৩১ আগ, ২০১৪

এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট : পরীক্ষার্থীদের সফলতা-ব্যর্থতায় কী আসে যায়?

​​​আজকে এইচএসসি রেজাল্ট হবে। বাংলাদেশে যাবতীয় ছোট ছোট পরীক্ষাগুলোর রেজাল্ট নিয়েও প্রচুর 'সাসপেন্স' তৈরি হয়। এতে ভালো/খারাপ করায় জীবনের গতিপথে আহামরি কিছু বদলে যায়না। সেই আমলে বোর্ড স্ট্যান্ড করা ভাইদের ভার্সিটিতে এসে বছরের পর বছর ধরে অকৃতকার্য হতে দেখেছি। আবার প্রথমবার খুবই খারাপ ফল হওয়ায় দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটিতে ঢুকে কোন কোন ছেলেকে ক্লাসে ফার্স্ট হতেও দেখেছি।

এসব পরীক্ষাগুলো আসলে জীবনের তুলনায় অনেক কম গুরুত্ব বহন করে। এই পরীক্ষায় ভালো করে "মুই কি হনু" ভেবে আকাশে ওড়ার যেমন কিছু নেই, তেমনি খারাপ করে' "আমি শেষ হয়ে গেছি" মনে করাটাও নিরর্থক এক বোকামি। আমাদের জীবনের প্রতিটি ধাপই আমাদের জন্য কিছু 'মেসেজ' বয়ে নিয়ে আসে। আল্লাহ আমাদেরকে কিছু বুঝিয়ে দেন যেন আমরা আরো নিজেদের উন্নত করি, আরো বেশি পরিশ্রমী হতে চেষ্টা করি, যেন ঈমানকে আরো বেশি বেশি বাড়াতে চেষ্টা করি...

৩০ আগ, ২০১৪

অনুপ্রেরণা -৩

​​​
 * * * আল্লাহর কাছে নিজ দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে স্বীকার করতে লজ্জা পাবেন না কেননা আল্লাহ আপনার সেই দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করতে সাহায্য করবেন।

* * *
​মনে রাখবেন, আল্লাহ ক্ষমা করতে কখনো ক্লান্ত হন না।

* * *
জ্ঞানার্জনের ​ ফলে আমাদের অনেক বেশি বিনয়ী হবার কথা। যদি জ্ঞান অর্জন আমাদেরকে উদ্ধত করে দেয় ​ তাহলে ​ আমরা কী নিয়াতে কী শিখছি তা নিয়ে চিন্তা করা দরকার।​

 * * *
প্রশান্তি খুঁজতে বরং সলাতে দাঁড়িয়ে পড়ুন।

প্রেমের কারণে বেশিরভাগ ছেলেপিলে অশান্তিতে থাকে

​ছাত্র যখন ছিলাম, চারপাশে দেখতাম হারাম প্রেম ও প্রেমসংক্রান্ত ঘটনা। যে সম্পর্কটি আগাগোড়া আল্লাহর অপছন্দকে ঘিরে, তাতে ভালো কিছু কোনদিন দেখিনি। দেখচছি প্রচুর রক্তাক্ত হৃদয়, প্রচুর আউলা-ঝাউলা ছেলেপিলে। ছ্যাঁকা খাওয়া, পিছনে ঘুরা, ডেটিং ইত্যাদি নানান ঘটনা। সময়ের পর সময় অপচয় সবার। এক মেয়ের কারণে অন্য অনেকের সাথে শত্রুতা, ত্রিভুজপ্রেমের মারামারি, রিফিউজড হয়ে গাঁজা টানতে বসা -- ইত্যাদি নানান ঘটনা পেরিয়ে কেউ কেউ বিয়ে করেছিলো। যে সম্পর্ক আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে, তাতে কেমন করে শান্তি থাকতে পারে সে কথা ভাবতাম। ক'দিন আগে জানলাম ছেলেটি পরকীয়া করছে। মেয়েটি তার ঘরের সব কথা বান্ধবীদের বলে বেড়ায়...  কোথা থেকে কত কান হয়ে কতই না ঘটনা কানে আসে! না শোনার চেষ্টা করতে হয়...

২৯ আগ, ২০১৪

বইপড়ুয়ারা অনেক কিছু করতে পারে

​ছোটবেলায় অনেক অনেক বই পড়া হতো। আমার ছেলেবেলায় ঢাকার সেই এলাকাটায় ছিলো না মাঠ, পুকুর, গাছ বেয়ে ওঠার মতন কোন গাছ। কিন্তু আমার ছিলো অনেক অনেক বই। আল্লাহ যুগিয়েছিলেন বলেই চারপাশে বইওয়ালা অদ্ভুত মানুষ ছিলেন সেই সময়। তাদের কাছ থেকে নিয়মিত বই সংগ্রহ করতে পারতাম। প্রতিদিন বইতে ডুব দিয়ে থাকতাম কয়েকটা ঘন্টা। আমার বাল্যকালের সেরা স্মৃতি ঐ বইগুলোর সাথেই! গোয়েন্দাকাহিনী, রহস্যোপন্যাস, অ্যাডভেঞ্চার, ট্রাভেলগ, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ক্লাসিকস... আরো কত কী! কিন্তু বইপড়ুয়াদের সাথে সময় কাটানো হয়নি আমার কোনদিনই। একলা আমার পাঠক জগত! সময়ের সাথে সাথে নানান পরীক্ষা, কলেজ-ভার্সিটি যাওয়ার পথে একসময় পাঠকের মৃত্যু ঘটলো।

জীবনে যা হয় তা আসলে কল্যাণময়



এক রাজার একজন কর্মচারি ছিলো যে সবসময় যেকোন অবস্থাতেই রাজাকে বলতো, "রাজা মশাই, কখনো মন খারাপ করবেন না কেননা আল্লাহ যা করেন সবকিছুই নিখুঁত ও সঠিক।"

একদিন তারা শিকারে বের হয় এবং এক হিংস্র প্রাণি তাদের আক্রমণ করে। রাজার কর্মচারীটি সেই প্রাণীকে মেরে ফেলতে সমর্থ হলেও রাজাকে তার একটি আঙ্গুল হারানো থেকে রক্ষা করতে পারেনি। কৃতজ্ঞ না হয়ে বরং ক্ষিপ্ত হয়ে রাজা তাকে বলে ওঠে, "আল্লাহ যদি ভালো হতেন তাহলে আমাকে এই আক্রমণে পড়ে আঙ্গুল হারাতে হতো না।"

২৮ আগ, ২০১৪

আল্লাহ গোটা দুনিয়াকে 'সিস্টেমেটিক' করে চালিয়ে থাকেন

​ফেসবুকে লেখালেখিকে অনেক বেশি সস্তা মনে হয়। হোমপেইজের ফিডে ইসলামের ডিপ-ডিপার-ডিপেস্ট থটগুলোকে যখন মুড়ি-মুড়কির মতন আজেবাজে নিক, ছাইয়া নিক থেকে সমাধান লিখে ভরিয়ে দেয়া হয়, তখন নিজের উপরে ঘেন্না জন্মায়, যেই প্ল্যাটফর্মে আছে সেটার উপরেও রাগ হয়। অনেকবারই এইসব ফিতনাহ থেকে বেঁচে থাকতে ফেসবুকে লগিন করাই ছেড়েছিলাম। এসব দেখে ড. তারিক রমাদানের একটা কথা মাথায় চলে আসে প্রায়ই--
“আমরা যখন জটিল সমস্যার জন্য সরলীকৃত সমাধান দিতে চাই তখন আমরা সবকিছু হারাই।"

মনের জানালা মাঝে # ১৬


(১৭১)
বিশুদ্ধতার প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ কোন ভুল নয়। অশুদ্ধ এই পৃথিবী বেশিদিন থাকবে না। অনন্ত বিশুদ্ধতাকে পেতে হলে বুকে সেই আজন্ম আকাঙ্ক্ষা আগলে রাখতে হবে।

(১৭২)
কীভাবে বুঝবেন আপনি ক্ষতিগ্রস্ত কিনা?

যখন আপনার প্রিয়তম/প্রিয়তমার চেয়ে আল্লাহকে কম ভালোবাসবেন, যখন সেই প্রিয়জনকে আপনার এত বেশি ভালোলাগবে যে আল্লাহর সামনে সময়মতন দাঁড়ানোর কথা ভুলে যাবেন... তখন বুঝবেন আপনি ক্ষতিগ্রস্ত।

তখন শীঘ্রই নিজেকে সাবধান করুন। আপনার নিজের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে আপনার স্রষ্টাকে, যিনি আপনাকে পরম মমতায় অজস্র নিয়ামাত দান করেছেন। প্রিয়জনদের ভালোবাসা হবে সেই ভালোবাসার পরে... তবেই আপনার প্রিয়জনেরা ভালোবাসার এক উত্তম 'service' পাবেন balance রেখে। ভালোবাসার কেন্দ্রে আল্লাহ না থাকলে ভালোবাসার distribution একদমই imbalance হয়ে যায়।

(১৭৩)
যে মানুষটার সাথে আমরা ভালো হবার প্রতিযোগিতা করতে পারি সে হলো আমাদের গতকালকের আমি।

(১৭৪)
আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটির (AUST) একটা ছেলে সমুদ্র দেখার অভিপ্রায়ে বের হয়েছিলো দলবেঁধে। সে মারা গেছে আরেকজনসহ পানিতে ডুবে, কয়েকজন নিখোঁজ। ছেলেটা পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। ছেলেটা রওনা হবার আগে ফাইজলামি করে/ফান করে/মজা করে হয়ত ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছিলো "দূরে চলে যাচ্ছি বহূ দূরে"... এই টাইপের। পোস্টটা দেখে আর কমেন্ট পড়ে মনে হয়েছে তার কনট্যাক্ট লিস্টের সবাই টিপিক্যাল 'ঢং' টাইপের পোস্ট বা ফান হিসেবে মনে করেছিলো।

নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের প্রত্যেকের ক্বাদর লিখে রেখেছেন। তিনি ছেলেটির সেই অদ্ভুত ফেসবুক স্ট্যাটাসকে সত্য হিসেবেই প্রমাণিত করেছেন। পোস্টটা দেখে কষ্ট লেগেছে ছেলেটার জন্য। তার মৃত্যুটা আমার জন্য স্মরণিকা নিয়ে এসেছে, আমার ভয় হয়েছে নিজের কথা ভেবে। কত কথাই তো লিখেছি ফেসবুকে, টুইটারে, ব্লগে। এমন কথা যেন কখনো না লিখি, যা আমার আফসোসের কারণ হবে। প্রতিটি কথাই হিসেব করে লেখা উচিত।

মৃত্যু এত চরমতম বাস্তব! আল্লাহ যেন আমাদেরকে ঈমানী মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ যেন আমাদেরকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করেন। আমাদের মৃত্যু যেন হয় জীবনের সবচেয়ে উত্তম কাজটি করতে থাকা অবস্থায়। একবার সালাফদের এক উপদেশবাণীতে শিখেছিলাম, এমন কাজ এড়িয়ে যাওয়া উচিত যা করার সময় আমি মৃত্যুবরণ করাকে অপছন্দ করি। কেননা, মালাকুল মাওত (মৃত্যুর ফেরেশতা) কখন এসে হাজির হবেন, আমরা জানিনা। তিনি এলে এক মূহুর্তও আর অবকাশ নেই। তাই সবসময়ে আমাদের জিহবা চলুক ক্ষমাপ্রার্থনায়, ইস্তিগফারে, আল্লাহর যিকিরে। আমাদের হৃদয়ের আর্তি হোক এই ক্ষুদ্র জীবনের পৃথিবী পেরিয়ে অনন্তকালে আল্লাহর সন্তুষ্টিতে শান্তির প্রত্য্যাশায়...

হে আমাদের রব! আমরা তো আপনার কাছেই মুখাপেক্ষী, আমরা দুর্বল, আমরা পাপী, আমরা অকৃতজ্ঞ। আপনি তো গাফুরুর রাহীম, আপনি তো রাহমানুর রাহীম, আপনি আমাদের দয়া করুন, মাফ করে দিন, জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন, জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য কবুল করে নিন...

(১৭৫)
কখনো কখনো নীরবতা যেন শব্দের চেয়েও বেশি কথা বলে যায়...

(১৭৬)
আমরা যখন বেশি কথা বলি, তখন একই কথা বারবার বলি। চিরন্তন বাণীগুলো সবসময়েই মধুর,কিন্তু ব্যক্তিগত মতামতগুলো ক্লান্তিকর। অনেক সময় প্রিয়জনেরাও হাঁপিয়ে ওঠেন। হতে পারে সৌন্দর্যহীন কথা আমাদের মাঝে অদ্ভুত দুরত্ব তৈরি করে দিতে পারে। যদি সুন্দর কথা না বলতে পারি, চুপ থাকাই ভালো। অন্তত নীরবতার মাঝেও আমাদের হৃদ্যতা ও ভালোবাসা সঞ্চারিত হতে পারে, কিন্তু ক্লান্তিকর ও অসুন্দর ভাষা তার বিপরীতধর্মী কাজ করে।

(১৭৭)
আমাদের প্রিয়জনেরা যতটা সুন্দর, তার চেয়েও বেশি সুন্দর তারা আমাদের মনের সৌন্দর্যে। আপনি কোন একটা মূহুর্তকে অনেক বেশি সুন্দর করে হৃদয়ে ধরে রাখতে পারেন, বা সেই মূহুর্তটিকে অবিস্মরণীয় করে রাখতে পারেন আপনার মনের মাধুর্য, সৌন্দর্য, ভালোবাসা দিয়ে। মনটাকে সুন্দর করলে, ভালোবাসাময় আর উদার করতে পারলে আপনি জগতটাকেই দেখবেন অনেকটাই সুন্দর। তবে মনে রাখতে হবে, এই পৃথিবী কখনই নিখুঁত নয়। নিখুঁত ও সম্পূর্ণ আনন্দ ও সৌন্দর্য কেবল জান্নাতেই সম্ভব। সেই চাওয়া বুকে জাগলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন যেন তিনি আপনাকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করেন।

(১৭৮)
মাঝে মাঝে মনে হয়, আল্লাহর জন্য যাদের ভালোবাসি তাদেরকে জন্য যে পরিমাণ ভালোবাসা অনুভব করি তা ধারণ করার জন্য এই বুকটা খুব ছোট।

(১৭৯)
ভালোবাসার গল্প শুনতে চাই আমরা। ভালোবাসার কতটুকু বুঝি? সত্যিই কি আমরা কাউকে ভালোবাসি? কয়েকটা কথা হয়ত আপনি আগে ভাবেননি। আপনি কি জানেন--

- আপনি আপনার প্রিয়জনকে ভালোবাসেন না যদি সে যা ভালোবাসে সেটাকেও আপনি ভালো না বাসেন।
- আপনি তখনই কাউকে ভালোবাসেন যখন তাকে যারা ভালোবাসে আপনি তাদেরকেও ভালোবাসেন।

# ভালোবাসা নিয়ে এমন আরো চমৎকার কিছু মনোমুগ্ধকর আলাপ শুনুন শাইখ হামজা ইউসুফের বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে এই ছোট্ট ক্লিপটিতে:

Tell Me about Love - Shaykh Hamza Yusuf : http://www.youtube.com/watch?v=ls_eQXGlXNA

২৭ আগ, ২০১৪

যখন মনে হয় "নাহ! আর পারছি না"

​​​​আমাদের অনেকের জীবনেই মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন মনে হয় "আর হবে নাহ/আর পারছি না",অথবা হয়ত কখনো জীবনের মূহুর্তগুলো এতই কঠিন লাগে যে আর আশা খুঁজে পাইনা, নিজের উপরে বিশ্বাস হারিয়ে যেতে থাকে। হয়ত কখনো কোন ভুলের কারণে হওয়া কষ্ট এত তীব্র হয় যে মনে হতে পারে জীবনের ফেলে আসা পথগুলো/কষ্টগুলো/প্রচেষ্টাগুলো আসলে ভুল ছিলো। আবার এমনও মনে হয়, আমি যে জীবন কাটাচ্ছি, হয়ত এ থেকে খুব ভালো কিছু দূরে থাক, এই কঠিন পৃথিবীতে কোনরকম কিছু করেও টিকে থাকতে পারবো বলে আশা করা যায় না...

২৬ আগ, ২০১৪

দাড়ি কেন রাখে ওই মুসলিম পুরুষগুলো?

অদ্ভুত এক মুসলিম সমাজ আমরা! নিজেকে মুসলিম মনে করা মানুষগুলো এমন এক চিন্তা ও শিক্ষা নিয়ে বড় হয়েছে যে কেউ দাড়ি রাখলে তাকে প্রশ্ন করে "কী ব্যাপার শিবির করো নাকি?/তুমি কি জঙ্গী-টঙ্গী হয়ে গেলা?"... ​​​আমাদের ইজ্জত নিয়ে কি আদৌ চিন্তা করি আমরা?

আমাদের এই সমাজটাকে জাহেল সমাজ বললে কি অত্যুক্তি হয় কিনা আমার জানা নেই। এখান প্রচলিত কনসেপ্টটাই এমন যে-- হজ্ব থেকে ফিরে দাড়ি রাখতে হয়, আর হজ্বে যেতে হয় বৃদ্ধ বয়সে!! এদিকে যৌবনে ছেলেদের গাল হবে চকচকা, টেলিভিশন কমার্শিয়ালে দেখানো হয় চকচকা গালের প্রতি নারীদের অনেক 'আকর্ষণ'!! মেয়েদের হিজাব প্রয়োজন এমন কনসেপ্টটা কমবেশি মুসলিম (যারা আসলেই নিজেদের মুসলিম মনে করেন) পরিবারগুলোতে থাকলেও ছেলেদের দাড়ির কনসেপ্টটা একদমই নেই। এই কারণেই সমাজে প্রো-সেক্যুলার লোকেরা দাড়িওয়ালা ছেলেদের নিয়ে একটু বেশি সহজে কৌতুক করার ধৃষ্টতা দেখায়। তবে আজকাল অনেক পরিবারেই চল্লিশ পেরিয়ে যাওয়া 'বোরকা পরা' মায়ের জিন্স-টিশার্ট পরিহিতা সন্তান পাওয়া যায়। পর্দার কনসেপ্টটাকে পানি দিয়ে গুলে খাওয়া হয়ত এটাকেই বলে!

আশাহত না হবার অনুরোধ জানাই

আমি আমার মুসলিম ভাইদের আশাহত না হবার অনুরোধ জানাই।

যখন বন্ধুদের মাঝে, আত্মীয়মহলে কিংবা পথে-ঘাটে আপনার মুখের দাড়ি কিংবা টাখনুর উপরে কাপড়, টিভিতে অবাধ নগ্নতা থেকে চোখ দূরে রাখা, মেয়েবন্ধু কিংবা মেয়ে-কলিগদের সাথে 'খাজুইরা আলাপ' থেকে নির্বিকার থাকা, মেয়ে 'কাজিনদের' সাথে অপ্রয়োজনীয় খুনসুঁটি না করা, হারাম অর্থোপার্জন 'সুদ' নিয়ে করা অর্থনৈতিক লেনদেনে সাবধান হয়ে থাকা, গান না শোনা, ইসলামী আলোচনা ও হালাকায় আগ্রহ থাকা নিয়ে আশেপাশে সবাই একটু হাসি-তামাশা ও অবাক হয়...

তখন জেনে রাখবেন, আপনি আল্লাহর এমন কিছু বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত যারা প্রচন্ড ভাগ্যবান। খুব অল্প মানুষই নামসর্বস্ব মুসলিম হবার পরে নিজেদেরকে বদলে ফেলার পথে আছে। আপনি এমন এক দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে আছেন যে দায়িত্ব নিয়েছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষটি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি যে মূহুর্তটিতে দ্বীনের দায়িত্ব পেয়েছিলেন, তখন গোটা দুনিয়ায় তার পাশে একটি মানুষও ছিলো না। কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে, তাদের সবাইকে আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব ঐ মানুষটির দু'টি কাঁধে ছিলো-- ভেবে দেখুন তার সেই অনুভূতিটুকু...

জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে অনাকর্ষণীয় সব বস্তুতে। জাহান্নামের চারপাশে আকর্ষণীয় বস্তু। দুনিয়ার  চাকচিক্য, গার্লফ্রেন্ড, সুদী ব্যাঙ্কের টাকা, বন্ধুদের সাথে পার্টিতে গিয়ে মদ-হুইস্কি-বিয়ার খাওয়া --আপনার অন্তরকে অন্ধকের থেকে অন্ধকারে নিয়ে চলে যেতে থাকবে। আপনি এমন বস্তুর থেকে যত দূরে থাকতে পারবেন, নিজেকে তত বেশি ভাগ্যবান মনে করতে পারবেন। আখিরাতের অনন্তকালের কষ্টের সাথে দুনিয়ার কষ্টগুলো তুলনাহীন।

তাই, যত কষ্টই হোক, আখিরাতের অনন্তজগতের সুখস্বপ্নকে বুকে নিয়ে
আমি আমার ভাইদেরকে আশাহত না হবার আহবান জানাচ্ছি।

[১৮ আগস্ট, ২০১৪]

২০ আগ, ২০১৪

বাসায় ডিশের লাইন

​আমাদের বাসায় কোনদিন 'ডিশের লাইন' (স্যাটেলাইট কানেকশন) ছিলো না। স্রেফ নামকাওয়াস্তে একটা টিভি ছিলো। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের ভাইবোনদের মাঝে টিভি দেখার তেমন কোন ন্যুনতম আকর্ষণ কাজ করেনি, এখনো করে না। টিভি দেখা হতো না, হয় না শুনে অনেকে ' এটাকে 'অসম্ভব' বিবেচনা করে প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করেন আমাকে "এটা তো হারাম না। সাধারণ জ্ঞান বাড়ে, দেশ-বিদেশের খবর জানা যায়। ইসলাম মানেই তো সব টাইট করে রাখতে হবে এমন না।" ... মজার ব্যাপার হলো, এই ডাউটমার্কা কথাটা একটা মুখস্ত বুলি। ইসলামের পারমিশনকে এমন লোকজন থোড়াই তোয়াক্কা করে। তাই আলোচনায় ইসলাম 'টাইট' নাকি 'ঢিলা' প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে আমাকে বলতে হয় যে আলহামদুলিল্লাহ আমাদের এতগুলা ভাইবোনদের সবাইকে কেউ কোনদিন বলতে পারেনি যে সাধারণ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে বা আমরা অন্য সবার চেয়ে কিছুমাত্র কম জানি।

১১ আগ, ২০১৪

সুখ কোথায়?

​একদম সুনসান নিরবতা মনে হয় ঢাকা শহরে হয়ে ওঠে না। তিলোত্তমা নগরীতে​ সবসময়েই​ অনেক লোকের আনাগোনা চলতেই থাকে। একটু জায়গা পেলেই যেন মাটি ফুঁড়ে জেগে উঠে ডেভেলপার কোম্পানির নতুন প্রজেক্ট। নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে নতুন কিছু সংসার --নতুন দম্পতি, পুরোনো দম্পতি, ব্যাচেলর। ​যেকোন এক ​নির্ঘুম রাতে জেগে উঠে আলো-আঁধারির মাঝে জানালা দিয়ে, বারান্দা দিয়ে বাইরে উঁকি দিলেই অন্য কাউকে পাওয়া যায় দূরে কোথাও -- এক টুকরো মোবাইলের আলোতে জেগে থাকা কিশোর, কিশোরী। অথবা হয়ত কোন তরুণ বা তরুণী। এভাবেই অপচয় হয় কৈশোরের, তারুণ্যের।

৪ আগ, ২০১৪

আমরা কী চাই আর কী পাই?

​​যদি আমরা জীবনের একটু পেছনে ফিরে তাকাই, মনে হয় সেখানে অনেক প্রাপ্তি পাবো, পাবো অনেক অপ্রাপ্তির অনুভূতি। যে জিনিসটা নিশ্চিত পাবো, তা হলো কিছু দগদগে ঘা। অনেক কষ্ট আর বেদনার ফেলে আসা অসহায় দিন, দুশ্চিন্তার রাত, শঙ্কা ও সঙ্কোচের মূহুর্তে ভরা অনেকগুলো দিন। জীবনে খুব ছোট ছোট ব্যাপারে ঠকে ঠকে, প্রতারিত হয়ে, অবহেলা পেয়ে, রিক্ত থেকেই আমরা স্বস্তির কিছু প্রাপ্তি পাই, প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি। দুনিয়াতে যারা বড় হয়, তারা কমবেশি সবাই অনেক ত্যাগ করেন। আল্লাহ পৃথিবীর সবকিছুই খুব 'সিসটেমেটিক' করে তৈরি করেছেন। নিপুণ সেই স্রষ্টার হাতের স্পর্শে সবকিছু অদ্ভুত এক দ্যোতনার মাঝে চলে। দিন না পেরিয়ে রাত হয়না, অঙ্কুরোদগম না হলে চারাগাছ ফোটে না, গর্ভকে ধারণ না করলে হয়না সন্তান -- অমন লক্ষ-কোটি উদাহরণ সৃষ্টিজুড়ে...

৩ আগ, ২০১৪

গাযযাতে চলমান হত্যাযজ্ঞের ছবিগুলোর প্রতি সবাই কেমন যেন ডিসেনসিটাইজড হয়ে গেছে

​গাযযাতে চলমান হত্যাযজ্ঞের ছবিগুলোর প্রতি সবাই কেমন যেন ডিসেনসিটাইজড (অনুভূতিহীন) হয়ে গেছে...

এই ব্যাপারটাতে আমার কিছু বলার আছে! পশ্চিমে বেড়ে ওঠায় এরকম মৃত্যু আমরা কেবল মুভিতেই দেখেছি। আমরা এতো বেশি মুভি দেখেছি যে আমাদের কাছে গাযযায় চলমান হত্যাকান্ড আর ম্যুভির বিষয়টা একই মনে হয়, শুধুই যেন পর্দায় ভেসে থাকা কিছু নিথর দেহ! তাই আমরা নতুন করে ডিসেনসিটাইজড হয়ে পড়িনি, আমাদের বেশিরভাগ মানুষই অনেক আগে থেকেই এরকম বিষয়ে ডিসেনসিটাইজড হয়ে আছি। যারা আমাকে বলছেন এসব শেয়ার না করতে তাদের বলছি, আমি ভাল করেই জানি আপনাদের অবস্থান এবং আমি আপনাদের উপদেশটা মনে রাখব। দয়া করে বুঝতে চেষ্টা করুন যে আমার পেশাদারিত্ব এবং আবেগের মাঝে আমি এক টানাপোড়েনে আছি। আমি আল-শিফা হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তায় বড় হয়েছি। এ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন প্রতিদিন সকালে আমাদের ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিত। আমি ও আমার বন্ধু মিলে আল-শিফার বাগানে অনেক খেলাধূলা করেছি! এই ভয়াবহতা স্রেফ একটা ছবির দেখার অনেক ভিন্ন একটা ব্যাপার। আমি নিজের চোখে আল-শিফা হসপিটালের দরজা দিয়ে ক্ষতবিক্ষত শরীরগুলো দেখে বাসায় ফিরে খবর দেখেছি কিন্তু এ বিষয়ে কোন কিছুই পাইনি সেখানে। সংবাদ মাধ্যমগুলো গাযাতে চলমান হত্যাযজ্ঞ এমনিভাবেই চেপে যাচ্ছে ঠিক যেমন করে তারা সিরিয়া, বার্মা, পাকিস্তানে চলমান জুলুম ও নিপীড়নকে চেপে যাচ্ছে। আমি এসব দেখে প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিলাম, আমি এখনো ক্ষেপে আছি। আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম গোটা বিশ্বকে গাযার এমন চিত্র দেখাবো যা গাযায় বসবাসকারী মানুষদের চোখগুলো প্রতিদিন দেখে। অনলাইনে হয়ত আপনারা শুধু একটা ছবিই দেখেন। কিন্তু এই ছবির পেছনে থাকে অনেকগুলো গল্প, ছবিটা কেবলই একটা মৃতদেহ নয়। একজন মানুষের দেহ থেকে যখন তার আত্মা বের হয়ে যায় তখন শুধু মানুষটিই মারা যায় না, মারা যায় ভালোবাসা, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, সমবেদনা, স্বপ্ন। ছবিটি দেখতে কতটা  বীভৎস সেটিই কেবল বড় ব্যাপার নয়, বরং তিলতিল করে গড়ে ওঠা জীবনগুলোর কষ্ট ও হারানোর গল্পগুলো অনেক বড় ব্যাপার।

আমি আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

-- মুহাম্মাদ জেয়ারা

[লেখক কাডায় জন্মগ্রহণ করা ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত এক নাগরিক। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। তিনি একজন বক্তা এবং মূলত তরুণদের প্রতি অনুপ্রেরণাদানকারী বক্তব্য রাখেন। অনলাইনে প্রকাশিত এডুকেশনাল এবং মোটিভেশনাল ভিডিওগুলোর জন্য তিনি বেশি পরিচিত। গাযযায় বেড়ে ওঠার সময়ে জীবনের ৮টি বছর তার জীবনের একটি বড় অভিজ্ঞতা। তার ফেসবুক প্রোফাইল: https://www.facebook.com/mzeyara/]