১৯ মে, ২০১৫

অদ্ভুত সুন্দর অনুপ্রেরণার গল্প : ডুবন্ত জাহাজ ও বেঁচে যাওয়া নাবিক


​একবার একটি যাত্রীবাহী জাহাজ ঝড়ের কবলে পড়ে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। ঝড়ের তোড়ে সবাই হারিয়ে গেলেও মাত্র একজন লোক বেঁচে গেলো। জ্ঞান ফিরে পাবার পর লোকটি নিজেকে একটি নির্জন দ্বীপের আবিস্কার করলো। প্রতিটা মূহুর্ত সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলো যেন কেউ এসে তাকে উদ্ধার করে। তার প্রার্থনা এক সময় হতাশায় পরিণত হলো; কেউ এলো না তাকে উদ্ধার করতে। সে উদ্ধার পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়ে শেষতক নিজেকে দ্বীপটির সাথে মানিয়ে নিলো।

হাফিজের কবিতা [২]



​তোমার সমস্ত কষ্ট, দুশ্চিন্তা, দুঃখগুলো কোন একদিন এসে দুঃখপ্রকাশ করবে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করবে যে তারা সবাই নিতান্ত মিথ্যা ছিলো। ~হাফিজ

* * *
একটি দিনের জন্য, কেবল একটি দিনের জন্য,
এমন বিষয়ে কথা বলো যা কাউকে বিরক্ত করবে না
এবং যা শান্তির স্পর্শ বয়ে আনবে
তোমার সুন্দর চোখগুলোয়।
~ হাফিজ, পারস্যের কিংবদন্তী কবি

* * *
আমরা যা বলি তা হয়ে যায় আমরা যে ঘরটিতে বাস করছি সেই নীড়।~ হাফিজ

* * *
সচেতন হৃদয় তো আলো ঢেলে দেয়া আকাশটার মতন।~ হাফিজ

* * *
এই অজস্র শব্দমালার মূলে কী?
একটাই জিনিস: ভালোবাসা।
কিন্তু এই গভীর ও মিষ্টি ভালোবাসার উচিত তার নিজেকে সুঘ্রাণ, সুললিত শব্দ ও অনন্য রঙ দিয়ে প্রকাশ ঘটানো যা আগে কোনদিন ছিলো না।
~ হাফিজ

* * *
দৌড়ে পালাও বন্ধু
এমন সব কিছু থেকে
যারা  তোমার মূল্যবান সুপ্ত ডানাকে
হয়ত আরো শক্তিশালী করে না।
~ হাফিজ

* * *
তোমার বেঁচে থাকাকে আনন্দময় করে এমন যেকোন কিছুর কাছাকাছি থাকো। ~ হাফিজ

* * *
আমি শিখেছি প্রতিটি হৃদয় তো সেটাই পাবে
যা পাওয়ার জন্য সে সবচেয়ে বেশি প্রার্থনা করে।
~ হাফিজ

* * *
চলে এসো প্রিয়,
সেই নির্মম পৃথিবী থেকে
যা তোমার স্নিগ্ধ মুখে
ধূলিকণার বৃষ্টি ঝরিয়েছে।
~ হাফিজ

* * *
প্রতিটি প্রাণ
আমাদের কাছ থেকে উপহার পাওয়া উচিত
তার সাহসিকতার জন্য!
~ হাফিজ

একগুচ্ছ অনুবাদ [৪]



 লাও যু/ দালাইলামা

* * * * * * * *
তুমি যদি বিষণ্ণ হও, তুমি আসলে অতীত নিয়ে পড়ে আছো।
তুমি যদি উদ্বিগ্ন হও, তুমি ভবিষ্যত নিয়ে বেঁচে আছো।
তুমি যদি সুখী হও, তুমি বর্তমানের মাঝে আছো।
~ লাও যু, প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক


* * * * * * * *
কারো গভীর ভালোবাসা পাওয়া তোমাকে দিবে শক্তি, অন্যদিকে কারো প্রতি গভীর ভালোবাসা তোমাকে দিবে সাহস।
~লাও যু [প্রাচীন চৈনিক দার্শনিক]

* * * * * * * *
সুখের একটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো রাগ ও অন্তরের প্রশান্তি কখনো একসাথে থাকতে পারে না। ~দালাইলামা

* * * * * * * *
শিশুদেরকে স্কুল লেভেল থেকেই শিক্ষা দেয়া উচিত যে, সমস্যা সমাধান করার জন্য জোরজবরদস্তি ও আক্রমণ করা একটি অর্থহীন নিস্ফল পদক্ষেপ। ~দালাইলামা


* * * * * * * *
সহিষ্ণুতার অনুশীলন করা শিখতে একজন ব্যক্তির শত্রুই তার সবচেয়ে বড় শিক্ষক। ~দালাইলামা

* * * * * * * *
তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে উড়ে যাবার ডানা দাও, ফিরে আসার শেকড় দাও, থেকে যাবার কারণ দাও। ~দালাইলামা

* * * * * * * *আপনি যখন কথা বলেন, তখন আপনি ইতোমধ্যে যা জানেন সেই কথাটিরই পুনরাবৃত্তি করেন। কিন্তু আপনি যদি শোনেন, তাহলে আপনি হয়ত নতুন কিছু শিখতে পারবেন। ~দালাইলামা

১৮ মে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ২৮


(৩০০)
দিনশেষে নিজেকে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে--

আজকে কি কোন কিছু দান করেছি কাউকে?
প্রিয় কিছু কাউকে ভালোবেসে দিয়েছি?
আল্লাহর জন্য ভালোবেসে?
আজকে কি আমি কারো হাসিমুখ হবার কারণ হতে পেরেছি? একজনেরও?

(৩০১)
সলাতুল ফযরের সময়ে দিগন্তে আলো ফোটার আগেই সমস্ত পাখিরা উঠে পড়ে, আল্লাহর কৃতজ্ঞতায় নিজেদের নিয়োজিত করে, তাসবিহ পাঠ করে সমস্ত প্রাণীকূল। তাদের কিচিরমিচির শব্দে প্রকৃতি একটা অদ্ভুত মাত্রা পায়।

হতভাগা আমরা সমস্ত প্রাণীজগতের মাঝে সবচেয়ে বেশি নি'আমাত ভোগ করি, কুর'আন নাযিল হয়েছে আমাদেরই উপরে, যে কুর'আন পাহাড়ের উপরে নাযিল হলে তা ভয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যেত! কত বড় কথা এটা, আমাদের উপলব্ধিতেও আসেনা। তবু আমরা সলাত কায়েম না করে ঘুমিয়ে রই। পাখিরা অলস নয়, তারা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পথে বেরিয়ে পড়ে, শূণ্য হাতে সকালে বের হয়ে রাতে ভরা ভরাপেটে বাড়ি ফেরে। আল্লাহ আমাদের অলসতা থেকে মুক্তি দিন, কৃতজ্ঞ বান্দা হবার, সুন্দর উপায়ে তার যিকির করার এবং যারা সবসময় সলাতে মুকিম থাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত হবার তাওফীক দান করুন।


(৩০২)
আল্লাহ যে আমাকে কত অজস্র নিয়ামাতের মধ্যে রেখেছিলেন তা আমি তখন পর্যন্ত টের পাইনি যখন সেগুলো থেকে মাত্র অল্প কয়েকটি নিয়ামাত আল্লাহ তুলে নিলেন।

(৩০৩)
সফল মানুষদের জীবন জানতে আমার অনেক পছন্দ। সেখানে তাদের দৃষ্টিভংগি এবং কর্মপদ্ধতি জানা যায় যা জীবনে খুব উপকারে আসে। জীবনী যদি হয় সাহাবীদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) তাহলে সেটা অন্যরকম জীবনীশক্তি দান করে হৃদয় ও মনে।

অনেকদিন পর আসহাবে রাসূলের জীবনকথা পড়তে গিয়ে মনে হলো, তাদের আখলাক ছিলো অনন্য। তারা অনর্থক কথা এড়িয়ে চলতেন, যতটুকু না হলেই না, তার বেশি সম্পদ রাখতেন না, লালায়িত হতেন না। এবং তারা খুবই দানশীল ছিলেন। গরীবের কাছে গিয়ে সাধ্যমতন বেশি বেশি দান করা তারা দায়িত্ব মনে করতেন, দান করে আত্মতৃপ্তি নিতে যেতেন না।

আল্লাহ আমাদের উত্তম আখলাক দান করুন এবং তার প্রিয়ভাজন হবার তাওফীক দিন।

(৩০৪)
ইসলামিক মানুষগুলার কষ্ট অন্যমাত্রার। সে চাইলেও তার প্রতি অন্যদের করা অন্যায়ের জবাব ইচ্ছামতন দিতে পারে না। অন্যায়ের জবাবে তাকে ন্যায় করতে হয়। সবর করতে হয়। হয়ত কোনদিন নির্বোধদের অন্যায়ের জবাব দেয়াও হয়না। অভদ্র লোকদের উপরে অনৈসলামিক উপায়ে শোধ নেয়াও যায়না।

আল্লাহ ঈমানদারদের অবশ্যই পুরষ্কৃত করবেন... এবং তা হবে উনার ইচ্ছামতন সময়ে।

(৩০৫)
আমরা মুসলিমরা 'হ্যাপি এন্ডিং'-তে বিশ্বাস করি। এখনকার ওয়েস্টার্ন লিটারেচারের মূল রচনারসমূহের বেশিরভাগই ট্রাজেডি। এসবের ফিনিশিংগুলো দুঃখের, কষ্টের, হতাশার ও অপ্রাপ্তিতে ভরপুর। কিন্তু আমাদের কুর'আনে যেসব গল্প উদ্ধৃত হয়েছে সবই সুন্দর গল্প যেগুলোতে ভালো মানুষদের বিজয়ের কথা উল্লেখ করা আছে। এই গল্পগুলো আমাদের আশাবাদী হতে শেখায়। আর আল্লাহ এগুলোর মাঝেই রেখেছেন সব সেরা গল্প।

আমাদের এই দুনিয়া তো প্রকৃত বাসস্থান নয়। আমাদের আসল ঠিকানা জান্নাতে ছিলো। আমরা তো এই নীচ, বাজে, ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে নয় বরং অনেক অনেক উঁচুতে, সেই জান্নাতের দিকে নজর দিয়ে রাখি। আমাদের দৃষ্টি এখান থেকে কেবল উপরের দিকেই যায়। ইনশাআল্লাহ সেখানেই ফেরার মাধ্যমে আমাদের "হ্যাপি এন্ডিং" হবে। কোন দুঃখ-কষ্ট তখন স্পর্শ করবে না। কেবল শান্তি আর শান্তি বিরাজ করবে....

(৩০৬)
রেডিওমুন্না ডট কম ফেসবুক পেইজ : বাংগালির বুদ্ধিবৃত্তিক ও আত্মিক দৈন্যদশার লিটমাস টেস্ট।

(৩০৭)
আশেপাশের মানুষগুলোকে আজকাল কেমন যেন বিপর্যস্ত, অসুস্থ লাগে। হাসপাতালে রোগী দেখেও তাদের চেহারায় তেমন বিকার হয় না, এমনকি মৃত মানুষের লাশ, খাটিয়া, কবর দেখলেও তেমন ভ্রূক্ষেপ হয়না। ক্বালবগুলো মলিন হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। মুসলিমরা তো বটেই, গোটা পৃথিবীর মানুষই এখন তাদের ভুগছে আধ্যাত্মিকতা অভাবে, ডুবে গেছে ম্যাটেরিয়ালিজমে। ভোগবাদে ডুবে আত্মা যাচ্ছে মরে।

এর সম্ভবত একটি কারণ হলো, আমরা খুব বেশি যান্ত্রিকতায় ডুবে আছি, প্রকৃতি থেকে দূরে চলে গেছি। আল্লাহ কুরআনে আমাদেরকে যে উদাহরণগুলো দিয়েছেন সেগুলো খুবই প্রাকৃতিক।  মশা-মাছি, চাঁদ-সূর্য, সমুদ্র, পাথর, মাকড়শা, রাত-দিন, আসমান, জমিন এরকম অনেক কিছুর মাঝে আল্লাহ আমাদের চিন্তার খোরাক দিয়েছেন। প্রকৃতির সান্নিধ্যে গেলে আমার হৃদয় অনুভব করতে শেখে। ভোরের সুন্দর হাওয়া ও স্নিগ্ধ আলো হৃদয়কে প্রশান্ত করে। এ থেকে তো এখনকার নগরবাসী বঞ্চিত থাকে ঘুমিয়ে থেকে এবং ঘরের ভেতর ঢুকে থেকে।

আমাদের দরকার যান্ত্রিকতার হাত থেকে বাঁচতে কিছুদিন পরপর হলেও যতটা সম্ভব সুন্দর আল্লাহর সৃষ্টি এই প্রকৃতির কাছাকাছি যাওয়া। আকাশ-নদী-সমুদ্র এবং পাখপাখালির সান্নিধ্য যতটা পাওয়া যাবে, হৃদয়ে উপলব্ধি জেগে উঠবে যে আমরা কত তুচ্ছ, আল্লাহর সৃষ্টিজগত কতটা বিশাল এবং আল্লাহ কত সুন্দর করে সমস্ত সৃষ্টিজগতের প্রতিপালন করেন... সুবহানাল্লাহ!

(৩০৮)
একটা লম্বা করে শ্বাস নিন। আপনার জীবনের আটপৌরে চিন্তাগুলোর বাক্স থেকে বেরিয়ে এসে দেখুন আল্লাহ পৃথিবীতে কত সব সুন্দর সৃষ্টি ও রহস্য ছড়িয়ে রেখেছেন। এই নিদর্শনগুলো কিন্তু আপনার জন্য! নিজেকে মুগ্ধ করে সুশোভিত ভালোলাগার পরশ বুলিয়ে দিন হৃদয়টাতে। কত যে বিশাল এই জগত, কত যে সুন্দর!

(৩০৯)
'উলিল আযম' বলা হয় ৫ জন নাবীকে। এর একজন হলেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাম, 'খলীলুল্লাহ' বা আল্লাহর বন্ধু নামে যিনি আমাদের হৃদয়ের স্বীকৃত। আমাদের জন্য তিনি রেখে গিয়েছেন তাকওয়ার অনুপম দৃষ্টান্ত।

# ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দু'আ এবং মক্কা নগরীর প্রতি ভালোবাসা। ৫ মিনিটের ভিডিও!
https://www.youtube.com/watch?v=Da3oU6mzVEk

# ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দু'আ.... কী সুক্ষ্ম সুন্দর!
https://www.youtube.com/watch?v=ydKLLEaCoOo

মনের জানালা মাঝে # ২৭


(২৯৩)
আল-জাজিরার এই ডকুমেন্টারি ভিডিওটাতে ইসরাইলের এজেন্টদের নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে ছদ্মবেশী ইহুদি গোয়েন্দাদের কিছু অপকর্ম আলোকপাত করা হয়েছে যার মধ্যে ফিলিস্তিনি ফাতাহ পার্টির ফাউণ্ডার মেম্বার খলিল আল-ওয়াজির (আবু জিহাদ)-কে ১৯৮০ সালে হত্যা করা হয়; ইয়াহিয়া আয়াশ (দি ইঞ্জিনিয়ার) যাকে  ১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে ইহুদি দালাল কামাল হাম্মাদের মাধ্যমে নিহত করা হয়। এছাড়াও ২০০৪ সালে ফিলিস্তিনি ইমাম এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শাইখ আহমেদ ইয়াসিনকে শহীদ করা হয়।

আল-জাযিরার ডকুমেন্টারি [এটি ইতোমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে দেখলাম! (০৯/০৫/১৫)]: http://www.aljazeera.com/programmes/aljazeeraworld/2014/11/agents-israel-2014111114515339123.html

 এছাড়া, আরো দেখতে পারেন খালেদ মিশালকে হত্যার চেষ্টা : http://www.aljazeera.com/programmes/aljazeeraworld/2013/01/201312210472621589.htm
    মোসাদের গোপন যুদ্ধের উপরে ডকুমেন্টারি: http://www.aljazeera.com/focus/2010/02/201021818562529723.html

(২৯৪)
আমাদের দেখার জগত, চিন্তার জগত, অনুভূতির জগত এবং কল্পনার জগত পুরাই আলাদা। প্রতিটিই ভিন্ন এবং প্রতিটিই অসম্পূর্ণ...

(২৯৫)
সমালোচনা মানে গালি নয়, কাউকে ছোট করা নয়। সমালোচনা হলো ভুল দেখিয়ে দেয়া। ভুল হলে সেটা শুধরে নেয়াও উত্তম আচরণ। সমালোচনা করা যাবে না, ভুল দেখানো যাবে না-- এগুলো দাসসুলভ মানসিকতা, মুসলিম হিসেবে আমাদের এরকম মানসিকতা থাকা উচিত নয়। অন্যদিকে, সমালোচনার ভাষায় বেয়াদবি ও অন্যায় ভাষা ঘুরে ফিরে আমাদেরকেই আখিরাতে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করবে। সচেতন থাকা জরুরি। মুখ ও হাত যেন আমাদের জাহান্নামের কারণ না হয়। আল্লাহ আমাদের ভুলগুলোকে মাফ করে দিন এবং সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করুন।

(২৯৬)
একটা বাসে বসে আছি, পাশে একটা ছোট ছেলে বসে আছে। ছেলেটার হাতে জেএসসি প্রবেশ পত্র। কিছু কথা বলার আগ্রহে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, "বড় হয়ে কী হতে চাও?"... ছেলেটা নিরুত্তাপ উত্তর দিলো, "কিছু হইতে চাই না।"... আমি অবাক হয়ে বললাম, "কেন?"... সে উত্তর দিলো, "কষ্ট করতে ভালো লাগেনা।"... আরেকটু কথা বলতে জানলাম বাংলা ২য় পত্র, সামাজিক বিজ্ঞান তার কাছে খুবই অপছন্দকর।

আমি আমার সমস্ত ভালোবাসা ও বুদ্ধি ব্যবহার করে তার মাঝে কিছু আশা ও স্বপ্ন জাগানোর চেষ্টা করলাম। আমাদের এই জঘন্য শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে সবুজ মনের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আশা-স্বপ্ন টিকিয়ে রাখা যে কত কঠিন তা টের পেলাম আরেকবার। সেদিনই বুঝলাম, সুন্দর মনের একটা প্রজন্ম ছাড়া সুন্দর সমাজ গঠন সম্ভব হয় না তা যে কতটা বাস্তব কথা... [নভেম্বর, ২০১৪]

​(২৯৭)
অনেকদিন পর একটি অনন্যসাধারণ অনুভূতি পেলাম। আইসিডিতে শাইখ সাইফুল্লাহ হাফিযাহুল্লাহর হালাকায় অংশ নিলাম আলহামদুলিল্লাহ। উলামাগণ আমাদের জন্য চাদের মতন যারা জ্ঞানের সূর্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জ্ঞানে আলোকিত হয়ে আমাদের মাঝে আলোকময় জ্ঞানকে প্রতিফলিত করেন।

আজকে ইখতিলাফ নিয়ে শিখলাম। ইমামগণ (রাহিমাহুমুল্লাহ) যুগে যুগে কোন মূলনীতির উপরে কিয়াস করেছেন, কেমন দলীল থাকলে আর ইখতিলাফের সুযোগ থাকে না সেটা বুঝেছি ইনশাআল্লাহ।আল্লাহ যেন শুদ্ধ অন্তঃকরণ এবং পরিশুদ্ধ জ্ঞানের উলামাদের সংখ্যা আমাদের মাঝে বৃদ্ধি করে দেন, তাদের জ্ঞানে বারাকাহ দেন এবং আমাদের যেন তা থেকে উপকৃত হয়ে জান্নাতের পথে এগিয়ে যাবার তাওফীক দেন।

জ্ঞান আসলেই এমন জিনিস যা কিছু শব্দ ও কথাকে কেবল আত্মস্থ করার বিষয় নয়, বরং ইলম আমাদের মনোজগত ও দৃষ্টিভংগি বদলে দেয়, হৃদয় উন্মুক্ত করে দেয়। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করুন।

//সুব'হানাকা লা 'ইলমা লানা, ইল্লা মা 'আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল 'আলীমুল 'হাকীম।//

[০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫]

(২৯৮)
অনেক অসৎ মানুষ আছে যারা সৎ লোকদের সাথে সততার ভেক ধরে তাদের সাথে প্রতারণা করে নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করে এবং সৎ ব্যক্তিটির ক্ষতি করে। সে ঠিকই জানে তার এসবের প্রত্যুত্তরে ক্ষতি করবে না ঐ সৎ ব্যক্তিটি। সততাকে আঁকড়ে থাকা লোকেরা কম বুদ্ধির সরল মানুষ হলে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে। সেই সাথে এমন সময় কিছু লোক জুটে যায় যারা সততাকে দুর্বলতা হিসেবে উল্লেখ করবে।

কিন্তু মনে রাখা উচিত, প্রতিদানের মালিক আল্লাহ। সরল বিশ্বাসে ন্যায় কাজ করে তাতে যতই ক্ষতি হোক না কেন, তার ফলাফল কল্যাণ ছাড়া কিছুই নয়। স্বার্থান্বেষী ধান্দাবাজ লোকেরা খুব অল্প কিছুদিন লাভবান হয়, এরপর বেইজ্জতি ও ঘৃণা তাদের সংগী হয়। আল্লাহ আদেশ করেছেন সত্য বলতে, ন্যায়বিচার করতে, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে....

(২৯৯)
সমস্ত অভ্যাসই পরিশ্রমলব্ধ। গড গিফটেড টাইপ কথা বলে আমরা এড়িয়ে যাই অনেক কিছু-- নিজেদের অলসতা, উদ্দীপনার অভাব, কাজের প্রতি অনীহার অজুহাত দিই। কিন্তু আসলে, যাদের গিফটেড বলে মনে হয়, হতেই পারে তারা ঐ গুণটা গিফট পেয়েছেন, কিন্তু তারা কিন্তু সেটা টিকিয়ে রাখতে প্রাণান্ত কষ্ট করেন। যারা নতুন করে অভ্যাস করতে / গুণ অর্জন করতে শ্রম দেয়, সাধনা করে-- তারা একটা সময়ে 'অলস গিফটেড' দেরকে ছাড়িয়ে যায়। আমার একটাই উপলব্ধি এই বিষয়ে, নিজেকে অমুক গুণ অর্জনকারী হিসেবে স্বপ্ন দেখে ক্রমাগত সাধনা করলে আল্লাহ কল্পনাতীত সাফল্য দেবেন। চেষ্টার বিকল্প নেই... চেষ্টা করলে আল্লাহ অবশ্যই দেবেন।

শিক্ষার সাথে উত্তম আচরণের কোন সম্পর্ক আছে কি?


শিক্ষা আমাদের আচরণকে পরিশীলিত করে। এই কথা কতবারই তো শুনেছি। তোহ, আসলেই কি শিক্ষিতজনেরা পরিশীলিত ও সুন্দর আচরণের হয়ে থাকেন? কিংবা, যারা হন, তারা কেন হন? চিন্তা করে দেখলে বোঝা যায়, শিক্ষা মানেই পথ পাড়ি দেয়া। সে পথে আমাদের ইচ্ছেমতন না, একটা নিয়মতান্ত্রিক ছাঁচে পথ চলতে হয়। সেখানে একটা শৃংখলার মাঝে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হতে হয়, সময় অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। এসবের মাঝে প্রকৃত শিক্ষা হয় শৃংখলার। কোথায় কেমন করে চলতে হয়, সেটার একটা অনুশীলন হয়। একটা বিষয়কে গভীরভাবে বিভিন্নভাবে চিন্তা করার দলবদ্ধ আয়োজন সেখানে থাকে। দলগতভাবে সমস্যা নিয়ে সামাজিকভাবে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে চিন্তাভাবনা করা হয় শিক্ষার্জনের সময়ে। সবার ব্যক্তিগত স্বপ্ন, দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তাভাবনার একটা প্রস্ফূটন হয় শিক্ষার মাধ্যমে। সবচেয়ে বড় কথা, নানান বয়সের, নানান পেশার, নানান পরিবারের, নানান মতবাদের মানুষদের সাথে নারী-পুরুষ ব্যতিরেকে মিথস্ক্রিয়া ও আচার-আচরণের একটি অনুশীলন হয় শিক্ষার্জনের সময়ে। এই সামাজিকতার শিক্ষা অনেক বড় শিক্ষা।

১০টি চীনা প্রবাদ যা অনেক কিছুকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিয়ে দেবে


নদীর স্রোতধারার গভীরতা মাপতে যেয়ে কখনো দু'টি পা-ই ডুবিয়ো না।

যে ফুল উপহার দেয়, তার হাতে কিছুটা সুগন্ধ লেগে থাকে।

পাখি এই কারণে গান গায় না যে সে কোন প্রশ্নের উত্তর জানে। পাখি গান গায় কারণ তার একটি গান আছে।

ধীরগতিতে বড় হবার কারণে ভয় পেয়ো না, ভয় করো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকাকে।

১২ মে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ২৬


(২৮৫)
"এখানে বলা হয়েছে আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কের গল্প যেখানে প্রায় ৭০ বছর পর নেকড়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ১৯৯৫ সালে । সেখানে দীর্ঘদিন নেকড়ে না থাকার ফলে হরিণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। অল্প কিছু নেকড়ে যে প্রাণীটিকে আপাতদৃষ্টিতে একটি নিরীহ প্রাণী খেকো হিংস্র প্রাণী মনে হয় সেটি একটি ইকো সিস্টেমকে পুনরায় ব্যালেন্সড অবস্থানে নিয়ে আসে। এই ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।" [জাহিদ রাজন ভাইয়ের পোস্ট থেকে নেয়া বর্ণনা]

# ভিডিও:: ​https://www.youtube.com/watch?v=ysa5OBhXz-Q​

(২৮৬)
এইতো চুপচাপ, ঝুপঝাপ কতজন চলে যায়, মরে যায়
প্রতিটি মৃত্যুর মাঝে শেখার মতন বহু কিছু রয়ে যায়।

(২৮৭)
ইংরেজি ২০১৫ সালের প্রথম প্রহর এখন। চারিদিকে পটকার তাণ্ডব, গানের সুরে ভেসে গেছে পথঘাট। জানি অনেকখানে চলছে ড্রিংকস আর ডিজে পার্টি। খুব কাছের প্রিয়জন পৃথিবীকে বিদায় দিয়ে যাওয়ার এই ক্ষণে আমি উপলব্ধি করতে পারছি ধ্বসে যাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া, নষ্ট হয়ে যাওয়া এই সমাজের উত্তাল অস্থিরতা ও জঘন্যতা। আমরা কতই না বেখবর, কতই না অবিবেচক, মূর্খ, হতভাগা। আমাদের সময় হয়ত ফুরিয়ে আসছে। আমাদের ভালো কাজ করার শক্তি হয়ত নিঃশেষ হয়ে আসছে। আমরা জানিনা কতদিন আর এই বাতাসে নিঃশ্বাস নেবো, কতখানি রিযিক আমাদের জন্য রয়েছে এই খাবারে, এই বাতাসে, এই ঘরবাড়িগুলোতে। [০১ জানুয়ারি, ২০১৫]

(২৮৮)
ইদানিং জীবনে পথ চলতে অনেক কিছু দেখি। ইদানিং অভিজ্ঞতা হয় অনেক বেশি তীব্র, ক্ষুরধার, কষ্টদায়ক। কিন্তু তারপরেও সময়ের অভাবে লেখা হয় না। জীবনের ব্যস্ততা অন্যরকম মাত্রায় বেড়ে চলেছে, কমবেশি সবারই এমন হয়। আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ছে যিনি হাজার বছর আগে থেকেই যত্নবান হতে বলেছিলেন জীবনের ব্যস্ততার আগের অবসর নিয়ে।

জানি জীবন ক্রমাগত ব্যস্ত থেকে ব্যস্ততর হয়, জীবন জটিল থেকে জটিলতর হয়। আল্লাহ যদি সময়ে বারাকাহ না দেন, তাহলে কেউ কিছুই করতে পারবে না। আল্লাহ যদি আমাদের জীবনকে সহজতা দান না করেন, তাহলে কেউ এর ক্রমবর্ধমান জটিলতা ও ঝামেলাকে কমাতে পারে না।

আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি বলে দাবী করি, তাদের জীবন ক্রমাগত কঠিন হয়। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃতপক্ষে তার দিকে ফিরিয়ে নিতে চান, তার দয়ায় আমরা তাকে স্মরণ করতে পারি, তার দয়ায় আমরা দুনিয়া অশান্তির মাঝে শান্তির স্পর্শ পাই আত্মায়, হৃদয়ে।

(২৮৯)
গতকাল কাটাবনে ঘুরঘুর করলাম নসীম হিজাযীর যে বইগুলো পড়িনি সেগুলো খুঁজে বের করতে। মোটামুটি লাভ হয়নি বলা যায়। হয়ত শেষতক বাংলাবাজার যেতে হবে আমার। রিভেরি অনেকদিন হিজাযীর এই বইগুলো আনে না। তবে মজার ব্যাপার হলো কামিয়াব প্রকাশনীতে, এনায়েতুল্লাহ আলতামাশের বই পেলাম, নসীম হিজাযীরগুলাও চকচকে মলাটের, একটু বেটার কালেকশন। শফীউদ্দিন সরদারের বইও দেখলাম। আগামীতে কিনবো আশা রাখলাম...

আলতামাশের ঈমানদীপ্ত দাস্তান নেড়েচেড়ে দেখলাম, পর্ব ৬ পর্যন্ত এখানে আছে। মোট ক'টি পর্ব বইটার? অনুবাদে দেখলাম,  একজন মাওলানা সাহেব অনুবাদ করেছেন; বেশ চমকৃত হলাম।

আল্লাহ আমাকে মুহাম্মাদ আসাদের "মক্কার পথ" কেনার তাওফীক দিয়েছেন। বইটি খুব আকর্ষণীয়। Reverie থেকে ১৭৫ টাকায় পেয়েছি। "প্রতি মাসে একটি বই" শ্লোগানে আমি বিগত বেশ ক'টি বছর চলছি। আলহামদুলিল্লাহ ব্যক্তিগত পাঠাগার সমৃদ্ধ হচ্ছে, বইয়ের তাকগুলো ভরে আসছে। ছোট ছোট স্বপ্ন, মাঝে মাঝে বেশ প্রেরণা দেয়।

# আগামীতে পাঠাগারের ছবি দিয়ে শো-অফ করতে চাই, কারো যদি বুক জ্বলে এবং যদি সে-ও একটা ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করার উদ্যোগ নেয়... সেই আশায়!

(২৯০)
আল্লাহ আমাদের জীবন ও মৃত্যু দিয়েছেন, এই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যেন আমাদের মধ্যে কাজকর্মে কে বেশি  উত্তম তা তিনি পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আমরা পরীক্ষার মুখোমুখি হই যেন কারা আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখি, কারা আল্লাহকে ভালোবেসে জীবনধারণ করি, কারা দুনিয়ার চেয়ে আখিরাতকে ভালোবাসি তা আমাদের কাজ দিয়েই বোঝা যায়। আল্লাহ আমাদেরকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ, ভয়-শংকা, রোগ-বালাই দিয়ে স্মরণিকা (reminder) দেন যেন আমরা দুনিয়াকে নয় বরং আল্লাহকেই বেশি আঁকড়ে ধরি। পৃথিবীর কিছু আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না, সুখ দিতে পারে না, শান্তি দিতে পারে না; এসবের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর হাতেই সমস্ত হিদায়াহ,সমস্ত মুক্তি, সমস্ত শান্তি। সেইদিন বেশি দূরে নয় যেদিন আমরা কাফনের কাপড় পেঁচিয়ে মাটির নিচে জায়গা নিবো। আমরা সবাই আল্লাহরই এবং আমরা সবাই তার কাছেই ফিরে যাবো।

(২৯১)
​আমার উস্তায ক'দিন আগে একটা হাদিস পড়াচ্ছিলেন, যে হাদিসটা শেখার পর চোখ ভিজে উঠেছিলো। পুনর্বার শিখেছিলাম সেদিন, আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ দুনিয়া থেকে ইলম উঠিয়ে নেন। একবার এক ইমামকে লেকচারে বলতে শুনেছিলাম, জ্ঞানের সূর্য হলেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং চাঁদ হলেন আলেমগণ। তারা রাসূলুল্লাহর (সা) জ্ঞানকে প্রতিফলিত করেন। আলেমরা নবীদের কাজ করেন, তাদের জ্ঞান এই দুনিয়ার জন্যই অনেক দামী। আলেমদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করা আমাদের জন্য একটি প্রয়োজন, আলেমরা আমাদের জন্য নি'আমাত।

(২৯২)
কয়েকঘন্টা আগে আমার দাদীজান দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। ঢাকা থেকে প্রায় সাড়ে তিনশ' কিলো দূরে এক বিছানায় শুয়ে পার্থিব জীবনের কষ্ট-যন্ত্রণা, ক্ষণস্থায়ী বিভ্রমকে পেছনে ফেলে আল্লাহর কাছে চলে গেলেন তিনি। আল্লাহ তাকে দীর্ঘ হায়াত দান করেছিলেন, সম্ভবত আটানব্বই বছরের বেশিদিন তিনি পৃথিবীতে থেকেছেন। তার সাওম পালন সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা যায়, তিনি কয়েক বছর পূর্ব পর্যন্ত রামাদানের রোজা মিস করেননি, পর্দার ব্যাপারে সারাজীবন অত্যন্ত সচেতন ছিলেন তিনি। কুরআন বুঝার জন্য আরবি জানতেন না ঠিক, কিন্তু নিয়মিত তিলাওয়াত করতেন এবং জান্নাত-জাহান্নাম শব্দগুলো পড়ে তার আকুলতা ও আবেগঘন হয়ে যাওয়ার দৃশ্য আমি নিজে দেখেছি। আল্লাহ আমার দাদীকে ক্ষমা করে দিন। তার আখিরাত শুরু হয়ে গেছে, এই সময়টা খুব কঠিন। আল্লাহ যেন কবরের কঠিন সময়কে সহজ করে দেন এবং দাদীর জন্য জান্নাতুল ফিরদাউস কবুল করেন। [রাত ১:০০টা, ০১/০১/২০১৫]

৬ মে, ২০১৫

বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা (দ্বিতীয় পর্ব) : শরীরের সচেতনতা


ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলেই অনেকে অন্ধকার পছন্দ করতে শুরু করে। কম-কম খায় কেননা খাওয়ায় অরুচি হয়। কিছুতেই ভালো লাগে না বলে পারলে অন্ধকার ঘরের কোণার দিকে পড়ে থাকে। এই অভ্যাস একসময় মানুষকেই দখল করে ফেলে। ডিপ্রেশনই তখন মানুষটাকে কন্ট্রোল করতে শুরু করে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য অনেকে অনেক কিছু বলে। সত্যিকার অর্থে, ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে প্রথমেই দরকার নিজের ইচ্ছা হওয়া। আপনি যখন নিজেকে বিষণ্ণ রূপে দেখতে অপছন্দ করবেন, তখনই আপনার নিজেকে আপনি প্রথম সাহায্যটি করবেন। 

গুটিয়ে পড়ে থেকে কী লাভ? প্রকৃতপক্ষে, আপনার দুর্দশায় অন্য কারো তেমন কিছুই আসে যায় না। আপনি বিষণ্ণতায় কেমন রকমের কষ্টে ভুগছেন তা অন্যেরা চাইলেও অনুভব করতে পারবে না তাই কাউকে দোষ দিয়েও লাভ নেই। আপনার নিজেকে নিজেরই সাহায্য করতে হবে। অন্য কেউ আপনাকে টেনে তুলবে না কখনই। এই আশা করাও ভুল, অনুচিত এবং বোকামি। তাছাড়া, আল্লাহ রব্বুল আ'লামীন তাদেরই সাহায্য করেন যারা নিজেদের সাহায্য করে। আল্লাহর সমস্ত সৃষ্টিই 'সিস্টেমেটিক' উপায়ে চলছে, সেগুলো একটা ছন্দের মধ্যে আবর্তিত। তাই, আপনাকে নিজের সুদিন বয়ে আনতে প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি তৈরি করতে হবে নিজের ভেতরে। 

বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠা (প্রথম পর্ব) : নিজের প্রতি অনুগ্রহ করা


এখনকার সময়ে বিষণ্ণতা নানান কারণে হয়। বংশগতভাবে, মানসিকতার কারণে কিংবা পারিপার্শ্বিক কারণে বিষণ্ণতা গেঁড়ে বসে আমাদের মাঝে। বিষণ্ণতা একদমই নেই এমন মানুষ বেশ বিরল, এমনকি এখনকার অনেক পরিসংখ্যান বলে যে বর্তমান সমাজব্যবস্থায় শিশুরাও বিষণ্ণতায় ভুগে। অর্থাৎ, বিষণ্নতায় ভোগা মোটেই খুব অস্বাভাবিক কিছু নয় এখনকার সময়। তবে, বিষণ্ণতা পুষে রাখা মানসিক,শারীরিক এবং আত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।  আমাদের কি আসলে নিজেদের ক্ষতি করার অধিকার আছে? বিষণ্ণ হয়ে অসুস্থ হতে থাকার সুযোগ কি আছে? বিষণ্ণতায় নাওয়া-খাওয়া ভুলে যাওয়া, কর্তব্য পালনে অবহেলা, ত্যক্ত-বিরক্ত থাকা স্বাভাবিক কিছু বিষয়। কিন্তু আল্লাহ কি আমাদেরকে সেই অনুমতি দিয়েছেন?

এত কিছু পড়ি ফেসবুকে আর ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিদিন, উপকার কতটুকু?

​এই যে এত শত-শত শব্দ ফেসবুকের নিউজ-ফিড জুড়ে, এত সহজলভ্য কি বাংলা শব্দেরা আগে কখনো ছিলো? ছিলো না। শুধু বাংলা নয়, পৃথিবীতেই শব্দেরা কখনো এতটা সহজলভ্য, এতটা সস্তা ছিলো না। কত লেখক এখন, কত আবেগ এখন! আবেগ প্রকাশ হয় ইমোটিকন দিয়ে। 'কোলন ডি' চেপে দেয়া মানুষরা বেশিরভাগ সময়েই দাঁত বের করে হাসা দূরে থাক, মুচকিও হাসে না। আবেগের স্ফূরণ কি এতই সহজ?

৫ মে, ২০১৫

রুমী কবিতা (অষ্টম কিস্তি)

* * * * *
ভোরের মৃদু হাওয়া এসে তোমাকে পরশ বুলিয়ে একটি গোপন রহস্য বলে যায় -- আবার ঘুমাতে যেয়ো না।
~ জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তোমার জীবন দিয়ে আগুণ জ্বালাও। এবার খুঁজে নিয়ে আসো তাদেরকে যারা তোমার এই অগ্নিশিখার ভক্ত।
~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
তুমি হৃদয়ের যতই গভীর থেকে গভীরে স্থান নেবে, তার প্রতিবিম্ব ততই হবে পরিষ্কার ও ঝকঝকে।" ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
যদি আলো থাকে তোমার হৃদয়ে ওই, ঘরে ফেরার পথ খুঁজে পাবে অবশ্যই।" ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
আমি তো শিখেছি প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। কিন্তু জীবনের স্বাদ পাবে খুব অল্প কিছু প্রাণ।~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
তুমি এখন চুপ করো। যিনি পৃথিবীর সকল শব্দগুলোকে সৃষ্টি করেছেন তাকেই কথা বলতে দাও। তিনিই দরজা সৃষ্টি করেছেন, তিনি তালা সৃষ্টি করেছেন এবং তার চাবিও তিনিই সৃষ্টি করেছেন।~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
তোমার আলোয় আমার ভালোবাসতে শেখা, তোমার সৌন্দর্যে শিখেছি আমি কবিতা লেখা।~জালালুদ্দিন রুমী

 * * * 
এখনই কি তোমার হৃদয়কে আগুণের দুর্গ বানিয়ে ফেলার সময় নয়?~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
বসো, স্থির হও, আর খেয়াল করে শোনো,
কারণ তুমি কিন্তু এখন মাতাল,
আর আমরা আছি ছাদের একদম কিনারায়।
~ জালালুদ্দিন রুমী

রুমী কবিতা (সপ্তম কিস্তি)


 * * *
হতাশ হয়ো না! কেননা সবচেয়ে তীব্র হতাশার মূহুর্তগুলোতে আল্লাহ আশার আলো পাঠিয়ে দেন। ভুলে যেয়ো না, চারপাশ আঁধার করে আসা ঘনকালো মেঘ থেকেই তুমুল বৃষ্টিটা হয়ে থাকে। ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তুমি ভালোবাসা খুঁজতে যেয়ো না, ও তোমার কাজ নয়। বরং খেয়াল করে দেখো তোমার ভিতরে কী কী প্রাচীর তুমি গড়ে তুলেছ যা তোমাকে ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করছে।  ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তোমার কাছে যা-ই আসুক না কেন তুমি কৃতজ্ঞ থেকো, কেননা তোমার কাছে যা পাঠানো হয় তা তার পক্ষ থেকে পথনির্দেশ। ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
বিশ্বজগতের সবকিছু তোমার মাঝেই আছে। নিজের ভেতর থেকেই খুঁজে নাও সব। ~জালালুদ্দিন রুমী


 * * *
তুমি যা খুঁজছ সেটাও আসলে তোমাকেই খুঁজছে। ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
সত্য হৃদয়কে উঁচুতে তোলে, যেমন করে পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে সতেজ করে। ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তোমার বন্ধু হতে চেয়ে আমি আমার নিজের শত্রু হয়েছি।  ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তুমি যা ভালোবাস তার সৌন্দর্যময়তার প্রকাশ হোক তোমার কাজগুলো।  ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
এমন একটা দিন
যেদিন বাতাসটা একদম যথযথ
যখন পাল তুলে রওনা হওয়া দরকার
পৃথিবীটা অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে আছে।
এমনই একটি দিন
আজকের দিন।
~ জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
আর এখনো, এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও
সূর্য কখনো পৃথিবীকে বলেনি,
'তুমি আমার কাছে ঋণী।'
চেয়ে দেখো, এমন ভালোবাসা কী করেছে,
এই সুবিশাল আকাশ হয়েছে আলোকিত।
~ জালালুদ্দিন রুমী

রুমী কবিতা (ষষ্ঠ কিস্তি)



 * * *
একটু ভিন্নভাবে দেখার চেষ্টা করো। এমনভাবে যে, তুমি দেখছো, এবং মহাবিশ্বও দেখছে তোমাকে।~রুমী

 * * *
একটি গোলাপের উপমা এই ভালোবাসা, যে প্রস্ফুটিত হয় অনন্তকাল। ~রুমী

 * * *
আমি পাখির মত করে গাইতে চাই, যে চিন্তা করেনা কে শুনলো এবং কে কী ভাবলো। ~কবি জালালুদ্দিন রুমী

* * *
আমি জানি তুমি ক্লান্ত, কিন্তু তবু এসো এদিকে, হ্যাঁ এটাই সামনে যাবার পথ।~রুমী

* * *
আর এই যে তুমি? কখন তুমি তোমার নিজের মাঝে দীর্ঘ সেই যাত্রাটি শুরু করবে।
~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
চাঁদকে উজ্জ্বল দেখা যায় যখন সে রাতকে এড়িয়ে যায় না।~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
নিজ চিন্তাগুলোর হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখো। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
একটা কন্ঠ আছে যে কোন শব্দ উচ্চারণ করে না। কান পাতো, শোনো। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
একটু ঠান্ডা হও, শুধুমাত্র আল্লাহর হাতই তোমার হৃদয়ের এই ভার সরানোর ক্ষমতা রাখে। ~ জালালুদ্দিন রুমী

* * *
তুমি আমাকে ভালোবাসো আমার কারণে নয় বরং তোমার নিজের অভিজ্ঞতার কারণে... তুমি আমার দিকে ফিরে তাকাও তোমার নিজের আবেগকেই অনুভব করতে।~ জালালুদ্দিন রুমী

৩ মে, ২০১৫

রুমী কবিতা (পঞ্চম কিস্তি)


 * * *
চোখ বন্ধ করো। প্রেমে পড়ো। সেখানেই থেকে যাও।
~ জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
জেনে রেখো, তোমার শরীরটা কেবলই একটি পোশাক। তুমি বরং কোন চাদর না খুঁজে দেহটিকে খুঁজে বের করতে চেষ্টা করো। ~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
চোখের অশ্রুর সাথে গোপনে আসে হাসি। ধ্বংসস্তুপের নিচে রত্নভান্ডার খুঁজতে চেষ্টা করুন।
~ জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
ফুলের বাগানে ইচ্ছেমতন ঘুরে বেড়াতে চাইলে তোমার নিজের হৃদয়ের কাঁটাগুলোকে টেনে তুলে ফেলো।
~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
আমার কাছে তোমাকে খুলে দাও, যেন আমি তোমার কাছে উন্মুক্ত হতে পারি।
তোমার অনুপ্রেরণা দিয়ে আমাকে জাগাও, যেন আমি আমার নিজেরটুকু দেখতে পারি।
~ জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
তাহলে, তুমি যা সত্যিকার অর্থে মূল্য দাও, তা আঁকড়ে ধরে থাকো।
চোরেরা বরং যেন অন্য সবকিছু থেকে নিয়ে যায়।
~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
আর চুপ করে বসে থাকা নয়। অত চিন্তাভাবনা বাদ দাও।
তুমি সবাইকে তোমার ভালোবাসা জানিয়ে দাও।
~জালালুদ্দিন রুমী

 * * *
একাকীত্ব অনুভব করো না।
গোটা বিশ্বজগত তো তোমার ভেতরেই।
~জালালুদ্দিন রুমী

* * * *
হতে পারে খুব সাধারণ কিছুর মাঝে খুব অনন্যসাধারণ কিছু লুকিয়ে আছে। কিন্তু খুব কম মানুষই তা উপলব্ধি করতে পারে।~জালালুদ্দিন রুমী

* * * *
পেছন ফিরে দেখিয়ো না।
কেউ জানেনা ঠিক কেমন অবস্থায় পৃথিবী শুরু হয়েছিলো।
ভবিষ্যত নিয়ে ভয় করো না, কোনকিছুই চিরকাল থাকবে না।
তুমি যদি অতীত আর ভবিষ্যতেই ডুবে থাকো, তুমি বর্তমানকে হারিয়ে ফেলবে।
~জালালুদ্দিন রুমী