২৫ ফেব, ২০১৬

কে মাথা নোয়াতে জানে না? কে?


আমরা যখন একদম ভুলে যেতে থাকি, ডুবে যেতে থাকি নিজেদের ক্ষমতা, সামর্থ্য, ষড়যন্ত্র, উদাসীনতার অদ্ভুত মোহে, তখন আল্লাহ একটা নাড়া দিয়ে দেন। ঝকঝকে আকাশ হঠাৎ কেমন অন্ধকার হয়ে গেলো, কেমন রুদ্র ঝড় ঘিরে ফেললো চারপাশ, কেমন শিলা বৃষ্টির ঠাস ঠাস আঘাতগুলো জানালার কাঁচে, শার্সিতে, গাড়ির ছাদে, গায়ের উপরে আঘাতের মতন হয়ে আমাদের সত্ত্বায় নাড়া দিয়ে যাচ্ছিলো। আমরা কি আদৌ অনুভব করতে পারি? আমরা কি পারি উপলব্ধি করতে? কেমন শিউরে উঠেছিলাম আমরা কেউ কেউ!

আমরা যখন কথা বলি, তখন আল্লাহকে মনেই রাখিনা। শ্রেষ্ঠ আর প্রিয়তম যেই মানুষ, তাকেও আল্লাহ শিখিয়েছিলেন "ইনশাআল্লাহ" বলতে, অর্থাৎ আল্লাহ যদি চান তবেই না হবে! ঝড়-ঝঞ্চার মতন দুই-একটা ঘটনায় তো গোটা কাজই তো বন্ধ হয়ে যায়। অথচ একটা ঘটনা না ঘটার হাজার হাজার উপলক্ষ থাকে যার কিছুই আমাদের হাতে নয়। তবু আমরা বুঝিনা আমরা অহংকার করি, আমরা অতিরিক্ত দম্ভ দেখাই।

'কেউ রুখতে পারবে না', 'করেই ছাড়বো', 'দেখিয়ে দিবো', 'বুঝিয়ে ছাড়বো'-- এমন কত বক্তব্য! কেউ কেউ বলে, অমুক নাকি মাথা নোয়ায় না কারো কাছে, আবার কেউ বলছি ও মাটি তোমার তরে ঠেকাই মাথা। শুধুই কি আলংকারিক মাথা নোয়ানো? আমরা নতজানু হয়ে, মাথা নুইয়ে দিই বৃষ্টিতে, ঝড়ে, সূর্য আর চাঁদের গ্রহণেও! আমরা মাথা নোয়াতে জানি, মাথা নোয়ানো ভুলতে জানিনা।

তোমার তরে এমনভাবে মাথা ঠেকানোর জন্য কবুল করে নাও প্রভু, যা তোমায় খুশি করবে, আমাদের মুক্তি দেবে!

[২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬]

২০ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫২

 

(৪৭০)
জীবন স্রোতে আমরা বয়ে চলি। আল্লাহ আমাদের তার ইচ্ছেমতন আয়ু দেন, আমরা নানা উপায়ে তা ব্যবহার করি। বিভিন্ন সুযোগে, বিভিন্ন সময়ে আমরা বিভিন্ন কাজে মন দেই। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের চাওয়া অনুযায়ী জীবনে খুব কম কাজই আমরা করতে পারি। আল্লাহ চাইলে না চাওয়া কাজও করে ফেলি, আল্লাহ না চাইলে হাজার চাইলেও কিছু করতে পারিনা।

(৪৭১)
হাল ছেড়ো না বন্ধু। এই হাল না ছাড়াই তো জীবন। এই জীবন সমদ্রের পুরোটাই তো উত্তাল ঢেউ। হাল ছাড়ার কিছু নেই, দিগন্ত দেখারও কিছু নেই। যারা মনে করে হাল ঠিকই আছে, ধরে ফেলেছি-- তারাই ডুবন্ত। তাই ধরে থাকো হাল। লেগে থাকো।

(৪৭২)
আমরা জীবনে যা করি, যা অর্জন করি, যা অভুতপূর্ব জিনিস শিখি-- সব আমাদের মাঝেই ছিলো, থাকে। সময়ে সময়ে আমরা উপলব্ধি করি। কিন্তু সেই উপলব্ধি করতে একটা 'জার্নির' মধ্য দিয়ে যেতে হয়। পাওলো কোয়েলহো আলকেমিস্টে এই ব্যাপারটা বুঝিয়েছে। একটা অভিজ্ঞতার আগে-পরের আমরা একই মানুষ না। একই জিনিস আমাদের ভিন্নভাবে ধরা দেয়, দেখার চোখ বদলায়। অভিজ্ঞতা খুব খেলো কিছু না। তাই, যত তিক্ত হোক, অভিজ্ঞতার তুলনা হয় না। নিজের ভেতরেই যা ছিলো, তাকেই নতুন করে খুঁজে পেতেই আমরা ছুটে বেড়াই পৃথিবীর এই প্রান্তর থেকে অন্য প্রান্তরে।

সময়ের সাথে সাথে পৃথিবী যতটা বদলায়, দেখার চোখটা তার চেয়ে অনেক বেশিই বদলায়...

(৪৭৩)
আপনার কি মনে পড়ে শেষবার যখন মনে হয়েছিলো এই কষ্ট আর আপনি সহ্য করতে পারবেন না! আপনি পেরেছেন, এখনো পারবেন, আগামীতেও পারবেন। তাই অধৈর্য হয়েন না, আশাহত হবেন না।

১৯ ফেব, ২০১৬

রুমী কবিতা (উনবিংশ কিস্তি)

 

* * * * * *
আত্মাকে শোনার ক্ষমতা দিয়ে যে কান দান করা হয়েছে তা এমন কিছু শুনতে পায় মন যা বুঝতেও পারে না।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
অন্যদের জীবনের ঘটনাগুলো কেমন করে ঘটেছে, অন্যদের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ে যেয়ো না। নিজ জীবনের লুকিয়ে থাকা কল্পকাহিনীর পর্দা উন্মোচিত করো।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * * 
তোমার হৃদয়টাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ভাঙ্গতে থাকো যতক্ষণ পর্যন্ত তা না খুলে যায়।~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
তুমি যা ভালোবাসো, সেটাই তো তুমি। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * *  * * *
খোদাকে এমনভাবে স্মরণ করো, যেন তোমার নিজেকেই ভুলে যাও। যাকে স্মরণ করা হচ্ছে আর যে স্মরণ করছে, তারা উহ্য হয়ে যাক; তুমি মিশে যাও খোদার স্মরণের মাঝে। ~জালালুদ্দিন রুমী

* * * * *
এমন একটা  গোপন ঔষধ আছে যা শুধু তাদেরকে দেয়া হয় যারা এতটা বেশি আহত হয় যে তারা আর আশা করতে পারে না। ~ জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *
মরে যাওয়া আর চলে যাওয়ার মাঝে অনেক পার্থক্য। সূর্য অস্ত যায়, চাঁদ ডুবে যায় ঠিকই। কিন্তু তারা তো আর চলে যায় না। ~জালালুদ্দিন রুমী


* * * * *
তুমি আমার পথ,
তুমিই আমার গন্তব্য।
আর কিছু বোলো না।

~জালালুদ্দিন রুমী

১৮ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫১

 

(৪৬৭)
বড় হবার পর থেকে যে জিনিসটা খুব খুব ইচ্ছে হতো, তা হলো-- সবকিছু ভুলে কবে আবারো নিশ্চিন্তে বইতে ডুব দেবো। ঠিক ছোটবেলার মতন... স্বপ্নালু চোখে লেখকের লিখে যাওয়া পৃথিবীতে আমি প্রবল ভালোবাসা আর কল্পনার প্রখরতায় মনে আঁকবো লেখাগুলোর প্রতিটি দৃশ্যপট। পাঠক হবার জন্যও পৃথিবীটা খুব ছোট! চাকুরি আর দায়িত্বের বোঝা নিয়ে দিনগুলো ক্ষয়ে যায়। অথচ পড়ার ছিলো অনেক কিছু। অদ্ভুত হাহাকার লাগে! কত মানুষের কত বৈচিত্র্যময় জীবন। কূপমণ্ডূকদের মতন নিজ জগত নিয়ে মিথ্যে অহং, জান্তব ঔদ্ধত্য থেকে বেরিয়ে আসতে বইয়ের মতন দুঃসাহসী ও বিশ্বাসী বন্ধু আর কে আছে? যে পড়ে আর যে পড়ে না, তারা কি কোনোদিন সমান হতে পারে? কক্ষনো না। কোনভাবেই না!

আমাদের রব আমাদের যতটা জ্ঞান দিয়েছেন, ততটুকুই আমাদের জানা; তিনি যা শেখাননি, তার কিছুই আমরা জানিনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞানী।

(৪৬৮)
মানুষ বদলায়, খুব বদলায়। সময়ের সাথে সাথে বদলায় রুচি, দেখার চোখ, অনুভবের হৃদয়। পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াই নয়, তাকে অভিনন্দিত করতে না পারলে আমরা পরাজিত হবো। মন্থর থাকা স্রষ্টার সৃষ্টির কোথাও নেই। গাছের পাতা বদলায়, রং বদলায় আকাশের, ভালোলাগা-মন্দলাগা বদলায় মানুষের হৃদয়ের, বদলে যায় নদীর গতিপথ, ছায়াপথ, নীহারিকা, নক্ষত্রালোক, মায়াবী রাতের ক্ষণগুলোও... থেমে থাকেনা আমাদের আয়ু, জীবনকাল। তাই ভাংগা গড়ার এই জীবনের পরিবর্তনকে গ্রহণ করে নেয়াতেই উপায়...


(৪৬৯)
একজন জ্ঞানী মানুষের কাছে এসে এক ব্যক্তি বলেছিলো,
- আমি তো খুব ক্ষুদ্র, আমি যতই আন্তরিক চেষ্টা করি না কেন, আমি কি আদৌ কোনো পরিবর্তন করতে পারবো কিছু?

জ্ঞানী মানুষটি বলেছিলেন,
- ক্ষুদ্র কিছুর শক্তি নেই বলছো? তাহলে অন্ধকার রাতে মশার সাথে কাটিয়ো, বুঝবে ক্ষুদ্র হলেও ডেডিকেটেড থাকলে কেউ কতটা শক্তিশালী!

১৭ ফেব, ২০১৬

শান্তিতে থাকার জন্য ভালোবাসতে হয়

 শান্তিতে থাকার কিছু সার্বজনীন উপায় আছে, তা মেনে চলতেই হয়।

হৃদয়ের ভেতরটা ফাঁকা করতে পারেন? যেমন ধরুন, কারো খারাপ ব্যবহার, অন্যায়গুলোতে আহত হয়ে না থাকা? অথবা ধরুন, নিজের ব্যর্থতা, অসুস্থতা, অসহায়ত্বে ভারাক্রান্ত হয়ে আছেন?

নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন না? নিজেকে মুক্তি দিন। ছাড় দিন। সমস্ত প্রত্যাশা থেকে নিজেকে দয়া করে ছাড় দিন। গ্রহণ করেই নিন যা হয়েছে। চেয়ে দেখুন, পৃথিবীটা অনেক বড়, লক্ষ-কোটি মানুষ এতে। আপনার মতই সবারই অনেক অপূর্ণতা-যন্ত্রণা-কষ্ট-না পাওয়ার বেদনা। আপনি যা চাইছেন, তা পেয়েও অনেকে শান্তিতে নেই। আমি এত ভাবতেও হবে না, স্রেফ নিজেকে ছাড় দিন সমস্ত জিঞ্জির থেকে।

পারবেন না লোকের খারাপটা নিয়ে আলাপ না করে থাকতে? আপনার আত্নীয় যিনি, তার ক্ষুদ্রতা নিয়ে সমালোচনা না করে থাকতে পারবেন না? মানুষ তো আপনার পছন্দের হতে পারবে না। পছন্দ-অপছন্দ আপনার মনের ব্যাপার। আপনি যাকে অপছন্দ করেন, সে কিন্তু অনেকের পছন্দের ব্যক্তি হতেই পারে। আসলে, পছন্দ আপনি করছেন কারণ আপনি যা চিন্তা করেন, সেটা আপনারই তৈরি। আপনার ভালোলাগার কারণ আপনিই, আপনার অনুভূতির মূল প্রকৌশলি আপনি নিজেই।

ভালোবাসতে পারবেন না এখন সবকিছুকে? তুচ্ছ মানুষগুলোকে ভালোবাসুন। আপনি যখন ভালোবাসতে পারবেন, তখন বুকের ভেতরে বসন্তবাতাস অনুভব করতে পারবেন। ভালোবাসতে পারার মাঝে আছে শান্তি। কিন্তু যতক্ষণ আপনি অন্যদের প্রতি ঘৃণা করা থেকে, নিজেকে তাদের চেয়ে উচ্চমানের মানুষ মনে করা থেকে, খুঁতখুঁতানি স্বভাবে অশান্তিতে থাকা থেকে বাঁচতে না পারবেন-- আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত ভালোবাসতে পারবেন না।

যে ভালোবাসতে পারে না, সে বেদনাক্লিষ্ট ও দুর্বল মানুষ। ভালোবাসুন, দয়া করুন। উপেক্ষা করুন নেতিবাচকতাগুলোকে। কারো খুঁত আর ভুল খুঁজতে চাইলে ভালোবাসা যায় না। মানুষ ভুলে ভরা প্রাণী, অন্যায় আর অপরাধে ডুবে থাকা প্রাণী। তাকে ভালোবাসতে পারার মূল কারণটা আপনার হৃদয়। কাউকে ভালোবাসার কৃতিত্ব কেবলই আপনার।

হৃদয়কে মুক্ত করুন সমস্ত জিঞ্জির থেকে, সমস্ত অশান্তি ও অতৃপ্তির জাল থেকে, সমস্ত ঘৃণার কাঁটাতারের বেড়ায় আটকে থাকার অসহায়ত্ব থেকে। হৃদয়কে শান্তি দিন, নিজেকে ক্ষমা করুন, নিজের নেতিবাচক, ঘৃণাবাচক, অশান্তিময় চিন্তাগুলোকে উপেক্ষা করুন। চেষ্টা করুন নিজ ভালোবাসাটা চারপাশে ছড়িয়ে দেয়ার। কারণে ভালোবাসুন, অকারণে ভালোবাসুন। যখন আপনি ভালোবাসতে পারবেন-- ভালোলাগায় আপনার চোখ ভিজেও আসতে পারে! হৃদয়ে শান্তির পরশ পেতে, বুকে বসন্ত বাতাসের স্পর্শ পেতে সমস্ত ভার ফেলে দিয়ে, ঘৃণা ফেলে দিয়ে, ভালোবাসুন।

ভালোবাসার মাঝেই রয়েছে জীবনের এক গভীরতম দর্শন।

[১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬]

৩ ফেব, ২০১৬

[অনুবাদ] পাওলো কোয়েলহো # ২

 




* * * * * * * *
যাদুতে এবং আমাদের জীবনে শুধু একটা জিনিসই বর্তমান, তা হলো-- এই মূহুর্তটি।

আপনি সময়কে কখনো দুইটি বিন্দুর দুরত্বের মতন করে মাপতে পারবেন না, সময় কখনো দুরত্ব পার হয় না।

আমরা মানুষরা বর্তমানের উপরে মনোযোগ দিতে সীমাহীন সংগ্রামের মধ্যে থাকি। কেননা, আমরা চিন্তা করতে থাকি আমরা কী করেছিলাম, কী করলে আমাদের অতীতটা আরো ভালো হতে পারতো, কী কী করে ফেলার কারণে আমাদের জীবনের এই অবস্থা, যা করার দরকার ছিলো, সেটা আমরা কেন করিনি....

~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * * * *
স্বপ্নের পেছনে ছুটে চললে কিছু মূল্য দিতে হয়। সেই মূল্যটি হতে পারে আমাদের কিছু অভ্যাসকে পরিবর্তন করা, হতে পারে এর ফলে কিছু কষ্টসাধ্য কাজের মধ্য দিয়ে যাওয়া, অথবা হতে পারে চেষ্টার পরেও আশাহত হওয়া। স্বপ্ন দেখা যতই চড়া মূল্যের লোকসানের কাজ হোক না কেন, যারা স্বপ্ন দেখেনা তাদের লোকসানের তুলনায় স্বপ্নচারীদের লোকসানের তুলনাই চলে না। ~পাওলো কোয়েলহো


* * * * * *
অনেক সময় আমরা যে জীবনধারায় চলছি সেভাবে সেভাবেই চলতে এতটাই মত্ত হয়ে থাকি যে অনেক সুন্দর সুন্দর সম্ভাবনাকে আমরা প্রত্যাখ্যান করে ফেলি তা স্রেফ এই কারণে যে আমরা জানিনা সে সুযোগ দিয়ে কী করা যেতে পারে।~পাওলো কোয়েলহো

 * * * * * *
সোজা রাস্তায় দক্ষ চালক গড়ে ওঠে না। ~ পাওলো কোয়েলহো

* * * * * *
কুঠার ভুলে যায় আঘাতের কথা, গাছ তা ভোলে না। ~ পাওলো কোয়েলহো
 

২ ফেব, ২০১৬

মনের জানালা মাঝে # ৫০

 

(৪৬৪)
যে জিনিস আমরা বুঝিনা, তার প্রশংসা আমরা করিনা, তাকে আমরা ভালোবাসিনা। যে জিনিসের মর্ম আমরা বুঝিনা, তার প্রতি আমাদের মুগ্ধতা আসে না, আমরা আকর্ষণ অনুভব করিনা।

কোনো কিছু আমরা ভালোবাসিনা, পছন্দ করিনা তার মানে এটা কখনই না যে তা আসলে অমূল্যবান, অসুন্দর। মূলত আমাদের অনুভূতি আমাদের বোধের উপরে নির্ভরশীল।যা কিছু আমাদের বোধের সীমানায়  থাকে না, সে তো সুস্পষ্ট অনাকর্ষণীয়ই বটে!

(৪৬৫)
ভালোবাসা পাওয়ার সূত্র জানতে চান? সেটার ক্ষেত্রে হয়ত অনেকগুলো বিষয় থাকতে পারে, আছেও। তাই সে হিসেব লম্বা কলেবরের হবে। তবে ঘৃণার সূত্র খুব সরল। আপনি ভালোবাসলেই যে বিনিময়ে ভালোবাসা পাবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। তবে ঘৃণা করলে তার বিনিময়ে কোনোদিন ভালোবাসা পাবেন না, তা নিশ্চিত। ঘৃণার বিনিময়ে কেবল ঘৃণাই পাওয়া যায়। ঘৃণা করে ভালোবাসা, যত্ন আর উত্তম আচরণের আশা কেবল মূর্খরাই করে। মানুষ শুধু নয়, পশুপাখিরাও ভালোবাসার অনুভূতি টের পায়। মুখের শব্দ দিয়েই কেবল আবেগের আদান-প্রদান হয় তা নয়। ভালোবাসার আলাদা তরংগ আছে যা সরাসরি হৃদয়কে আলোড়িত করে। ভালোবাসা আর ঘৃণার অনুভূতি মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে।

(৪৬৬)
আপনি সারাদিন যা চিন্তা করবেন, পৃথিবীটা আপনার অমন মনে হতে থাকবে। আপনি যদি বিকৃত চিন্তা করতে থাকেন, আপনি দেখবেন চারপাশে অনেক বিকৃত মানুষ। এমনকি আপনার সাথেও সবাই বিকৃত আচরণ করছে। আপনার পৃথিবীটা আপনারই প্রতিবিম্ব। যারা নোংরা, তারা নিজের নোংরামিটাই খুঁজে পায় অন্যের মাঝে। সবার মাঝের নোংরা বিষয় নিয়ে কথা বলা, অন্যদের গায়ে কালিমা লাগানো, গীবত করা, সম্মানিতদের বেইজ্জতি করতে চাওয়া মানুষগুলো মূলত অহংকারী আর বেয়াদব, শয়তান তাদের চালকের আসনে থাকে। ধ্বংস করতে বিশেষ কোন গুণ থাকা লাগে না। আপনি সৃষ্টিশীলতার চেষ্টা না করলেই আপনি প্রবল ধ্বংসকারী হয়ে যেতে পারবেন।

সৃষ্টি করা সহজ কাজ নয়। সৃষ্টি করতে হলে একটা মানুষের নিজের ভেতরে শতবার ভাংতে হয়। নিজেকে বিলিয়ে, তার জ্বালা সহ্য করে মানুষ সৃষ্টি করে যেকোনো কিছু। ভালো মানুষেরা পারে অন্য মানুষের ভেতর থেকে ভালোটুকু বের করে আনতে।ভালো মানুষ পারে অন্যদের মাঝে আলো জ্বালাতে। ঠিক এই মূহুর্তেও আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এই ভেবে যে আপনি সৃষ্টিশীল, সুন্দর চিন্তার কবেন নাকি কদর্য কুৎসিত সমালোচনাকারী হিসেবে নিজের অহংকারকে জারি রাখবেন। হৃদয়কে ভারমুক্ত করুন, নিজের নোংরা, কুৎসিত, কদাকার চিন্তাগুলোর চাষাবাদ না করে ভিন্ন কিছু করুন। কোনো ভালো কিছু করতে না পারলেও, খারাপ কিছু না করে থাকুন। খারাপ কিছু না করাও তো একটা ভালো কাজ, তাইনা?