২৪ ডিসে, ২০১৫

এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক

 

প্রতিটি মানুষের জীবনই কষ্টের। এমনকি যে অপরাধ করতে করতে নিজেকে জুলুম করছে, সে-ও তার অপরাধবোধ, গ্লানি ঢাকতে অন্য কিছু করে নিজেকে ব্যস্ত রাখে। অথচ রোগে যখন সে ভুগতে থাকে, অথবা যখন মরে যায়, তাকে কাফনের কাপড়ে পেঁচিয়ে মাটির নিচে রেখে আসা হয়। যুগে যুগে শত-শত ক্ষমতালোভী শাসকগুলো এভাবেই বিদায় নিয়েছে। এরপর, একসময় তারা হয়েছে ইতিহাসে বিলীন। কেউ জানেনা, খোঁজ রাখেনা।

ভাবলে কেমন অদ্ভুত লাগে, না? যে মানুষটি হয়ত পৃথিবীর কোনো একটি কোণে, এই যেমন ইয়েমেনে কিংবা সিরিয়ায় আজ একটা পথচারী কিশোর হেঁটে চলতে গিয়ে বোমার আঘাতে মরেই গেলো। কেন মরলো, কে মারলো-- বুঝলোই না। আবার হয়ত হেবরনে, পশ্চিম তীরে অথবা কাশ্মীরে দখলদারী আর্মির হাতে একটা কিশোর হয়ত বন্দী হলো যখন, তখন তার বয়েসি পশ্চিমা ছেলেগুলো পার্টি করে, নাইটক্লাবিং করে কোমর দোলাচ্ছে। বন্দী ছেলেটি অপরাধ সে বুঝলোও না, তাকে গরম পানিতে পুড়িয়ে, বেয়নেটে খুঁচিয়ে মেরে ফেলা হলো। লাশটাও ফেরত গেলো না। কিশোরের মা আহাজারি করে বাকিটা জীবন পার করবে। অথবা হয়ত সেই অভাগী মা একদিন নিজেই গুলি খেয়ে মরে যাবেন।

জীবন-মৃত্যুর এই খেলা যখন চলছে, তখনই কেউ আবেগঘন প্রেম করছে, কেউ ঝগড়া করছে, কেউ ঠকাচ্ছে, কেউ বার্থডে কেক কাটছে। সবকিছুরই সাক্ষী থাকছে অনেকগুলো রূহ, অনেকজন ইনসানের। তখনই আকাশে হয়ত আলোচ্ছটা জ্বললো উল্কাপিন্ডের। ফুল ফুটছে বাগানে, একজন গার্ডেনার বছর ধরে বসে ছিলেন নাইটকুইনকে ফুটতে দেখবেন বলে। একদল ডলফিন ঝুপ করে লাফ দিলো। পৃথিবীময় সৌন্দর্যের এই নিপুণ বাগানে কত ঘটনা! কত সৃষ্টি, কত প্রেম, কত ভালোবাসা চারপাশে। তবুও নিষ্ঠুর মানুষগুলোই হত্যা করে, কী পেতে চায় কে জানে? হিংসায় জ্বলে-পুড়ে নিজেই ডুবে যায় অনল দহনে।

এত অনুভূতি ধারণ করতে পারে কি কোনো অন্তর? আমাদের হৃদয়ের মাঝেই তো আকাশের মতন বিশালতা আছে, তবু কি পারি এই পৃথিবীর বৈচিত্র্যকে অনুভূতিতে ধারণ করতে? তীব্রতম কষ্টের মূহুর্তগুলো কোনো সাহিত্যে থাকে না, কেউ লিখতে পারে না। তেমনি সর্বোচ্চ আনন্দের মূহুর্তও পাওয়া যায় না কোথাও। মানুষ পারেনা সুন্দর কিংবা কষ্টকে শব্দে ধারণ করতে।

বাকি সবই খুব অগভীর, প্রদর্শনী কেবল। অগভীর অনুভূতিহীনতায় সবাই ভেসে যায়। অবাক পৃথিবীতে অনেকেই লিখতে চেয়েছে, একসময় হয়ত শ্রান্ত হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যেতে চেয়েছে। পারবে না বলে ছেড়ে দিতে চেয়েছে কেউ কেউ।

যিনি বানিয়েছেন সব, সমস্ত সুন্দর-অসুন্দর,ভালো-মন্দগুলো নিয়ে তিনিই বলা উত্তম। থাকুক তবে সকল শব্দ। এবার তবে নিশ্চুপ থাকা হোক।

**************
৩০ নভেম্বর, ২০১৫
সন্ধ্যা ৬-১৫ মিনিট

১৬ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৬



(৪৫০)
খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যত গড়ে নিতে সুন্দর অতীত থাকা বাধ্যতামূলক নয়। নিজেকে সুযোগ দিন। আপনার হাতে সময় আছে, বর্তমানকে কাজে লাগান। পেছনের দিকে না তাকিয়ে নিজের সেরাটুকু ব্যবহার করুন বর্তমানের মাঝে...

(৪৫১)
সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

(৪৫২)
আপনি হয়ত অনেক ভালো কাজ করতে চান। গাছে পানি দেয়াও তেমন। সেই চিন্তা থেকে একটা গাছে পানি দিলেন নিয়মিত। পরে দেখলেন গাছটা ক্যাকটাস, সেটার পানির দরকারই নেই ওভাবে। তাতে কি আপনার ক্ষতি হলো? নাহ! এটাও শিক্ষা হলো, জীবনের এক নিগূঢ় জ্ঞানার্জন হোলো। এমন হাজারো অনাকাংখিত শিক্ষার সমন্বয়ই আমাদের জীবন।

 (৪৫৩)
সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।

(৪৫৪)
সবকিছুর সময় আছে। সবকিছুর একটা তীব্র সময় থাকে। চাঁদ যেমন পূর্ণিমায় তার পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। অন্য সময়ে চাঁদের আলো ক্ষীণ থাকে, অমাবশ্যায় সে নিভেই যায়। মানুষের জীবনের অনেক কিছুই হয়ত তার সাথে মিলে যায়।

হয়ত অনেকের লেখালেখিও অমনই। হয়ত অনেক ফেবু পাতাও অমন। অনেককাল নিয়মিত শব্দগুচ্ছ ভেসে এসেছে অনেকের চোখে। দীর্ঘদিন সকালে-দুপুরে-রাতে প্রযুক্তির নানান ছোঁয়ায় খুব সাধারণ কথাগুলোও কিছু নামহীন পরিশ্রমের ফল হয়ে প্রকাশ হয়েছে নিয়মিত বিরতিতেই। হয়ত সে বিরতি দীর্ঘায়িত হবে, হয়ত অমাবশ্যার আঁধারের মতন মিলিয়ে যাবে। কে জানে তা?

সবকিছু কেবল তিনিই জানেন, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তবে, গাছের পাতাও যেমন বসন্তে সুশোভিত হয়, ধীরে ধীরে শীতে এসে ঝরে পড়ে শুকিয়ে। জীবনেও আমাদের অমন কতই না চক্র রয়েছে। হতে পারে, কিছু ফেবু পাতাও অমন চক্রের অংশ। প্রযুক্তির সৃষ্টি এই পরাবাস্তব জগতের প্রদর্শনীটুকুর পেছনে তো মানবিক ও প্রাণিজ মানুষেরই সক্রিয় উপস্থিতি। তাকেও তো মানতে হয় বসন্ত-গ্রীষ্ম-শীতের নিয়ম।

প্রকৃতিপানে চেয়ে, তাতে অনুভব করে শেখার আছে অনেক কিছু। নিতান্ত সহজ সরল চেহারায় জীবনের গভীরতম জীবনোপলব্ধি ওতেই পাওয়া যায়। আল্লাহ আমাদের উপকারী জ্ঞান দান করুন, আমাদের সকল ভালো কাজকে কবুল করুন।

১৫ ডিসে, ২০১৫

অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত মুক্তমনা এবং ধর্মপ্রচারকরা একই রকম


অনেকক্ষেত্রে তথাকথিত মুক্তমনা এবং ধর্মপ্রচারকরা একই রকম -- শুনতে একটু কেমন কেমন লাগতে পারে। তবে ঘটনা সত্য। এটা একটা খুব সাধারণ মানসিকতা। অনেক ধর্মপ্রচারক আছেন, যারা নিজেদের চিন্তাটাকেই একমাত্র সঠিক মনে করেন, তারা ভিন্ন কোন ধারণাকে সহ্যই করতে পারেন না এবং শত্রু হিসেবে গণ্য করেন। অথচ তাদের 'মতামত' ভুল হতেও পারে, সেটা ঐশীবাণী নয়। তবে, সেই মতামতকেও তারা সঠিকতম হিসেবে ধরে অন্যদের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণু হয়ে ওঠেন।

শুধু ধর্মপ্রচারক নয়, প্রচুর তথাকথিত মুক্তমনার দল এই ধরণের মানসিকতাকে ধারণ করে। সোজা বাংলায় এই মানসিকতাটাকে বলা যেতে পারে বাইনারি চিন্তাভাবনা। তারা মুক্তমনা হিসেবে নিজেদেরকে জাহির করলেও ভিন্নমতের প্রতি তারা আগ্রাসী মনোভাব ধারণ করেন। যুক্তি সেখানে মূল্যহীন হয়ে যায়।

এখানে খুব সুন্দর গোলকধাঁধাঁ হলো -- এই মুক্তমনা দাবী করা ক্ষুদ্রমনারা প্রকৃতপক্ষে বাধ্য করেন অন্যদের যেন তাদেরকে গ্রহণ করা হয়। যেন মুক্তমনা হবার একটি মাত্র পথ রয়েছে !! তারা মূলত ভিন্নমত থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। আরেকটি বিষয় হলো, তারা মূলত নিজেদেরকে নিয়েই সন্দিগ্ধ থাকে।

বেশিরভাগ মানুষের মাঝে এই মানসিকতা আছে। এই মনগুলা খুবই বাইনারি, তারা কেবল নিজেদেরকেই সঠিক এবং অন্যদেরকে ভুল মনে করেন। এদের বেশ কিছু গুণাবলীর একটা হলো, তারা প্রচন্ড আবেগপ্রবণ হন এবং আবেগাক্রান্ত অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। এই আবেগতাড়িত মনগুলো অন্য মানসিকতার ও অন্য মতের লোকদেরকে ভয় পায়। নিজেদের অবস্থানকে হারিয়ে ফেলার ভয়ও রয়েছে এতে। ফলে সেই ভয় তাদের পেয়ে বসে বলেই ভিন্ন মতকে প্রচন্ড শক্তিতে আক্রমণ করে ধরাশায়ী করে ফেলার চেষ্টা করে।

এই মানসিকতার ধারক মনে হয় এই সমাজে তো বটেই, এই পৃথিবীতেও প্রচুর দেখা যাচ্ছে। এই মানসিকতার মানুষগুলো দিনদিন এমন ধারণার দ্বারাই প্রভাবিত হয়ে চলেছে যেসব বুদ্ধিবৃত্তিক কোন যাচাই করা হয়না এবং অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি বা যুক্তিহীন হয়ে থাকে।

চিন্তার উৎকর্ষ সাধন প্রয়োজন। নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে কেন আমি এই কথা বলছি, চিন্তা করে দেখতে হবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। সত্য একটা হলেও সত্যের কাছে পৌঁছানোর অনেকগুলো পথ থাকতে পারে। অন্যদের প্রতি সহমর্মিতা গড়ে তোলাও প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি এই সময়ের দাবী, এই পৃথিবীর দাবী।

লেখাটির অনুপ্রেরণাঃ
- বিষয়ঃ ডগম্যাটিক মাইন্ড/Dogmatic Mind
- বইয়ের নামঃ The Quest For Meaning : Developing the Philosophy of Pluralism, লেখক: তারিক রমাদান, প্রফেসর, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি
- প্রাসঙ্গিক ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no

১৪ ডিসে, ২০১৫

ভাঙ্গবেন তবু মচকাবেন না? এই ভয়াবহ ভুল থেকে বেরিয়ে আসুন!



সমাজে আমাদের অজান্তেই অনেক কিছু শেখানো হয়। তার মধ্যে একটি হলো, 'ভাঙ্গব তবু মচকাবো না' নাকি শক্তপোক্ত মানুষ হবার যোগ্যতা। অথচ, এটা স্পষ্ট অহং তথা 'ইগো'ওয়ালা কথা। কী অদ্ভুত খারাপ একটা বিষয় চালু হয়ে আছে আমাদের অনেক মানুষের মাঝে!

মুসলিমদের আল্লাহ নিয়মিত বিপদ দেন, পরীক্ষা করেন। তারা ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। কাফিরদের রশি আল্লাহ ছেড়ে দিয়ে রাখেন, তারা সহজে বিপদে বাঁকা হয় না। মুমিনদের তুলনা হলো ঘাস কিংবা লতাগুল্মের মতন। প্রতিটি দমকা হাওয়া তাদের উপরে দিয়ে বয়ে যায়, তাদের নাড়িয়ে দেয়। কাফিরদের তুলনা হলো বিশাল বৃক্ষের মতন। হাওয়া তাদের উপরে প্রভাবই ফেলে না। কিন্তু বড় একটা ঝড় এলে তারা শেকড় সহ উপড়ে যায়, সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়।

মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত 'vulnerable' (ভালনারেবল) হওয়া। ওই কথার সাথে মিলিয়ে বলতে গেলে তা হবে 'প্রচুর মচকে যাওয়া'। আমাদের মাঝে অজস্র মানুষ আছে, অন্যের কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশের ভয়ে 'rigidity' (শক্তিশালী হিসেবে) দেখায়, কৃত্রিমভাবে নিজেকে শক্তপোক্ত করে প্রকাশ করে। তারা নিজেকে সারাক্ষণ চাপের মধ্যে রাখে, সত্যিকারের সত্ত্বাটাকে অন্যের কাছে প্রকাশ করে না।

কিন্তু, আপনি যখন ঠিক আপনার মতন হয়ে অন্যের সাথে মিশবেন, ঠিক সত্যিকারের আপনি যখন অন্যের সাথে আলাপচারিতা করবেন তখন আপাতদৃষ্টিতে অনেকে দুর্বল মনে করতেও পারে। ফলশ্রুতিতে আপনাকে আহত করতেও পারে। কিন্তু আপনি এই 'মচকে' যাওয়াতেও কিছুতেই পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বেন না। ব্যথা সারিয়ে, ভুলটুকু বুঝে সংশোধিত হয়ে, নিজেকে আবার খুব সহজেই এই ধাক্কা থেকে কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আপনি আবার হৃদয় উন্মুক্ত করে অন্যদেরকে আপনার কাছে টেনে আনতে পারবেন। আবার, আপনি এবার আগের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলেন, আপনি অনেক ব্যথাকেই এখন দূর থেকেই চিনতে পারেন, কাটিয়েও উঠতে পারেন। খারাপ মানুষদের কারণে আপনি আপনার হৃদয়ের কোমলতা, সজীবতাকেও হারাবেন না। কেননা, অনেক মানুষই খারাপ লোকের দ্বারা আহত হয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠে। এই ভুল সিদ্ধান্তে সে নিজেও ধ্বংস হয়, আরো অনেককে ধ্বংস করে।


আপনি যখন হৃদয় উন্মুক্ত করে ভালোবাসতে পারবেন, তখন আপনি অনেক শক্তিশালী মানুষ। মানুষের প্রতি সন্দেহ-সংশয়-বিতৃষ্ণা নিয়ে তাদের কাছে গেলে তারা সহজেই বুঝতে পারে আপনি একজন 'দূরের মানুষ'। আপনি তখন সত্যিকারের দুর্বল। কেবলমাত্র সাহসীরাই অন্যকে বিশ্বাস করতে পারে, কেবলমাত্র সাহসীরাই ভালোবাসতে পারে। কেবলমাত্র সৎ অন্তঃকরণ যাদের, তারাই অকপট হতে পারে, সরল, ভঙ্গুর হতে পারে, তারাই জেনুইন (genuine), ভালনারেবল (vulnerable) হতে পারে।

পৃথিবীতে আপনি ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হবেন। হতেই হবে। এটাই জগতের রীতি। তবে এই আঘাতে নিয়মিত মচকাতে থাকুন, কাঁদুন, আহত হোন। আবার জেগে উঠুন।

হৃদয় আপনারই, আপনার মৃত্যুর আগে কেউ একে কেড়ে নিতে পারবেন না। একে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আপনি যা, তেমনটিই হোন। আপনি যেমন, তেমন স্পষ্ট, সরল ও সত্যিকার আপনাকে উপস্থাপন করুন অন্যদের কাছে।

'ভাঙ্গবো তবু মচকাবো না' বলে অহং নিয়ে চলে কী লাভ? শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয় অহংভরা মিথ্যুক, শয়তান। ভালনারেবল (vulnerable) হোন, সরল হোন, আপনি যেমন তেমনটিই হোন। 'প্রকৃত' আপনাকে আঁকড়ে ধরে সংশয় থেকে বেরিয়ে আসুন। সাহসী হয়ে ভালোবাসুন। হয়ত ধাক্কা খাবেন, আহত হবেন; কিন্তু তবু কখনো ধ্বংস হবেন না ইনশা আল্লাহ। আরো বেশি শক্তিশালী হতেই থাকবেন, আরো বেশি 'মানুষ' হতে থাকবেন। মানুষের মতন মানুষ....

[০২ ডিসেম্বর, ২০১৫]

১৩ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৫

 


(৪৪৭)
শেষ কবে আপনি রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখেছেন? আমরা যাদের জ্বলতে দেখি টিমটিম আলোয়, সেই মূহুর্তের সেই আলোটাও তো কত শত বছর আগে ওখান থেকে বিচ্ছুরিত হয়েছিলো তা হিসেব করার বিষয়, কিন্তু অমন নক্ষত্র, গ্রহ তো ওই আকাশে, এই মহাবিশ্বে ছড়িয়ে আছে লাখে লাখে। ওদের একেকটার আকার আমাদের এই পৃথিবীর চেয়েও অনেক বড়। ওদের ওখান থেকেও আমরা একটা বিন্দুর মতই। এই বিন্দুতেই আমাদের সব। এই বিন্দুটুকুর আরো বিন্দু অংশ নিয়ে হাজার হাজার সৈনিক যুদ্ধ করেছে, সেনাপতিরা নিজেদের অমিত শক্তিশালী মনে করেছে হয়ত কোন একটা অংশ বিজয় করে। শাসকেরা নিজেদের ভাষ্কর্য উদ্বোধন করে, অফিসে অফিসে নিজের ছবি ঝোলায়; মনে করে তাদের এই শক্তি আর এই সময় হয়ত রয়ে যাবে। মহাবিশ্বের এইটুকু বিন্দুতেই শত-সহস্র ধর্ম রয়েছে যারা সবাই নিজেকে সঠিক মনে করে। এটুকুতেই রয়েছে অনিন্দ্য সুরের ঝংকার তৈরি করা লক্ষ লক্ষ সংগীতজ্ঞ, গভীর জীবনবোধ নিয়ে কবিতা ও গল্প লেখা হাজার-লক্ষ কবি আর ঔপন্যাসিক এসে চলেও গেছে। এটুকুর মাঝেই কত আঁকিয়ে যে এঁকেছেন ছবি, শিল্পে আর সংস্কৃতির চর্চার গভীরমূলে গিয়েছেন কত শত জন! এটুকুতেই রয়েছে কত প্রেমিক, কত প্রেমিকা। কত ভালোবাসা, কত টান আর কত আবেগ! কত অশ্রু আর কত হাসি। এখানেই রয়েছে হিংসা-বিদ্বেষ, কেউ কিছু পেলে অপরের জ্বালা ধরা মন্তব্য নির্নিমেষ। এটুকু জায়গায় কত মানুষের কত মত, কত ক্রোধ, কত অহং, কত ঘৃণা। অথচ এই সুবিশাল আয়োজন, এই অন্ধ ক্রোধান্ধ, আমিত্বকে জয় করার নিরুদ্দেশ যাত্রাপথে কারো কি তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে আদৌ অনুভব হয়? এই টুকুন সৃষ্টির মাঝে, এই বিন্দুর মাঝে এত সিন্ধু যিনি স্থাপন করেছেন, তার বিশাল সৃস্টির দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে হয়ত আনমনেই অনুভব হবার কথা ছিলো, "হে আমাদের স্রষ্টা, আমাদের মালিক! আমাদের দয়া করুন। আমাদের চিন্তার আর হৃদয়ের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষুদ্রতাকে সহ্য করতে না পারার এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিন আপনার দয়া আর মহত্বের স্পর্শে।"

(৪৪৮)
জীবনটার দৈর্ঘ্য খুবই কম। কেবল একটু পেছনে তাকিয়ে দেখবেন, মনে হবে যেন ৫ বছর আগের ঘটনাটা মাত্র অল্প ক'দিন আগের! আমাদের চারপাশে অনেক খারাপ মানুষ, প্রায়ই অনেক খারাপ ঘটনা ঘটে। আমরা যদি সেসবে আটকে যাই, শংকা-চিন্তা-হতাশা-দুঃখে পড়ে আমরা তখন আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্যে পৌঁছতে আমরা বাধাগ্রস্ত হবো। ভালো চিন্তা, হৃদয়জোড়া ভালোবাসা, উচ্ছ্বাসভরা বুকে মানুষকে হাসিমুখ করে দেয়ার মতন কাজের বিকল্প নেই।

জীবনটা খুব ছোট। যে কোন ধরণের ক্ষুদ্র/খারাপ/মন্দ চিন্তা এবং দুশ্চিন্তা/শংকার মাঝে ডুবে থাকার মাঝে কোন ন্যুনতম কল্যাণ নেই। এগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, কষ্টের মাত্রা, খারাপ লাগার মাত্রা যেমনই হোক না কেন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকতে হবে-- কল্যাণকর কাজ, ভালো কাজ, আনন্দময় কাজ।

(৪৪৯)
ভালো ছাত্রত্বই কখনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক স্কুল জীবনের 'ফার্স্ট বয়/ফার্স্ট গার্ল' নানান কারণে 'ভালো কোথাও' ভর্তি হতে পারে না। ভালো রেজাল্টও ভালো চাকুরির নিশ্চয়তা দেয় না। অনেক অনার্স সিজিপিএ পাওয়া ছেলেমেয়ের চেয়ে সময়মত পাশ করে বের হতে না পারা ছেলেরা অনেক অর্থ উপার্জন করেছে/করছে এমন উদাহরণ আছে ভুরি ভুরি। সৎ থাকলেও যে আপনার গায়ে অসততার কালিমা আসবে না তা বলা যায় না, অনেক সৎ মানুষকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসিয়ে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে এমন গল্পও আমাদের অনেকের আত্মীয়দের জীবনেই আছে। চরিত্র সুন্দর হলেও যে অপবাদ আসবে না, সেটাও বলা যায় না। অপবাদ দেয়ার কাজ যারা করতে ভালোবাসে তারা তো আল্লাহর প্রিয়তম বান্দাদেরকেও ছাড়েনি।

পরিশ্রম করলেই উত্তম ফল হবে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে পরিশ্রম না করলে উত্তম ফল অসম্ভব। আর হ্যাঁ, সবার পরিশ্রম একই রকম হয় না। একেকটা মানুষের জীবনের ঝড় একেকটা সময়ে আসে তীব্র হয়ে। সবার জীবন আলাদা, জীবনে পাওয়া রহমত আলাদা, জীবনের পদ্ধতি আর গড়ে ওঠা আলাদা, শক্তি আর দুর্বলতাও আলাদা। আল্লাহই সুনিপুণভাবে সবকিছু জানেন। কেবলমাত্র তার হাতেই সমস্ত ক্ষমতা। সমস্ত কিছু দেয়ার মালিকও তিনিই। তাই, কাজ করতে হবে সর্বাত্মক চেষ্টার সাথে, কিন্তু মনে রাখতে হবে ফলাফল একান্তই আল্লাহর দান। সমস্ত প্রার্থনা আর অন্তরের নিগূঢ় কথপোকথন কেবলই আল্লাহর সাথে হতে হবে।

১২ ডিসে, ২০১৫

কীভাবে সুখ পাওয়া যায় জীবনে?



প্রতিটি মানুষ সুখী হতে চায়। প্রতিটি মানুষের চাওয়ার ভেতরেই থাকে সুখী হবার অদম্য আগ্রহ। শব্দগুলো কাছাকাছি, অল্প কিছু পার্থক্য যদিও আছে বাংলায় -- সুখ, শান্তি, প্রশান্তি। কখনো ভালোলাগাও এমন শব্দ। কীভাবে তা অর্জন করা যায়?

দার্শনিক ব্লেইজ প্যাসকেলের একটি থিওরিতে পড়লাম -- মানুষের মূলতঃ তিনটি সত্ত্বার মাঝে অভাবের অনুভূতি থাকে -

১) শারীরিক
২) বুদ্ধিবৃত্তিক
৩) আত্মিক

জন্মের পর থেকেই মানুষ পরনির্ভরশীল। প্রথমেই তার মা-কে প্রয়োজন হয়। মায়ের একটানা যত্নে সে বড় হয়। শারীরিক এই মা-নির্ভরতা থেকে যখন সে খানিকটা বড় হয়ে স্বনির্ভর হতে শেখে, তখন থেকে তার মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। এই প্রশ্ন হলো-- বুদ্ধিবৃত্তিক অভাব। সে নিজে থেকেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করে কেন সে এইখানে এলো।

মৃত্যুচিন্তা এখানে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের প্রায় প্রতিটি মনেই মৃত্যুর কথা এলেও সে এই চিন্তাকে ভুলে থাকতে চায়, এড়িয়ে যেতে চায়। কিন্তু তার খেয়াল থাকে না এই সত্যকে তার আলিঙ্গন করতেই হবে।

মানুষ বেশিরভাগ সময় অসুখী হয় অন্যের দিকে তাকিয়ে। তুলনা করতে গিয়ে তার মনের সুখ তিরোহিত হয়। অথচ প্রতিটা জীবন একদম আলাদা। আরেকজনের সাথে কারো কোন মিল থাকে না। সুখ প্রত্যেকের নিজের দিকেই তাকিয়ে অনুভব করা উচিত। কখনো কখনো একটা মূহুর্তের ক্ষুদ্র ভালোলাগাই জীবনে আনন্দের ঢেউ বয়ে আনে। বুদ্ধিমান মানুষ, যারা নিজেদের বুদ্ধিকে ব্যবহার করে, তারা অন্যদের সুখ দেখে নিজেকে সুখী-দুখী হিসেব করতে বসে না। তারা নিজেদের জীবনকে নিজেদের চোখেই দেখে।

যারা আবেগের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তারা সুখ পায় না। যারা আবেগকে চিনে নিয়ে তাকে জয় করে, তারা আবেগ থেকে উদ্ভুত আনন্দও পায়, বিপদেও পড়ে না। আবেগ এক ধরণের ফাঁদ, সেই ফাঁদে আবেগস্বর্বস্বরা নিয়মিত ভূপাতিত হয়।

রেফারেন্স:
- প্রাসঙ্গিক ভিডিও : The Quest for Meaning - ড তারিক রমাদান - http://www.youtube.com/watch?v=XgW3vP7p3no

১১ ডিসে, ২০১৫

আপনার হৃদয় কি ভারাক্রান্ত?


আপনার হৃদয় কি ভারাক্রান্ত? কষ্টে-যন্ত্রণায়, অপ্রাপ্তি-অশান্তি, শঙ্কায়-অস্থিরতায় কাটাচ্ছেন? একটা ব্যাপার জানেন? পৃথিবীতে এই মূহুর্তে কোটি কোটি মানুষ আপনার চেয়েও ভয়ংকর কষ্টে সময় কাটাচ্ছে। আপনি কি ভেবে দেখেছেন, আপনার এই মূহুর্তটা কিন্তু বেশিদিন থাকবে না!

কষ্টের একটা সময় থাকে। প্রথম ধাক্কাটা কিছুটা তীব্র হয়। কিছু বিষয়ে আবার পরবর্তীতে কষ্টটায় দীর্ঘ সময় ধরে ভুগতে হয়। সেগুলো যেমনই হোক, মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়। সন্তানকে কবরে রেখে এসে পিতাকে বের হতে হয় জীবিকার সন্ধানে। সন্তান আর স্বামী মরে যাওয়ার পরেও একজন নারী ফিরে এসে রান্নার যোগাড় করেন অন্তত খেয়ে বেঁচে থাকতে। জীবন এমনই। আপনি যে কষ্টটিকে সহ্যের অতিরিক্ত ভাবছেন, যে ক্ষতিটাকে কল্পনাতীত ভেবে আপনার বুক ফেটে যাচ্ছে -- সেটুকুকেই আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার প্রেরণা পেতেন আরো অসংখ্য লোক। তারা সেটুকুও পান না।

আল্লাহ মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন তার ইবাদাতের জন্য। আপনি না চাইলেও আপনাকে তিনি উপলব্ধি করিয়েই দেবেন যে আপনি এই পৃথিবীর কোনো কিছুরই উপরে ক্ষমতা রাখেন না, আপনি অসহায়। এই উপলব্ধিটা একটি পরম নিয়ামাত যখন আপনি বুঝবেন আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই অভিভাবক।

সকল ক্ষতিই মানুষ কাটিয়ে উঠতে পারে। মানুষ পরম অভিযোজন ক্ষমতার একটি প্রাণী। যাকে ছাড়া/যা ছাড়া জীবন কল্পনাও করতে পারেননি, তার বিদায়ের পরে আপনি দিব্যি খাবেন, ঘুমাবেন, হাসবেন। কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দুঃখ নয়, গ্লানি হয়। এমনকি আনন্দের সময়ও নয়। দুনিয়া নিজেই অস্থায়ী। এর ভেতরের প্রতিটি প্রাণী, প্রতিটি সত্ত্বা, প্রতিটি কণা অস্থায়ী, নশ্বর। এমন কিছুর প্রতি কীসের এত আকাঙ্ক্ষা, এত স্বপ্ন আর কল্পনা-জল্পনা আমাদের যা কিছু সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে শেষ হয়ে যাবে?

[০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫]

১০ ডিসে, ২০১৫

মুসলিমরা কেন বিশ্বজুড়ে ভুক্তভোগী আর অত্যাচারিত?

বিগত বেশ কয়েক শতাব্দী থেকেই মুসলিমদের মাঝে জ্ঞানের অভাবে, শ্রেষ্ঠত্বের অভাবে, নিজেদের কন্ঠকে প্রকাশ করতে না পারায় (যার পেছনে বেশিরভাগ ভূখন্ডের কলোনিয়ালিজম দায়ী, বা সংখ্যালঘুত্ব দায়ী) তাদের মাঝে 'ভিকটিম মেন্টালিটি প্রকট হয়ে থাকে। তাই তাদেরকে কনস্পিরেসি থিওরি গেলানো যত সহজ, আর কোন ধর্ম-জাতি-আদর্শের লোকদের এতটা সহজ না। তাই কোন ছবি দেখিয়ে যদি বলা হয়, 'অত্যাচার' করা হচ্ছে -- যাচাই বাছাই ছাড়াই তখন ধরে নেয়, এটাই তো আমাদের হয়, সুতরাং 'প্রচার করার মাঝেই আমার কাজ শেষ'। ফলে এইসব প্রচার করে, গলাকাটা, বোমফাটা ছবির শেয়ারিং যত হয়, দিনশেষে ওই মানুষটার ভিতরের প্রত্যয়ও সাধারণত জাগেনা নতুন কিছু করার।

নিজেদেরকে ভুক্তভোগী মনে করার এই মানসিকতা আসলে দুর্বল চিত্তের, অযোগ্য-অপদার্থ মানসিকতার প্রকাশ। শেয়ারিং করলে যাচাই বাছাই করতে হবে সেটা কতটা সত্য। আর মাথায় রাখতে হবে, দুনিয়ার বুকে যোগ্যতা সবসময়েই সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ বিষয়ের একটা। নিজেদের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে হলে যোগ্যতা নিয়েই বড় হতে হবে। আপনি ক্লাসে ফার্স্ট হোন, একদিন টিচার হবেন --সম্মানিত গুরুত্বপূর্ণ পদ। আপনি অফিসের সবচাইতে আন্তরিক আর কর্মঠ কলিগ হোন -- আপনার বিশ্বস্ততা আর অসাধারণত্ব নিয়ে শত্রুভাবাপন্নরাও তেমন কিছু করতে পারবেনা।আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও তেমনি, আল্লাহর দ্বীনকে যারা বুকে নিয়ে জীবন চালাচ্ছে, তারা যদি হয় উত্তম চরিত্রের, নিজের আশেপাশের ভাইয়ের প্রতি অনুভূতিতে নিপুণ, দক্ষ বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ, লেখক, সাহিত্যিক, মুভি মেকার, অথবা একজন সাধারণ মানুষ যিনি নিপুণ চরিত্রের, ব্যক্তিত্বের তাহলে এমনিতেই মুসলিমদের উন্নতি হবে।

তবে অনুগ্রহ করে নিজেকে নিজেই চেক করা দরকার, আমরা কি ভুক্তভোগী থাকার মানসিকতা (victim mentality) নিয়ে গড়ে উঠছি? নাকি নিজেদের থেকেই কিছু করার ব্যাপারে প্রত্যয়ী হয়েছি? আজ থেকে ৫০ বছর আগেও এমন ছিলো না। আমেরিকার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব অল্প ক'টাতেই ইহুদি শিক্ষক ছিলো। এখন প্রায় প্রতিটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টিগুলোতেই ইহুদি শিক্ষক আছে, যারা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে নিজেদের সর্বাত্মক উন্নতি করছে। বুদ্ধি আর মেধাকে বিকশিত করতে না পারলে মুসলিমদের পরাজিত হয়েই বোধহয় থাকতে হবে।

তবে আশার আলো আছে, এখন অনেকেই নিজেদেরকে উন্নত করছে সারাবিশ্বে। সারাবিশ্বে দেশে দেশে মিডিয়াতে বামপন্থী/ইসলামবিদ্বেষীদের আধিক্য সংবাদকে একপাক্ষিক করে ফেলে এখন। মিডিয়াও মানুষের মনোজগতে বিশেষ ক্ষমতা দখল করে ফেলেছে। তবে মুসলিমরা তাদের কাজগুলো করলে এই বিষয়গুলোতে বস্তুনিষ্ঠতা আসতে পারত কারণ তারা যেকোন অবস্থাতেই সত্য আর সুন্দরের পক্ষে থাকবে। বিশ্বমানুষের মুক্তির জন্য মুসলিমদের নিজেদের মনোজগতকে উন্নত করা প্রয়োজন। বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নয়ন ও যোগ্যতা অর্জনের কোনো বিকল্প নেই।


রেফারেন্স:
# লেকচার - ড সাইয়েদ হুসেইন নসর - ফিলোসফি ম্যাটারস  http://www.youtube.com/watch?v=qAgGB407FHs

৯ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৪



(৪৩৮)
সমস্ত রং যেখানে থাকে, সেটি হয় কালো। যেখানে কোন রং থাকে না, তার রং সাদা। হৃদয় যখন সমস্ত ক্লেদ ও পংকিলতামুক্ত হয়-- সেটি শুভ্র হৃদয়। সেটিই প্রশান্ত আত্মা।

(৪৩৯)
একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন আপনি সবসময় যে কাজগুলো করতে চেয়েছেন সেগুলো করার আর কোন সময় নেই। তাই এখনই তা করতে শুরু করুন।

(৪৪০)
আমরা যাকে ভালোবাসি, আসলেই কি বাসি? কেমন করে বুঝি সেটা? আমরা যা পছন্দ করি, আসলেই কি করি? নাকি অন্যেরা যা ভালোবাসায়, পছন্দ করায়, তা আমরা অবচেতনভাবে পছন্দ করি, ভালোবাসি, উত্তম মনে করি? আমরা কতটুকু সময় নিজের চিন্তা নিজে করি? লোকের বলা ছাচেই আমরা বেশিরভাগ চিন্তা করি, তাইনা? অথচ আমরা কেউ অন্য কারো মতন না। আমাদের জীবনগুলো পরস্পরের চেয়ে একদম আলাদা।

(৪৪১)
আমরা বেশিরভাগ মানুষ নিজেদের চিন্তার কারাগারে বন্দী থাকি। চারপাশের মানুষগুলো আমাদের বন্দী করতে চায় তাদের ব্যক্তিগত পছন্দ আরোপ করে সৃষ্ট যে কারাগার তার মাঝে। আল্লাহ মানুষকে দিয়েছেন অবারিত পৃথিবী। পৃথিবীতে খুব অল্প বিষয় নিষিদ্ধ। পৃথিবী আল্লাহর নিয়ামতে পরিপূর্ণ। উপভোগের জন্য পাপহীন বিনোদনে পৃথিবী ভরপুর।

(৪৪২)
আমাদের সাধ্যমতন পরিচ্ছন্ন ও শুভ্র পোষাক পরা উচিত। পোশাকের পরিচ্ছন্নতা আমাদের মনে প্রভাব ফেলে। সুন্দর, পরিপাটি ও পরিচ্ছন্ন পোশাক আত্মবিশ্বাস এনে দেয়। দুর্গন্ধহীন পোশাক পরা আমাদের এক ধরণের দায়িত্ব কেননা তাতে আমাদের স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে, চলার পথে যারা আশেপাশে আসে তাদের কষ্ট হয়। ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য পোশাক খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বয়স অনুযায়ী পোশাকের রঙ হতে পারে, বিশেষ করে তরুণ বয়সের ছেলেরা উজ্জ্বল রং-এর পোশাক পরলে তা নিজের জন্যই একটি পজিটিভ ইন্সপিরেশন হতে পারে। পোশাক পরবো; কী পরছি তা খেয়াল রাখবো!

(৪৪৩)
নিজেকে দয়া করুন, নিজের প্রতি রহমদীল হোন। কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে? প্রতিটা মানুষের জীবনের স্রোত আলাদা, একের সাথে আরেকটা মিশে না। অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এমনকি নিজের অতীতের সাথেও না। শুধু জেনে নিন, আপনার জীবনে সামনে যা আসে, তা আল্লাহর পাঠানো। কিছুতেই তা এড়িয়ে যেতে পারতেন না। গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।

(৪৪৪)
সংকীর্ণতার জিঞ্জির ভেঙ্গে মুক্তি পেতে চাইলে ভালোবাসতে শিখতে হবে, অসংকোচ ভালোবাসা।

(৪৪৫)
আচ্ছা, ক'জন আমরা ঘৃণাহীন, হিংসাহীনভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি? পত্রিকা, চ্যানেলের খবরে, অপদার্থ বন্ধু/আত্মীয়র মুখে, ফেসবুকের পন্ডিতন্মন্য মানুষদের সমালোচনামুখর পোস্টে আমরা শুধু ঘৃণা, অবিশ্বাস, সন্দেহ, অশান্তি, পরনিন্দা, অপবাদ, মিথ্যায় ডুবে থাকি... শান্তির ঘুম কেমন করে আসবে জঞ্জালভরা হৃদয়ে, অতৃপ্ত ও অসুস্থ চোখে?

(৪৪৬)
যা কিছু সম্পর্কে আমি জানি যে তা স্থায়ী নয়, তেমন কোন কিছুর সাথে আমি নিজেকে জড়াতে চাইনা।

 ~প্রিজন ব্রেক টিভি সিরিজে মাইকেল স্কোফিল্ড

৮ ডিসে, ২০১৫

কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে?

 



নিজেকে দয়া করুন, নিজের প্রতি রহমদীল হোন। কোন কিছু নিয়ে এতো চিন্তা করে কী হবে? প্রতিটা মানুষের জীবনের স্রোত আলাদা, একের সাথে আরেকটা মিশে না। অন্যের সাথে তুলনা করতে যাবেন না। এমনকি নিজের অতীতের সাথেও না। শুধু জেনে নিন, আপনার জীবনে সামনে যা আসে, তা আল্লাহর পাঠানো। কিছুতেই তা এড়িয়ে যেতে পারতেন না। গ্রহণ করে নিন জীবনে যা কিছু আসে, আসবে। হাসিমুখ থাকুন, চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে দুশ্চিন্তা ও আশংকা করে নিজেকে নষ্ট করবেন না।

আমাদের উপরে যা কিছু আসে তা আমাদের সাধ্যের অতিরিক্ত নয়, এ আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা। আস্থা রাখুন নিজের উপরে। দুর্যোগ মানেই জীবন ধ্বংস নয়, হোক তা প্রাকৃতিক কিংবা মানবসৃষ্ট। দুর্যোগ কেটে যায়। ধ্বংসস্তূপ সারিয়ে তুলতে হয় সেই আপনাকেই। তাই, অপেক্ষা করুন নতুন করে গড়ে নেয়ার। এটাই জীবন। অতিকাব্যিক কিছু নেই পৃথিবীর জীবনে। আসল সফলতা আল্লাহর কাছে। দুনিয়ায় কাজ হলো সুন্দর করে মূহুর্তগুলোতে আপনার দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। ফলাফল আল্লাহর হাতে। সবই আল্লাহর হাতে।

সহজভাবে গ্রহণ করুন জীবন। হাসিমুখ থাকুন, হাসিমুখ তৈরি করুন। কাজ করুন। মন দিয়ে কাজ করুন। কাজের মাঝে বেঁচে থাকুন যেন এগুলো সাদকায়ে জারিয়া হয়ে মরণের পরেও বন্ধু হয়ে রয়।

৭ ডিসে, ২০১৫

কেউ দেখে শিখে আর কেউ ঠেকে শিখে



জীবনে সবাই শেখে। কেউ কেউ শেখার জন্য বেছে নেয় খুব কষ্টের পথ। আপনি যে জিনিস হয়ত মধ্য বয়সে শিখছেন, তা হয়ত অনেকে কৈশোরে শিখে ফেলেছে। কেউ হয়ত স্কুল জীবনে যা শেখার কথা, আজো তা শেখেনি। এগুলো চিন্তা করে অবাক হবেন, তাতে লাভ নেই। আসল বিষয় হলো, আপনি কখন শিখবেন। যখনই হোক, জীবনে যখন "ঠেকে শিখবেন" তখনই আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, যতই শিখবেন, শেখার সময়টা অবশ্যই কষ্টের, কিন্তু না শেখা জীবন হতাশা আর গ্লানির। যারা কখনই শেখে না, বুঝেও বুঝে না, দেখেও অনুভব করে না--তারা আজীবন বুকের জ্বালায় দগ্ধ হয়ে মরে। কষ্টের উৎস খুঁজে না পাওয়ার যে জ্বালা, সেটা তারা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করে।

কেউ ক্লাসরুমে আনন্দ করে শেখে, কেউ শেখে শুভাকাংখীর উপদেশ থেকে। আবার নির্মম শিক্ষা হলো খুব বড় ক্ষতি থেকে শেখা। তবুও, শেখা শেখাই। একটা কথা বহুল প্রচলিত, "শিখেছি কোথায়? ঠেকেছি যেথায়"। তাই শেখায় কোন লজ্জা নেই, বয়স নেই। ঐ যে বলে না? 'better late than never'-- দেরিতে হলেও শিখুন। শেখাই জীবন। শিখলেই জীবন বদলায়। কিন্তু শেখার পথটা খুব কষ্টের। খুব। যে কোন চিন্তা, অভিজ্ঞতা আমাদের যা শেখায়, তা একটা দুর্গম পথ। কিন্তু, শেখা ছাড়া জীবন হয় না। 'পড়ো, তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন,' -- শেখার এক পরম আদেশ, হালাল-হারাম, অমুক-তমুক, ইত্যাদি চিন্তা করার আগেই শিখতে দৌড়াতে হবে।

যারা সাধারণ বাক্যই উপলব্ধি করতে পারে না, চোখের সামনে, নিজের জীবনে শত-সহস্র ঘটনা থেকেও শিখতে পারে না। ধর্মের কথা, হালাল-হারাম আর পাপ-পুণ্যের গল্প বলে সে তো কেবল অন্যের ক্ষতিই করবে। আল্লাহ তো দিন-রাত্রির পরিবর্তনে, আকাশ আর দুনিয়ার সৃষ্টির মাঝে তাকিয়ে থেকে চিন্তাশীলদের শেখার আমন্ত্রণ দিয়েছেন। কয়টা হৃদয় সত্যিকারের শিখতে পারি? এই আকাশ আর পৃথিবী, রাত আর দিনে কী কী শিখেছি তা পয়েন্ট করে লিখে নিজেরাই লজ্জায় পড়ে যাবো না?

শিখতে হবে। একদম শিশুদের মতন শেখা। শেখাতেই রয়েছে মুক্তির শুরু। শেখার মাঝেই রয়েছে কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার চাবি। সবাই আটকে পড়ে আছি কারাগারে। অজ্ঞতা, অন্ধত্ব, অহং, হিংসার কারাগার। আলো দাও খোদা। 'নূরুন আলা নূর' কবে একটানা হতেই থাকবে আমাদের হৃদয়ে?

[১৩ নভেম্বর, ২০১৫]

৬ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪৩




(৪৩১)
আমাদের জীবনে অনেক সুযোগ আসে, অনেক ঘটনা আসে শিক্ষা হিসেবে। দেখা যায়, একই ঘটনা কাউকে অনেক বদলে ফেলে, কেউ ভেতর থেকে অনেক উপলব্ধি করতে পারে-- অপরজনের কাছে ব্যাপারটা স্রেফ একটা ঘটনা। এখানে থাকে দৃষ্টিভঙ্গি আর পূর্বেকার জ্ঞানের পার্থক্য।

(৪৩২)
আমি যতবার দূর-দুরান্তে পথে-প্রান্তরে ঘুরে বেরিয়েছি, আমার মনে হয়েছে আল্লাহ হলেন আর-রাযযাক। কীসের যোগ্যতা, কীসের কর্ম, কীসের বংশ আর কীসের মাপকাঠি, আল্লাহ সবাইকেই তার রিযিক দান করেন। আল্লাহ হয়ত বিভিন্ন উপায়ে রিযিক দেন আমাদের-- কিন্তু রিযিক বন্টনের কাজটির মালিক কেবলই তিনি। সমস্ত মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ, পোকামাকড় সবাই আল্লাহর নিপুণ রিযিক বন্টন থেকেই পায়।

এদিকে মুমিনের জন্য তাকওয়া থাকলেই রিযিক দেয়ার নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন। বুঝিনা আমরা। অবশ্যই বেখবর। নইলে সহজ পথ ছেড়ে কি আর কঠিনে ডুবি?

(৪৩৩)
যখন আমরা কোন ভ্রমণে যাই, আমরা জানি আমরা কতটা কম শক্তিশালী; বুঝতে পারি সবকিছু কতটা অনিশ্চিত। ভ্রমণে আমরা নানান ধরণের মানুষের সাথে পরিচিত হই যা আমাদের উপলব্ধি করায় যে পৃথিবীটা কতই না বিশাল, কত বিচিত্র এখানকার মানুষ!

(৪৩৪)
বিশালতা প্রকৃতির যেমন আছে, আকাশের আছে, সমুদ্রের আছে। মানুষের মাঝেও বিশালতা আছে -- জ্ঞানের, ব্যক্তিত্বের, মেধার। তবে প্রকৃতির বিশালতা অনুভব করতেও যেমন সকল হৃদয় পারে না, মানুষেরটুকুও সবাই বুঝে না।

(৪৩৫)
গতকাল সূর্যোদয় দেখেছিলেন এমন অনেক মানুষ আজ দেখার সুযোগ পাননি, তাদের জীবনের সময় শেষ হয়ে গেছে।

আমরা নতুন দিনটি উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। একটি দিন আমাদের জীবন বদলে দিতে যথেষ্ট। আজকে আবার নতুন আশায় বুক বাধতে পারবো। নতুন প্রচেষ্টায় এগিয়ে যেতে পারবো কল্যাণের পথে।

(৪৩৬)
হাসিমুখ মানুষদের আমরা ভালোবাসি। আমরা সবাই জীবনযুদ্ধে কমবেশি বিদ্ধস্ত মানুষ, হাসিমুখ প্রাণবন্ত লোকদের জীবনের উদ্যম আমরা দেখতে ভালোবাসি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক মানুষদের জীবনকে আমরা অনুপ্রেরণা হিসেবে নিই।

গোমড়ামুখো মানুষকে লোকে পছন্দ করেনা, তাদের এড়িয়ে চলে। নিজ জীবনের গ্লানি আর কষ্ট নিয়ে সবাই ত্যক্ত বিরক্ত থাকে, অন্যের কষ্ট নেবার জায়গা আর শক্তি কোথায়?

জীবনে যখন আমরা ব্যক্তিসত্ত্বার কষ্ট ছাপিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে পারি, অন্ততপক্ষে নিজের হাসিমুখ দিয়ে হলেও, তখন আমরা জীবনের সত্যিকার অর্থবাচকতা খুঁজে পাই। নইলে এই জীবন কি আর কোন জীবন হলো?

(৪৩৭)
যখন আমাদের হারানোর কিছু আর বাকি থাকে না, তখন আমরা নতুন করে জীবন নিয়ে পরিকল্পনা করার, সাজিয়ে নেয়ার আর গড়ে নেয়ার কাজ করতে পারি। [অনূদিত]

৫ ডিসে, ২০১৫

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে হৃদয়টা স্বচ্ছ হতে হয়

 

এমন কিছু মানুষের সাথে দেখা হয়েছে আমার জীবনে যারা হয়ত 'হুজুর' টাইপ না, তাদের ইসলামের বুঝগুলোও স্পষ্ট না। হয়ত ধর্মের ব্যাপারে আগ্রহও কম। কিন্তু মানুষগুলোর চিন্তা বেশ স্বচ্ছ। তারা যে ভুল কাজগুলো করেন, সেগুলো করলে তারা স্বীকার করে, তারা অন্য কাউকে ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করে না, গীবত করে না অযথাই অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হতে গিয়ে। তারা মানুষের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করে এমনকি ভিন্নমতের হলেও। এরকম মানুষগুলোর হৃদয়ে যে আলো দেখতে পাই, তা আমি অনেক 'কড়া ধার্মিক' ভাব ধরা টাইপের লোকদের কাছে কানাকড়িও পাইনি। এই মানুষগুলোর সান্নিধ্যে থাকতেও স্বস্তি লাগে।

ইসলাম যদি মড়ার ধর্ম হতো, যা মানুষকে মূল্য দেয় না -- তাহলে ইসলাম যুগ-যুগান্তর ধরে ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন রঙের, ভিন্ন সমাজের লোকদের কাছেও গৃহীত হত না। ক্রিশ্চিয়ানিটির চার্চ যেভাবে মানুষের উপরে ক্ষমতা ও জোরপূর্বক 'বিধি বিধান' প্রয়োগ করে মানুষকে যন্ত্রণা দিয়ে তাদেরকে ধর্ম থেকে তাড়িয়েছে। ফলে আজো পশ্চিমাদের মাঝে রিলিজিয়ন চার্চের বাইরে আসবে ভাবলেই আঁতকে ওঠে, ইসলাম নিয়েও তাদের ভয়টার পেছনে ধর্মের 'ঐতিহাসিক' ঘটনাগুলোর প্রভাব আছে। সেই একই পথের লোক এই ইসলামের নাম ধরেও অনেক থাকে, যাদের উপস্থিতি মানুষকে ইসলামকে ভুল বুঝায়, ইসলামের বিষয়ে ভুল ধারণা দেয়। এদের কঠোরতা আর সংকীর্ণতার খপ্পরে পড়ে মানুষ ইসলামের 'এক্সট্রিম' থেকে পালিয়ে বাঁচতে চায়। অথচ এসব লোকেরা আদতে ইসলামের মর্মই বুঝেনি। স্রেফ নিজেদের ক্ষুদ্রতাকে সুন্দর রূপ দিতে ধর্মের নৌকায় পা দিয়ে লোকের কাছে 'দাম' নিতে, 'পাত্তা' নিতে ধার্মিকের চেহারা/শব্দ/ভাব নেয়।

মানুষকে ভালোবাসতে হয়, মানুষকে মর্যাদা দিতে হয়। মানুষের চিন্তাকে মূল্য দিতে হয়। 'সহীহ পথে আছি' ভেবে তাই অন্যদের দিকে ভ্রূকূটি করে তো সেই একচোখা-উদ্ধত মানুষটা আল্লাহর সৃষ্টি মানুষকেই ছোট করে; সে আবার এসব করে আল্লাহকে কেমন করে পাবে?

আল্লাহ প্রতিটি মানুষকে প্রতিবেলা খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন, শ্বাস নেওয়াচ্ছেন পরম ভালোবাসায়। হয়ত বুঝ এলে অবুঝ লোকটাও আল্লাহর গুণকীর্তন করেই জীবন কাটিয়ে দেবে। তবু এমন মানুষের উপরে আমাদের কতিপয় 'ধার্মিকদের' কেমন অদ্ভুত 'অহংবোধ' কাজ করে? মানুষের সাথে দেখা হলেই নিজেকে 'সুপিরিয়র' কেন ভাবতে হবে? হলেই না হয় ইনফেরিওর, মেনেই নিন না আপনি তার চেয়ে অনেক কিছুতেই ছোট। মেনে নিন!

আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে হৃদয়টা স্বচ্ছ হতে হয়। ভালোবাসতে শিখতে হয়। যার হৃদয়ে মাখলূকের প্রতি ভালোবাসা নেই, সে আল্লাহকে ভালোবাসার দাবী কীভাবে করতে পারে? কঠিন হৃদয়ের মানুষরা আল্লাহর থেকে অনেক দূরে। মানুষকে ভালোবাসতে হয়। ভালোবাসতে হয় সবাইকে, কোন 'যদি' ও 'কিন্তু' ছাড়াই যে ভালোবাসা...

[১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫]

৪ ডিসে, ২০১৫

কবে ভালোবাসা ফিরে আসবে আবার? হৃদয়ে হৃদয়ে...



আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরাই তাদের নিজের ভেতরের দেয়ালগুলোতে নিজেদের বন্দী করে রাখে। তাদের বন্দী থাকতে হয়, বন্দী হতে শেখানো হয় ছোট থেকেই। লোকে কী বলবে, তারা কী বলবে ভাবতে ভাবতে নষ্ট হয়ে যায় হৃদয়ের ভেতরের জৈবিক রসায়ন। ধর্মের দোহাই দিয়ে বেঁধে রাখতে চায় অনেকে।

ধর্ম কী কেবলই কিছু আচার-অনুষ্ঠান? আমরা কি জানিনা অনেক বড় আলেমদের সর্বাগ্রে জাহান্নামে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হবে মর্মে সতর্কবাণীর কথা? আমরা কি জানিনা উশকো-খুশকো অভাবী-দীন-হীন লোকের হাত আল্লাহর খুব পছন্দ হবার কথা? বাহিরে মোরা ভদ্র বড়, ভেতরে শুধুই পশু। বাহিরের আচ্ছাদন আর লেবাসের সৌষ্ঠবের প্রতি আগ্রহ তো বুকের ভেতরের রসায়নকে নষ্ট করে ফেলেছে।

বহিরাবরণে ভদ্রলোক/ধার্মিক/ভদ্রমহিলা/শিক্ষিত অথচ বুকের মাঝে নেই মানবিক বোধ। অনেকগুলো ডিগ্রি পাশ দিয়ে আসা ডাক্তার সাহেব এক মিনিট কথা বলতে চাইছেন না রোগীর সাথে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্মার্ট আর ইয়াং ছেলেটা ঘুষি বাগিয়ে দিলো রিকসাওয়ালা ছেলেটাকে, ভেবে দেখা যায় না ছেলেটা কতটা কষ্টে রিকসা নিয়ে বের হয়েছে, শরীর দিয়ে টেনেছে এই যানটি--জীবনের প্রয়োজনে? এই চলমান সমাজে মনুষ্যত্ব লুকিয়েছে শব্দের খোলসে, মানুষের হৃদয় কেবলই শূণ্য। হৃদয়গুলোতে লোভ, হিংসা, ক্রোধ, অহংকার এবং সর্বোপরি ক্ষমতার লালসা।

কবে ভালোবাসা ফিরে আসবে আবার? হৃদয়ে হৃদয়ে...
কবে ভালোবাসা পাবে গাছের পাতা, পাখি, প্রাণী; ভালোবাসা পাবে চলতি পথের পথিক। ভালোবাসা পাবে অসহায়, আহত হৃদয়ের মানুষগুলো। ভালোবাসা তো পারে বদলে দিতে সবকিছু। আসলে, যা ভালো লাগে করতে হয়। বাইরে দেখতে যেমনটি লাগে, নিজেরা যেন তেমনটিই হই। নিজেরা যেমন,  তেমনটি যেন লোকে মনে করে। কী লাভ তীব্র বৈপরিত্যের মাঝে সদা বসবাসে?

[২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫]

৩ ডিসে, ২০১৫

মনের জানালা মাঝে # ৪২

 


(৪২৩)
স্বপ্ন দেখুন এবং নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে লেগে থাকুন। নয়ত সারাজীবন আপনাকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। [অনূদিত]

(৪২৪)
চারপাশের গাছগুলো আমাদের দেখিয়ে দেয় জীবনের মরে যাওয়া অংশগুলো কীভাবে ঝেড়ে ফেলে দিতে হয়।


(৪২৫)
কখনো কখনো জীবনের সমস্ত চাপ, দায়, কর্তব্য, চিন্তাভাবনাকে প্যাকেটে ভরে পলিথিনে ভরে সিটি কর্পোরেশনের ডাস্টবিনে দূরে থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসতে হয়। জীবনের ক্লান্তি-ক্লেদগুলোকে ড্রেনের পানিতে ঢেলে দিতে হয়... সাথে শুধু কিছু দায়িত্ববোধ আর ভালোবাসা রেখে দিয়ে বাকি হিসেব-নিকেশ চুলোয় তুলে দিতে হয়।

এরপর কিছু উদাস দুপুর, লম্বা নিঃশ্বাস। ভালো লাগা এক কাপ কফি খুঁজে বের করা। শহরের ক্লান্ত-শ্রান্ত বিরক্ত মানুষগুলোর মাঝেই কিছু ভালোলাগা অনুভূতিকে খুঁজে বেড়ানো। ছোট্ট এই জীবনের এত চাপ নিয়ে কী হবে? হৃদয়ের শান্তি কেউ দেখতে পায় না, সে আমাদের একান্ত অনুভূতি...

(৪২৬)
মানুষকে বিচার করতে থাকলে, তাদের ভালো-মন্দ হিসেব করতে থাকলে আপনি কখনো তাদের ভালোবাসার সুযোগ পাবেন না।

(৪২৭)
শীঘ্রই যখন সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে, তখন আপনি জীবনের পেছনে ফিরে তাকিয়ে এই সময়গুলোর কথা ভেবে খুশি হবেন এই ভেবে যে আপনি কখনো হাল ছেড়ে দেননি।

(৪২৮)
আপনার উপরে অন্যদের চাপিয়ে দেয়া জীবনকে যাপন করতে যাবেন না, আপনি সম্পূর্ণ আলাদা একটা মানুষ। নিজের মতই হোন, উন্নত করুন নিজেকে, নিজের মতন করেই।

(৪২৯)
ভুল করলে ক্ষমা চাইতে শিখুন। ভুল মানুষই করে, সেটা হতেই পারে। কিন্তু ভুল করে অনুতপ্ত না হওয়া বা অহং ধরে বসে থেকে ক্ষমা না চাওয়া শয়তানের কাজ। এই অহং শুধু ধ্বংস এনে দেয়।

(৪৩০)
আপনার জীবনটা এখন যেমন, জীবন আসলে অমনই...

সময় বদলে গেলেও জীবন আমাদের প্রতি একই রকম থাকে-- হয়ত চারপাশ বদলায়, মানুষগুলো বদলায়, জীবন একই রকম থাকে।

নিজ জীবন বদলাতে হলে হৃদয়কে বদলাতে হয়, পৃথিবীকে দেখার চোখটা বদলাতে হয়।

২ ডিসে, ২০১৫

"ফেসবুকে লোকে শুধু ভালোটাই দেখায়, খারাপ ঢেকে রাখে"--এই সমালোচনা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?

​"ফেসবুকে লোকে শুধু ভালোটাই দেখায়, খারাপ ঢেকে রাখে "-- এমন মন্তব্য করে 'মানুষের' সমালোচনা করাটাও এক ধরণের মূর্খতা যদি ​কেউ পুরো ব্যাপারটা মাথায় না রাখে।

এখানে ​কেউ 'শো অফ' করাটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে কেননা​ লোক দেখানো কাজ ভালো নয়, ক্ষতি অনেক।​​ লোক দেখানো প্রবণতা আমাদের এমন মানুষ বানিয়ে ফেলতে থাকে যা আমরা পছন্দ করিনা।​ নিজেদের অজান্তেই আমরা তখন ভিন্ন কোন বাজে মানুষে পরিণত হতে থাকি।​ আবার, লোককে নিজের ভালো দেখিয়ে তাদের হিংসা বাড়িয়ে ​দেয়ার ফলে নানানভাবে ​নিজের ক্ষতি হবার রাস্তাও তৈরি হয়।

কিন্তু লোকে দেখালে​ তো​ ভালোটাই দেখায়, দেখাবেই। লোকে সুন্দর পোশাক পরে সামনে আসার মানে কিন্তু এই দাবী করা নয় যে তার পোশাকের নিচে লজ্জার বিষয় নেই।​ যারা ভালো দেখায়, তার মানে অন্তত তারা ভালো বিষয়টা বুঝে। তারা ভালোকে 'কেয়ার' করে, ভালোকে 'উত্তম' বলে মনে করে। এটা কি একটা ভালো নয়? মুসলিম হিসেবে আমাদের কাজ কি 'ভালো'কে প্রতিষ্ঠিত করা ও ছড়িয়ে দেয়া নয়?

যারা প্রকাশ্যেই খারাপ কথা বলে, খারাপ কাজ করে, তারা তো আরো খারাপ। তারা তো সমাজে আরেক মাত্রার খারাপকে প্রতিষ্ঠিত করে, ছড়িয়ে দিতে থাকে।​ যারা খারাপ বিষয় লোকের সামনে উন্মোচিত করে তারা খারাপ কাজের সাক্ষী থাকার ব্যাপারটা ভয়ও করেনা। হয়ত গোপন ব্যাপারটা আল্লাহ ক্ষমা করে দিতেন ইস্তিগফার করায়, এখন অনেকে সাক্ষী রয়ে গেলো, এই কাজের হিসেবে তারাও অংশ হয়ে গেলো।

​বেশি ​সমালোচনা ঠিক নয়। অন্যদের উদ্দেশ্য বোঝা আমাদের মানবীয় যোগ্যতার অতীত। তাই সমালোচক হিসেবে নিজেকে বেশি পন্ডিত মনে হলে নিজেকে সতর্ক করা উচিত। আল্লাহ বান্দাকে গায়েব না জানিয়ে নানানভাবে বিনয়ী থাকতে বাধ্য করার পরিবেশ তৈরি করে রেখেছেন। অন্যের ব্যাপারে নির্দ্বিধায় সমালোচনা করার ক্ষেত্রে এটাও একটা সাবধান থাকার বিষয়।

সব সমস্যার বেশি সরলীকরণ করলে সমস্যা। জটিল সমস্যার সরল সমাধান চাইতে গেলে সব হারাতে হয়। একই বুঝ দিয়ে সবাইকে বুঝতে গেলেও বিপদ।

[১২ নভেম্বর, ২০১৫]