিশোর-কিশোরীদের জীবনটা কতই না কঠিন। এখনকার সকল মুসলিম সন্তানদের অভিভাবকদের আর দোষ দিতে আগ্রহ পাইনা বিয়েতে বড় প্রতিবন্ধকতা বাবা-মা হয়ে তৈরি করার জন্যই কেননা তাদের ধারণাতেও সম্ভবত নেই যে এই সন্তানগুলো কতটা যুদ্ধ করে নিজেদের নফসকে নিয়ন্ত্রণের পিছনে। চারপাশে বন্যার পানির মতন নির্লজ্জতা আর পাপাচারের উপকরণ, নিজেকে আশ্বাস দেয়ার যেই 'বিয়ে' ব্যাপারটা, সেটাও অর্থনৈতিক-সামাজিক-পারিবারিক কারণের বেড়াজালে দূর-বহুদূর...

স্যাডনেস ইজ... SADNESS IS...

​​ছেলেবেলার এক বন্ধু এখন ডাক্তার। তার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ঢাকার এক হাসপাতালে। খানিক পরেই ফোন পেলাম আরেক সহপাঠী অ্যাক্সিডেন্ট করেছে, হাসপাতালে ভর্তি হতে এসেছে। অগত্যা ছুটে গেলাম, এক্সরে করে দেখা গেলো পায়ের হাড় দু'টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেছে। ওর আব্বা-আম্মা আর স্ত্রীর  কান্নাকাটি, হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি। বাইরে চেয়ারে বসে থেকে দেখলাম কয়েকজন বৃদ্ধা হুইলচেয়ারে বসে আছেন, মলিন মুখ, চোখে শূণ্যতা তাদের। নাকে স্পিরিটের গন্ধ, কানে কান্নার শব্দ, চোখের সামনে অনেকজন রোগী... অস্থির এক অসহায়ত্ব!

ডাক্তার বন্ধুটির সাথে দেখা হবার পরেই বলছিলো ইদানিং 'মৃত্যু' নিয়ে ওর 'ডিসেনসিটাইজড' হয়ে যাওয়ায় খারাপ লাগার কথা নিয়ে-- খুব সহজেই নাকি তার সিনিয়রদের বলে "আজকে কী হইসে জানেন স্যার? পেশেন্টটা মরেই গেলো"... কিন্তু দীর্ঘকালের বন্ধুত্বের সুযোগে আমি জানি ওর অন্তরটা খুব সুন্দর। মৃত্যু নিয়ে এই নির্বিকারতা অনুভব করে ওর খারাপ লাগছে কারণ এই মৃত্যু নিয়েই একসময় অনেক আলাপ করতাম আমরা, সেই কিশোরবেলাতে... হয়ত পেশাগত কারণে ভয়াবহ আর কষ্টময় ঘটনা "মৃত্যু"র সাক্ষী হতে হতে তার কাছে সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু আমার কাছে তো তা সহজ হয়নি। আমার কাছে হাসপাতালের ওয়ার্ডে বেড না পেয়ে বারান্দায় লাইন ধরে পড়ে থাকা মানুষগুলোর চেহারায় দেখে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হতে থাকে খুব। অপরাধবোধ আর খারাপ লাগায় কেমন ছোট্ট হয়ে যাই নিজের কাছেই...

৪ এপ্রি, ২০১৪

রুমী কবিতা (দ্বিতীয় কিস্তি)



* * *
তুমি জন্মেছিলে
অমিত সম্ভাবনা নিয়ে,
বিশ্বস্ততা আর কল্যাণ নিয়ে,
আদর্শ আর স্বপ্ন নিয়ে
বিশালতা নিয়ে,
উন্মুক্ত ডানা নিয়ে।

তুমি হামাগুড়ি দিতে আসনি,
এভাবে আর নয়, থেমে যাও।

তোমার আছে ডানা, মেলে দাও
উড়তে শিখে দূরে হারিয়ে যাও।

~ জালালুদ্দিন রুমী


* * *
 তোমার কিছু চিন্তাকে ঘুম পাড়াও! ওদের ছায়া হতে দিও না, তোমার অন্তরের চাঁদটাকে ঢেকে ফেলে যে ছায়া। ছায়ারূপী ভাবনায় নিমগ্ন থেকো না।~রুমী

* * *
আমি সমস্ত কাঁটা তুলে ফেলতাম! কিন্তু তুমি আবার ফিরে এলে, আমার কন্টকময়তাকেই করে তুললে পাঁপড়িশোভিত সুগন্ধময়। ~ রুমী

* * *
​আল্লাহ তোমাকে একটা অনুভূতি থেকে আরেকটা অনুভূতির দিকে ঘুরিয়ে দেন এবং এই বিপরীতধর্মী দুই অনুভূতি দিয়ে তোমাকে কিছু শেখাতে চান, যেন তুমি তোমার দু'টো ডানা দিয়ে উড়তে পারো, একটি দিয়ে নয়! ~ জালালুদ্দিন রুমী​

* * *
এমন কি যখন পৃথিবী দগ্ধ হয়, সুপ্ত বীণার তান তখনও বেজে যায়। ~ রুমী

* * *
গ্রন্থি পড়ুক সহস্র, রজ্জু কিন্তু একটাই! ~রুমী
 (এইটার ফাজলামি অনুবাদ হলোঃ যতই গিট্টু বাঁধো, দড়ি কিন্তু একখানাই আছে!)

* * *
ভালোবাসার বাগানে অনন্ত শ্যামলিমা বিরাজ করে। সেখানে দুঃখ কিংবা সুখ ছাড়াও অজস্র ফল ফলে।~ রুমী

* * *
একটা প্রদীপ হও, অথবা প্রাণরক্ষাকারী কোন তরী, কিংবা উর্ধ্বগামী কোন সিঁড়ি। কারো হৃদয়ের যন্ত্রণার উপশম করো।~রুমী

১ এপ্রি, ২০১৪

নাটক-সিনেমা-উপন্যাসে সবকিছু এক্সট্রিম হয় কিন্তু বাস্তব জীবন তেমন নয়

নাটক-সিনেমায় সবকিছু বেশি বেশি হয়। যখন প্রেম হয়, তখন বেশি বেশি। নায়ক নায়িকা কলেজে ব্যাগ ছাড়া বই বহনকালে ঠুয়া খেয়েই প্রেমে পড়ে যায়। আবার তাদের ট্র্যাজেডিটাও বেশি বেশি। রাস্তার রিকসাওয়ালা কোটিপতি চৌধুরী সাহেবের মেয়ের সাথে প্রেম করে। রোমিও আর জুলিয়েটের পরিবারের শত দ্বন্দ্বের পরেও তাদের পেরেম চলতেই থাকে। একটা বেকুব মরে দেখে অপরজনেও আত্মহত্যা করে। এইরকম 'এক্সট্রিম' (Extreme) বিষয় মানব জীবনের জন্য স্বাভাবিক না। আসলে, বাস্তবতা আর নাটক-উপন্যাসের কোন তুলনাই চলে না।

বাস্তব জীবন অনেক অন্যরকম। এখানকার ট্র্যাজেডিতে এইরকম প্রেম কাহিনী থাকে না। এই ট্র্যাজেডিতে আত্মসম্মানবোধ রাখতে, সামাজিক মর্যাদা অটুট রাখতে যে কষ্ট হয়, তার মাঝে সব পেরেম-টেরেম হারিয়ে যায়, পালিয়ে যায়। বাস্তব জীবনে রাস্তার পাশের খুপরিতে বড় হওয়া পিচ্চিটার কাছে ডাবগাছের শাখাটা নিয়ে আনন্দের খেলাধূলার অংশ থাকে। চৌধুরী সাহেবদের কাছে চাঁদাবাজের আতঙ্ক, মেয়ের বেয়াড়া হয়ে যাওয়া, শাশুড়ির ক্যান্সার ধরা পড়ায় কেমোথেরাপির শিডিউল সামলানোর মতন কষ্ট থাকে। সব চৌধুরী সাহেবরা এখন নাইট ড্রেস পরে ডুপ্লেক্সে ঘুমাতে পারে না।

বাস্তব জীবনটা সুন্দর, তবে ভাষায় অপ্রকাশ্য। প্রতিটি মানুষের জীবনই একেকটা গল্পের চেয়েও বেশি। প্রত্যেকের জীবনেই সুন্দর কিছু গল্প আছে, কিছু প্রাপ্তি আছে, কিছু তীব্র বেদনা আছে। সব মিলিয়েই, সবাই মানুষ। এই সকল অপ্রাপ্তি-বঞ্চনা-গঞ্জনার বিপরীতে উত্তম প্রতিদান মিলিয়ে দিবেন আল্লাহ। বেঁচে থাকার সুখ আর দুঃখ সবই আল্লাহর জন্যই। সবাই আমরা তারই, তার কাছেই তো ফিরে যাবো। দুনিয়াতে এসে এই ফিরে যাওয়া অবধি কাহিনীগুলো হোক অনন্যসুন্দর এক ভালোবাসার মহাকাব্য...

[৩১ মার্চ, ২০১৪]