২০ মার্চ, ২০১৫

রুমী কবিতা (চতুর্থ কিস্তি)


* * *
আমি তোমাদের না আমার হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি, না আমার মন দিয়ে ভালোবাসি। হয়ত হৃদয়ের স্পন্দন থেমে যেতে পারে কিংবা মন ভুলে যেতে পারে। আমি তো তাদের ভালোবাসি আমার আত্মা দিয়ে যে থেমে যায় না, ভুলেও যায় না।~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তুমি তাদের এড়িয়ে যাও যারা তোমাকে ভীতসন্ত্রস্ত ও দুঃখিত করে , যারা তোমায় রোগ ও মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে ফেলবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
একটি সাদা গোলাপ প্রস্ফূটিত হয় নিভৃতে,
তোমার জিহবাকে হতে দাও সেই শুভ্র গোলাপ।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
যেখানে রয়েছে ধ্বংস, সেখানেই রয়েছে রত্নভান্ডারের সম্ভাবনা।~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
যখন তোমার আত্মা দিয়ে তুমি কোন কাজ করো, তখন তোমার ভেতরের এক প্রবহমান নদীকে তুমি অনুভব করো, যার নাম আনন্দ। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
সুখময় দিনগুলো তো তোমার কাছে হেঁটে আসবে না, তোমাকেই তাদের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ~ জালালুদ্দিন রুমী
* * * * * *
তুমি সারা পৃথিবীতে সম্পদ খুঁজে বেড়াচ্ছ, অথচ সত্যিকারের রত্নভান্ডার রয়েছে তোমার নিজের ভেতরেই। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * *
তোমার ভেতর এক সকাল অপেক্ষায় আছে উজ্জ্বল আলো হয়ে বিস্ফোরিত হবে বলে।~ জালালুদ্দিন রুমী

* * * * * *
কষ্টের উপশম কষ্টের মাঝেই আছে। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * *
সকল স্নিগ্ধ, সুন্দর আর মোহনীয় বস্তু তাদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে যারা দেখতে পায়। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তাকে ভালোবাসবে​ বলে বেছে নাও​ যে কখনো মরে যায়​ না। ~ জালালুদ্দিন রুমী

১৪ মার্চ, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ২৫


(২৭১)
​প্লিজ ভাইয়া, বই পড়ো। ইতিহাস পড়। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় কখন কোথায় কী হয়েছিলো।
প্লিজ আপু, বই পড়ো। জেনে নাও তোমাদের আগে যারা দুনিয়ায় ছিলো তাদের কেমন জীবন ছিলো, কী হয়েছিলো।

(২৭২)
বইহীন যেন না যায় কিশোর-তরুণদের জীবন। সে জীবন অন্তত মানুষের 'মানুষ' হবার জীবন নয়, সেটি একটি পশুর জীবন। ​

(২৭৩)
খুব সাহসী ছেলেটাও চায় তার বিপদে ও সমস্যার সময়ে তার ভালোবাসার মানুষটি তাকে বলবে, "চিন্তা করো না, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।"

(২৭৪)
বেশি সময় ধরে একটানা ফেসবুকে ব্রাউজিং করলে আপনার ভেতরে একটি শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। এমনকি অনেক মানুষের অনেক বৈচিত্র্যময় আপডেটগুলো এভাবে জানতে জানতে আপনার ভেতরে ডিপ্রেশন-বিষণ্ণতা, দুঃখবোধ, অপ্রাপ্তিবোধ, হিংসা, রাগ, ঘৃণা জন্ম নেবে এবং সেগুলোর চাষ হতে থাকবে আপনার মাঝে। আমাদের সমাজের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির ব্যাপারে দিন দিন ফেসবুক একটি বড় কারণ হিসেবে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

(২৭৫)
আল্লাহ ছাড়া আমাদেরকে কেউ সাহায্য করতে পারে না, একটুও না।
আল্লাহ ছাড়া আমাদেরকে কেউ শান্তি দিতে পারে না, একটুও না।

(২৭৬)
আমাদের মুখের ভাষা বলে দেয় আমাদের হৃদয়ের অবস্থা সম্পর্কে। নোংরা কথা বলতে হলে অনেক দীর্ঘ সময় নিয়ে নোংরা কথা ভাবতে হয়। কোন কিছু আপনাআপনি তৈরি হয়ে যায় না।

(২৭৭)
এই শহরে, এই জীবনে হাসিমুখ মানুষের সাথে সাক্ষাৎ কেন যে এত দুষ্প্রাপ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ইদানিং তা বুঝে পাইনা...

(২৭৮)
আমাদের সবচেয়ে সুন্দর ও আকাংক্ষিত স্বপ্নগুলো হওয়া উচিত জান্নাতকেন্দ্রিক।

(২৭৯)
আমাদের জীবনটা প্রিয় মানুষদেরকে ভালোবাসার জন্য, এই জীবনে আব্বা-আম্মার অপরিসীম ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করার জন্যেও খুব ছোট।

(২৮০)
অকাল মৃত্যু বলে কিছু নেই।আমাদের আল্লাহ আমাদের সঠিক সময়েই মৃত্যু দান করেন। তার সিদ্ধান্তে ভুল নেই, অ-কাল নেই, সবই স-কাল। কেউ মারা গেলে ঢঙের আতিশয্যে এসব হাবিজাবি না বলে আমাদের বলা উচিত "ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন"। আমরা সবাই আল্লাহর এবং তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।

(২৮১)
হালকা শীতের রাতে ঢাকার রাস্তায় চলার পথে বাসের সিটে বসে কানে হেডফোন লাগিয়ে নবীদের জীবনী শুনতে পারা একটা অসাধারণ নিয়ামাত আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার পক্ষ থেকে। আলহামদুলিল্লাহ।

(২৮২)
শেষমেষ অন্তত একটি আশা আমাদের রয়েই যায়...

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার সাথে সাক্ষাতের দিন সব ব্যথা আর অপ্রাপ্তি ভুলে যাবো, সেসব আর কোনদিন স্পর্শও করবে না ইনশা আল্লাহ। হে আল্লাহ! আমাদের ক্ষমা করেন, আপনার সাথে শান্তিময় সাক্ষাৎ কবুল করেন।

(২৮৩)
মুসলিমদের বীরত্ব ও সম্মানমাখা ইতিহাস পড়ে অনেকে আবেগী হয়ে পড়েন। অনেকে মনে করেন, আবেগী হয়ে কিছু হয়না। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা উচিত, জীবনের প্রতিটি কাজের পেছনে আমাদের আবেগ জড়িয়ে থাকে, তার অনুপ্রেরণা মিশে থাকে। তাই, অতীত ইতিহাস আপনাকে যখন বড় কিছু করতে নিজেকে প্রস্তুত হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করবে তখন বুঝবেন ইতিহাসকে আপনি সঠিক উপায়ে গ্রহণ করতে পারছেন।

ইতিহাসের বড় শিক্ষা হলো ইতিহাস থেকে মু'মিন ব্যতীত কেউ শিক্ষা নেয় না।

(২৮৪)
মানব জীবন খুব অদ্ভুত। আপনি কয়েক হাজার মানুষের জীবনকাহিনী পড়লে বা শুনলেও দেখবেন আপনার জীবনটা একদম আলাদা। সবার জীবনই অন্যদের চেয়ে একদম আলাদা। যদিও সবার কষ্ট ও সুখগুলোরঅনেক মিল, তবু যেন পুরোটাই আলাদা...

একুশে ফেব্রুয়ারি

​ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা সবাইই প্রকাশ করেছি, করছি। কিন্তু একটা বেদীতে, স্থাপত্যের গোড়ায় ফুল দিয়ে এসে আমরা কী বুঝাতে চাই? এই নামকাওয়াস্তে সম্মান দিয়ে ভাষার জন্য জীবন দেয়া মানুষরা আদৌ কোন উপকার পাবেন, নাকি আমরা পাবো? মুসলিমদের বিশ্বাসের সাথে এই বিষয় সরাসরি সাংঘর্ষিক। আমরা আল্লাহর কাছেই চাই, পাথরের-প্লাস্টিকের কাছে 'সম্মান' একসময় সেটার ইবাদতে পরিণত হয়। শয়তান এভাবে অজস্র জাতিকে পথভ্রষ্ট করেছে, আল্লাহর ইবাদত ঠেলে এভাবেই মূর্তিপূজার আবির্ভাব ঘটে। আখিরাতে ক্ষতি না চাইলে সাবধানতা জরুরি।

ঘরে ঘরে ডিশ সংযোগ নিয়ে শিশুদের সবার মাঝে কেমন ভাষার চর্চা হয় তা আশা করি সবাই জানে। প্রতিদিন অজস্র ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে। বাংলা ভাষাভাষীদের সংখ্যা বেশি হলেও হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসন যেভাবে চলছে, আগামী প্রজন্ম বাংলাকে কেমন করে লালন করবে তা আল্লাহ ভালো জানেন। কয়েক প্রজন্ম পরে কী হবে তা নিয়ে আশাবাদী ভাব মারার আগে ঘরে ঘরে একটু খোঁজ নিলেই একজন টের পাবেন।

অনলাইনে বাংলা ভাষায় কিছু সার্চ দিতে গেলে গুগলের 'সাজেশন' এবং 'মোস্ট সার্চড কীওয়ার্ড' দেখে টের পাওয়া যায় এই ভাষার মানুষগুলো কতটা নোংরামি লালন করে।

ভাষার বৈচিত্র্য আল্লাহর সৃষ্টির নিদর্শনগুলোর একটি। একজন বোবা জানে কথা বলতে পারা আল্লাহর কত বড় নি'আমত। আশা করি আমরা এমন দিনকেও 'ভ্যালেন্টাইন ডে' না বানিয়ে বাংলা ভাষাকে আরেকটু শিখবো, বাংলাকেই চালু রাখবো নিজেদের আলাপে--তাতে হিন্দি আংরেজি ঢুকিয়ে 'ইশ্মার্ট' হবার চেষ্টা করবো না। আল্লাহ বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে রহম করুন।

[২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫]

মনের জানালা মাঝে # ২৪


​(২৬২)
​কুরআন এই কারণে নাযিল করা হয়নি যে কেউ মরে গেলে 'হুজুর' ডেকে 'খতম' করিয়ে মাইয়্যেতকে কবর দেয়া হবে। জীবনে বেঁচে থাকতে যদি কুরআন কারো কাজে না আসে, মৃত্যূতে তার পাঠে কিছুমাত্র লাভ হবে না। কুরআন তো এসেছিলো জীবিত মানুষদের এমন উপকারার্থে যেন এর নির্দেশনায় জীবনকে বদলে ক্রমাগত উন্নতি সাধন করবে মানুষ, বিশ্বমানবতা মুক্তি পাবে দুনিয়ার দাসত্ব থেকে। কুরআন তো নিছক উচ্চারণ করা কিছু শব্দমালা নয়, বরং জীবনের প্রতিটি মূহুর্তকে অর্থপূর্ণ করে দেয়ার এক মহিমান্বিত গ্রন্থ, রয়েছে প্রতিটি মূহুর্ত সঠিকভাবে চলার নির্দেশিকা। কুরআন আমাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের প্রতি ভালোবাসামাখা কিছু উপদেশবাণী, সাবধানবাণী, সুখবর।

(২৬৩)
ভালোবাসা পাওয়া আল্লাহর একটি নিয়ামাত। ভালোবাসার স্পর্শ পেলে তার শুকরিয়া করা উচিত আমাদের।

(২৬৪)
ফেসবুকে বাহারি প্রোফাইল পিকচার দেখতে পাই। কেউ লাগিয়ে রেখেছেন, i hate my life, i want to die.... অদ্ভুত ব্যাপারটা! মরে যেতে ইচ্ছা করলে স্রেফ একটু ঢাকা মেডিকেলের আউটডোর থেকে ঘুরে আসুন.... দেখবেন কতগুলো মানুষ বেচে থাকতে মরিয়া হয়ে আছেন... হয়ত সে সুযোগ করতে পারবেন না তারা। আল্লাহ যে জীবনটা দিয়েছেন তার শুকরিয়া করা উচিত সবসময়।

মরণ এলে চাইলেও কেউ ঠেকাতে পারে না।

(২৬৫)
​যে কথাগুলো হৃদয় থেকে বের হয়, সেগুলো সচরাচর অন্যদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়...

(২৬৬)
জীবিত অবস্থায় যদি কুরআন থেকে নিজেকে উপকৃত করতে না পারি। মরে গেলে শত ফাতেহা পাঠ, কুরানখানি আর খতম-কাংগালি ভোজে আমার কোন উপকারই হবে না। আমাদের কুরআন স্পর্শ করা হয়না মাসের পর মাস, জীবনে নেই তার কোন প্রয়োগ, অথচ আমরা মনে করি মৃত্যুর পর তা আমাদের সুরক্ষা দিবে!

সময় ফুরিয়ে যাবার আগেই যেন আল্লাহ আমাদের বোধোদয় ঘটান...

(২৬৭)

এমন অনেক অনেক বিষয় পড়াশোনার সময়ে, জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে প্রতিদিন সামনে আসে, যেগুলো দু'চার লাইন লেখার বদৌলতে অন্তত কিছু মানুষকে ক্ষতি থেকে বাঁচাতে লিখতে ইচ্ছে করে। সময় হয়না, শেষ পর্যন্ত পারিনা। মাঝে মাঝে মনে হয়, এগুলোতে হয়ত কারো উপকার হয় না। এর চেয়ে উত্তম উপায় আর কী হতে পারে সেটাও ভাবছি। চারপাশে এত এত খারাপ কাজ, আমার এটুকু উদ্যোগ, তাও আবার ফেসবুক পেইজে কিছু লেখা-- সেটা কী কোন অবদান রাখতে পারবে আদৌ?

(২৬৮)
উপদেশ আর কথায় অনেক সময় কাজ হয় না, মানুষ বুঝতে চায় না। সবচেয়ে বড় শিক্ষা সম্ভবত অভিজ্ঞতা। যখন কিছুতেই কাজ হয় না, তখন অনেক সময় চুপ করে দেখে যেতে হয়, শিক্ষা পেয়ে নিজ জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান ও বোধ মানুষটির কাজে দেয়।

(২৬৯)
জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোর তিক্ততার মাঝে আল্লাহ অনেক সুপ্ত রাহমাত ও জ্ঞান লুকিয়ে রেখেছেন। বুদ্ধিমান মাত্রই তা তীব্রভাবে বুঝতে পারে!

(২৭০)
দাজ্জাল আসবে... নিশ্চিত আসবে।কোন সন্দেহ নেই।

সন্দেহ নেই দাজ্জাল এই পৃথিবীর বুকের সবচেয়ে বড় ভয়ংকর ফিতনাহ, পরীক্ষা, বিপদ। আমাদের ছোটবেলায় আমরা ড্রাকুলা, ভুত-পেত, ডাইনি, ঠাকুমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড় পড়ে বড় হলেও আমাদের আব্বা-আম্মারা এ সম্পর্কে কদাচিৎ শিখেছেন বা শিখিয়েছিলেন। সুপারম্যান, স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান ইত্যাদি জানলেও জানিনা রিয়েল হিরো ইমাম মাহদী সম্পর্কে। সাইয়্যিদিনা ঈসা (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কেও জানিনা যে তিনি আমাদের কেমন করে নেতৃত্ব দিবেন।

ড বিলাল ফিলিপস আলোচনা করেছেন দাজ্জালের সত্যিকারের ঘটনা নিয়ে। আলোচনাটি দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=_I5ef1smVZk

বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা (পর্ব: প্রারম্ভিকা)


​​
​​আমাদের বর্তমান নাগরিক জীবনে অনেক বেশি 'ম্যাটেরিয়ালিজম' এবং অনেক বেশি 'স্ট্রেস' জড়িয়ে গেছে। সবার অনেক বেশি 'হাই হোপ/অ্যাম্বিশান' এবং চারপাশের সাথে নিজের অনেক বেশি 'অমিল'। নিজেকে নিয়ে/নিজেদেরকে নিয়ে 'এক্সপেকটেশন' এবং 'রিয়ালিটি' দুটোই ভিন্ন হয়ে যায় প্রায় সবার জীবনেই। আর এসব বিষয় আমাদের মুসলিম প্রজন্মকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে কুরে কুরে খাচ্ছে। আমাদের চারপাশে বিভিন্ন কারণে নানান রকম ডিপ্রেসড মানুষ। 'ডিপ্রেশন' জিনিসটা আমাদের মুসলিম প্রজন্মের প্রোডাক্টিভিটিকে ভয়ংকরভাবে নষ্ট করছে।