১৫ ফেব, ২০১৫

যারা দুঃখভারাক্রান্ত, তাদের জন্য লেখা....

... ​যারা দুঃখভারাক্রান্ত, তাদের জন্য লেখা....

আমরা যেসব বোকা মানুষ দুনিয়ার জীবনের বিভিন্ন বিপদাপদ, আশংকা-ভয়, দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত হয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ি, তাদের জন্য আল্লাহ নিজেই হচ্ছেন সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র শান্তি, সমাধান। মনে রাখতে হবে, আমাদের জীবনের এই কষ্ট এসেছে আমাদেরকে 'শুদ্ধ' করতে এবং 'মুক্ত' করতে। আপনার মাঝে যদি ঈমান থেকে থাকে, তবে জেনে রাখবেন আল্লাহ এই পরীক্ষা হাজির করেছেন আপনাকে তার দিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে। আল্লাহ আপনাকে আরো বেশি বেশি ইস্তিগফার ও আ'মাল করাতে চান। মু'মিনদের জীবনের যেকোন পরীক্ষাই আসে কল্যাণ হিসেবে, তাই অবশ্যই সবর করার চেষ্টা করতে হবে। এই কষ্টগুলো আপনার পাপগুলোকে পুড়িয়ে আপনাকে শুদ্ধ করবে যেমন করে সোনা পুড়ে খাঁটি হয়।

১১ ফেব, ২০১৫

আপনার জীবনে উত্তম পরামর্শক না থাকলে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন

​​​স্বাভাবিক জীবন, শান্ত-স্থির জীবন আমরা একেকটা মানুষ খুব বেশি সময় ধরে পাইনা। দুনিয়ায় আমাদের জীবনকে উথাল-পাথাল করা ঘটনা, ভয়-শংকা করার মতন ঘটনা জীবনে লেগেই থাকে। এ সময়গুলোর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো -- 'উত্তম পরামর্শক'। আমি জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে গভীরভাবে শিখেছি, "আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাকো"[১] টাইপের আদেশের একটি গভীর উপকার/প্রয়োজন/আবেদন স্পষ্ট টের পাওয়া যায় যখন আমরা সমস্যাগ্রস্ত হই।

১০ ফেব, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ২৩


(২৫০)
আমরা অনেক সময় অতিরিক্ত উৎসাহ থেকে অন্যদের ব্যাপারে দু'একটা বিষয় থেকে অনেক ধারণা করে বসি। অনেক সময় আমাদের ধারণা ও মন্তব্য শিষ্টাচার ও ন্যায়ের সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়। সন্দেহ করা ও ধারণা করা খুব খারাপ কিছু বৈশিষ্ট্য। উত্তম মানুষ হতে চাইলে অযথা সন্দেহ ও অনায্য ধারণা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ধারণাগুলো ভুল হয়, যা মিথ্যার নামান্তর। অস্পষ্ট জ্ঞান থেকে ধারণা করার অভ্যাসটি দূর হোক আমাদের সমাজ থেকে...

(২৫১)
খুব না চেয়ে, পরিশ্রম না করে যদি কোন মূল্যবান সম্পদ পেয়ে যাই, তাকে তখন আমরা ঠিক পাত্তা দিই না।

(২৫২)
'তিনি প্রফেশনাল' বলে কেবল চাকরি-বাকরিতে চরম সিরিয়াস বলে বুঝানো পুরোপুরি ঠিক না। দুনিয়ার জীবনটাও প্রফেশনের মতন, মৃত্যুর পর ঠিকমতন বেতন পেতে প্রফেশনাল হওয়া উচিত জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে। যারা বুঝেনা, তারা পা হড়কে কোমর ভাঙ্গে নিয়মিতই... তাই, সফলতা পেতে প্রফেশনাল হউন।

(২৫৩)
যে আগুনের উত্তাপ ও আলো যত বেশি, তার দহনজ্বালাও তত বেশি।

(২৫৪)
এমন সিগারেটখোর দেখিনি যে দাম্ভিক ও উদ্ধত নয়।
এমন গাঁজাখোর দেখিনি যে আগে সিগারেটখোর ছিলো না।
~ জনৈক

(২৫৫)
আমরা অনেকেই আমাদের বর্তমান সময়গুলোকে নষ্ট করি অতীতের সময়কে কেমন করে নষ্ট করেছি তা ভেবে ভেবে...

(২৫৬)
অন্ধকার পছন্দ করে যারা, তারা বেশিরভাগ ডিপ্রেসড থাকে। অন্যভাবে বলা যায়, যারা ডিপ্রেশনে ভুগে, তারা অন্ধকারে থাকতে চায়। অন্ধকার পরিহার করুন, আলোকিত স্থানে থাকুন। কোথাও স্রেফ পড়ে থাকবেন না, সচল থাকুন। আগ্রহ ও উদ্যম নিয়ে কাজ করুন, তা যতই ছোট হোক।+গতকাল অন্ধকার পছন্দ করার একটি বাজে দিক নিয়ে চিন্তাভাবনাগুলো গোটা জীবনের উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতা হলেও মূল অনুপ্রেরণা ছিলো 'নূরুন আলা নূর' আয়াতটির উপরে উস্তাদ নুমান আলী খানের এই ভিডিওটি। অসাধারণ এই আলোচনাটি দেখে ফেলুন...

www.youtube.com/watch?v=hpjuufpCDOI

(২৫৭)
আপনার হয়ত যখন কিছুই পাওয়ার সম্ভাবনা নেই দুনিয়ার জীবনে, আপনি হয়ত 'গুড ফর নাথিং', কিন্তু সেই আপনি এখন থেকে ছোট্ট ছোট্ট যা কিছুই করবেন সেটাই আপনার প্রাপ্তি। আপনি একটা ছোট্ট বাচ্চার হাসির কারণ হতে পারেন, আপনি মায়ের একটা হাসিমুখ প্রশান্তির কারণ হতে পারেন, আপনি হয়ত চেনা-অচেনা কারো একটি উপকার করলেন --এমন ছোট ছোট অর্জনই আপনাকে জীবনের বড় অর্জনে এগিয়ে নিয়ে যাবে। মনে রাখা উচিত, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকনা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল। আজকে যা ক্ষুদ্র প্রাপ্তি, তা হয়ত কিছুদিন পরের বড় প্রাপ্তির মূল কারণ হবে। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে প্রতিটি সময় কেননা সমস্ত সাফল্য একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই আসে।

(২৫৮)
​​সুন্দর একটি আলাপ। খুব সুন্দর, মাত্র ৬ মিনিটে মন ভালো হয়ে যাবে। হয়ত আজীবনই তা কাজে দেবে... ইনশা আল্লাহ! Don't Be Sad - Shaykh Hamza Yusuf

# ভিডিও লিঙ্ক: https://www.youtube.com/watch?v=HqfP4ADWHEQ

(২৫৯)
অন্যদের সাথে তুলনা করা বোকামি, আমাদের জীবনের আনন্দগুলো কেউ বুঝতে পারে না, আমাদের কষ্টগুলোও কেউ উপলব্ধি করতে পারে না। আল্লাহ আমাদের সবাইকে একদম আলাদা-আলাদা জীবন দিয়েছেন, প্রতিটি জীবনকে তিনি অসংখ্য নিয়ামাত দিয়ে সাজিয়েছেন। তাই, যেমনই থাকি, যতক্ষণ ঈমান আছে বুকে, আলহামদুলিল্লাহ বলে কৃতজ্ঞ হওয়াই সেরা কাজ, প্রাণ আনন্দে ভরপুর হবার কাজ।​

(২৬০)
মানবজাতিকে আল্লাহ যে বিষয়টি দিয়ে স্বস্তি ও রাহমাত দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি তা হলো, মৃত্যু। মানব মস্তিষ্কের মাঝে অনন্তকালের কল্পনা সম্ভব হয় না। এই পৃথিবীর সর্বোচ্চ শান্তির কথা ভাবলেও তা অনন্তকাল পাওয়ার কথা ভাবতে অশান্তি লাগে। কষ্টকর মূহুর্তে থাকা লক্ষ-কোটি মানুষেরা যদি অনন্তকাল এভাবেই থাকবে বলে ভাবতো, এবং তাদের জীবন মৃত্যুহীন জানতো, নিশ্চয়ই তারা তা সহ্য করতেই পারতো না।

মৃত্যু এক অসাধারণ ঘটনা। মৃত্যু স্বস্তি দেয়, মুক্তি দেয় জীবনের ক্লান্তি থেকে। শেষ জীবনে বার্ধক্যে ক্ষয়ে যাওয়া, রোগে ধুঁকতে থাকা মানুষগুলোকে জীবনের তীব্র যাপন থেকে মুক্তির আশা দেয় মৃত্যু। যদিও মৃত্যুর পরের ভয়াবহতার আশংকা আমাদের ভীতসন্ত্রস্ত করে, তবু মৃত্যু আমাদের আশ্বস্ত করে। মৃত্যু, একটি যতি চিহ্ন, একটি পরিসমাপ্তি, একটি স্বস্তির নাম।

(২৬১)
​নীল আকাশকে দূর থেকে দেখতে যেমন লাগে, বিমানে চড়ে কাছে গেলে তেমনটা লাগে না। সমুদ্রকে তীর থেকে যেমন লাগে, জাহাজে চড়ে কাছে গেলে লাগে ভিন্নরকম। দুরত্বভেদে, সময়ভেদে একই জিনিসের রূপ ভিন্ন লাগেই। মানুষদের ক্ষেত্রেও তাই। বিভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন দুরত্বে আমরা নিত্যনতুন রূপকে খুঁজে পেতেই পারি, অবাস্তব কিছু তো নয়!

অনন্য সাধারণ এক ইতিহাস : মুতার যুদ্ধ

মুতা'র যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগে থেকেই তিনজন সেনাপতি নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, যায়িদ বিন হারিসা মারা গেলে জাফর বিন আবু তালিব, তিনিও মারা গেলে আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা হবেন মুসলিম আর্মির সেনাপতি। মুতার প্রান্তরে তারা দেখেন তখনকার শক্তিশালী রোমান সাম্রাজ্যের ১ লাখ সৈন্য আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের পেছনে যোগ দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো রোমানদের মিত্র এবং মুসলিমদের শত্রু বিভিন্ন দল-উপদল মিলে আরো ১ লাখ সৈন্য।

এই বিশাল ২ লক্ষ বাহিনীর বিপরীতে মুসলিম বাহিনীর সৈন্যদল মাত্র ৩ হাজারের। অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য। তারা যুদ্ধের ময়দান ছেড়ে পিছিয়ে যাননি বরং তারা জানতেন তারা এসেছেন অন্যায়কারী যালিমদের ধূলোয় মিশিয়ে দিতে! শাহাদাত তাদের পরম আরাধ্য ছিলো। এ যুদ্ধে তিনজন সেনাপতিই ক্রমান্বয়ে শহীদ হন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম।

৯ ফেব, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ২২


(২৩৭)
শব্দের ক্ষমতা অনেক। শব্দ দিয়ে অনেক কিছুকে গড়ে দেয়া যায়, অনেক সুন্দরকে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, অনেক হৃদয়কে শান্তি দেয়া যায়। শব্দ দিয়ে ধ্বংস করে দেয়া যায় অনেক কিছু, হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করা যায়, হৃদয়কে কলুষিতও করে দেয়া যায়। শব্দ ব্যবহারের আগে তাই খেয়াল করা উচিত। কেননা এই শব্দ হয়ত একদিন আমাদের শত্রু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে হিসাবের দিন! ​

(২৩৮)
​লিবিয়া, সিরিয়ায়, ইরাকে প্রতিদিন ঢাকার রাস্তার ইঁদুর-চিকার মতন করে মারা যাচ্ছে। এগুলো নিয়ে আজকাল দু'আ পর্যন্ত শুনিনা, দু'লাইন লেখাও দেখিনা! সত্যিকারের সমাধান তো দূরের কথা। আল্লাহ উম্মাহর এই অন্যায়ের দায়ভার থেকে আমাদের মাফ করুন, আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

(২৩৯)
দুনিয়ার পেছনে যত ছুটি, সেটা তত দূরে চলে যায়।

(২৪০)
আল্লাহ তার বান্দাদের খুব ভালোবাসেন, খুবই!

(২৪১)
যখন সবকিছু প্রতিকূলে, তখনো নিজের চরিত্র ও ব্যবহারের সৌন্দর্য ধরে রাখার চেষ্টা করাই সফলতা। হয়ত ভালো হতে না পারছি, খারাপ যেন না হই। একদিন আল্লাহ এই কষ্টটুকুর বিনিময় অনেক উন্নতি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

(২৪২)
ছোটকালে শিক্ষকদের মুখে শুনেছি, ভালো পরিবেশে সবাই/সবকিছুই ভালো সার্ভিস/আউটপুট দেয়। প্রতিকূল পরিবেশে যে বেশি ভালো সার্ভিস দিতে পারে সে-ই স্পেশাল, সাকসেসফুল।

(২৪৩)
যদি প্রতিদিনের কঠিন সময়টুকুতে কারো পাশে এমন কেউ থাকে যে সবকিছুর উপরে একচ্ছত্র ক্ষমতাশালী আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে, তাহলে সে একজন ভাগ্যবান মানুষ। যদি এমন কেউ পাশে না থাকে এবং সে মানুষটি আল্লাহর কুরআন ঘেঁটে তার দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে তাহলে সে আরো বেশি ভাগ্যবান মানুষ। যেকোন অবস্থাতেই আল্লাহ আমাদেরকে তার নিয়ামাতে ডুবে থেকে সেগুলোর শুকরিয়া করার তাওফিক দিন।

(২৪৪)
একজন ​ নাক-কান-গলা (ENT) স্পেশালিস্ট ডাক্তার পরিষ্কারভাবে বললেন, কানে কটন বাড (cotton bud) নামক ​জিনিসটা ​ব্যবহার করার নাকি কোনই প্রয়োজন নেই। ​কানে​ যা পরিষ্কার করতে আমরা অস্থির হয়ে যাই, সেটা নাকি একটা সময় পরে আপনাতেই বের হয়ে যায়। সেটা কোন সমস্যার কিংবা ক্ষতিকর কিছু নয়। অনেকের বেশি বেশি কানে চুলকানি হওয়ার চিন্তাভাবনা বেশিরভাগ মানসিক। ​আর​ যদি খুবই চুলকায়, তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কানে গুতোগুতি করে অনেক মানুষই কানের পর্দায় ফুটো তৈরি করে ইনফেকশনের সৃষ্টি করেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।​ সচেতনতা জরুরী!!

(২৪৫)
গতিশীল বাসে চড়ে কোথাও যাবার পথে সাথে খাবার পানীয় না থাকলে যেমন অজস্র নলকূপ দেখেও লাভ নেই, আবার বাস থামিয়ে পানি নিতে নামলে তখন সেই বাসটা মিস হবার+বাসের ভাড়া+সময়মতন গন্তব্যে পৌঁছা টাইপের বিশাল পার্থক্যের ক্ষতি থাকে। তেমনি জীবনের চলার পথেও অনেক কিছু আমাদের উপকৃত করতে পারে না। উপকারের ডালা চোখে দেখলেও আমরা থাকে দৌড়ের উপরে, দৌড়... দৌড়... অসুস্থ দৌড়...

(২৪৬)
অনেক সময় প্রাপ্য ও কাঙ্খিত সদাচারণের জায়গায় মন্দ ব্যবহার পেয়ে অনাকাঙ্খিত কোথাও থেকে যত্ন-আত্মি পেলে লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছা করে। আমি এক নাদান বান্দা আল্লাহর, সারাটি জীবন ঘুরেফিরে পূর্বেকার চিন্তার ভুল প্রমাণ পেতে পেতে ক্লান্ত। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে আজো কত স্বার্থবিহীন ভালো মানুষ যে ছড়িয়ে আছে! আল্লাহ তাদেরকে হিফাযত করুন এবং উত্তম প্রতিদান দিন।

(২৪৭)
হারানোর আগে বোঝা যায় না কী ছিলো আগে...

(২৪৮)
দুনিয়া যে লক্ষ্য হিসেবে খুব দুর্বল এবং লজ্জাজনক তা এই ক্ষণস্থায়ী হওয়ার ব্যাপারটা থেকেই বোঝা যায়। আল্লাহর কাছে যখন ফিরে যাবো আমরা, তখন এই দুনিয়ার কাজের প্রতিফল হিসেবে পাবো উত্তম ও অনন্তকালের পুরষ্কার ও শাস্তি।ছোট ছোট কাজ তো দূরে থাক, বড় কাজ করেও দুনিয়াতে লোকের স্মৃতিতে থাকা যায় না, কিন্তু মহান আল্লাহর কাছে ছোট কাজ করেও প্রিয় হয়ে অনন্ত জগতের সফলদের দলে যাওয়া যায়।  আল্লাহ আমাদেরকে সত্যিকারের সফলতা অর্জনের তাওফিক দান করুন।

(২৪৯)
আমরা অনেকসময় ভুল করে নিজেদেরকে বেশ মূল্যবান মনে করতে থাকি। আসলে আমাদের কারো তেমন মূল্য নেই। আমরা কেউ চলে গেলে সেই অভাব পূরণ হয়েই যায়। চাকুরিস্থলে কেউ চলে গেলে তার প্রতিস্থাপন খুব দ্রুতই হয়ে যায়। পরিবারে কেউ চিরকালের জন্য চলে গেলেও সে অভাব পূরণ হয়ে যায়। কোন অভাবই অপূরণীয় নয়, আমরা কেউই খুব আহামরি কিছুই না। কত-শত ধ্যানী-জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, নেতা, বিপ্লবী, দার্শনিকেরা দুনিয়া থেকে চলে গেছেন আর তাদের স্রেফ স্মরণসভায় আলাপ করা হয় কিছুকাল, একসময় কেউ মনে রাখে না। খুব জোর অল্প কয়েক দশক বা একটি শতকের বেশি কেউ দুনিয়ায়

সচরাচর স্মৃতিতে থাকে না। আমরা সবাই বিস্মৃত হয়ে যাব।

৮ ফেব, ২০১৫

হয়ত পৃথিবীর শেষ সময়ের খুব কাছাকাছি আমরা

অবাক হয়ে নিজের বুক চেপে হৃদস্পন্দন নিলাম। এইতো, পৃথিবীর এই সময়টায় বাংলাদেশ নামের এক দেশে বেচে আছি। কতদিন আছি জানিনা কেননা একে তো মৃত্যু ব-দ্বীপ বলেন অনেকে। 'যে মারা যাচ্ছে সে জানেনা কেন মারা যাচ্ছে, যে মারলো সে জানেনা কেন হত্যা করছে' -- রাসূলুল্লাহর সাবধানবানী দেয়া এমন সময়টা কি চলে এলো নাকি? এ তো তাহলে ভয়ংকর সেই সময় যখন খুবই সতর্ক থাকতে হবে, এমন সময়ে অসচেতন হলেই অনেকের মৃত্যু সরাসরি জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

যেদিন দেশজুড়ে অগণিত খুন, আগুনে দহনে, বোমায়-গুলিতে মানুষ মরে লাশ হয়ে গেলো, সেদিনও চেলসি-ম্যানইউ, মুভি-সং, হ্যাং-আউট, ক্রাশের গল্প লিখে রাত কাটিয়েছে অনেক তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী। অনেকগুলো বছর ধরে একটি রাস্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে অন্যায়কে হজম, লালন করার উপযোগী করে। এখন সেই প্রজন্মে ছেয়ে আছে দেশ যারা নির্বিকার, ক্যারিয়ারভাবনায় মজে থাকা, সমাজ ও রাজনীতি অসচেতন, অমানবিকতায় ভরপুর একদল অদ্ভুত প্রাণী।

হয়ত পৃথিবীর শেষ সময়ের খুব কাছাকাছি আমরা। হয়ত আর কয়েকশত বছরের মাঝে কিংবা হয়ত আরো কম বা বেশি সময় পরে কিয়ামাতপূর্ব বড় ঘটনা ঘটবে। হয়ত দাজ্জালের ফিতনাতে অন্ধভাবে ডুবে যাওয়ার মানুষ তৈরি হচ্ছে এখন এসবের মধ্য দিয়েই। আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। অন্যায় যখন গৃহীত সবখানে, অনিয়ম যখন নিয়ম, অত্যাচারী যখন সম্মানিত --তখনও যেন আল্লাহ আমাদেরকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আল্লাহ যেন অন্যায়কারীদের হাত গুড়িয়ে দেন। আল্লাহ যেন আমাদের এমন ঈমান দান করেন যা আমাদের জান্নাতে নিয়ে যাবে। নিশ্চয়ই সমস্ত ক্ষমতার মালিক কেবলমাত্র আল্লাহ।

[০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫]

পৃথিবীর জীবনটা তো জান্নাত নয়

পৃথিবীর জীবনটা তো জান্নাত নয়। এটা পরিপূর্ণ শান্তির স্থান নয়। জান্নাতে পা দেয়ার আগে আমরা অ্যাবসোলুট শান্তি পাবো না। দুনিয়ার জীবনে আমাদের হৃদয় ভাঙবে, চুরমার হয়ে যাবে। আপনার ঈমান যতই বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহ ততই নিত্যনতুন কষ্ট এনে হাজির করবেন আপনার সামনে পরীক্ষা হিসেবে। আপনি তখন শান্তি খুঁজুন সলাতে, সাওম পালনে, দান-সাদাকার মাঝে।

মু'মিনের জীবন তো ঝড় তুফানের আঘাতে জর্জরিত থাকবেই

মু'মিনের জীবন তো ঝড় তুফানের আঘাতে জর্জরিত থাকবেই। একজন শাইখের আলোচনায় শুনেছিলাম যিনি কুর'আনুল কারীমের কিছু কথা নিজের ভাষায় বলছিলেন, মুমিনের জীবনের তুলনা সেই ঘাস-লতাপাতার মতন; প্রতিটি দমকা বাতাসের মতন বিপদাপদ যাদের নুইয়ে দেয়, কষ্টভরা হৃদয়ে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হওয়ায়। আর কাফিরদের জীবন সেই বৃক্ষের মতন যা ছোটখাটো ঝড়ো বাতাসে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু জোরে কোন ঝড় এলে তা শেকড়শুদ্ধ উপড়ে যায়।

৩ ফেব, ২০১৫

আমাদের পরবর্তী সময় তো পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে বেশি খারাপ

বিগত শতকের শেষভাগে মৃত্যুবরণ করা সিরিয়ার শাইখ আলী আল-তানতাওয়ির (রাহিমাহুল্লাহ) একটা কথা ক'দিন আগে ড. ইয়াসির ক্বাদি লিখেছিলেন যা আমার খুবই পছন্দ হয়েছিলো। শাইখ আলী যা বলেছিলেন তা অনেকটা এমন যে, জীবনের এমন কোন যুগ তিনি পাননি যে সময়ের ক্ষতি ও খারাপগুলো তাকে কষ্ট ও দুঃখে জর্জরিত করেনি। অথচ সেই সময়টা চলে যাবার পরে তিনি সেই 'কষ্টকর সময়টা' কতই না ভালো ছিলো তা মনে করে স্মৃতিচারণ করেছেন, বেদনার্ত হয়েছেন।

অল্প কিছু লোকের কূটবুদ্ধির কাছে গোটা সভ্যতা এখন বন্দী

আমার খুব আফসোস হয় যখন বুঝি আমরা সাধারণ মানুষদের জীবন কিছু মানুষের কাছে কীটপতঙ্গের চেয়েও বেশি 'সিলি'। অল্প কিছু মানুষ কেমন করে ট্র্যাপ করে, প্ল্যান করে লক্ষ-কোটি মানুষের জীবনকে ছকে বেঁধে নিজেরা ক্ষমতা ও সম্পদগুলো ভোগ করে। সাধারণ মানুষগুলোকে তাদের নিম্ন বুদ্ধিমত্তার কারণে এবং 'ভোগের আকাঙ্ক্ষার' কারণে সহজেই ধুলো দেয়া যায়।

কারণ? আমাদের সমাজে এখন চারপাশে প্রচুর 'ম্যাটেরিয়ালিস্টিক' লোকজন। ভালো চাকরি, ভালো বাড়ি, ভালো গাড়ি, ব্র্যান্ড মোবাইল, ব্র্যান্ড অমুক, ব্র্যান্ড তমুকের আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নে, দৌড়ে সবার জীবন প্রায় পুরোপুরি অকুপাইড। এসবের বাইরে কেউ চিন্তা করতে পারছে না। অনেক পিএইচডি আর ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার মানুষগুলোর চিন্তার দৌড় ঐ শেষমেষ ক্যারিয়ার-ফিউচারের বাইরে নয় দেখলে খুবই কষ্ট হয়।

বড় বড় কর্পোরেশন এবং তাদের অ্যাডভার্টাইজিং এত বেশি জীবনঘনিষ্ট হয়ে আছে যে আমাদের গভীরতাহীন-মূর্খ-অসহায় আমজনতার মুক্তির সম্ভাবনা খুবই কম দেখি। এই জীবনের সমাপ্তি যে যেকোন সময়েই হতে পারে এবং এর পরের অনন্তকালের জগতটা যে খুব সহজ কিছু নয়-- এমন বোধ মানুষের মাঝে জায়গা না পেলে ম্যাটেরিয়ালিজম নিয়ে ডুবে থেকেই একেকটা জীবনের সমাপ্তি হতেই থাকবে। কী যে অসহায় লাগে ভাবলে, কী কষ্ট যে লাগে ভাবলে!

# উস্তায নু'মান আলী খান ম্যাটেরিয়ালিজম নিয়ে কিছু কথা বলেছেন, অনেক দামী কথা: www.youtube.com/watch?v=VcXpFqjaU3Y

[৩০ জানুয়ারি, ২০১৫]